বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০

ফেসবুক মুফতীরা পূর্ববর্তী ইমামদের চাইতে যখন বেশি বোঝে তখন প্রচন্ড হাসি পায়



যদি আপনার ছিয়াহ ছিত্তাহ, মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, মুসনাদে আহমদ, আবু ইয়ালা, সুনানে দারা কুতনী, বায়হাকী, ইবনে হিব্বান এমন আরো কিছু কিতাবের সব হাদীছ মুখস্ত থাকে.
যদি আপনার দখলে তাহযিবুল কামাল, তারীখুল কবীর, তাহযীবুত তাহযীব, তাকরীবুত তাহযীব, মিযানুল এতেদাল সহ আরো কিছু আসমাউর রেজালের রাবীদের ইতিহাস মুখস্ত থাকে…………
যদি আপনার উছূলে হাদীছ ও হাদীছের ব্যাখ্যার জ্ঞান থাকে…….
যদি আপনার ইবনে ইসহাক, তাবারী, ইবনে আছীর, ওফিয়াতুল আইয়ান, তারীখুল ইসলামিয়া, বিদায়া ওয়ান নিহায়া সহ ইসলামি ইতিহাসের ধারাবহিক ইতিহাস মুখস্ত থাকে……
যদি আপনার কুরআন শরীফের ৬৬৬৬ টি আয়াতের প্রতিটি আয়াতে কোন সাহাবী কি বলেছেন, কোন তাবেয়ী কি বলেছেন এমন জ্ঞান থাকে…….
যদি আপনার ইসলামের প্রতিটি শরিয়তী মাসায়ালা ফিক্বহী জ্ঞান অর্থাৎ কুরআন শরীফ ও এর তাফসীর থেকে এবং লক্ষ লক্ষ হাদীছ শরীফ থেকে মাসায়ালা বের করে জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি আমল, শরীয়তের হুকুম, বৈধ অবৈধ, ব্যবসা বানিজ্য , বিয়ে তালাক সবকিছুর বিধি বিধান বের করার জ্ঞান থাকে ……
সেই সাথে আপনার যদি থাকে ইলমে তাছাউফের চর্চা………
এরকম ইলমি ব্যাপ্তী যদি আপনার থাকে তাহলে আপনি কতবড় জ্ঞানী সেটা কি ভাবতে পারছেন? এমন আলেম কয়জন আছেন?

বর্তমানে প্রায় সব কিতাব বিষয় অনুযায়ী সুন্দর সুন্দর বাধাঁই আকারে হাতের নাগালে পাওয়া যায়, কেউ কিতাব সংগ্রহ করতে না পারলে “শামেলা” সফটওয়ারে সার্চ করলেই ১৫/২০ হাজার কিতাবের বিশাল সমাহারে এক ক্লিকে আপনার কাঙ্খিত চাহিদা পুরন হয়ে যাচ্ছে। এত সুবিধা থাকার পরও কোন একটা দলীল বের করতে মাথার ঘাম পায়ে পরার অবস্থা। তারপরও দু এক ফোঁটা বিদ্যা নিয়ে সে কি হম্বি-তম্বি। না জানি কত বড় হাতি ঘোড়া হয়ে গেছে এক এক জন।
অথচ পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরাম উনাদের জীবনীর দিকে লক্ষ্য করেন। একটা হাদীছ শরীফ জানার জন্য শতশত মাইল পায়ে হেঁটেছেন। কোন এক আলেমতো উনার মায়ের দেয়া ১০০ টি রুটি সম্বল করে ইলিম অর্জন করতে বের হলেন। প্রতিদিন দাজলা নদীর পানিতে ১ টা করে রুটি ভিজিয়ে খেতেন হাদীছ হাদীছের জ্ঞান অর্জন করতেন। ১০০ টা রুটি ১০০ দিনে শেষ উনারও লক্ষাধিক হাদীছ মুখস্ত করা শেষ।
আরেকজন আলেম ১ দিরহাম বন্ধক রেখে প্রতিদিন ১ করে ৩০ দিনে ৩০ টা রুটি পেলেন, ৩০ দিনে ৩০ খন্ড কিতাব রচনাও সমাপ্ত হয়ে গেলো।
ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে পরীক্ষা করার জন্য অনেকগুলো হাদীছের সনদ মতন পরিবর্তন করে উনার সামনে দেয়া হলো। উনি প্রতিটা হাদীছ সঠিক সনদ ও মতনে আলাদা করে বর্ণনা করে দিলেন চোখের পলকে। যা দেখে সবাই হতবাক হয়ে গেলো।
ইমাম ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যখন জীবনে শেষ সময়, বার বার জ্ঞান চলে যাচ্ছিলো। জ্ঞান ফেরার পর উনার এক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন এ মাসায়ালার বিষয়ে তোমার অভিমত কি? ইলমের প্রতি উনার কতটা ব্যকুলতা ভেবে দেখেন।
ইমাম ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সন্তান মারা গেলো। কাফন দাফনের কাজে আনজাম দিতে গেলে হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলমি দরসের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হবেন চিন্তা করে কাফন দাফনের কাজে যাননি।
হযরত ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের ওস্তাদ উবাইদ ইবনে ইয়াইশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একাধারে ৩০ বছর নিজ হাতে রাতের খাবার খাননি। কারন খেতে গেলে ওই সময়টুকু ইলিম অর্জন করতে পারবেন না। তাই উনার বোন উনাকে খাইয়ে দিতেন আর তিনি হাদীছ শরীফ লিখে যেতেন।
আবু বকর ইবনে খাইয়াত তিনি আরবী ব্যকরনের ইমাম ছিলেন। তিনি যখন রাস্তায় হাঁটতেন তখনও পড়তেন। একারনে তিনি মাঝে মাঝে রাস্তার গর্তেও পড়ে যেতেন বিভিন্ন বাহনের সাথেও ধাক্কা খেতেন। তারপরও তিনি জ্ঞান অর্জন চালিয়েই যেতেন।
ইমাম দাউদ তায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি রুটির পরিবর্তে ছাতু গুলিয়ে পান করতেন। তিনি নিজেই বলেন রটি খাওয়া আর ছাতু গুলিয়ে খাওয়ার যে সময়ের ব্যবধান এ সময়ে ৫০ আয়াত শরীফ তেলাওয়াত করা যায়।
ইমাম ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাতী বলেন, আমি আমার নানাজানকে শেষ বয়সে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি ‘আমি আমার এই আঙ্গুল দিয়ে দুই হাজার খন্ড কিতাব লিখেছি’।
ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, খাওয়ার সময়ের জন্য বড় আফসোস হয়, কারন এ সময়টা ইলমি মগ্নতা ছাড়া কেটে যায়।
ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, দু’বছর আমার পিঠ বিছানার স্পর্শ লাভ করেনি।
এরকম আরো শতশত ঘটনা ইমামদের জীবনীতে বর্ণিত আছে। উনাদের কাছে আমাদেরমত রেডিমেড ‍কিতাব ছিলো না, শামেলা সফটওয়ার ছিলো না। তারপরও আমরা উনাদের ধারের কাছে যাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারি না। লক্ষ লক্ষ হাদীছ উনাদের হিফজে ছিলো, রাবীদের জীবনী মুখস্ত ছিলো, ইতিহাস জানা ছিলো। উনাদের মেধার মোকাবেলায় শামেলা বা গুগল হাস্যকর লাগে। শামেলায় সার্চ করতে যত সময় লাগে অথচ উনাদের জবান মুবরাক থেকে দলীল বের হতে তত সময় লাগতো না।
আজ উনারাই সমালোচনার পাত্র। ফেবু মুফতীদের কিবোর্ডের তুফান দেখে মনে হয় তারাই আলেমকুলের শিরোমনি। কিয়ামতের একটা আলামত হচ্ছে, পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সমালোচনা করবে। সেটাই দেখা যাচ্ছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন