ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারি (নববর্ষ) বা নওরোজ পালনঃ
ইসলাম
হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত,
একমাত্র
পরিপূর্ণ, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত, নিয়ামতপূর্ণ,
অপরিবর্তনীয় ও মনোনীত
দ্বীন। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকবে। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক “সূরা আলে ইমরানের” ১৯ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বলেন, “নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহ পাক-এর কাছে
একমাত্র দ্বীন।”
আল্লাহ
পাক “সূরা মায়িদার” ৩ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আরো ইরশাদ করেন, “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে (দ্বীন ইসলামকে)
কামিল বা পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত তামাম বা পূর্ণ করে দিলাম এবং
আমি তোমাদের দ্বীন ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট রইলাম।”
পবিত্র দ্বীন
ইসলামে থার্টি ফাষ্ট নাইট , বছরের প্রথম দিন বা নওরোজ পালনের কোন দলীল নেই। যারা
থার্টি ফার্ষ্ট নাইট পালন করবে তারা সম্পূর্ণ ইসলাম থেকে খারীজ। এবং বিধর্মী এক
উৎসব মুসলমান হিসাবে পালন করার জন্য বেঈমান হবে।
থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারী পালনের ইতিহাস:
ইতিহাসের
তথ্য অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করে। ১লা জানুয়ারি
পালনের ইতিহাস ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত নয়। পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের
দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার
প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার [খৃস্টানদের তথাকথিত ধর্মযাজক,
দুশ্চরিত্র (যার
বিবাহ বহির্ভূত একটি সন্তান ছিল] পোপ গ্রেগরীর নামানুসারে যে ক্যালেন্ডার) অনুযায়ী
নববর্ষ পালন করা হচ্ছে। ইরানে নববর্ষ বা নওরোজ শুরু হয় পুরনো বছরের শেষ বুধবার এবং
উৎসব চলতে থাকে নতুন বছরের ১৩ তারিখ পর্যন্ত।
সাধারণভাবে
প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট
জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত
নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান হতেই ইহা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বহিয়া
মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে। মেসোপটেমিয়ায়
এই নববর্ষ বা আকিতু শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো
মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষূবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর।
মিসর, ফিনিসিয়া
ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। গ্রীকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১
মার্চ এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩-এর পরে ১ জানুয়ারিতে। ইহুদীদের নববর্ষ বা রোশ হাসানা শুরু হয় তিসরি মাসের প্রথম
দিন গোঁড়া ইহুদীদের মতে সেই মাসের দ্বিতীয় দিন। মোটামুটিভাবে তিসরি মাস হচ্ছে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর।
মধ্যযুগে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ,
তারা ধারণা করতো,
এদিন দেবদূত
গ্যাব্রিয়েল যিশুমাতা মেরির কাছে যিশু খ্রিস্টের জন্মবার্তা জ্ঞাপন করে।
অ্যাংলো-স্যাকসন ইংল্যান্ডে নববর্ষের দিন ছিল ২৫ ডিসেম্বর। পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে
নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে।
বাদশাহ আকবরের ফরমান অনুযায়ী আমীর ফতেহ উল্লাহ্ শিরাজী উদ্ভাবিত বাংলা ফসলি
সাল চালু হয় ১০ মার্চ ১৫৬৩ সালে। ইংরেজ আমলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হলেও রাজস্ব আদায়ে ও অভ্যন্তরীণ
ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলা সাল তথা ফসলী সন বেশি ব্যবহার করা হতো।
নওরোজ বা নববর্ষ পালনের উৎস পারস্যের অগ্নি
উপাসক তথা মজুসীদের থেকে : “ঐতিহ্যমতে
প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খৃষ্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের
প্রবর্তন করেছিলো। সেই হতে যুগে যুগে উদযাপিত হইয়া ইহা জাতীয় আনন্দময় নববর্ষ
দিবসে পরিণত হইয়াছে। এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত
নববর্ষের জাতীয় উংসব। ইরান হতেই ইহা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বহিয়া
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে। পারসিক কালচারে
সমৃদ্ধ কাট্টা শিয়া রাষ্ট্র ইরানে এখনো ইহা জাতীয় দিবস এবং দেশের সকল অধিবাসীর
মহা আনন্দ উৎসবের সঙ্গে উদযাপন করিয়া থাকে, ২২-২৪ মার্চ সেখানে ঈদ-ই নওরোজের
রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন।” (দলীল- ইসলামী
বিশ্বকোষ ১৩ তম খন্ড ৬০৯ পৃষ্ঠা। প্রকাশনা-
ইসলামী ফাউন্ডেশন।)
নওরোজ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের উৎসব : “পারস্যের
সুপ্রাচীন কাল হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইহা ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব হিসেবে চিরদিন
বিরাট আনন্দ উৎসবের সঙ্গে পালিত হইয়া আসিতেছে।”(দলীল- ইসলামী
বিশ্বকোষ ১৩ তম খন্ড ৬০৯ পৃষ্ঠা। প্রকাশনা-
ইসলামী ফাউন্ডেশন)
বাদশাহ হুমায়ূনের আমলে শিয়াদের প্রধান্যের
কারনে তাদের দ্বারাই ভারতে তথা বাংলাদেশে নওরোজ বা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় : “মুঘল
সম্রাট হুমায়ুন পারস্য সম্রাট ২য় শাহ তাহমাসপ এর সৈন্যের সহায়তায় দ্বিতীয়বার
পিতার সিং হাসন অধিকার করিলেও (১৫৫৬ খৃ) তখন হতে উপমহাদেশের ব্যাপকভাবে ইরানী
শিয়াগণের আগমন ঘটিতে থাকে এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক রীতিনীতিতে ইরানী (শিয়া)
প্রভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতে থাকে। নওরোজ উৎসব এই সময় হতেই সাম্রাজ্যের সর্বত্র
উদযাপিত হতে হতে থাকে। আগ্রা ও দিল্লীতে এই দিনে বিরাট রাষ্ট্রীয় ভোজ এবং
সর্বসাধারনের মেলা,
ক্রীড়া, রাত্রে বাতি জ্বালানো উৎসব হইতো কিন্তু বিশেষ উৎসবটি হত
রাজপ্রাসাদ এলাকাতে বিশিষ্ট ব্যক্তিগনের সমাবেশ। (দলীল- ইসলামী
বিশ্বকোষ ১৩ তম খন্ড ৬০৯ পৃষ্ঠা)
নববর্ষ পালন দ্বীন- ই- ইলাহীর প্রবর্তক আকবরের
আরেক প্রচলন : “সুলতানী
আমলে এই দেশের সমাজ জীবন প্রচলিত উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যে নববর্ষ বা নওরোজের কোন
উল্লেখ নাই। বস্তুত নববর্ষ বা নওরোজ উৎসব এবং তা সম্রাট আকবরের আমলে নতুন সন আকবরী
সন বা ফসলী সন প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আসিয়াছে।
সম্রাটের ফরমানে প্রত্যেক সনের রাষ্ট্রীয় ছুটির দিনগুলো উল্লেখিত ছিলো, সকলের আগে “নওরোজের কয়েকদিন”এবং নির্দেশ ছিলো যে, প্রত্যেক শহরে ও গ্রামে গ্রামে সেই উপলক্ষে যেন ভোজ ও উৎসব করা হয়।” (দলীল- ইসলামী বিশ্বকোষ)
সম্রাটের ফরমানে প্রত্যেক সনের রাষ্ট্রীয় ছুটির দিনগুলো উল্লেখিত ছিলো, সকলের আগে “নওরোজের কয়েকদিন”এবং নির্দেশ ছিলো যে, প্রত্যেক শহরে ও গ্রামে গ্রামে সেই উপলক্ষে যেন ভোজ ও উৎসব করা হয়।” (দলীল- ইসলামী বিশ্বকোষ)
পূর্বে ভারতবর্ষে নওরোজের প্রচলন ছিলো না : এ উপমহাদেশে বিভিন্ন ইরানী রীতিনীতি প্রচলিত হতে থাকলেও প্রাক মুঘল যুগে কোথাও
নওরোজ পালিত হয়েছিলো বলে জানা যায় না।” (দলীল-ইসলামী
বিশ্বকোষ ১৩/৬০৯)
মুসলমানদের সাংস্কৃতিতে নওরোজ কখনোই গৃহীত হয়
নাই : “ফার্সী
নববর্ষের দিন, আরবী গ্রন্থসমূহে প্রায় নওরোজরূপে উল্লেখিত ( কালকাশান্দী, সুবহুল আশা,
২য় খন্ড ৪০৮ পৃষ্ঠা)।
পারস্যের সৌরসালের ইহা ছিলো প্রথম দিন এবং মুসলিম চন্দ্র সহ হিজরীতে ইহা গৃহীত হয়
নাই।” (দলীল- ইসলামী
বিশ্বকোষ ১৩ তম খন্ড ৬০৯ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত ঐতিহাসিক পর্যালোচনা থেকে জানা গেলো নওরোজ বা
নববর্ষ উৎসব পালন মূলত পারসিক অগ্নি উপাসকদের দ্বারা, এবং
পরবর্তীতে এর বিস্তার হয় ইরানের শিয়াদের মাধ্যমে। তারপর দ্বীনে ইলাহী প্রবর্তক
কাফির বাদশা আকবর এটা রাষ্ট্রীয় ভাবে পালনের ফরমান জারি করে। এদিন উৎসবের নামে
তাদের বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রম, মদ পান, জুয়া
ইত্যাদি অনৈসলামিক কার্যকলাপ হয়ে থাকতো। শুধু তাই নয় এটা ছিলো ধর্মনিরপেক্ষ একটি
অনুষ্ঠান, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নাজায়িয।
লক্ষ লক্ষ ওলী আল্লাহ এই উপমহাদেশে আগমন করেছেন কখনো কারো দ্বারা এই আমল করতে দেখা যায় নাই। এবং ১৫শ বছর মুসলিম ইতিহাসে নববর্ষ পালনের কোন প্রমানও নেই। তাই এটা সুস্পষ্ট বিদয়াত এবং বিধর্মীদের রীতি অনুসরন হওয়াতে নাজায়িয হারাম।
বর্ষবরণের
সাথে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুভূতি যোগটা সে শুরু থেকেই ছিলো বা বর্ষবরণকারীরা ধর্মীয়
বিশ্বাসের আলোকেই তা করতো। অথবা বর্ষবরণকে তাদের বিশেষ ধর্মীয় আচার বলে বিশ্বাস
করতো। মজুসী বা অগ্নি উপাসকরা এখনো বর্ষবরণকে সরকারিভাবেও ব্যাপক জাঁকজমকভাবে পালন
করে থাকে। একে তারা তাদের ধর্মীয় অনুষঙ্গ মনে করে এবং একে নওরোজ বা নতুন দিন বলে
অভিহিত করে।
আর নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন পালন যে ইসলামে
নিষিদ্ধ তার স্পষ্ট দলীল: হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَالَ: ” مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ؟ ” قَالُوا: كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ»
“হযরত নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করলেন, তখন তাদের দু’টি দিন ছিল, যেখানে
তারা খেলা-ধুলা করত। তিনি বললেন: এ দু’টি দিন কি? তারা বলল: আমরা এতে জাহিলি যুগে
খেলা-ধুলা করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: নিশ্চয়
আল্লাহ তাআলা তার পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন: ঈদুল আদহা ও ঈদুল
ফিতর” (আবু দাউদ
শরীফ ১১৩৪, আহমদ:
১৩২১০, হাকেম:
১১২৪)
ঐ দু’টি
দিন ছিল ‘নওরোজ’ বা নববর্ষ। অর্থাৎ সৌরবর্ষের প্রথম দিন এবং ‘মেহেরজান’ বছরে এইদিন
রাত্রি-দিন সমান হয়।
যেটা হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: مَنْ تَنَافَى أَرْضَ الأَعَاجِمِ فَصَنَعَ نَيْرُوزَهُمْ وَمَهْرِجَانِهِمْ حُشِرَ مَعَهُمْ
অর্থ: যে অনারব দেশ বিচরণ করে, অতঃপর তাদের নওরোজ ও মেহেরজান উৎযান করে, তাদের সাথে
তাকে উঠানো হবে” (সুনানে
বায়হাকী ২য় খণ্ড, ৩২৫
পৃষ্ঠা) ইবনে
তাইমিয়া এই হাদীস সহীহ বলেছে।
ইবনে তাইমিয়াহ বলেছে : “এ হাদীস প্রমাণ করে যে, মুসলমানদের
জন্য কাফেরদের উৎসব পালন করা হারাম। কারণ, রাসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদের জাহিলী যুগের দু’টি উৎসব বহাল না রেখে
রহিত করে দিয়েছেন। তাদের রীতি অনুযায়ী সেই দুইদিন তাদের আমোদ-উৎসবের অনুমতি দেননি। বরং তা
রদ করে বলেছেন—“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দু’টি বদল করে
দিয়েছেন।” এর দাবী হচ্ছে–পূর্বের আমল ত্যাগ করা। কারণ, বদল করার
পর উভয় বিষয়কে জমা করা যায় না। কেননা, বদল শব্দের অর্থ হলো, একটি
ত্যাগ করে অপরটি গ্রহণ করা।”। (ফাইজুল
কাদির, ৪র্থখণ্ড, ৫১১ পৃষ্ঠা)
‘উক্ত
হাদীছ দ্বারা নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত দুই দিন ব্যতীত অন্যান্য যাবতীয় উৎসব রহিত করেছেন এবং তার মুকাবিলায় উক্ত
দু’টি দিনকে সাব্যস্ত করেছেন। ‘নওরোজ (নববর্ষ) ও মেহেরজান সহ কাফিরদের যাবতীয়
উৎসবকে সম্মান প্রদর্শন করা যে নিষিদ্ধ উক্ত হাদীছে তার দলীল রয়েছে’। ইবনু হাজার
বলেন, ‘মুশরিকদের উৎসব সমূহে খুশী করা কিংবা তাদের মত উৎসব করা উক্ত হাদীছ দ্বারা
অপসন্দনীয় প্রমাণিত হয়েছে’। শায়খ আবু হাফছ আল-কাবীর হানাফী বলেন, ‘এসব
দিনের সম্মানার্থে মুশরিকদের যে একটি ডিমও উপঢৌকন দিল, সে
আল্লাহর সাথে কুফরী করল’। কাযী আবুল মাহাসেন হাসান মানছূর হানাফী বলেন, ‘এ দিনের
সম্মানার্থে কেউ যদি ঐ সব মেলা থেকে কোন জিনিষ ক্রয় করে কিংবা কাউকে কোন উপঢৌকন
দেয়, সে কুফরী করল। এমনকি সম্মানার্থে নয় বরং সাধারণভাবেও যদি এই মেলা থেকে কিছু
ক্রয় করে কিংবা কাউকে এই দিনে কিছু উপঢৌকন দেয়, তবে সেটিও মাকরূহ’ (মির‘আত শরহ মিশকাত, ‘ছালাতুল ঈদায়েন’ অধ্যায় ৫/৪৪-৪৫ পৃঃ)
সূতরাং
দেখা গেলো, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পর মদীনা শরীফ গিয়ে ঐ
এলাকাবাসীর দুটি উৎসব বন্ধ করেছিলেন। একটি হচ্ছে, বছরের প্রথম দিন উদযাপন বা নওরোজ; অন্যটির
নাম ছিলো ‘মিহিরজান’। এ উৎসবের দুটির বিপরীতে চালু হয় মুসলমানদের দুই ঈদ। (তাফসিরসমূহ
দেখতে পারেন) মূলত: নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন পালন করার রীতি ইসলামে নেই, এটা
পার্সী মজুসীদের (অগ্নিউপাসক) অনুকরণ।
নওরোজ বা বছরের পহেলা দিন সর্ম্পকে উলামায়ে
কিরামগনের মতামত:
(১) ইমাম
ফখরুদ্দীন উসমান বিন আলী আয যাইলায়ী বলেন: “নওরোজ ও মেলার নামে কিছু দেয়া নাজায়েয। এ দুই দিনের নামে প্রদত্ত
হাদিয়া হারাম; বরঞ্চ কুফর”। (গ্রন্থ – তাবইনুল হাকায়েক : ৬/২২৮)
(২) ইমাম হাফস কবীর রহমতুল্লাহি বলেন:
(২) ইমাম হাফস কবীর রহমতুল্লাহি বলেন:
(ক) “নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে, তবে তার ৫০ বৎসরের আমল থাকলে তা বরবাদ হয়ে যাবে”
(খ) “যে ব্যক্তি নওরোজের দিন এমন কিছু খরিদ করল যা সে পূর্বে খরিদ করত না, এর মাধ্যমে সে যদি ঐ দিনকে সম্মান করতে চায় তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে।”
(৩) হাম্বলি মাযহাবের ফিকাহর গ্রন্থ ‘আল- ইকনা’ তে বলা
হয়েছে- “কাফিরদের উৎসবে যোগদান করা, সেই দিন উপলক্ষে বেচা- বিক্রি করা ও উপহার বিনিময় করা হারাম”।
বিধর্মীদের রীতিনীতি অনুসরন করা সর্ম্পকে
শরীয়তের ফয়সালা: হযরত আবু উমামা বাহেলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন– “যে
ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কৃষ্টি-কালচারের অনুকরণ করবে, সে তাদের
অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে এবং যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়কে মহব্বত করবে, তাদের
সাথে তার হাশর হবে।” (সুনানে আবু
দাউদ, হাদীস নং
৩৫১৪)
সূতরাং উক্ত হাদীস শরীফের আলোকে বিধর্মীদের কোন সাদৃশ্য রাখা যাবে না। রাখলে
অবশ্যই ধ্বংশ হয়ে যাবে। নওরোজ যেহেতু বিধর্মীদের কালচার সেহেতু কোনভাবেই নওরোজ পালন করা যাবে না।
আরেকটা হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা অন্ধকার রাতের ঘনঘটার ন্যায় ফেতনার পূর্বে দ্রুত আমল কর [যখন] কোন
ব্যক্তি ভোর করবে মুমিন অবস্থায়, অতঃপর সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়; অথবা
সন্ধ্যা করবে মুমিন অবস্থায়, আর ভোর করবে কাফির অবস্থায়। মানুষ তার দ্বীনকে বিকিয়ে দিবে
দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৩)
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারি (নববর্ষ)
পালনের অবৈধতাঃ
সংবিধানের ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। সে প্রেক্ষিতে দেশে ইংরেজি ভাষাসহ বিভিন্ন উপজাতীয় ভাষার
ঊর্ধ্বে যেমন রাষ্ট্রভাষা বাংলার মর্যাদা ও প্রাধান্য তেমনি সংবিধানের ২ নম্বর ধারায় বর্ণিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের কথা স্বীকারের প্রেক্ষিতে অন্যান্য ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীর উপরে ইসলাম ও মুসলমানের
মর্যাদা ও প্রাধান্য স্বীকৃত হওয়া আবশ্যক এবং ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও অনেক বেশি হওয়া কর্তব্য। যা
মূলত প্রচলিত সংবিধানেরই ব্যাখ্যা।
মূলকথা
হলো- সংবিধানের ২ নম্বর ধারায় বর্ণিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম-এর স্বীকারের প্রেক্ষিতে
বিজাতীয় সংস্কৃতী থার্টি ফাস্ট নাইটসহ কোন ইসলাম বিরোধী কাজ গ্রহণযোগ্য হতে
পারেনা। ৯৮
ভাগ মুসলমানের দেশের সরকারের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- সরকারীভাবে থার্টি ফাস্ট
নাইটসহ সকল ইসলাম বিরোধী কাজ বন্ধ করে দেয়া এবং সরকারীভাবে থার্টি ফাস্ট নাইটসহ
সকল ইসলাম বিরোধী কাজ থেকে মুসলমানদের বিরত রাখা অর্থাৎ মুসলমানদেরকে ইসলাম পালনে
বা ইসলামের উপর ইস্তিক্বামত থাকার ব্যাপারে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করা।
থার্টি ফার্ষ্ট নাইটের নামে যায় হয়: এ রাতে যুবক যুবতীরা বেহায়াপনায় লিপ্ত। মদপান সহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়। অশ্লীলতা সহ যতপ্রকার অনাচার আছে সবাই তা করে। তাহলে এমন অবৈধ কাজ কি করে মুসলামানরা করতে পারে?
তাই যে
কোন নওরোজ সেটা থার্টি ফাস্ট নাইট হোক, পহেলা নববর্ষ হোক কিংবা পহেলা
মুহররম হোক, বিজাতীয় রীতি হিসেবে প্রতেকটি ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হিন্দুরা পহেলা বৈশাখে ঘট পুজা গনেষ পুজা করে এই দিনে, খ্রিষ্টানরা
থার্টিফাস্ট নাইট নামক অশ্লীল কর্মকাণ্ড করে আর অগ্নি উপাসকরা নওরোজ করে। কিন্তু কোন মুসলমান ইতিহাসে এসব নববর্ষের কোন দৃষ্টান্ত আছে
কি ?? আল্লাহ পাক হিফাযত করুন। আমীন।
অনেক কিছু জানলাম। আল্লাহ পাক আমাদের এসব হারাম থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।
উত্তরমুছুনএমন দলিল ভিত্তিক লেখার জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম জাযাহ দান করুন। আমিন।
ধন্যবাদ
উত্তরমুছুন