রেজাউল করীম আবরারের একটা দাবি- জন্ম উপলক্ষে নবীজী
রাখলেন রোজা আপনারা করেন ঈদ।
যে হাদীছ শরীফ দিয়ে সে রোজা পালন করার কথা বলছে তা হলো-
“হযরত আবূ ক্বতাদা আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদা
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি সোমবার রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলেন, তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, এদিন আমি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহন করেছি, আর এ দিনেই আমার উপর পবিত্র ওহী বা পবিত্র কুরআন
শরীফ নাযিল হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৮০৭)
প্রথম কথা হচ্ছে এ হাদীছ শরীফ পেশ করার মাধ্যম
দিয়ে সে ‘মীলাদুন্নবী পালন’ করাকে মেনে নিলো। যাক আগেতো মীলাদুন্নবী পালন অস্বীকার করতো এখন কিছুটা উন্নতি
হয়েছে। এখন বাকি থাকলো, রোজা না রেখে ঈদ করা নিয়ে। সম্ভবত রেজাউল করীম আবরার সহ
সমগোত্রীয়রা রোজা এবং ঈদকে সাংঘর্ষিক মনে করে। আসুন আমরা কিছু হাদীছ শরীফ দেখবো
যেখানে রোজার মাধ্যম দিয়ে ঈদ পালন করার ব্যাপারে বলা হয়েছে।
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدِمَ الْمَدِينَةَ
فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم " مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ "
. فَقَالُوا هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ أَنْجَى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ
وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا فَنَحْنُ نَصُومُهُ .
فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى
بِمُوسَى مِنْكُمْ " . فَصَامَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ .
হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
মাদীনা শরীফে হিজরত করে ইয়াহূদীদেরকে ‘আশূরার দিন রোজা পালনরত দেখতে
পেলেন। এরপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমারা কোন দিন
উপলক্ষে রোজ পালন করছ, তারা বলল, মহান দিনে
আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও উনার সম্প্রদায়কে
মুক্তি দিয়েছেন এবং ফির‘আওন ও তার কওমকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। এরপর হযরত মূসা
আলাইহিস সালাম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার লক্ষ্যে এ দিনে রোজা পালন করেছেন। তাই আমরাও এ
দিনে রোজা পালন করছি। তারপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমরা তো তোমাদের
থেকে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এর অধিক নিকটবর্তী এবং হাক্বদার। অতঃপর হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওম পালন করলেন এবং সওম পালন করার জন্য সকলকে নির্দেশ
দিলেন। (মুসলিম শরীফ ২৫৪৮)
এ হাদীছ শরীফ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আশুরা উপলক্ষে রোজা রেখে
এ দিবস পালন করলেন এবং সবাইকে করতে বললেন।
এখন জানার বিষয় আশুরার এই
মহান দিবসকে কি মনে করা হতো?
হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
عَنْ أَبِي مُوسَى، - رضى الله عنه - قَالَ كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ
يَوْمًا تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَتَتَّخِذُهُ عِيدًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم صُومُوهُ أَنْتُمْ .
হযরত আবূ মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, ইয়াহূদী সম্প্রদায় ‘আশূরা
দিবসের সম্মান প্রদর্শন করত এবং তারা এ দিনকে ঈদ বলে গন্য করত। অতঃপর
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও এ দিনে সওম পালন কর। (মুসলিম
শরীফ ২৫৫০)
অপর হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
قَالَ كَانَ أَهْلُ خَيْبَرَ يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ يَتَّخِذُونَهُ عِيدًا وَيُلْبِسُونَ نِسَاءَهُمْ
فِيهِ حُلِيَّهُمْ وَشَارَتَهُمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
فَصُومُوهُ أَنْتُمْ
খায়বারের ইয়াহূদীরা ‘আশূরার
দিন সওম পালন করত, তারা এ দিনকে ঈদরূপে বরণ করত এবং
তারা তাদের মহিলাদেরকে অলংকার ও উত্তম পোশাকে সুসজ্জিত করত। এরপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও এ দিনে সওম পালন কর। (মুসলিম
শরীফ ২৫৫১)
হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনার উম্মতরা আশুরার
দিনকে নিয়ামত মনে করে সেদিনকে ‘ঈদ’ হিসাবে পালন করে শুকরিয়া আদায় স্বরূপ রোজাও রাখতো। ঈদ কেন পালন করতো? শুকরিয়া আদায়
করে। তাহলে বোঝা যায় শুকরিয়া আদায় করার আরেকটি নাম হচ্ছে ঈদ যা রোজা রেখেও পালন
করা যায়। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মত অর্থাৎ আমাদেরকেও
এ দিন উপলক্ষে রোজা রাখতে বলেছেন। তিনি কিন্তু কোথাও বলেন নাই- হে আমার উম্মত তোমরা ঈদ পালন করো না শুধু রোজা রাখো। বরং তিনিও আমাদের শুকরিয়া স্বরূপ রোজা রাখতে
বলেছেন অর্থাৎ এর মাধ্যমে ঈদ পালন করতে বলেছেন। অর্থাৎ এ হাদীছ শরীফ গুলোই প্রমাণ
করে ঈদের সাথে রোজার কোন সাংঘর্ষিকতা নেই। রোজা হচ্ছে শুকরিয়া আদায় করার মাধ্যম
মাত্র। আর ঈদ হচ্ছে আত্মিক খুশির একটা বিষয়।
আরাফার দিন ঈদ এবং রোজাঃ
قَالَ قَرَأَ ابْنُ عَبَّاسٍ : ( الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ
دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا
) وَعِنْدَهُ يَهُودِيٌّ فَقَالَ لَوْ أُنْزِلَتْ هَذِهِ عَلَيْنَا لاَتَّخَذْنَا
يَوْمَهَا عِيدًا . قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَإِنَّهَا نَزَلَتْ فِي
يَوْمِ عِيدٍ فِي يَوْمِ جُمُعَةٍ وَيَوْمِ عَرَفَةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا
حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ حَدِيثِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَهُوَ صَحِيحٌ
অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্নিত আছে যে, তিনি একদা – ” আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ন করে দিলাম ” ( সূরা মায়েদা ৩) এ আয়াত শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন ! তখন উনার নিকট এক ইহুদী ছিল সে বলে উঠলো, যদি এমন আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো, আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতাম !’ এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন একসাথে দুই ঈদ ছিলো – (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন !” (দলীল: তিরমীযি শরীফ- কিতাবুত তাফসীর : হাদীস ৩৩১৮)
৯ যিলহজ্জ আরাফার দিন রোজা
রাখার বিষয়ে হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ
أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ
الَّتِي بَعْدَهُ
‘আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি মহান আল্লাহ পাকের কাছে আশাবাদী যে তা (আমার উম্মতের)
বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের গুনাহকে ক্ষমা করিয়ে দেবে। ’ (মুসলিম শরীফ হাদিস : ১১৬২)
অতএব এ হাদীছ শরীফ থেকে দলীল
পাওয়া গেলো, আরাফরা দিন হচ্ছে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন এবং এ দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে
অনেক ফযিলতের বর্ণনা আছে। অর্থাৎ রোজা রাখার মধ্যে দিয়ে ঈদ রহিত হয়না বা ঈদ পালনের
মাধ্যমে রোজা রাখাও প্রতিবন্ধক হয়না।
সূতরাং রেজাউল
করীম আবরারের দাবি- “জন্ম উপলক্ষে নবীজী রাখলেন রোজা
আপনারা করেন ঈদ” এই দাবির অসারতা প্রমাণ হলো।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন