লা’মাযহাবীরা ৮ রাকাত তারাবী প্রমাণ করতে দ্বয়ীফ ও
অগ্রহনযোগ্য সনদে বর্ণিত হাদীছকেও ছহীহ বলতে লজ্জিত হয় না।
তারা ইবনে হিব্বান থেকে একটা হাদীছ শরীফ পেশ করে,
عن جابر رضى
الله عنه قال- صلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فى رمضان ليلة ثمان ركعة والوتر
অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা
করেন, তিনি বলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রমযান মাসে
রাত্রে আট রাকায়াত নামায পড়েছেন এবং বিত্র নামায আলাদা আদায় করেছেন। (ইবনে
হিব্বান ২৪০৯)
কয়েকটি কারণে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে
বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফখানা আট রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের পক্ষে দলীল হিসাবে
গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম কারণ, মুহাদ্দিসগণ উনাদের মতে উক্ত
হাদীছ শরীফখানা জঈফ বলে প্রমাণিত। ঊননা উক্ত হাদীছ শরীফের তিনজন রাবী জঈফ বলে
প্রমাণিত হয়েছেন।
উক্ত হাদীছ শরীফ-এর একজন রাবী হলেন-
ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ্ কুম্মী। উনার প্রসঙ্গে হযর ইমাম দারে কুৎনী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন(وهو ليس بالقوى) অর্থাৎ তিনি শক্তিশালী রাবী নন (বরং
দূর্বল) (তাহযীবুল কামাল ৩২/৩৪৭/৭০৯৩) ।
উক্ত হাদীছ শরীফের আরেকজন রাবী আছেন যার নাম -
ঈসা ইবনে জারিয়া, তিনিও জঈফ রাবী। ওনার
প্রসঙ্গে সহীহ ইবনে হিব্বানের টীকায় (যা চিত্রে চিহিৃত) বলা হয় যে,
عيسى بن
جارية ضعيف ، قال ابن معين: عنده مناكير، وقال النسائى : منكر الحديثوجاء عنه :
متروك، وقال ابن عدي: احديثه غير محفوظة
ঈসা ইবনে জারিয়া দ্বয়ীফ।
১। হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, عنده مناكير অর্থাৎ
তার নিকট মুনকার হাদীছ রয়েছে।
২। হযরত ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, منكر الحديث অর্থাৎ তিনি মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী।
৩। হযরত ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, هو متروك الحديث অর্থাৎ
তার হাদীছগুলো পরিত্যাজ্য।
৪। হযরত ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, احديثه غير محفوظة হাদীছ শরীফ সমূহ সংরক্ষিত নয়।
৪। “মিযানুল ই’তিদাল” কিতাবে তাকে জঈফ রাবীদের মধ্যে গণ্য
করা হয়েছে।
এছাড়া ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ্ কুম্মী থেকে এই হাদীছ শরীফ
বর্ণনা করেছেন, মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী
মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী, যার সম্পর্কে
কিতাবে নিম্নোক্ত মত পেশ করা হয়েছে-
১। হাফেজ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, وهو ضعيف অর্থাৎ মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী
জঈফ রাবী।
২। হযরত ইয়াকুব ইবনে শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, كثير المناكير অর্থাৎ তিনি অনেক মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী।
৩। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, فيه نظر অর্থাৎ
উনার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
৪। كذبه ابوزرعه অর্থাৎ হযরত ইমাম আবূ যুরা রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি বলেন, তিনি মিথ্যাবাদী।
৫। হযর ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ليس بثقة অর্থাৎ তিনি গ্রহণযোগ্য নন।
(মিযানুল ই’তেদাল ৩/৫৩০/৭৪৫৩, তাহযীবুত তাহযীব ৯/১০৮/৬০৮১)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত
জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানার ৩ জন রাবীর উপরই
জারাহ বা অভিযোগ রয়েছে। উছূলে হাদীছ অনুসারে যা ভয়ানক রকম দ্বীয়ফ বা দুর্বল। অথচ
নিজেদের নফসানিয়াত রক্ষার্থে নাসিরুদ্দীণ আলবানী, আব্দুর
রহমান মুবারকপুরী বাংলাদেশে কিছু অখ্যাত লা’মাযহাবীরা এই হাদীছকে নিলর্জ্জের মত
সহীহ বলে বেড়াচ্ছে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত
হলো যে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানার সনদ
দ্বয়ীফ। আর তাছাড়া জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ২০ রাকাত তারাবীর সহীহ সনদ রয়েছে (https://bit.ly/2GWQ4ko )। কাজেই
জঈফ হাদীছকে সহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের
বিরুদ্ধে দলীল হিসাবে পেশ করা আহমকী ও জিহালত বৈ কিছুই নয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন