মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

এনটিভিতে এক সালাফী মৌলবীর ওসীলা বিরোধী বক্তব্যের জবাব


N TV তে প্রচারিত আপনার জিজ্ঞাসা”  নামক অনুষ্ঠানে এক সালাফী মৌলবী বলেছে -‘অসিলা অর্থ হচ্ছে, নৈকট্য অর্জন করা। আমরা নৈকট্য নেব আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের, কোনো পীরের, নবীর বা ওলির নয়।(বিস্তারিত জানতে পড়ুন)
এর পর মুখস্ত দলীল বিহীন কিছু মিথ্যাচার সে করেছে।

আসুন আমারা উক্ত সালাফীর ওসীলা বিরোধী বক্ত্যবের জবাবটা দেখে নিইঃ

মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন, ﻳﺎ ﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﻣﻨﻮﺍ ﺍﺗﻘﻮﺍﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﺑﺘﻐﻮﺍ ﺍﻟﻴﻪ ﺍﻟﻮﺳﻴﻠﺔ
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ভীতি অবলম্বন করো এবং আল্লাহর প্রতি নৈকট্যের জন্যে অসীলা তালাশ করো (সুরা আল মায়িদার ৩৫ নং আয়াত)
ওসীলা শব্দটি ‘তাওয়াস্সালতু’ কথা থেকে ‘ফায়ীলাহ’ ওযনে গৃহীত ইসম। বলা হয় ‘তাওয়াস্সালতু ইলা ফুলান বি-কাযা, অর্থাৎ আমি অমুক কাজ করে অমুকে নিকটবর্তী হয়েছি।”
কুরআন ও হাদীসে ব্যবহৃত প্রাচীন আরবী ভাষায় ওসীলা শব্দের অর্থ নৈকট্য। পরবর্তীকালে আরবী ভাষাতেই ওসীলা শব্দটির অর্থ হয় ‘যা দ্বারা নৈকট্য চাওয়া হয়’ বা ‘নৈকট্যের উপকরণ’। আরবীতে এবং বিশেষ করে সব অভিধানে ওসীলা শব্দটি ‘উপকরণ’, মধ্যস্থতা, যন্ত্র, হাতিয়ার, দূত ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়।

এবার আসুন পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উসিলার দলীল দেখি:
আল্লাহ পাক রব্বুল আ’লামীন ইরশাদ মুবারক করেন-
وما ارسلنا من رسول الا ليطاع باذن الله. ولو انهم اذ ظلموا انفسهم جاء وك فاستغفر والله واستغفر لهم الرسول لوجد وا الله توابا رحيما
অর্থ: আর আমিতো রসূল এ কারনেই পাঠিয়েছি, যেন আল্লাহর আদেশে তাঁর আনুগত্য করে, তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করার পর যদি আপনার কাছে এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রসূলও ক্ষমা চইতেন, তবে তারা আল্লাহকে ক্ষমাশীল, দয়ালু পেত।” [সূরা নিসা ৬৪ নং আয়াত শরীফ]
দেখুন আল্লাহ পাক নিজেই গুনাহগার বান্দাদের উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে যেতে বলছেন এবং উনার মাধ্যমে/ ওসীলায় আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চাইতে বলছেন।

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
خذ من اموا لهم صدقة تطهر هم و تزكيهم بها وصل عليهم. ان صلوتك سكن لهم . والله سميع عليم
অর্থ: তাদের ধন সম্পদ থেকে ছদকা নিন। যাদ্বারা তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবেন, আর আপনি তাদের জন্য দোয়া করবেন, নিশ্চয়ই আপনার দোয়া তাদের প্রশান্তি, আল্লাহ শ্রবন করেন এবং সবই জানেন।” [সূরা তাওবা ১০৩ নং আয়াত শরীফ]
এ আয়াত শরীফ থেকে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় বান্দাদের ধন সম্পদের যে অংশ আল্লাহর রাস্তায় ছদকা করবে সেটা নিয়ে তাদের পরিশুদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে দেখা গেলো হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের পরিশুদ্ধির বড় উসীলা।

এ আয়াত শরীফ থেকে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় বান্দাদের ধন সম্পদের যে অংশ আল্লাহর রাস্তায় ছদকা করবে সেটা নিয়ে তাদের পরিশুদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে দেখা গেলো হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের পরিশুদ্ধির বড় উসীলা।
কুরআন শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اذ هبوا بقميصي هذا فالقوه علي وجه ابي يات بصيرا. واتوني باهلكم اجمعين
অর্থ: আমার (ইফসুফ আলাইহিস সালাম ) জামা মুবারকটি নিয়ে যাও এবং এটা পিতার মুখ মুবারকের উপর রেখ, এতে তিনি দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবেন, আর পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসবে।” [সূরা ইউছুফ ৯৩ নং আয়াত শরীফ ]
এখানে ইউসূফ আলাইহিস সালাম যখন জানলেন উনার পিতা ইয়াকুব আলাইহিস সালাম উনার দৃষ্টিশক্তি বন্ধ হয়ে গেছে তখন তিনি উনার আরোগ্যর নিজের পবিত্র জামা মুবারক ওসীলা হিসেবে পাঠিয়ে দিলেন।

আরো ইরশাদ মুবারক হয়-
فلما ان جاء البشير القه علي وجهه فارتد بصيرا . قال الم اقل لكم. اني اعلم من الله ما لا تعلمون
অর্থ: অতপর যখন সু সংবাদদাতা এসে জামা মুবারক তাঁর (হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম) মুখ মুবারকে রাখলে তৎক্ষণাৎ তিনি দৃষ্টি ফিরে পান। বললেন, আমি কি বলিনি, আল্লাহ হতে আমি যা জানি তোমরা তা জান না।” [সূরা ইউসূফ ৯৬ নং আয়াত শরীফ ]

অতপর যখন সেই ওসীলা স্বরূর পবিত্র জামা মুবারক হযরত ইয়াকব আলাইহিস সালাম উমার মুখ মুবারকে রাখা হলো সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরে আসলো। সূতরাং দেখা গেলো হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র জামা মুবারকই ছিলো আরোগ্যের উসীলা।

হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম বলেন-
اني اخلق لكم من الطين كهيءة الطير فانفخ فيه فيكون طيرا باذن الله. وابري الاكمه والابرص واحي الموتي باذن الله
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানিয়ে তাতে ফুঁক দেব, আল্লাহর হুকুমে পাখি হয়ে যাবে, আল্লাহর হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগী আরোগ্য করবো এবং মৃতকে জীবন্ত করবো।” [সূরা আল ইমরান ৪৯ নং আয়াত শরীফ ]
দেখুন উক্ত আয়াত শরীফে ঈসা আলাইহিস সালাম উনার মুখ মুবারকে ফুঁ মুবারকের ওসীলায় মাটির দ্বারা তৈরী পাখি জীবম্ত পাখি হয়ে যেত। শুধু তাই নয়, উনার উসীলায় কুষ্ঠ রোগী এবং জন্মান্ধ সুস্থ হতো এবং মৃত ব্যক্তিও জীবন ফিরে পেতো।
আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,-
قل يتو فكم ملك الموت الذي وكل بكم ثم الي ربكم ترجعون
অর্থ: আপনি বলুন, মালাকুল মউত তোমাদের প্রান হরন করবে, পরে তোমরা রবের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে।” [সূরা সাজদাহ ১১ নম্বর আয়াত শরীফ]
সকল জীবন্ত প্রানীর জীবন হরন করার জন্য ওসীলা হিসাবে কাজ করছেন মালাকুল মওত বা মৃত্যুর ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম।

অসংখ্য সহীহ হাদীস শরীফেও ওসীলা গ্রহনের দলীল রয়েছে:

নেককার মুত্তাকী মুমিনদের নিকট দু‘আ চাওয়া সুন্নাত সম্মত রীতি। এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণীত। হাদীসে আনাস ইবনু মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ قَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيُّ قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي عَبْدُ اللهِ بْنُ الْمُثَنَّى عَنْ ثُمَامَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَنَسٍ عَنْ أَنَسٍ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا قَالَ فَيُسْقَوْنَ


“হযরত উমার আলাইহিস সালাম যখন অনাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হতেন তখন হযরত আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিবকে আলাইহিস সালাম উনাকে দিয়ে বৃষ্টির দু‘আ করাতেন, অতঃপর বলতেন: হে আল্লাহ পাক আমরা আমাদের নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  ওসীলায় আপনার নিকট প্রার্থনা করতাম ফলে আপনি আমাদের বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আপনার নিকট প্রার্থনা করছি আমাদের নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর চাচার ওসীলায়, অতএব আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন বৃষ্টিপাত হতো।” (বুখারী শরীফ : হাদীস ১০১০)


পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছিহাহ সিত্তার অন্যতম একটি কিতাব ‘ইবনে মাযাহ শরীফ’-এ বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنْصُورِ بْنِ سَيَّارٍ ، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ ، عَنْ أَبِي جَعْفَرٍ الْمَدَنِيِّ ، عَنْ عُمَارَةَ بْنِ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ حُنَيْفٍ ، أَنَّ رَجُلاً ضَرِيرَ الْبَصَرِ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ فَقَالَ : ادْعُ اللَّهَ لِي أَنْ يُعَافِيَنِي , فَقَالَ : إِنْ شِئْتَ أَخَّرْتُ لَكَ وَهُوَ خَيْرٌ ، وَإِنْ شِئْتَ دَعَوْتُ , فَقَالَ : ادْعُهْ ، فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيُحْسِنَ وُضُوءَهُ ، وَيُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ ، وَيَدْعُوَ بِهَذَا الدُّعَاءِ : اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ ، وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِمُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ ، يَا مُحَمَّدُ , إِنِّي قَدْ تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى ، اللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ.قال ابو اسحق هذا حديث صحيح.
অর্থ: “হযরত উছমান ইবনে হুনাইফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত যে, একদা একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আমার জন্যে দোয়া করে দিন, যাতে আমার অন্ধত্ব দূর হয়ে যায়। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বললেন, তুমি যদি সম্মত হও তাহলে তোমার জন্যে বিলম্বিত করে দেই, তা হবে তোমার জন্যে উত্তম। আর যদি তুমি চাও তবে দোয়া করে দেই। তিনি আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার জন্যে দোয়া করে দিন! তাতে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে নির্দেশ মুবারক করলেন, ভালো করে অজু করো এবং দু’রাকায়াত নামায আদায় করো এবং এই পবিত্র কালাম শরীফ পড়ে দোয়া করো- আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্ আলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জুহু ইলাইকা বি-মুহাম্মাদিন নাবিইয়্যির রহমাতি, ইয়া মুহম্মদু ইন্নি আতাওয়াজ্জাহু বিকা ইলা রাব্বী ফী হাজাতি হাজিহি লিতুক্বদ্বা। আল্লাহুম্মা শাফফি’হু ফিইয়্যা। অর্থাৎ আয় আল্লাহ পাক! রহমাতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ওসীলা নিয়ে আমি আপনার নিকট সুওয়াল করছি এবং আপনার শাহী দরবারের সম্মুখীন হয়েছি। ইয়া রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার ওসীলা নিয়ে এ হাজতটি পূর্ণ হওয়ার জন্যে আমার মহান রব তায়ালা উনার শরণাপন্ন হয়েছি। আয় আল্লাহ পাক! আপনি উনাকে আমার জন্যে সুপারিশকারী হিসাবে কবুল করুন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ – হাদীস ১৩৮৫)
হাদীস শরীফের সনদ সহীহ।

পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে বিশুদ্ধ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন।
ان رجلا كان يختلف الى حضرت عثمان بن عفان عليه السلام فى حاجة له وكان حضرت عثمان عليه السلام لايلتفت اليه ولا ينظر فى حاجته فلقى حضرت عثمان بن حنيف رضى الله تعالى عنه ائت الميضاة فتوضا ثم انت المسجد فصل فيه ركعتين ثم قال اللهم انى اسألك واتوجه اليك بنينا محمد صلى الله عليه وسلم نبى الرحمة يا محمد صلى الله عليه وسلم! انى اتوجه بك الى رب فيقضى حاجتى. وتذكر حاجتك ورح الى حتى اروح معك فانطلق الرجل فصنع مما قال له ثم اتى باب حضرت عثمان عليه السلام فجاء البواب حتى اخذ بيده فادخله على حضرت عثمان فاجلسه معه على الطنفسة وقال ما حاجتك؟ فذكر حاجته فقضاها له، ثم قال ما ذكرت حاجتك حتى كانت هذه الساعة.
অর্থ: “হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম উনার সাথে জনৈক ব্যক্তির কিছু প্রয়োজন ছিল। কিন্তু হযরত উছমান আলাইহিস সালাম তিনি এদিকে লক্ষ্য করছেন না এবং তার প্রয়োজনটি সমাধান করার প্রতি নজর দিচ্ছেন না। সে ব্যক্তি হযরত উছমান ইবনে হুনাইফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি জানালো। এতে তিনি ওই লোকটিকে বলে দিলেন। তুমি অজুখানাতে গিয়ে ভালো করে অজু করো এবং মসজিদে গিয়ে দুই রাকায়াত নামায শেষে এ দোয়াটি পড়। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসয়ালুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহু ইলাইকা বি নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদিন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ইয়া মুহাম্মাদু! ইন্নি আতাওয়াজ্জাহু বিকা ইলা রব্বি ফায়াক্বদ্বি হাজাতি।’ (আয় আল্লাহ পাক! রহমাতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ওসীলা নিয়ে আমি আপনার নিকট সুওয়াল করছি এবং আপনার শাহী দরবারের সম্মুখীন হয়েছি )এবং তোমার প্রয়োজনের কথা এখানে উল্লেখ করো। তারপর আমার নিকট চলে আস, আমিও তোমার সাথে যাব। এ ব্যক্তি গিয়ে এভাবে নামায ও দোয়া আদায় করে হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার দরবারে উপস্থিত হলেন। গেটের  দায়িত্বে নিয়োজিত লোক এসে গেট খুলে উনাকে ভিতরে নিয়ে হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সামনে হাজির করে দিলেন এবং তিনি সেই ব্যক্তিকে উনার সাথে বসায়ে জিজ্ঞাসা করলেন কি প্রয়োজন? সে ব্যক্তি তার প্রয়োজনটি বলে দিলো এবং তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন আর বললেন- তোমার এ কাজটি এ মুহূর্তটির আগ পর্যন্ত আমার স্মরণ ছিল না। আরো বলে দিলেন, তোমার যদি কখনো প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে আমার নিকট চলে আসো।” (আত্ তরগীব ওয়াত্ তারহীব ১ম খ-, পৃষ্ঠা ৩৭৪)
উক্ত হাদীসটির ক্ষেত্রে ইমাম তাবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেনঃ والحديث صحيح তথা এ হাদীসটি সহীহ। (আল মুজামে সগীর-১০৪)
আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেনঃ رواه التبرانى بسند جيد তথা তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটাকে উত্তম সনদে তা বর্ণনা করেছেন। (হাশীয়ায়ে ইবনে হাজার মক্কী আলাল ঈজাহ ফি মানাসিকিল হজ্ব লিন নববী-৫০০, মিশর)
হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব নন্দিত কিতাব “আল আযকার” উনার ‘বাবু মায়াক্কুলুহু ইযা খাদিরাত রিজলাহু’ অর্থাৎ কারো পা যদি ঝিন ঝিন করে অবশ হয়ে যায় তখন সে কি বলতে পারে, এ ব্যাপারে একটি অধ্যায় করে একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ হযরত ইমাম ইবনু সিন্নী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব উনার বরাত দিয়ে বর্ণনা করেন,
روينا فى كتاب ابن السنى عن حضرت الهيثم بن حنش قال كنا عند عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنهما فخدرة رجله فقال له رجل اذكر احب الناس اليك فقال يا محمد صلى الله عليه وسلم فكانما نشط من عقال.
অর্থ: “হযরত হায়ছাম ইবনে হানাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিদমতে ছিলাম। এমনি সময় উনার পা ঝিন ঝিন করে অবশ হয়ে গেলো। তখন উপস্থিত জনৈক ব্যক্তি উনাকে বললেন, আপনার প্রিয়তম ব্যক্তির নাম স্মরণ করুন! তখন তিনি বললেন, ‘ইয়া মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’। তখনই যেন পা’খানা পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলো।” সুবহানাল্লাহ! (আদাবুল মুফাররাদ লি ইমাম বুখারী, আল আযকার/২৬০)
ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আদাবুল মুফাররাদ কিতাবে বর্ণনা করেছেন, হাফিযুল হাদীছ হযরত ইমাম আবূ বকর আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইসহাক দিনওয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইবনুস সিন্নী নামে পরিচিত, যাঁর কিতাব থেকে হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি উনার কিতাবে উপরে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ ছাড়া আরো দুটি পবিত্র হাদীছ শরীফ একইভাবে রেওয়ায়েত করেছেন।
হযরত হায়ছাম ইবনে হানাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে “আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ” নামক কিতাবে ৬৪ পৃষ্ঠার ১৬ নম্বর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত আবূ সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কর্তৃক একই ঘটনা বর্ণিত রয়েছে। এছাড়া তিনি উক্ত কিতাব উনার ৬৫ পৃষ্ঠায় ১৭২ নম্বর পবিত্র হাদীছ শরীফের মধ্যে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার অপর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হলো-
عن حضرت عبد الرحمن بن سعد رضى الله تعالى عنه قال كنت عند حضرت عمر عليه السلام فصدرة رجله فقلت يا ابا عبد الرحمن مالربجلك قال اجتمع عصبها من ههنا قلت ادع احب الناس اليك فقال يا محمد صلى الله عليه وسلم فانبسطت.
অর্থ: “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম উনার নিকট ছিলাম। এমনি সময়ে উনার পা মুবারক ঝিনঝিন শুরু করে দিলো। আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার পা মুবারকে কি হয়েছে? তিনি বললেন, আমার এখানের হাড় একত্রিত হয়ে গেছে। আমি উনাকে বললাম, আপনার সর্বাধিক প্রিয় মানুষকে আহ্বান করুন। তাতে তিনি ‘ইয়া মুহাম্মাদ! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে আহবান করলেন। তৎক্ষণাত উনার পা মুবারক ভালো হয়ে গেল।”

এবার আসুন ওহাবী সালাফীদের মুরুব্বী ইবনে তাইমিয়ার জীবনী থেকে ওসীলার দলীল দেখা যাক:

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া এর ছাত্র হাফেয উমর ইবনে আলী আল-বাজ্জার ইবনে তাইমিয়া এর জীবনীর উপর লিখিত “আল-আ’লামুল আলিয়্যা ফি মানাকিবি ইবনে তাইমিয়া” নামক কিতাবে লিখেছেন-
فقل ان يراه احد ممن له بصيرة الا وانكب على يديه يقبلهما حتى انه كان اذا راه ارباب
المعايش يتخطون من حوانيتهم للسلام عليه والتبرك به
যখনই জ্ঞানী কেউ তাকে (তাইমিয়া) দেখত, তার হস্ত চুম্বনে অগ্রসর হত। এমনকি জীবিকা নির্বাহী ব্যবসায়ীরা যখন তাঁকে দেখত, তাকে সালাম দেযা ও তার নিকট থেকে বরকত লাভের জন্য তাদের দোকান থেকে বেরিয়ে আসত।” (আল-আ’লামুল আলিয়্যা ফি মানাকিবি ইবনে তাইমিয়া” ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৩৯)
এখানে দেখা গেলো, তাইমিয়ার অনুসারীরা তাইমিয়ার চেহারা দেখাকে বরকত লাভের ওসীলা মনে করতো।
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া এর মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লামা হাফেয বাজ্জার লিখেছেন-
وازدحم من حضر غسله من الخاصة والعامة على الماء المنفصل عن غسله حتَّ حصل لكل واحد منهم شيء قليل , ثم أخرجت جنازته فما هو إلا ان رآها الناس فأكبوا عليها من كل جانب كلا منهم يقصد التبرك بها حتَّ خشي على النعش ان يحطم قبل وصوله إلى القبر
তাঁর (তাইমিয়া) গোসল দানে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে সাধারণ ও বিশেষ ব্যক্তি সকলেই গোসলের অতিরিক্ত পানি নেয়ার জন্য ভিড় করল। ফলে তাদের প্রত্যেকেই অল্প অল্প করে তা নিল। অতঃপর তাঁর জানাযা বের করা হল। মানুষ যখন তার জানাযা দেখল, চতুর্দিক থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ল, প্রত্যেকেই তার মাধ্যমে বরকত লাভের উদ্দেশ্য এসেছেন, এমনকি কবরে পৌঁছার পূর্বে খাটিয়া ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা হল” (আল-আ’লামুল আলিয়্যা ফি মানাকিবি ইবনে তাইমিয়া ১ম খন্ড পৃষ্ঠা-৮৩)

দেখা গেলো তাইমিয়ার অনুসারীরা তার মৃত্যুর পর গোসলের পানিকে বরকতের ওসীলা মনে করতো।
এত অসংখ্য অগনিত দলীল থাকার পরও কি করে আজকাল ওহাবী সালাফীরা ওসীলার দলীল খুঁজে পায় না? মূলত তারা সাধারণ মানুষদের গোমরাহ করার জন্য এসব চুপিয়ে রাখে ও ওসীলার বিরোধীতা করে। সূতরাং সবাই এসব ভন্ড সালাফীদের সমাজ থেকে বয়কট করুন। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন