গত জানুয়ারী ১০
তারিখে তাবলিগীদের নিয়ে একটা পোষ্ট করেছিলাম। যা সোশাল মিডিয়াতে বেশ ভাইরাল
হয়েছিলো। আশরাফ আলী তালেবী নামক এক তাবলিগী তার বই “দাওয়াতে তাবলীগ” নাম বইয়ের ৮০ পৃষ্ঠায় লিখেছিলো,
তাবলিগের ইস্তেমায় নামাজ পড়লে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ থেকে উনপঞ্চাশ
কোটি রাকাত নামাজের ছাওয়াব হয়। নাউযুবিল্লাহ। বিস্তারিত জানতে পড়ুন
বিষয়টা ফেসবুকে
লেখা মাত্রই তা দাবানলের মত ছড়িয়ে পরে। চারদিক থেকে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
বেকায়দায় পরে যায় বইয়ের লেখক ও সমর্থকরা। এর কিছু দিন পর এরা আবার উক্ত বই
রিপ্রিন্ট করে, বাজারে ছাড়ে। হ্যাঁ, ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে উক্ত বক্তব্য বাদ দিলে মানুষজন তাদের ভালোই
বলতো। কারন ভুল স্বীকার করলে কেউ ছোট হয় না। কিন্তু তারা তা না করে, আপত্তিকর কথা যেখানে আছে সে জায়গা সাদা করে ফেলে, এবং
নতুন করে তিনটা লাইন সংযুক্ত করে। সংযুক্ত লাইন সমূহের তৃতীয় লাইনে আবারো মদীনা
শরীফের প্রতি বিদ্বেষ ফুটে ওঠে। তো দেখুন ৮০ পৃষ্ঠায় এবার কি লেখা হয়েছে,
তাবলিগীদের উক্ত আফতাবীয়া লাইব্রেরির থেকে দাওয়াতে তাবলিগ বইটা ক্রয়ের রশিদেরও স্ক্যান কপি নিচে দেয়া হলো,
তারা বর্তমান যে কুফরী বাক্য সংযুক্ত করেছে তা হলো,
প্রশ্ন: মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ হতে লোকজন বিশ্ব এস্তেমায় কেন শরীক হয়?
উত্তর: বিশ্ব এস্তমায় আসার দরুন দ্বীনী মেহনতের জযবা সৃষ্টি হয় এবং আল্লাহ ও রসূল
বিমুখী লোকজনের মাঝে আল্লাহমুখী প্রেরনা জাগ্রত হয়। আরো অনেক লাভ সম্মুখে রেখে
মদীনা থেকে লোকজন বিশ্ব এস্তেমায় শরীক হয়।
উপরোক্ত প্রশ্নত্তোর থেকে যেটা
বুঝা গেলো,
১) এস্তেমায় আসলে দ্বীনী
মেহনতের জজবা সৃষ্টি হয় যা মক্কা শরীফ মদীনা শরীফে হয় না।
২) এস্তেমায় আল্লাহ ও রসূল
বিমুখী লোকজনের মাঝে আল্লাহমুখী হওয়া প্রেরনা জাগে যা মক্কা শরীফ মদীনা শরীফে
জাগ্রত হয় না।
৩) আরো অনেক লাভের আশায় মানুষ মদীনা
শরীফে না গিয়ে এস্তেমায় আসে।
৪) সর্বোপরি যেটা বুঝিয়েছে
মদীনা শরীফ থেকে এস্তেমার মর্যাদা বেশি। নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক।
এবার আসুন পবিত্র শরীয়তের দৃষ্টিতে মদীনা শরীফের ফযিলত আলোচনা করা যাকঃ
জগতের সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ
স্থান হচ্ছে মদীনা শরীফ । আখেরী রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি এখানে অবস্থান করেছেন, উনার প্রতিটি স্পর্শ মুবারক মদীনা শরীফ জুড়ে রায়েছে।
মদীনা শরীফ এমন এক পবিত্র স্থান যাকে স্বয়ং আল্লাহ পাক মুহব্বত করেছেন, হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহব্বত করেছেন। অসংখ্য হাদীস শরীফে সে ফযিলতের
কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আলোচনার সাথে প্রাসঙ্গিক হওয়ার কারনে অগনিত অসংখ্য ফযিলত
থেকে মদীনা শরীফের কতিপয় ফযিলত উল্লেখ করা হলো:
মদীনা শরীফ এতই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ
স্থান যে যার অনেক ফযিলতপূর্ণ নাম রয়েছে। উলামায়ে কিরামগন একশয়েরও বেশি নাম বের
করেছেন। মহান আল্লাহ পাক নিজেই মদীনা শরীফের নাম তাবা, তায়বা, তাইয়্যিবা, তায়্যিবা অর্থাৎ পবিত্র সুগন্ধিময় বলে উল্লেখ করেছেন। সুবহানাল্লাহ।
হাদীস শরীফে আছে,
ان
الله
امرني
ان
أسمي
المدينة
طابة
অর্থ: আল্লাহ পাক আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি
যেন মদীনা শরীফের নাম 'তাবা' বা
সুগন্ধিময় রাখি। (মুজামুল কবীর লি তাবরানী ২/২৩৬, হাদীস ১৯৮৭)
মদীনা শরীফের এতই ফযিলত যে, মালেকী মাযহাবের ফতোয়া হচ্ছে, যে ব্যক্তি মদীনা শরীফের মাটিকে খুশবুবিহীন ধারনা করে অথবা
সেখানকার আবাওহায়াকে স্বাস্থ্যের অনুপযোগী বলে মনে করে তাকে শাস্তি প্রদান ও
বন্দি করে রাখা ওয়াজিব। তওবা না করা পর্যন্ত ছাড়া যাবে না। (যুজবুল কুলুব ১ম
অধ্যায়)
পবিত্র মদীনা শরীফকে হাদীস শরীফে 'আকালাতু বুলদান' বা সর্বশ্রেষ্ঠ শহরও বলা হয়েছে।
মদীনা শরীফের অপর একটি নাম হচ্ছে "আল ঈমান" (সুরা নিসা ৫৯:৯)
মদীনা শরীফের অপর একটি নাম হচ্ছে "আল ঈমান" (সুরা নিসা ৫৯:৯)
পবিত্র মদীনা
শরীফকে বলা হয় 'বায়তু রসূলিল্লাহ'। কারন আখেরী রসূল হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এখানে অবস্থান করেছেন এবং এখনো অবস্থান করছেন।
হাদীস শরীফে এই
পবিত্র নগরীকে 'আল মুহিব্বা', আল হাবীবা, আল মাহবুবা নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
হাদীস শরীফে এসেছে,
হাদীস শরীফে এসেছে,
اللهم
حبب
الينا
المدينة
كحبنا
مكة
অর্থ: আমরা মক্কা শরীফ যেমন ভালোবাসি তদ্রূপ
মদীনা শরীফের মুহব্বত আমাদের অন্তরে ঢেলে দিন। (বুখারী ৩/২৩, হাদীস ১৯৮৯)
মদীনা শরীফ হচ্ছে 'হারামু রসূলিল্লাহ'। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,
المدينت
حرم
অর্থ: মদীনা শরীফ হারাম। (মুসলিম ২/৯৯৯, হাদীস ১৩৭১)
অন্য হাদীস শরীফে এসেছে,
حرم
إبراهيم
مكة
وحرمي
المدينة
অর্থ: হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম উনার
হারাম হচ্ছে মক্কা শরীফ আর আমার হারাম হচ্ছে মদীনা শরীফ। (মুজামুল আওসাত লি
তাবরানী ৬/৩৫৬, হাদীস ৬৬০৭, সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ৩/২৮৮)
মদীনা শরীফকে বলা হয় 'আল খায়রা'। কারন পবিত্র মদীনা শরীফ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কেন্দ্র। হাদীস শরীফে আছে,
المدينة
خير
لهم
لو
كانوا
يعلمون
অর্থ: মদীনা শরীফ শরীফে অবস্থান করা তাদের
জন্য কল্যাণকর, যদি তারা একথাটি বুঝতে পারতো। (মুসলিম
শরীফ ২/৯৯২, হাদীস ১৩৬৩)
মদীনা শরীফকে আশ শাফিয়া বলা হয়েছে। হাদীস শরীফে আছে,
ترابها
شفاء
من
كل
داء
অর্থ: মদীনা শরীফের মাটি সর্বরোগের জন্য
শিফা।" (সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ৩/২৮৯)
উলামায়ে কিরামগন বলেছেন যে, যদি কোন লোক মদীনা শরীফে উপস্থিত হয় তার অভ্যন্তরীণ রোগ ও গুনাহ বিদূরিত হয়।
উলামায়ে কিরামগন বলেছেন যে, যদি কোন লোক মদীনা শরীফে উপস্থিত হয় তার অভ্যন্তরীণ রোগ ও গুনাহ বিদূরিত হয়।
মদীনা শরীফের একটি নাম হচ্ছে, الفاضحة বা আল ফাদ্বিহা। কোন অসৎ প্রকৃতির লোক এখানে আসলে তা গোপন থাকে না। তার আসল
স্বভাব ও প্রকৃতি প্রকাশ হয়ে যায়। অবশেষে সে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়।
মদীনা শরীফকে আল মু'মিনা নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হাদীস শরীফে আছে,
والذي نفسي بيده ان تربتها لمؤمنة
والذي نفسي بيده ان تربتها لمؤمنة
অর্থ: সে মহান সত্তার হাত মুবারকে আমার প্রান, উনার কসম! নিশ্চয়ই মদীনা শরীফের মাটি মু'মিন। (সবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ৩/২৯১)
মদীনা শরীফকে বরকতময় হিসাবে হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে । হাদীস শরীফে আছে,
আয় আল্লাহ পাক আপনি মক্কা শরীফে যত বরকত দান করেছেন তার চাইতেও অধিক বরকত মদীনা শরীফ দান করুন। (তিরমিযী ৫/৭১৮ , হাদীস ৩৯১৪)
মদীনা শরীফের আরেক নাম হচ্ছে আল মাহফুফা। হাদীস শরীফে আছে, মদীনা শরীফে প্রত্যেক দুই গলির মাঝে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছেন। উনার এ নগরীকে হিফাযত করেন। (ফাদ্বায়িলুল মদীনা ২৩ পৃ)
হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত
আছে,
يا طيبة
! يا سيد
البلدان
অর্থ: হে পবিত্র ! হে সকল নগরীর সর্দার। (যুজবুল কুলুব )
মদীনা শরীফের
শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে হাদীস শরীফে আছে,
المدينة خير
من مكة
অর্থ: মদীনা শরীফ মক্কা শরীফ থেকেও শ্রেষ্ঠ ।
(মুজামুল কবীর ৪/২৮৮, হাদীস ৪৪৫০)
হাদীস শরীফে আছে, আয় আল্লাহ পাক আপনি আমাকে আমার সবচাইতে প্রিয় স্থান থেকে
বাইরে নিয়ে এসেছেন। অতএব আপনি আমাকে আপনার সবচাইতে প্রিয় স্থানে বসবাস
করান।" (আল মুসতাদরাক আলাস সহীহাঈন ৩/৪ , ৪২৬১)
সূতরাং দেখা গেলো
মদীনা শরীফ আল্লাহ পাক উনারও প্রিয় স্থান।
হাদীস শরীফে এসেছে,
من مات
بالمدينة كنت
له شفيعا
يوم القيامة
অর্থ: যে ব্যক্তি মদীনা শরীফ ইন্তেকাল করবে
আমি কিয়ামতের দিন তার সুপারিশ করবো। (তারিখু দামিষ্ক ২৬/৩৮৭, ৩১১০, বায়হাক্বী শুয়াইবুল ঈমান ৬/৬২, ৩৮৮৪)
মদীনা শরীফের ফযিলত
সম্পর্কে বর্ণিত আছে, মদীনা শরীফ মানুষের ময়লাকে এভাবে দূরীভূত
করে যেভাবে কামারের ভাতি লোহার মরিচা দূর করে। (বুখারী ৩/২০, ১৮৭১)
মদীনা শরীফের আরো একটি ফযিলত হচ্ছে, হাদীস শরীফে আছে, আয় আল্লাহ পাক! জ্বর ও অপরাপর রোগ মদীনা
শরীফ থেকে বের করে জুহফ নামক স্থানে পাঠিয়ে দিন। (বুখারী ৬৩৭২)
মদীরা শরীফ পৃথিবীর সবচাইতে বড় ফিতনা
দাজ্জালের ফিতনা থেকেও নিরাপদ। মদীনা শরীফের এমন একটি শহর যেটি দাজ্জালের প্রবেশ
থেকে মুক্ত থাকবে। (বুখারী ৩/২২, ১৮৮০, মুসলিম ১৩৮০)
মদীনা শরীফ এর ফযিলত সম্পর্কে বর্ণিত আছে, মদীনা শরীফের ধুলিবালিতে প্রত্যেক রোগের শেফা রয়েছে। (আল মুনযিরী - তারগীব ওয়াত তারহীব ২/১৪৯)
অথচ এমন ফযিলতপূর্ণ শহর তাবলিগীদের ভালো লাগে না। তাদের ভালো লাগে টঙ্গীর তুরাগ নদীর পাড়ের এস্তেমার স্থানকে। তাদের কাছে কোনভাবেই মদীনা শরীফের মর্যাদা এস্তেমার ময়দান থেকে বেশি না। নাউযুবিল্লাহ। এরা সম্ভবত দাজ্জালের চ্যালা দাজ্জাল যেমন মদীনা শরীফে ঢুকতে পারে না তদ্রুপ তাবলিগীদেরও মদীনা শরীফ সহ্য হয় না।
অসাধারন............ বাতিলরা ধ্বংস হক।
উত্তরমুছুন