সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

সর্বপ্রথম নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি তা সহীহ মুত্তাসিল সনদে প্রমাণিত


শুধুমাত্র হাদীছে জাবির দ্বারাই সর্বপ্রথম নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রমাণিত নয় বরং অন্য বর্ণনায় সহীহ মুত্তাসিল সনদে সর্বপ্রথম নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি প্রমাণিত। এক শ্রেনীর লোক সমাজে প্রচার করে ও বিভিন্ন বই পুস্তক লিখে প্রচার করে সর্বপ্রথম নুরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি সংক্রান্ত হাদীছ শরীফের কোন সনদ নাই। আপনাদের আজ এমন একটা হাদীছ শরীফ দেখাবো যে হাদীছ শরীফখানা আজ থেকে প্রায় ১১০০ বছর আগে লিখিত  কিতাব থেকে সংগৃহীত।
এ কিতাবের পান্ডুলিপীর অনুলিপী ও কিতাব উভয়ই আমাদের কাছে মওজুদ আছে সেখানে নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবকিছুর  কিছু পূর্বে সৃষ্টি এ বিষয়ে হাদীছ শরীফ পূর্ণ সনদ সহ বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নে সনদ সহ হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করা হলো,


حدثنا الحاكم احمد بن محمد بن عبد الرحمن المروزي، قال حدثنا ابو بكر محمد ابن ابراهيم الجر جاني ، قال حدثنا ابو بكر عبد الصمد بن يحيي الواسطي، قال حدثنا الجسن بن علي المدني، عن عبد الله بن المبارك، عن سفيات الثوري، عن جعفر بن محمد الصادق، عن ابيه، عن جد، عن ابيه، عن علي بن ابي طلب عليه السلم انه قال: ان الله تبرك وتعالي خلق نور محمد صلي الله عليه وسلم قبل ان يخلق السماوات و الارض و العرش و الكرسي و اللوح و القلم و الجنة و النار و قبل ان يخلق ادم نوحا و ابراهيم و اسماعيل و اسحاق و يعقوب وموسي و عيسي و داود و سليمان و كل

অর্থ: হযরত হাকাম আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান মাওয়ারীজি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবু বকর মুহম্মদ ইবনে ইব্রাহীম জুরজানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিন বর্নণা করেন হযরত আবু বকর আব্দুস সামাদ বিন ইয়াহিয়া ওয়াসীতি তিনি বর্ণনা করেন জিসান বিন আলী মাদীনি রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন হযরত সুফিয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বর্ণণা করেন, হযরত জাফর সাদিক আলাইহিস সালাম থেকে, তিনি উনার সম্মানিত পিতা (সাইয়্যিদুনা হযরত বাকির আলাইহিস সালাম উনার) থেকে, তিনি উনার দাদা (সাইয়্যিদুনা হযরত যাইনুল আবেদীন আলাইহিস সালাম উনার) থেকে, তিনি উনার পিতা (সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার) থেকে, তিনি খলীফাতুল মুসলিমিন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বে।” (মা'য়ানিল আখবার ৩০৬-৩০৭ পৃষ্ঠা, লেখক: আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী,  ওফাত: ৩৮১ হিজরী, প্রকাশনা: দারুল মা'রিফা, বাইরুত, লেবানন)



সূতরাং প্রমাণ হলো হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্ব প্রথম নূর হিসাবে সৃষ্টি হয়েছেন এবং উনার নূরে সমগ্র কায়িনাত সৃষ্টি এটা সনদসহ সহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। অথচ বাতিল ফির্কার লোকেরা হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বর্ণনা যা মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাকে রয়েছে তা অস্বীকার করার জন্য মিথ্যার জাল বুনে যাচ্ছে। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার হাদীছ শরীফ ছাড়া যে আরো হাদীছ শরীফ আছে সে বিষয়ে তাদের কোন খবরই নেই।

এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করা জরুরী। এ হাদীছখানা দেখে বাতিল ফির্কা লাফ দিয়ে বলে উঠবে কিতাবের লেখক আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী শিয়া ছিলেন। আর শিয়াদের বর্ণনা গ্রহনযোগ্য নয়। ইত্যাদি.... ইত্যাদি। জেনে রাখা প্রয়োজন বর্ননাকারী শিয়া হলেই হাদীছ জাল হয় না। কেননা সিয়াহ সিত্তাহ সহ দুনিয়ার সব হাদীছ শরীফের কিতাবেই শিয়া, খারেজী, মুতাজিলা, কদরিয়া, জাবারিয়া, মুরজিয়া সহ অনেক বাতিল ফির্কার বর্ণনাকারীই রয়েছে। তারপরও মুহাদ্দিছীনে কিরামগন উনাদের বর্ণনা কিতাবে  এনেছেন উনাদের ইলমে হাদীছের অবদান দেখে, উনাদের বিশ্বস্ততা ও আমানতদারীতা দেখে। হাদীছ শরীফ জালিয়াতের অভিযোগ, হাদীছ শরীফ নিয়ে কোন খিয়ানতের অভিযোগ না থাকলে উনারা শিয়া বা যেকোন ফির্কার হলেও হাদীছ গ্রহন করতেন।
যেমন, হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমরান ইবনে হিত্তান সূত্রে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। অথচ ইমরান ইবনে হিত্তান ছিলো খারিজী সম্প্রদায়ের লোক। শুধু তাই না, এ ব্যক্তি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার শহীদকারী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিমের প্রশংসা করে বেড়াতো। নাঊযুবিল্লাহ (ইখতিসারু উলূমিল হাদীছ ৯৯ পৃষ্ঠা)
এছাড়াও ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ ২০ জন মরজিয়া, ২৩ জন ক্বদরিয়া, ২৮ জন শিয়া, ৪ জন রাফিজী, ৯ জন খারেজী, ৭ জন নাসিবী ও ১ জন জহমিয়া কর্তৃক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। (সায়িকাতুল মুসলিমীন, মিযানুল ইতিদাল, তাহযীবুত তাহযীব, জারাহ ওয়াত তা’দীল, তাহযীবুল কামাল)

সূতরাং প্রমাণ হলো এই ফির্কার লোকদের থেকেও বর্ণিত হাদীছ ইমামগন গ্রহন করতেন। একজন ছিক্বাহ রাবী হযরত ইমাম হিশাম দাস্তাওয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বলা হয়েছে-
قال مـحمد بن سعد: كان ثقة حجة، اِلا انه يرى القدر
অর্থ : “পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি বিশ্বস্ত ও দলীল স্বরূপ হলেও তিনি ক্বাদরিয়া ফিরক্বার ছিলেন।” (তাযকিরাতুল হুফফাজ ১/১২৪, তারিখুল ইসলাম লি ইমাম যাহাবী ৯/৬৫৬)

দেখা গেলো বাতিল ক্বাদরিয়া ফিরক্বার মানুষ হলেও হাদীছ বর্ণনায় যেহেতু তিনি বিশ্বস্ত তাই তার দলীলগ্রহনযোগ্য।
অপরদিকে হযরত আবূ দাউদ তায়লাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হিশাম দাস্তাওয়ায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বলেন-
هشام الدستوائي امير الـمؤمنين في الـحديث
অর্থ : “হযরত হিশাম দাস্তাওয়ায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হাদীছ শাস্ত্রে আমীরুল মু’মিনীন ছিলেন।” (তাযকিরাতুল হুফফাজ ১/১২৪)

ইয়াহিয়া ইবনে মঈন ও নাসায়ী উনারা উনাকে বিশ্বস্ত মনে করতেন।
হাফিয হযরত আবূ নুয়াইম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি আটশ মুহাদ্দিছ থেকে হাদীছ শরীফ অর্জন করেছি। কিন্তু হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে ছালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের চাইতে ভালো ও শ্রেষ্ঠ কাউকে পাইনি। অথচ যাহাবী রহমতুল্লাহি তিনি বলেন, তিনি আক্বীদার ক্ষেত্রে খারিজী ছিলেন (তাযকিরাতুল হুফফাজ ১/১৯৫)

খারেজী হওয়ার পরও শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ হয়েছেন উনারা। কারন হাদীছ শাস্ত্রে বিশ্বস্ততা।
ইমাম আবূ সাহল ওয়াসিত্বী শিয়া ছিলো। এ অপরাধে খলীফা হযরত হারুনুর রশীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে গ্রেফতারও করেন। উনার সম্পর্কে ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ বর্ণনায় তিনি দলীল হওয়ার ক্ষেত্রে সবাই একমত। (তাযকিরাতুল হুফফাজ ১/২৩৮)

খবীস প্রকৃতির রাফিজী হওয়ার পর হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে বিশ্বস্তও ছিলেন অনেকে। যেমন, হযরত আবী আব্দুল্লাহ নিশাবুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি একজন ইমাম সম্পর্কে বলেন-
ثقة غي الـحديث رافضي خبيث
অর্থ : “পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত কিন্তু খবীস রাফিজী।” (মা’রিফাতু উলুমিল হাদীছ ১/১০, তাযকিরাতুল হুফফাজ ৩/১৬৫, সিয়ারু আলাম আন নুবালা ১৭/১৭৪)

আমরা সবাই জানি রাফিজী, শিয়া, খারিজী, ক্বদরিয়া, জহমিয়া, মুশাব্বিয়া এসব বাতিল ফিরক্বার লোকেরা বদ আক্বীদার এবং বিদয়াতি। তাহলে এসব বর্ণনাকারী কেন ছহীহ হাদীছ শরীফ এর কিতাবে? তদ্রুপ আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী তিনি শিয়া হলেও উনার বিশ্বস্ততা, ইল্ম, ইলমে হাদীছের অবদান, গ্রহনযোগ্যতার মানদন্ডে উনার বর্ণনাও গ্রহনযোগ্য।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী তিনি যে বিশ্বস্ত ও গ্রহনযোগ্য ছিলেন তার প্রমাণ কি?
প্রমাণ আসমাউর রেজাল বিশারদদের দৃষ্টিতে আমার দেখবো ইনশাআল্লাহ। বিখ্যাত হাদীছ বিশারদ, আসমাউর রেজাল বিশারদ ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
رَأْسُ الإِمَامِيَّةِ، أَبُو جَعْفَرٍ مُحَمَّدُ ابْنُ العَلاَّمَةِ عَلِيِّ بنِ الحُسَيْنِ بنِ مُوْسَى بن بَابَوَيْه القُمِّيُّ، صَاحِبُ التَّصَانِيْفِ السَّائِرَةِ بَيْنَ الرَّافِضَةِ.
يُضْرَبُ بِحفظِهِ المَثَلُ.
يُقَال:لَهُ ثَلاَثُ مائَةِ مُصَنَّفٍ، مِنْهَا:كِتَابُ (دعَائِمِ الإِسلاَمِ)، كِتَابُ (الخواتيمِ)، كِتَابُ (الملاَهِي)، كِتَابُ (غريبِ حَدِيْثِ الأَئِمَّةِ)، كِتَابُ (التَّوحيدِ)، كِتَابُ (دينِ الإِمَامِيَّةِ)، وَلاَ...(1)
وَكَانَ أَبُوْهُ مِنْ كِبَارِهِمْ وَمُصَنِّفيهِمْ.
حَدَّثَ عَنْ أَبِي جَعْفَرٍ جَمَاعَةٌ مِنْهُم:ابْنُ النُّعْمَانِ المُفِيْدُ، وَالحُسَيْنُ بنُ عَبْدِ اللهِ بنِ الفَحَّامِ، وَجَعْفَرُ بنُ حسنكِيْه القُمِّيُّ.
অর্থ: শীরে ইমামিয়্যীন,  আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আল্লামা আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী যিনি রাফেযীদের মধ্যে অগ্রগামী রচনাবলীর রচয়িতা। তার (প্রখর) স্বৃতিশক্তির দৃষ্টান্ত (বিভিন্ন স্থানে) প্রদান করা হয়। বলা হয় যে, তার (প্রায়) তিনশত রচনাবলী রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে দা‘আয়িমুল ইসলাম, খাওয়াতীম, আল-মালাহী, গরীবু হাদীছিল আইম্মাহ, তাওহীদ, দ্বীনুল ইমামিয়্যাহ (প্রভৃতি অন্যতম)। উনার পিতাও ছিলেন বড় মুছান্নিফদের (রচয়িতা) অন্তর্ভুক্ত। তিনি (ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী) হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আবূ জা’ফর থেকে। এছাড়াও তাদের গোত্রভূক্ত ইবনে নু’মান আল মুফীদ, হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ফাহহাম, জা’ফর ইবনে হুসনাকীহ আল কুম্মী থেকেও তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। (সিয়ারু আ’লাম আন নুবালা, ১৬/৩০৩-৩০৪৩৫৪; প্রকাশনা: মুয়াসাসাতু রিসালা, বাইরুত, লেবানন)





হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোন প্রকার সমালোচনা করেন নাই বরং উনাকে প্রখর স্মরন শক্তি অধিকারী ও অনেক কিতাবে লেখক আখ্যা দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয় হাফিজুল হাদীছ, রেজাল বিশারদ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে বলেন,
( ز ) الحسين بن الحسن بن الحسين بن علي بن الحسين بن موسى بن بأبويه القمي ذكره بن بأبويه في الذيل وقال كان من بيت فضل وعلم وهو وجه الشيعة في وقته
অর্থ: হুসাইন ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী। উনাকে ইবনে বাবাওয়াইহ হিসেবেও টিকায় বর্ণনা করা হয়। গ্রন্থকার বলেন, তিনি (ইবনে বাবাওয়াইহ আল কুম্মী) শিয়াদের দৃষ্টিতে উনার যামানায় সম্মান ও ইলমের অধিকারী ছিলেন। (লিসানুল মীযান লি ইবনে হাজার, ৩/১৫৭ : রাবী ২৪৯৬ ; প্রকাশনা : মাকতাবাতুল মাতবুয়াতুল ইসলামীয়া, বাইরুত- লেবানন) 




উক্ত লিসানুল মিযানের অন্য স্থানে আবারো উনার আলোচনা করা হয়েছে,
  ( ز ) الحسين بن علي بن الحسين بن موسى بن بأبويه القمي ذكره بن النجاشي فقال كان من فقهاء الامامية روى عنه الحسين الغضايري وصنف كتاب نفي التشبيه وقدمه للصاحب بن عباد وكان الصاحب يعظمه ويرفع مجلسه إذا حضر عنده
অর্থ: হুসাইন ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী। উনার ব্যাপারে ইবনে নাজ্জাশী বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তিনি (ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী) ছিলেন ইমামী ফক্বীহগণের অন্তর্ভুক্ত। উনার থেকে হুসাইন আল-গ্বদ্বায়িরী হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি তাশবীহ অপনোদন বিষয়ক কিতাব রচনা করেছেন। ছহিব ইবনে ইবাদ উনাকে অগ্রগামী করেছেন এবং তিনি উনাকে (ইবনে বাবাওয়াইহকে) তা’যীম করতেন। আর ইবনে বাবাওয়াইহ তার মজলিসে উপস্থিত হলে তিনি (ছহিব ইবনে ইবাদ) উনার সম্মানে দাঁড়িয়ে যেতেন। (লিসানুল মীযান লি ইবনে হাজার, ৩/১৯৯: রাবী ২৫৮৮)



হাফিজুল হাদীছ, রেজাল বিশারদ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি  উনার কিতাব থেকে প্রমাণ হলো সম্মানিত ব্যক্তি ও ফক্বীহদের অর্ন্তভূক্ত ছিলেন। হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও কোন সমালোচনা করেন নাই। এটাও বলেন নাই উনার হাদীছ গ্রহন করা যাবে না। বরং প্রশাংসাই করেছেন।
উনার সম্পর্কে কিতাবে আরো বর্ণিত আছে,
أبو جعفر محمد بن علي بن الحسين بن موسى بن بابويه القمي (306ـ-381هـ)، يعرف بالشيخ الصدوق، متكلم، محدِّث، حافظ، مفسر، من كبار فقهاء الشيعة الإمامية. نزل بالري، وارتفع شأنه في خراسان، وحدَّث ببغداد. له كتاب 'التوحيد'، وكتاب 'دين الإمامية'، و'التفسير'(2)
অর্থ: আবূ জা’ফর মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী (৩০৬-৩৮১ হিজরী)। তিনি সত্যবাদী শায়খ, বক্তা, মুহাদ্দিছ, হাফিয, মুফাসসির, ইমামী শিয়াগণের ফক্বিহদের অন্যতম বড় ফক্বিহ হিসেবে পরিচিত। তিনি রয় নামক স্থানে আবির্ভূত হয়েছেন এবং উনার শান খোরাসানেও বুলন্দ ছিল, আর তিনি বাগদাদে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। আত-তাওহীদ, দ্বীনুল ইমামিয়্যাহ, আত-তাফসীর নামে তার কিতাব রয়েছে। (আল-ই’তিক্বাদ লি ছ‘য়িদ আন-নীসাপুরী, ১/২৭)

হযরত যারকালী রহমতুল্লাহি উনার কিতাবে বাবাওয়াইহ্ আল-কুম্মী সম্পর্কে বলেন,
مد بن علي بن الحسين بن موسى بابويه القمي، ويعرف بالشيخ الصدوق: محدث إمامي كبير، لم ير في القميين مثله. نزل بالري وارتفع شأنه في خراسان، وتوفي ودفن في الري. له نحو ثلاثمئة مصنف، منها (الاعتقادات - ط) و (معاني الاخبار - خ) و (الامالي - خ) ويعرف بالمجالس، ولعله (مجالس المواعظ في الحديث - خ) و (عيون أخبار الرضى - ط) و (الشعر) و (السلطان) و (التاريخ) و (المصابيح) في الحديث ورواته، و (إكمال الدين وإتمام النعمة - ط) جزء منه، و (الخصال - ط) في الاخلاق، و (علل الشرائع والاحكام - خ) و (التوحيد) و (المقنع - ط) فقه، و (الهداية - ط) و (من لا يحضره الفقيه - ط)
অর্থ:মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী (৩০৬-৩৮১ হিজরী, ৯১৮-৯৯১ ঈসায়ী)। তিনি সত্যবাদী শায়খ, ইমামীদের বড় মুহাদ্দীছ হিসেবে পরিচিত। কুম্মিয়ীনদের মধ্যে উনার মতো কাউকে দেখা যায়নি। তিনি রায় নামক স্থানে বসবাস করেন আর তার শান-শওকাত খোরাসানেও বুলন্দ হয়েছিলো। তিনি রায় নামক স্থানে ইন্তিকাল করেন এবং সেখানেই উনাকে দাফন করা হয়। উনার প্রায় তিনশত রচনাবলী ছিলো। তার মধ্যে আল-ই’তিক্বাদাত, মা‘য়ানিল আখবার, আল-আমালী (যেটি মাজালিস নামে পরিচিত ছিলো, সম্ভবত: ঐটির নাম মাজালিসুল মাওয়া‘য়িয), উয়ূনু আখবারির রিদ্বা, আশ-শি’র, আস-সুলত্বন, আত-তারীখ, আল-মাছাবীহ (হাদীছ ও তার রিওয়ায়াত বিষয়ক), ইকমালুদ দ্বীন ওয়া ইতমামুন নি’মাহ, আল-খিছল (আখলাক্ব সংশ্লিষ্ট), আলালুশ শারায়ি’ ওয়াল আহকাম, আত-তাওহীদ, আল মুনক্বাহ (ফিক্বহ বিষয়ক), আল-হিদায়াহ, এবং মান লা ইয়াহদ্বুরুহুল ফাক্বীহ অন্যতম। (আল-আ’লাম লিয যুরকালী, ৬/২৭৪)





আসমাউর রেজাল থেকে প্রমাণ হলো তিনি অত্যান্ত বিজ্ঞ আলেম, সত্যবাদী শায়খ, হাফিজে হাদীছ, মর্যাদাবান,  শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিছ, ফক্বীক ও অসংখ্য কিতাবেও মুছান্নিফ ছিলেন।
এখন শুধুমাত্র শিয়া হওয়ার কারনে যদি ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী উনার বর্ণনাকৃত নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীছ অস্বীকার করা হয় তাহলে সিয়া সিত্তার ঐসকল হাদীছের কি হবে যেখানে শিয়া, রাফেজী, খারেজী, মুতাজিলা, মুরজিয়াদের থেকে হাদীছ নেয়া হয়েছে?  তাহলে বর্তমানে ওহাবী সম্প্রদায় কি বুখারী শরীফ এর  হাদীছ শরীফ বাদ দিয়ে দিবে? তারাইতো জোর গলায় প্রচার করে থাকে-
اصح الكتات بعد كتاب الله الصحيح البخارى.
অর্থ : “পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পর সর্বাধিক ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব হলো ছহীহ বুখারী।” (আল হিত্তাহ ফি যিকরিছ ছিহাহিস সিত্তাহ ১/২১৯)

এরপর যে বিষয়টা উল্লেখযোগ্য সেটা হচ্ছে এ হাদীছ শরীফখানা শুধু বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী একাই বর্ণনা করেন নাই। বরং পরবর্তীতে অনেক বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও আলেম এই হাদীছ শরীফখানা গ্রহন করে উনাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৫০৫ হিজরী) উনার নাম শোনেন নাই এমন কেউ কি পৃথিবীতে আছে কি?
ইলমের এমন কোন শাখা নাই যেখানে উনার ব্যাপক বিচরন নেই। প্রতিটি স্থানেই উনার ইলমের বহিঃ প্রকাশ। আর হাফেজ আবুল হাসান আবদুল গাফফার আল ফারেসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইমাম গাযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য হুজ্জত ও আইয়িম্মায়ে দ্বীনের ইমাম। (তারীখে ইবনে আসাকির ৫৫/২০০)
এই মহান ইমামের অসংখ্য রচনাসমূহের মধ্যে উনার অন্যতম একটি কিতাবের নাম হচ্ছে "সুলওয়াতুল আরেফীন"। কিতাবখানা বিখ্যাত প্রকাশনা দারু কুতুব আল ইলমিয়া থেকে দুই খন্ডে প্রকাশিত। এ কিতাবের ১ম খন্ড ৬৪ পৃষ্ঠায় তিনি একটা বাব রচনা করেছেন যার নাম দিয়েছেন باب في ذكر خلق نور النبي صلي الله عليه و سلم  (বাবু ফি যিকরি খুলিকা নুরুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামে। উক্ত অধ্যায়ে সর্বপ্রথম যে নুরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি সে বিষয়ে একটা হাদীছ উল্লেখ করেছেন,
خلق الله تعالي نور محمد صلي الله عليه و سلم قبل ان يخلق الاشيا
অর্থ: "সর্ব প্রথম সকল কিছু সৃষ্টির পূর্বে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন।"
এরপর তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত ঐ হাদীছ শরীফ এনেছেন,
عن علي بن ابي طالب عليه السلم قال خلق الله نور محمد صلي الله عليه مسلم قبل ان يخلق السماوت والارض و العرش و الكرسي والجنة و النار
অর্থ: খলীফাতুল মুসলিমিন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বে।” সুবহানাল্লাহ! (সুলওয়াতুল আরেফীন ১ম খন্ড ৬৪ পৃষ্ঠা, লেখক : হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৫০৫ হিজরী), প্রকাশনা: দারু কুতুব আল ইলমিয়া)



সুতরাং দেখা যাচ্ছে এই সনদের হাদীছ শরীফখানা ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও গ্রহন করেছেন। আর ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহির আরো ১০০ বছর আগে (অর্থাৎ এখন থেকে ১০৩৬ বছর আগে) একজন বিখ্যাত আলেম, মুহাদ্দিছ, ফক্বীহ, ইমামুল হাফিয মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম খারকুশী আন নাইসাবুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “শরফুল মুস্তফা” কিতাবে সনদ সহকারে বর্ণনা করেন,
رووي عبد الله بن مبارك عن سفيان الثوري عن جعفر بن مـحمد الصادق عن أبيه عن جدّه عن علي بن أبي طالب أن الله تبارك وتعالى خلق نور مـحمد صلى الله عليه واٰله قبل أن يـخلق السماوات والأرض والعرش والكرسي واللوح والقلم الـجنة والنار
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত সুফিয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি  হযরত ইমাম জাফর ছদিক্ব আলাইহিস সালাম  থেকে, তিনি উনার সম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম উনার থেকে, তিনি উনার সম্মানিত দাদা আলাইহিস সালাম উনার থেকে, তিনি খলীফাতুল মুসলিমিন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বে।” সুবহানাল্লাহ (শরফুল মুস্তফা ১ম খন্ড ৩০৫-৩১১ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৭৯; লেখক: ইমামুল হাফিয মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম খারকুশী আন নাইসাবুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। ওফাত: ৪০৬ হিজরী; প্রকাশনী: দারু বাশায়িরুল ইসলামিয়া, আল মক্কাতুল মুকররমা)







এই হাদীছ শরীফও  ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী রহমতুল্লাহি আলাইহি যে সনদে বর্ণনা করেছেন সেই সহীহ সনদে বর্ণিত। এই সনদে রয়েছেন স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আহলে বাইত শরীফ এর ৪ জন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব । আর সনদের শেষে রয়েছেন আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ অর্থাৎ পবিত্র হাদীছ শাস্ত্রের আমীরুল মু’মিনীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সুফিয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা। আর ইমাম খারেকুশী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি পর্যন্ত সনদে যে বিচ্ছিন্নতা আছে তা ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মা’য়ানিল আখবারে” দূর করে দিয়েছেন। সেখানে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করা হয়েছে। সনদ খানা হচ্ছে,
حدثنا الحاكم احمد بن محمد بن عبد الرحمن المروزي، قال حدثنا ابو بكر محمد ابن ابراهيم الجر جاني ، قال حدثنا ابو بكر عبد الصمد بن يحيي الواسطي، قال حدثنا الجسن بن علي المدني، عن عبد الله بن المبارك، عن سفيات الثوري، عن جعفر بن محمد الصادق، عن ابيه، عن جد، عن ابيه، عن علي بن ابي طلب

আমরা এখানে মুত্তাসিল সনদখানা দেখতে পেলাম। সূতরাং শরফুল মুস্তফা কিতাবের সনদ নিয়েও আপত্তি করার সুযোগও থাকলো না।
এই হাদীছ শরীফখানা দারু কুতুব আল ইলমিয়া থেকে প্রকাশিত “আস সাফিনাতুল কাদরিয়া” কিতাবের অর্ন্তভূক্ত একটি রেসালা যা সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইবনে আহমদ আল মোল্লা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার "ছলাতুল কুবরা ফি শরহে ছলাতু সুগরা"  কিতাবের ৮৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,
وعن علي بن ابي طالب رضي الله عنه اته قال: ان الله تبارك وتعالي خلق نور محمد صلي الله عليه و سلم قبل ان يخلق السموات والارض والعرش والكرسي واللوح والقلم والجنة والنار

অর্থ: হযরত আলী কাররামাল্লাহু আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বে।”




অর্থাৎ এই হাদীছ শরীফখানা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত। এবং পরবর্তীও অনেক বরেন্য আলেম উক্ত হাদীছ শরীফখানা নিজ নিজ কিতাবে দলীল হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আর এ হাদীছ শরীফ দ্বারাই দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হচ্ছে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছেন নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুতরাং আজ যারা বিরোধীতা করছে তারা যে স্পষ্ট বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে সেটা প্রমাণিত হলো আবারো।

নূরের হাদীছ শরীফ সমূহের সবচাইতে বিরোধিতা করে যে কিতাবখানা লেখা হয়েছে সেটার নাম হচ্ছেমজ'মু ফি কাশফিল হাকীকী আয যুযউল মাফকুদ মিন মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক” (প্রকাশনা: দার আল মুহাদ্দিছ , রিয়াদ; প্রকাশ সন ১৪২৮ হিজরী) উক্ত কিতাবের ২৩৭ পৃষ্ঠাতেও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার এ হাদীছ শরীফ খানা উল্লেখ করে এর টীকায় বলা হয়েছে,
 أقول : من يقارن هذه الراوية الشيعية بالرواية المزعومة المنسبة إلى جابر – رضي الله عنه – يجد بينهما تشابهاً كبيراً، وكأن الروايتين قد خرجت من مصدر واحد، ومن نفسي واحد
আমি বলি: “যারা শিয়া সম্প্রদায়ের এ বর্ণনাকে হাদিছে জাবিরের দিকে মিলিত করে তাদের উৎস সম্প্রদায়ের মধ্যে মিল পাওয়া যাচ্ছে। এবং উভয় বর্ণনায় একই মাছদার ও একই নফস থেকে বের হয়েছে”।





দেখেন বিরোধিতাকারীদের কিতাবে খুব বেশি হলে শিয়াদের বর্ণনা বলা হয়েছে। কিন্তু এখানেও হযরত ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী রহমতুল্লাহি আলাইহির বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়নি। উনার হাদীছ গ্রহন করা যাবে না, উনি হাদীছ জাল করতেন এসব কোন অভিযোগ নেই। কারন উনার ইলিম, আমানতদারীতা, বিশ্বস্ততা, হাদীছ শরীফের পারদর্শিতা নিয়ে আপত্তি করার মত কোন সুযোগই নেই। তাই বিরোধিতাকারীরাও বিরোধিতা করতে গিয়ে শুধুমাত্র শিয়াদের বর্ণনা বলেই ক্ষান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রমাণ হলো হাদীছখানা বিশুদ্ধ এবং অকাট্যভাবে প্রমাণিত।
সূতরাং প্রমাণ হলো সর্বপ্রথম নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি তা সহীহ মুত্তাসিল সনদে প্রমাণিত এবং হযরত ইবনে বাবাওয়াইহ আল-কুম্মী রহমতুল্লাহি আলাইহির বর্ণনাও শতভাগ গ্রহনযোগ্য। আর এই দলীল দ্বারা হাদীছে জাবিরের দলীল স্পষ্টভাবে সমর্থিত। এমন দলীল পাওয়ার পরও যারা মানবে না তাদের জন্য আফসোস। কারন তারা নিজের অজান্তেই সেই দলে যাদের চাঁদ দ্বিখন্ডিত করে দেখিয়েও বিশ্বাস করানো যায়নি।

1 comments: