বর্তমান সময়ে করোনা নামক গজবকে
কেন্দ্র করে মুসলমান নামধারী কিছু মানুষ ছোঁয়াচে রোগের কথা সমাজে খুব প্রচার
করছে। এরা ছোঁয়াচে রোগের কথা বলে পবিত্র মসজিদে নামায বন্ধের মত কাজও করে যাচ্ছে।
নাউযুবিল্লাহ। তাদের এই ঈমান ধ্বংসী ফতোয়াতে বিভ্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঈমান
নষ্ট করছে। নাউযুবিল্লাহ। তাই মুসলমানদের এ বিষয়ে কি আক্বীদা থাকা দরকার সে বিষয়ে
পবিত্র শরীয়ত কি বলে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হলো,
ছোঁয়াচে রোগ বিষয়ে মুসলমানদের মৌলিক যে আক্বীদা রাখতে হবে:
وَقَالَ عَفَّانُ حَدَّثَنَا سَلِيمُ بْنُ حَيَّانَ حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مِينَاءَ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ عَدْوى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ.
হযরত আবু হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই, কুলক্ষণ বলে কিছু নেই, পেঁচা অশুভের লক্ষণ
নয়, ছফর মাসে কোন অশুভ নেই। (বুখারী শরীফ ৫৭০৭, বুখারী
শরীফ ৫৭১৭, মুসলিম শরীফ ৫৯২০, ইবনে
মাজাহ ৮৬, মুসনাদে আহমদ ১৫৫৪, সহীহ
ইবনে হিব্বান ৫৮২৬, মুসনাদে বাযযার ৭১৪৭, মুসনাদে
তয়লাসী ২০৭৩, সুনানে কুবরা নাসাঈ ৯২৩২, মুসনাদে
আবু ইয়ালা ৭৯৮, সুনানে কুবরা বায়হাকী ১৪৬১৯)
হযরত সা’দ ইবনু মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
كَانَ يَقُولُ " لاَ هَامَةَ وَلاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, পেঁচা অশুভ নয়, ছোঁয়াচে রোগ নেই এবং
কোন জিনিস অশুভ হওয়া ভিত্তিহীন। (আবু দাউদ শরীফ ৩৯২১, ৩৯১৬, ৩৯১২)
উপরোক্ত ছহীহ হাদীছ শরীফ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, দ্বীন ইসলামে
ছোঁয়াচে রোগের কোন অস্তিত্ব নেই। কারন স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ছোঁয়াচে রোগ বলে কোন রোগ না থাকার বিষয়কে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করা মানে এটা বিশ্বাস করা রোগের নিজস্ব ক্ষমতা
আছে, নিজ ক্ষমতায় রোগ কারো উপর সংক্রমন করতে পারে। যা স্পষ্ট শিরক। রোগ দেয়ার মালিক
মহান আল্লাহ পাক। এরপরও কেউ যদি ছোঁয়াচে রোগের কথা বিশ্বাস করে সে তাহলে এ বিষয়ে
মৌলিক আক্বীদা থেকে বিচ্যুৎ হয়ে পথভ্রষ্ট হিসাবে চিহিৃত হবে। কারন পবিত্র দ্বীন
ইসলাম এ কোন একটা বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা করা হলে কেউ সেটা অস্বীকার করলে কুফরী
হবে।
ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করা জাহেলী যুগের
বৈশিষ্ট:
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "
أَرْبَعٌ فِي أُمَّتِي مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ لَنْ يَدَعَهُنَّ النَّاسُ
النِّيَاحَةُ وَالطَّعْنُ فِي الأَحْسَابِ وَالْعَدْوَى أَجْرَبَ بَعِيرٌ
فَأَجْرَبَ مِائَةَ بَعِيرٍ مَنْ أَجْرَبَ الْبَعِيرَ الأَوَّلَ وَالأَنْوَاءُ
مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ
حَسَنٌ
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক
করেন, আমার উম্মতের মাঝে জাহিলী যুগের চারটি বিষয় আছে। তারা কখনও এগুলো (পুরোপুরি)
ছাড়তে পারে না: মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ সহকারে ক্রন্দন করা, বংশ তুলে গালি দেওয়া, ছোঁয়াচে রোগ
সংক্রমিত হওয়ার ধারণা করা, যেমন একটি উট সংক্রমিত হলে একশ’টি উটে তা সংক্রমিত হওয়া।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রথমটি কিভাবে সংক্রমিত হল? আর নক্ষত্রের প্রভাব মান্য করা
অর্থাৎ অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি হলো। নাউযুবিল্লাহ। (তিরমিযী
শরীফ ১০০১)
জাহিলী যুগের বৈশিষ্ট সমূহের একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে
ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস রাখা। সূতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণ হলো, ছোঁয়াচে রোগের প্রতি
বিশ্বাস রাখা মু’মিনদের আক্বীদা না বরং জাহেলী যুগের আক্বীদা। তাই যারা আজ
ছোঁয়াচে রোগের কথা বিশ্বাস করে এবং এ আক্বীদা প্রচার করে তারা হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভবিষ্যৎবানী অনুযায়ী জাহেলী যুগের বৈশিষ্ট
বহন করছে।
জাহিলী যুগের ছোঁয়াচে রোগের বদ আক্বীদা রোধ করার জন্য
‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ এই হাদীছ শরীফের অবতারনা:
হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, لاَ عَدْوى বা ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই।
অর্থাৎ কোন রোগের নিজস্ব এ ক্ষমতা নেই যে, কাউকে সংক্রমণ করবে। মহান আল্লাহ
পাকের তরফ থেকে রোগ আসে এর শিফাও মহান আল্লাহ পাক দিয়ে থাকেন। রোগের নিজস্ব কোন
ক্ষমতা নেই যে সে কোন প্রানীকে সংক্রমিত করবে।
‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা জাহিলী যুগের সেই বিশ্বাসকে বন্ধ করা হয়েছে যে, জাহিলী যুগে লোকেরা বিশ্বাস করতো রোগীর সংস্পর্শে থাকলে রোগ তার নিজস্ব ক্ষমতায় অন্যের দেহে চলে আসে। অথচ রোগের সংক্রমণ করার ক্ষমতাকে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী বিশ্বাস। সেই কুফরী বিশ্বাসকে এ পবিত্র হাদীছ শরীফের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুনানে কুবরা বায়হাকীতে ছোঁয়াচে রোগের আলোচনা করতে গিয়ে একটা অধ্যায়ের শিরোনামে বিষয়টা স্পষ্ট করেছেন,
‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা জাহিলী যুগের সেই বিশ্বাসকে বন্ধ করা হয়েছে যে, জাহিলী যুগে লোকেরা বিশ্বাস করতো রোগীর সংস্পর্শে থাকলে রোগ তার নিজস্ব ক্ষমতায় অন্যের দেহে চলে আসে। অথচ রোগের সংক্রমণ করার ক্ষমতাকে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী বিশ্বাস। সেই কুফরী বিশ্বাসকে এ পবিত্র হাদীছ শরীফের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুনানে কুবরা বায়হাকীতে ছোঁয়াচে রোগের আলোচনা করতে গিয়ে একটা অধ্যায়ের শিরোনামে বিষয়টা স্পষ্ট করেছেন,
باب: لاَ عَدْوَى عَلَى الْوَجْهِ
الَّذِى كَانُوا فِى الْجَاهِلِيَّةِ يَعْتَقِدُونَهُ مِنْ إِضَافَةِ الْفِعْلِ
إِلَى غَيْرِ اللَّهِ تَعَالَى
“অধ্যায়: ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই
এই নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে জাহিলী যুগের মানুষের আক্বীদার কারনে। তারা এটা গাইরুল্লাহর
দিকে সম্বন্ধযুক্ত করতো। ” [অর্থাৎ তাদের ধারনা ছিলো রোগ ব্যাধির নিজস্ব ক্ষমতা
রয়েছে যেকারনে কোন সুস্থ মানুষ কোন রোগীর সংস্পর্শে গেলে সেও সংক্রমিত হবে। তাদের
এ শিরকি আক্বীদা রদ করতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিষয়টা
স্পষ্ট করে দিয়েছেন ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই] (সুনানে কুবরা বায়হাকী ৭ম খন্ড
৩৫১ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা দারু কুতুব আল ইলমিয়া, বৈরূত
লেবানন)
যেকারনে আমরা দেখতে পাই, পরবর্তীতে এ প্রসঙ্গে
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা প্রশ্ন করেছেন যাতে আমরা এ বিষয়ে
স্পষ্ট ধারনা অর্জন করতে পারি ও বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষন করতে পারি। পবিত্র হাদীছ
শরীফে বর্ণিত আছে,
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ إِنَّ
رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ عَدْوى وَلاَ صَفَرَ وَلاَ هَامَةَ
فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَمَا بَالُ إِبِلِي تَكُونُ فِي
الرَّمْلِ كَأَنَّهَا الظِّبَاءُ فَيَأْتِي الْبَعِيرُ الأَجْرَبُ فَيَدْخُلُ
بَيْنَهَا فَيُجْرِبُهَا فَقَالَ فَمَنْ أَعْدَى الأَوَّلَ.
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই, ছফর মাসের কোন অশুভ
আলামত নেই, পেঁচার মধ্যেও কোন আশুভ আলামত নেই। তখন এক বেদুঈন ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে আমার
এ উটের এ অবস্থা কেন হয়? সেগুলো যখন চারণ ভূমিতে থাকে তখন সেগুলো যেন মুক্ত হরিণের
পাল। এমন অবস্থায় চর্মরোগাগ্রস্থ উট এসে সেগুলোর পালে ঢুকে পড়ে এবং এগুলোকেও চর্ম
রোগে আক্রান্ত করে ফেলে। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করলেন, তাহলে প্রথমটিকে চর্ম রোগাক্রান্ত কে করেছে? (বুখারী শরীফ ৫৭১৭, মুসলিম শরীফ ২২২০)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফের মাধ্যমে আক্বীদা স্পষ্ট
করে দেয়া হয়েছে। কেউ যাতে কোনভাবেই ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস না করে সেটা পরিষ্কার করে
দেয়া হয়েছে। কারন পবিত্র হাদীছ শরীফে প্রথমেই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ফয়সালা মুবারক করেছেন ‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’। এরপর যখন উনাকে
চর্মরোগে আক্রান্ত উটের সাথে অন্য উট রাখার কারনে তাদের মধ্যেও কিছু উটের চর্মরোগ
হওয়ার বিষয়টা বলা হলো তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর
পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ এটা আরো
স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রথম উটটি যেভাবে আক্রান্ত হয়ে
এগুলোও সেভাবে হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম উট কারো সংস্পর্শ ছাড়া যেভাবে আল্লাহ পাক উনার
প্রদত্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছে অন্য উটও সেভাবে রোগাক্রান্ত হয়েছে, কোন ছোঁয়াচে রোগে
আক্রান্ত হয়নি। কেননা ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিন্দুমাত্রও যদি কোন কারন
থাকতো (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক) তাহলে সেটা উল্লেখ করা হতো চর্মরোগে আক্রান্ত উট
বিষয়ক প্রশ্নে উত্তর। কিন্তু এ ধরনের জাহিলী আক্বীদার দরজা বন্ধ করার জন্য স্পষ্ট
করে অন্য উটগুলো কিভাবে অক্রান্ত হলো তার কারনও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি বলে দিলেন। আর এটাই আক্বীদা ও ঈমান। এর ব্যতিক্রম আক্বীদা রাখলে সে
স্পষ্ট শিরক করবে। নাউযুবিল্লাহ।
এমন কিছু হাদীছ শরীফ রয়েছে যা দ্বারা
বোঝা যায় ছোঁয়াচে রোগ আছে সেগুলোর সমাধান কি ?
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছি পবিত্র দ্বীন ইসলামের আক্বীদা হচ্ছে
ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই। সেই সাথে ছোঁয়াচে রোগের বিশ্বাস রাখা হচ্ছে জাহিলী যুগের
বৈশিষ্ট। কিন্তু বিভ্রান্ত বদ আক্বীদাধারী কিছুলোক স্পষ্ট দলীল থাকার পরও ছোঁয়াচে
রোগ প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন দলীলের অবতারনা করে। উল্লেখ্য, যেহেতু পবিত্র
বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত দ্বারা স্পষ্ট শব্দে প্রমাণিত হচ্ছে হয়েছে, لاَ عَدْوى বা ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই। (বুখারী
শরীফ ৫৭১৭) সেক্ষেত্রে অন্য কোন রেওয়ায়েত যদি পাওয়া যায় যা আপাতদৃষ্টিতে
ব্যতিক্রম মনে হয় তাহলে ব্যতিক্রম রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যা খুঁজতে ও বুঝতে হবে। সরাসরি
এসকল রেওয়ায়েত দেখে ছোঁয়াচে রোগ আছে এমন কথা বলা, আক্বীদা রাখা, প্রচার করা কুফরী
হবে। কারন এসকল রেওয়ায়েতের হাক্বীকত সম্পূর্ণ ভিন্ন বরং এসকল রেওয়ায়েত দ্বারাই
ছোঁয়াচে রোগ আছে বিশ্বাস করার মাধ্যমে ঈমান হারানো থেকে বাঁচার পথ দেখানো হয়েছে।
যেমন, একটা হাদীছ শরীফে
বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ
رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: لاَ يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى
مُصِحٍّ.
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন, রোগাগ্রস্থ উট যেন সুস্থ উটের সাথে
না রাখা হয়।” (মুসলিম শরীফ
৫৯০৫)
বাহ্যিকভাবে এ বর্ণনা দেখে হয়তো মনে হবে ছোঁয়াচে রোগ না থাকলে সুস্থ উটকে
অসুস্থ উটের কাছ থেকে আলাদা রাখতে বলার কারন কি?
করনও পরিষ্কার। আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী।
এ শিরক ও কুফর থেকে বাঁচানোর জন্যই মূলত সুস্থ উটকে অসুস্থ উটের কাছ থেকে আলাদা
রাখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ কেউ যদি তার সুস্থ পশুকে কোন রোগাক্রান্ত পশুর সাথে রাখলো
এবং স্বভাবিক প্রক্রিয়ায় সেখানকার কোন সুস্থ পশুও অসুস্থ হয়ে গেলো এমতাবস্থায় তার
মনে যদি কোনভাবে এ ধারণার উদ্রেক হয় যে, তার সুস্থ পশুকে সেই অসুস্থ পশুর
সাথে রাখার কারণেই সেই রোগ সংক্রামিত হয়েছে। তাহলে এ ধারনার কারনে তার ঈমান নষ্ট
হয়ে যাবে। সূতরাং ঈমানী দুর্বতলার কারনে কেউ যাতে শিরক কুফর করে না বসে তাই
সতর্কতামূলক পন্থা অবলম্বন করে সুস্থ উটকে অসুস্থ উটের থেকে আলাদা রাখতে বলা হয়েছে, ছোঁয়াচের কারনে নয়।
বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করে
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুনানুল কুবরা
বায়হাকী শরীফে এ বিষয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার জন্য একটা অধ্যায় কয়েম করেছেন এবং
তার শিরোনাম দিয়েছেন,
باب: لاَ يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ
فَقَدْ يَجْعَلُ اللَّهُ تَعَالَى بِمَشِيئَتِهِ مُخَالَطَتَهُ إِيَّاهُ سَبَبًا
لِمَرَضِهِ
অধ্যায়: অসুস্থ উট সুস্থ উটের সাথে রাখবে না। যেহেতু কখনো মহান আল্লাহ পাক
উনার ইচ্ছায় অসুস্থের সাথে সুস্থেকে রাখার পর (সুস্থ পশু) সেই রোগে আক্রান্ত হতে
পারে।” (সুনানে কুবরা বায়হাকী ৭ম খন্ড ৩৫২ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা:
দারু কুতুব আল ইলমিয়া , বৈরুত লেবানন)
এধরনের আক্রান্ত হওয়া ঈমানী পরীক্ষার অন্তর্ভূক্ত। তাই দূর্বল ঈমানের
অধিকারীরা যাতে সুস্থ পশুকে অসুস্থ পশুর সাথে রাখার কারনে ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত
হয়েছে এ আক্বীদা পোষন না করতে পারে তাই সর্তকতামূলক অসুস্থ উট সুস্থ উটের সাথে
রাখবে না এ হাদীছ শরীফ এসেছে।
সূতরাং এ ক্ষেত্রে মুসলমান
ঈমানদারমাত্রই এ আক্বীদা রাখতে হবে, অসুস্থ ব্যক্তি বা পশুর সংস্পর্শে
আসার কারনে তার সেই রোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংক্রমণ হয়নি। বরং উক্ত রোগ মহান আল্লাহ
পাক উনার হুকুমেই হয়েছে বলে বিশ্বাস রাখতে হবে।
আমরা দেখেছি বাহ্যিক কিছু
রেওয়ায়েত আছে যা দেখে কিছু মানুষ ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস করে বসে। অথচ ঐসকল
বর্ণনা দ্বারাই বরং প্রমাণ হয় ছোঁয়াচে রোগের আক্বীদা রাখা যাবে না। কেউ তেমন
বিশ্বাস করে বসলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। এ ধরনের আরো একটি বর্ণনা হাদীছ শরীফের
কিতাবে বর্ণিত আছে,
عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيدِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ
رَجُلٌ مَجْذُومٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاكَ فَارْجِعْ
হযরত আমর ইবনে শারীদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, বনী সাক্বীফের প্রতিনিধি দলে একজন ব্যক্তি
কুষ্ঠরোগী ছিলেন। তখন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম সে ব্যক্তির নিকট
সংবাদ পাঠিয়ে বললেন, “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বাইয়াত করে
নিয়েছি সুতরাং আপনি ফিরে যান।” (মুসলিম শরীফ ২২৩১)
এই হাদীছ শরীফ দেখিয়ে বাতিল ফির্কার লোকেরা বলে থাকে কুষ্ঠরোগ ছোঁয়াচে বলেই সেই কুষ্ঠরোগীকে আসতে না করা হয়েছে। উল্লেখ্য উক্ত ব্যক্তিকে ছোঁয়াচে রোগের কারনে আসতে না করা হয়নি। বরং যেহেতু কুষ্ঠের মত কষ্টসাধ্য রোগে তিনি আক্রান্ত ছিলেন তাই উনাকে কষ্ট করে আসতে না করা হয়েছে। যিনি রহমাতুল্লীল আলামীন ছল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন দয়া করে ইহসান করে উক্ত ব্যক্তির উপর রহম করে বলেছেন আপনার বাইয়াত নেয়া হয়েছে, কষ্ট করে আপনাকে আসতে হবে না, আপনি ফিরে যান। ছোঁয়াচে রোগের কারনে উনাকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে এমন আক্বীদা রাখা স্পষ্ট কুফরী। কারন আমরা আগেই জেনেছি ছোঁয়াচে রোগ বলতে ইসলাম উনার মধ্যে কিছু নেই।
এই বক্ত্যেবে স্বপক্ষে সহীহ হাদীছ শরীফ মওজুদ রয়েছে। ইমাম হযরত তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِ مَجْذُومٍ فَأَدْخَلَهُ مَعَهُ فِي الْقَصْعَةِ
ثُمَّ قَالَ كُلْ بِسْمِ اللَّهِ ثِقَةً بِاللَّهِ وَتَوَكُّلًا عَلَيْهِ
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন কুষ্ঠরোগীর হাত ধরলেন, অতঃপর তার হাতকে উনার সাথে (খাবার খাওয়ানোর জন্য) স্বীয়
খাবারে পাত্রে প্রবিষ্ট করলেন। এরপর বললেন,
মহান
আল্লাহ পাক উনার নামে খান, মহান আল্লাহ পাকের উপর ভরসা
রাখুন।” (তিরমিযী শরীফ ১৮১৭)
এখানে প্রশ্ন আসে যদি কুষ্ঠরোগ
ছোঁয়াচে হওয়ার কারনে বনী সাক্বীফ গোত্রের সেই ব্যক্তিকে ফিরে যেতে বলা হয় তাহলে এই
হাদীছ শরীফে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত একজনের
হাত ধরলেন, একই
পাত্রে খাবার খেলেন এর ব্যাখ্যা বাতিল ফির্কার লোকেরা কি দিবে? ব্যাখ্যা হচ্ছে
সেটাই, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত কুষ্ঠরোগীর হাত ধরে, একই পাত্রে
খাবার খাইয়ে এটাই দেখিয়ে দিয়েছেন যে ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই। আর বনী সাক্বীফের সে
ব্যক্তিকে ফিরে যেতে বলার কারন সে ব্যক্তির অসুস্থ হওয়ার কারনে এত রাস্তা অতিক্রম
করে আসতে যেন কষ্টে পতিত হতে না হয়।
এ কারনে আমরা পবিত্র হাদীছ
শরীফের মাধ্যমে জানতে পারি,
কুষ্ঠরোগীর
সাথে নির্দ্বিধায় সুস্থ মানুষের থাকা খাওয়া ইত্যাদির বর্ণনাও রয়েছে,
عَنْ عَائِشَة قَالَتْ لَنَا مَوْلًى مَجْذُوم فَكَانَ يَأْكُل فِي
صِحَافِي وَيَشْرَب فِي أَقْدَاحِي وَيَنَام عَلَى فِرَاشِي
উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা
ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের একজন আযাদকৃত গোলাম ছিলো যে কুষ্ঠরোগী ছিলো। সে আমার থালায় খাবার খেতো, আমার পেয়ালায় পানি পান করতো এবং আমাদের (বাড়ির) বিছানায়
ঘুমাতো।” (তাহযিবুল
আছার লি তাবারী ৪/৬,
ফতহুল বারী ১০/১৫৯, শরহে সহীহুল বুখারী লি ইবনে
বাত্তাল ৯/৪১০,
শরহে নববী আলা মুসলিম ৭/৩৯৩, তুহফাতুল
আহওয়াযী ৫/২০,
আওনুল মা’বুদ ৯/৮৭৬)
কুষ্ঠরোগের মত রোগ যদি ছোঁয়াচেই হতো তাহলে কি করে একজন কুষ্ঠরোগীকে একই পাত্রে খাবার, পানি, সেইসাথে বিছানা দেয়া হলো?
সূতরাং প্রমাণ হলো কোন রোগই
ছোঁয়াচে নয়। ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করা স্পষ্ট হাদীছ শরীফের বিরোধিতা ও কুফরী।
বাতিল ফির্কার লোকেরা ছোঁয়াচে
রোগ প্রমাণ করার জন্য বুখারী শরীফ থেকে আরেকটি দলীল দেয়ার চেষ্টা করে,
وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنْ الأَسَدِ
অর্থ: “কুষ্ঠরোগী থেকে এমনভাবে দূরে থাকো যেভাবে তুমি বাঘ
থেকে দূরে থাকো।” (বুখারী শরীফ ৫৭০৭)
অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হচ্ছে কুষ্ঠরোগ যেহেতু ছোঁয়াচে তাই এ রোগ থেকে বাঁচার জন্য বাঘের হাত থেকে বাঁচার মত সতর্ক হতে বলা হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে যারা হাদীছ শরীফখানার এ অংশ তুলে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তারা এই হাদীছ শরীফের পূর্ণাংশ উল্লেখ করে না। এই হাদীছ শরীফের প্রথমেই বলা হয়েছে,
سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم لاَ عَدْو‘ى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ وَفِرَّ مِنَ
الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنْ الأَسَدِ
হযরত আবু হুরায়রা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, ছোঁয়াচে
বলে কোন রোগ নেই,
কুলক্ষণ
বলে কিছু নেই, পেঁচা
অশুভের লক্ষণ নয়,
সফর
মাসের কোন অশুভ নেই।”
হাদীছ শরীফের শুরুতেই বলে নেয়া হয়েছে ‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ অর্থাৎ আক্বীদার বিষয়টা পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। তাহলে পরের অংশ ‘কুষ্ঠরোগী থেকে এমনভাবে দূরে থাকো যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাকো’ এ কথার তাৎপর্য কি? আর ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি কুষ্ঠরোগীর সাথে একসাথে এক পাত্রে খাবার খাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তাহলে এর ফয়সালা কি?
এ মর্মে হাদীছ শরীফের
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
فَإِنَّهُ لَا يُصِيبُكَ مِنْهُ شَيْءٌ إِلَّا بِتَقْدِيرِ اللَّهِ
تَعَالَى، وَهَذَا خِطَابٌ لِمَنْ قَوِيَ يَقِينُهُ، أَمَّا مَنْ لَمْ يَصِلْ
إِلَى هَذِهِ الدَّرَجَةِ فَمَأْمُورٌ بِعَدَمِ أَكْلِهِ مَعَهُ كَمَا يُفِيدُهُ
خَبَرُ: (فِرِّ مِنَ الْمَجْذُومِ)
“উক্ত বর্ণনায় কুষ্ঠরোগী বা সে ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে মহান আল্লাহ
পাক উনার প্রতি বিনয় ও ঈমান পোষণ করে খাবার খাওয়ার জন্য বলা হয়েছে এ কারণে যে, সেই রোগীর থেকে কোনকিছু তোমার নিকট মহান আল্লাহ পাকের
ফয়সালা ব্যাতিত পৌঁছবে না। আর এ সম্বোধন ঐ ব্যক্তির জন্য যার ঈমান ও ইয়াকীন মজবূত।
কিন্তু যে ব্যক্তি সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে নি, তার জন্য হুকুম হলো,
সে
ঐ ধরনের রোগীর সাথে খাবে না। যেমন এ ব্যাপারে অপর হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশনা
দেয়া হয়েছে যে, তুমি কুষ্ঠরোগী থেকে পলায়ন
করো।” (ফাইদ্বুল ক্বাদীর শরহু জামিউছ ছগীর, ৫/ ৪৩)
অর্থাৎ যাদের ঈমান ও ইয়াকিন দূর্বল যারা ছোঁয়াচে রোগের ধারনা করে বসে নিজের মূল্যবান ঈমান হারিয়ে বসতে পারে তাদের জন্য কুষ্ঠরোগী থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে। কারন কুষ্ঠরোগীর কাছে তারা যদি যায়, আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় তাদের যদি কুষ্ঠরোগ হয়ে যায় তখন তারা যদি আক্বীদা পোষন করে কুষ্ঠরোগীর সংস্পর্শে যাওয়ার কারনে ছোঁয়াচে রোগের হেতু তাদের এ রোগ হয়েছে সেটা শিরিক ও কুফরী হয়ে ঈমান নষ্ট হবে। এই ধরনের দুর্বল ঈমানের মানুষের জন্য সর্তকবাণী স্মরূপ কুষ্ঠরোগী থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে।
আর যারা সূদৃঢ় আক্বীদার অধিকারী যাদের বিশ্বাসে কোন অবস্থাতেই ফাটল ধরবে না সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের প্রতি অবিচল আস্থা থাকবে ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস রেখে ঈমান হারাবে না তাদের কুষ্ঠরোগীর সাথে একসাথে খাবারও খাওয়ার ব্যাপারেও উৎসাহিত করা হয়েছে। যা আমরা বিগতপর্বে আলোচনা করেছি।
এ ধরনের বিশুদ্ধ আক্বীদার
মানুষের জন্য বরং হাদীছ শরীফের মধ্যে বলা হয়েছে,
عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ كُلْ مَعَ صَاحِبِ الْبَلَاءِ تَوَاضُعًا لِرَبِّك
وَإِيمَانًا
হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু উনার থেকে বর্ণিত,
তিনি
বলেন, রোগাক্রান্ত
ব্যক্তির সাথে খাও তোমার প্রতিপালকের প্রতি বিনয় এবং উনার প্রতি দৃঢ় ঈমানের সাথে। (আওনুল
মা’বুদ শরহে সুনানে আবু দাউদ ৯/৮৭৫, জামিউস ছগীর ২/১৬৬, ফতহুল কবীর
২/৩০০, সবলুল
হুদা ওয়ার রাশাদ ১২/১৭২)
সূতরাং প্রমাণ হয়ে গেলো, কুষ্ঠরোগী থেকে বাঘের মত বেঁচে থাকার কথা শুধুমাত্র দুর্বল ঈমানের লোকদের জন্যই বলা হয়েছে।
সূতরাং প্রমাণ হয়ে গেলো, কুষ্ঠরোগী থেকে বাঘের মত বেঁচে থাকার কথা শুধুমাত্র দুর্বল ঈমানের লোকদের জন্যই বলা হয়েছে।
আর প্রকৃত কথা হচ্ছে, তোমরা সিংহের
আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন করো, কুষ্ঠরোগীর থেকেও সেভাবে পলায়ন করো- এটা হাদীছ নয়।
وعن عائشة : أن امرأة سألتها أكاد
رسول الله يقول فى المجذومين فروا منهم فراركم من الأسد ؟ فقالت عائشة كلا والله
ولكنه قال : لا عدوى فمن أعدى الأول وكان مولى لى أصابه ذلك الداء فكان يأكل فى
صحافى ويشرب فى أقداحى وينام على فراشى . قالوا : وقد أبطل رسول الله العدوى
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত রয়েছে, একদিন উনাকে একজন মহিলা
জিজ্ঞাসা করলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি কি এরূপ বলেছেন যে, তোমরা সিংহের
আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন করো, কুষ্ঠরোগীর থেকেও সেভাবে পলায়ন করো? জবাবে উম্মুল
মু’মিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম বলেন, মহান আল্লাহ পাকের ক্বসম! হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি এরূপ বলেননি। বরং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলতে কিছুই
নেই।
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেছেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে সংক্রামিত করলো?’ আর আমাদের
একজন আযাকৃত খাদেমা ছিলেন, যাঁর কুষ্ঠরোগ হয়েছিলো। তারপরেও
উক্ত খাদেমা আমার প্লেট -এ খাবার খেতেন, আমার বাটি মুবারক-এ
পানি পান করতেন এবং আমার বিছানা মুবারক-এ ঘুমাতেন। উনারা বলেন যে, আবশ্যই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছোঁয়াচে বা
সংক্রামক রোগকে বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন।” (শরহে বুখারী লি ইবনে বাত্তাল ৯/৪১০;
প্রকাশনা: মাকতাবাতুর রাশাদ, রিয়াদ)
সূতরাং হযতর উম্মুল মু’মিনীন
আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার বর্ণনা থেকে প্রমাণ হলো কুষ্ঠরোগী থেকে
এমনভাবে দূরে থাকো যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাকো এটা হাদীছ শরীফই নয়। এটা বানোয়াট
একটা কথা। তাই এটা দ্বারা ছোঁয়াচে রোগের পক্ষে দলীল দেয়া কখনোই যৌক্তিক হবে না।
বালিত ফির্কার লোকেরা ছোঁয়াচে রোগ প্রমাণ করতে যে হাদীছ শরীফখানা মূল দলীল
হিসাবে উপস্থাপন করে থাকে তা হচ্ছে,
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ عنِ النَّبِيِّ
صلى الله عليه وسلم قَالَ: إذَا سمِعْتُمْ الطَّاعُونَ بِأَرْضٍ، فَلاَ
تَدْخُلُوهَا، وَإذَا وقَعَ بِأَرْضٍ، وَأَنْتُمْ فِيهَا، فَلاَ تَخْرُجُوا
مِنْهَا
হযরত উসামা ইবনে যাইদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন তোমরা শুনবে যে, কোন স্থানে প্লেগ রোগ হয়েছে, তাহলে সেখানে প্রবেশ করো না। আর যখন কোন স্থানে সেই রোগের প্রাদুর্ভাব হয় এবং
তোমরা সেখানে থাকো, সেখান থেকে বের হয়ে যেয়ো না।” (বুখারী শরীফ ৫৭২৮, মুসলিম
শরীফ ৫৯০৫)
এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারক হাফিজুল হাদীছ হযরত ইমাম
কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি কয়েকটি কারন উল্লেখ করেছেন,
১) যখন কোন এলাকায় মহামারী বিস্তার লাভ করে তখন সে এলাকার নির্দিষ্ট কিছু
লোকদের উপর আল্লাহ পাক উনার ফয়সালা কায়েম হয়ে যায়। অর্থাৎ সে ঐ এলাকায় থাকলেও তার
সে রোগ হবে অথবা সে এলাকা ত্যাগ করলেও তা থেকে সে বাঁচতে পারবে না। তাই সে এলাকা
থেকে পালিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
২) যদি মানুষেরা মহামারী দেখে সে এলাকা থেকে বের হয়ে যায় তখন ঐ এলাকার আক্রান্ত ব্যক্তি চরম বিপদে পতিত হয়। কারন আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখাশোনা করার কেউ থাকে না এমনকি সে মারা গেলেও তাকে দাফনের কেউ থাকে না। আক্রান্ত ব্যক্তিকে এহেন বিপদের মধ্যে ফেলে তাই এলাকা ত্যাগ করতে না করা হয়েছে।
৩) কোন মাহামারীর কারনে যদি মানুষ সে এলাকা থেকে বের হয়ে যেতে শুরু করে তখন সবার দেখা দেখি সুস্থ ও শক্তিশালী লোকেরাও বের হয়ে যাবে। এর ফলে দুর্বল ব্যক্তিদের মন ভেঙ্গে যাবে। উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি এ বিষয়কে জিহাদের ময়দান থেকে পালয়নের সাথেও তুলনা করেছেন। কারন জিহাদের ময়দান থেকে কেউ পালালে তাদের দেখে দুর্বল লোকেদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে এবং শত্রুপক্ষ সম্পর্কে ভীতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
৪) বাহিরে বের হয়ে যাওয়া লোকেরা মনে করে যদি আমরা আক্রান্ত স্থানে থাকি তাহলে আমরাও আক্রান্ত হয়ে যাব আর ওখানে অবস্থানকারী লোকেরা ধারনা করে আমরা যদি বের হয়ে যাই তবে বেঁচে যাব। এটা ঈমানহানীকর বিষয়। তাই নিষেধ করা হয়েছে।
হযরত আরিফ ইবনে আবি জামরা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কোন বিপদ নাযিল হওয়ার থাকলে ঐ স্থানে অবস্থানকারীদের নিয়ন্ত্রন করা হয়, জমিনের ঐ অংশ (অর্থাৎ যেখানে মহামারী হচ্ছে) নিয়ন্ত্রিত হয়না। সূতরাং মহান আল্লাহ পাক যার উপর মহামারী নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিবেন তার উপর নাযিল হবেই সে যেখানেই বা যে এলাকাতেই যাক না কেন তার উপর সেটা নাযিল হবেই।
আর মহামারী আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশ করতে নিষেধ করার হেতু হচ্ছে ঐ এলাকায় গেলে
আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় যদি সে লোক আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে ছোঁয়াচে রোগের ধারনা করে
ঈমান নষ্ট করে বসবে। তাই এই ধরনে আক্বীদার লোকদের আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশ করতে
নিষেধ করা হয়েছে। (শরহে বুখারী, মাওয়াহেবু ল্লাদুন্নিয়াহ, শরহে
যারকানী)
সর্বোপরি, বুখারী শরীফের এই
হাদীছ শরীফ দ্বারা যা প্রমাণ হয়, মহামারী কবলিত স্থানে কেউ থাকলে তাকে সেখান থেকে
বের হয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে এ আক্বীদার ভিত্তিতেই যে, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কোন
রোগ নেই। আর এ আক্বীদা যেন তার মনে স্থান না পায় এ এলাকায় থাকলে সে আক্রান্ত হবে
আর ছেড়ে চলে গেল সে আক্রান্ত হবে না।
অপরদিকে উক্ত হাদীছ শরীফের মধ্যে মহামারী কবলিত স্থানে কাউকে যেতে নিষেধ করা
হয়েছে এ জন্য যে, যাতে সেখানে গিয়ে আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় সে রোগে আক্রান্ত
হয়ে যাতে ধারনা করে না বসে এ এলাকায় প্রবেশ করার কারনে সে আক্রান্ত হয়েছে।
হযরত ইবনে আব্দুল বার রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি এ বিষয়টা পরিষ্কার করে উনার কিতাবে বলেন,
أَمَّا قَوْلُهُ لَا عَدْوَى فَمَعْنَاهُ
أَنَّهُ لَا يُعْدِي شَيْءٌ شَيْئًا وَلَا يُعْدِي سَقِيمٌ صَحِيحًا وَاللَّهُ
يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ لَا شَيْءَ إِلَّا مَا شَاءَ
অর্থ: ‘ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছুই নেই’ এ হাদীছ শরীফের অর্থ হচ্ছে, কোন কিছুই কোন কিছুকে
সংক্রামিত করতে পারে না এবং কোন রোগী কোন সুস্থ ব্যক্তিকে সংক্রামিত করতে পারেনা।
বরং মহান আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় সবকিছু হয়। উনার ইচ্ছার বাইরে কোন কিছু হয় না।” (আল
ইস্তিযকার ৮/৪২২; প্রকাশনা: দারু কুতুব আল ইলমিয়া, বৈরুত
লেবানন)
সূতরাং মুসলমানদের আক্বীদা হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার
হুকুম ছাড়া কারো কোন রোগ হতে পারে না। সেই ভিত্তিতে প্রথম জনের যেভাবে মহান আল্লাহ
পাকের হুকুমে রোগ হয়েছে, তেমনি অন্যজনেরও যদি হয় মহান আল্লাহ পাকের হুকুমেই সেই রোগ হবে।
আর মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম না হলে কিছুতেই তার সেই রোগ হবে না। এমনকি আক্রান্ত
রোগীর সাথে একাসথে খেলে, থাকলে, স্পর্শ করলে কোন অবস্থাতেই না। এটাই আক্বীদা, এ আক্বীদাই সকল
মুসলমানদের পোষন করতে হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন