বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

সহীহ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত ১২ ই রবিউল আউয়াল সোমবার হচ্ছে নবীজীর বিলাদত শরীফের তারিখ


ধর্মব্যবসায়ী, মুনাফিক,ভন্ড,শ্রেনীর কিছু লোক  মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য বলে থাকে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। তাই মতভেদ যুক্ত বিষয়ে আমল করা যাবে না অর্থাৎ ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা যাবে না । নাউযুবিল্লাহ !!
আসলে এই বাতিল ফির্কাগুলা মুনাফিক হএয়ার কারনে সত্য বিষয় গোপন করে। দেখুন সহীহ হাদীস শরীফে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের তারিখ,বার, মাস সবই বর্ণনা করা আছে। হাফিজে হাদীস হযরত আবু বকর ইবনে আবী শায়বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেটা বিশুদ্ধ সনদে হাদীস শরীফে বর্ননা করেন-

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَفَّانُ، عَنْ سَلِيمِ بْنِ حَيَّانَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ مِينَا، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْأَنْصَارِيِّ وَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّهُمَا قَالَا: " وُلِدَ رَسُولُ اللَّهِ يَوْمَ الْفِيلِ، يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، الثَّانِي عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيعٍ الْأَوَّلِ

অর্থ : হযরত আফফান রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্নিত,তিনি সলিম ইবনে হাইয়্যান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ননা করেছেন যে, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ হস্তি বাহীনি বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার শরীফ হয়েছিল।(দলীল- মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, বুলুগুল আমানী শরহিল ফতহুর রব্বানী ২য় খন্ড ১৮৯ পৃস্ঠা, বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩ য় খন্ড ১০৯ পৃষ্ঠা , প্রকাশনা- দারূল ফিকর , বৈরূত লেবানন)
উক্ত হাদীস শরীফ এর রাবীগন অত্যান্ত সেকাহ বা বিশস্ত। রবীগনের নাম ও তাদের সম্পর্কে রেজাল বিদগন কি বলেছেন আসুন দেখা যাক। উপরোক্ত হাদীস শরীফের সনদে রাবীগন হচ্ছেন,

১) হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু।
২) হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
৩) সাঈদ ইবনে মীনা রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৪) সলিম ইবনে হাইয়ান রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৫) হযরত আফফান রহমাতুল্লাহি আলাইহি

সনদের উপরের দুজনতো সাহাবী উনাদের তে কোন তুলনাই নাই । অপর দুই জন রাবী সাঈদ ইবনে মীনা রহমাতুল্লাহি আলাইহি , সলিম ইবনে হাইয়ান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আফফান রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে রেজালের কিতাবে বলা হয়েছেউচ্চ পর্যায়ের নির্ভযোগ্য ইমাম, সিকাহ, তীক্ষ্ণ স্মরন শক্তি সম্পন্ন, বিশস্ত এবং নির্ভরযোগ্য ,দৃঢ় প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব।’’ (দলীল- খুলাছাতুত তাহযীব ২৬৮ পৃষ্ঠা, ত্বাকরীবুত তাহযীব ২ খন্ড ১২৬ পৃষ্ঠা)

শুধু তাই নয় সহীহ হাদীস শরীফে অন্য সনদেও এ বিষয়ে হাদীস শরীফ উল্লেখ আছে। ইমাম হাকিম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ প্রসঙ্গে উনার কিতাবে উল্লেখ করেন,
حدثنا أبو الحسن محمد بن أحمد بن شبويه الرئيس بمرو ثنا جعفر بن محمد النيسابوري ثنا علي بن مهران ثنا سلمة بن الفضل عن محمد بن إسحاق قال : ولد رسول الله صلى الله عليه و سلم لاثنتي عشر ليلة مضت من شهر ربيع الأول
অর্থ: রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার বারো রাত অতিবাহিত হওয়ার পর নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাদত শরীফ প্রকাশ করেন।  (হাদীছ শরীফ: মুসতাদরেকে হাকেম- ৪র্থ খন্ড ১৫৬৮ পৃষ্ঠা হাদীস নম্বর ৪১৮২) ইমাম হাকিম ও ইমাম যাহাবী  রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন- উক্ত হাদীস শরীফটি সহীহ।

ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব ‘দালায়েলুন নবুওয়াত’ এর মধ্যে সহীহ হাদীস বর্ণনা করেন,
أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ الْفَضْلِ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ سُفْيَانَ، قَالَ: حَدَّثَنِي عَمَّارُ بْنُ الْحَسَنِ النَّسَائِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنِي سَلَمَةُ بْنُ الْفَضْلِ، قَالَ: قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ " وُلِدَ رَسُولُ اللَّهِ يَوْمَ الاثْنَيْنِ، عَامَ الْفِيلِ، لاثْنَتَيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيعٍ الأَوَّلِ
অর্থ: মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার, হস্তীবাহীর বছর, ১২ রবিউল আউয়াল রাত্রির শেষভাগে বিলাদত শরীফ গ্রহন করেন (দালায়িলূন নবওয়াত ২৩ নম্বর হাদীস)

সূতরাং আমরা সহীহ হাদীস শরীফ থেকে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের তারিখ জানতে পাররাম। এবার আসুন দেখা যাক পরবর্তী উলামায়ে কিরামগন এ বিষয়ে কি বলেছেন।

বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,  
ولد رسول الله صلي الله عليه وسلم يوم الاثنين عام الفيل لاثني عشرة ليلة مضت من شهر ربيع الاول
Top of Form

অর্থ: নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত ১২ ই রবিউল আউয়ালের আমুল ফিল বা হস্তী বাহীনির বছর রাতের শেষ ভাগে হয়েছে।’’ (দলীলঃ কিতাবুল ওয়াফা পৃষ্ঠা ৮৭ । লেখক আল্লামা ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, প্রকাশনা দারূল কুতুব ইসলামীয়া , বৈরূত লেবানন)

হাফিজে হাদীস ইমাম কুস্তালানি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
هو المشهور انه ولد ثاني عثر ربيع الاول وهو قول ابن اسحاق وغيره

অর্থ: প্রসিদ্ধ মত অনুসারে নিশ্চয়ই নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফ সোমবার দুনিয়ায় শুভ আগমন করেছেন। ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যদের এটাই মত। (শরহুল মাওয়াহেব ১ম খন্ড ২৪৮ পৃষ্ঠা)

وعليه عمل اهل مكة في زيارتهم موضع مولده في هذا الوقت

অর্থ: ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফ মক্কা শরীফের অধিবাসীদের মধ্যে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র জন্মস্থান যিয়ারত করার আমল বর্তমান অবধি জাড়ি রয়েছে।’’ (দলীলঃ শরহুল মাওয়াহেব ১ম খন্ড ২৪৮ পৃস্ঠা)

বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ইমাম ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ولد رسول الله صلي الله عليه و سلم يوم الاثنين لاثنتي عشرة ليلة خلت من شهر ربيع الاول عام الفيل

অর্থ: ‘‘নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ ই রবিউর আউয়ালের আমুল ফিল বা হস্তী বাহীনির বছর রাতের শেষ ভাগে উনার পবিত্র বিলাদত  লাভ করেন।’’ (সিরাতে ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ১৫৮ পৃষ্ঠা)

ঐতিহাসি ইবনে খালদুন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ولد رسول الله صلي الله عليه و سلم عام الفيل لاثنتي عثرة ليلة خلت من ربيع الاول لاربعين سنة من ملك كسري انوشيروان

অর্থ: ‘‘নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ ই রবিউর আউয়ালের আমুল ফিল বা হস্তী বাহীনির বছর রাতে শুভ আগমন করেন। তখন ছিলো বাদগশা নাওয়াশেরের শাষনকাল। (তারীখে খালদুন ২/৩৯৪)

ইমাম জারির তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ولد رسول الله صلي الله عليه وسلم يوم الاثنين عام الفيل لاثني عشرة ليلة مضت من شهر ربيع الاول
অর্থ: ‘‘নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ ই রবিউর আউয়ালের আমুল ফিল বা হস্তী বাহীনির বছর রাতের শেষ ভাগে উনার পবিত্র বিলাদত  লাভ করেন।’’ (তারিখে ওমুম ওয়াল মুলক ২ খন্ড ১২৫ পৃষ্ঠা)

ইমাম ইবনে কাছীর ও ইমাম যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন,
قال ابن كثير وهو المثهور عند الجمهور .. هو الذي عليه العمل

 ১২ ই রবিউর আউয়াল তারিখ ই নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তারিখ হিসাবে জমহুর উলামায়ে কিরামের নিকট প্রসিদ্ধ। উক্ত ১২ ই রবিউর আউয়াল তারিখ ই নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শুভাগমন হিসাবে সবাই পালন করে আসছে। (দলীল- শরহুল মাওয়াহেব ২ খন্ড ২৪৮ পৃষ্ঠা)

হাফিজে হাদিস আবুল ফাত্তাহ আন্দালুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ولد ييدنا ونبينا محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم يوم الاثنين لاثنتي عشرة ليلة مضت من شهر ربيع الاول عام الفيل قيل بعد الفيل بخمسين يوما

অর্থ: নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসে ১২ তারিখ রাতের শেষ ভাগে হস্তি বাহিনীর বছরের ৫০ দিন পর জন্মগ্রহন করেন। (আইনুল আসার ১ম খন্ড ৩৩ পৃষ্ঠা)

বিখ্যাত মুহাদ্দিস, উপমহাদেশের যুগশ্রেষ্ঠ আলেম, শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “জমহুর সিরাত ইতিহাস বিদগণের মতে  নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনরা বিলাদত শরীফের সময় হলো হস্তিবাহীনির বৎসরের ৫৫ দিন পর ছিলো। এই বক্তব্য হলো সর্বাধিক প্রসিদ্ধ আর তা ছিলো রবিউল আউয়াল শরীফ মাসের ১২ তারিখ আর অধিকাংশ আলেম ও ইতিহাসবিদগন এই মতামতই গ্রহন করেছেন এবং এই তারিখের উপর একমত হয়েছেন।” (মাদারেজুন নবুওয়াত ২ খন্ড ১৪ পৃষ্ঠা)

তিনি উনার আরো একটি বিখ্যাত কিতাব, মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ কিতাবে বলেন,
“উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম ও হাদীস শরীফ বিশারদ শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিলাদত শরীফের তারিখ হিসাবে ১২ ই রবিউল আউয়াল তারিখ ই মশহুর। মক্কা শরীফের অধিবাসীদের আমল হলো  উক্ত তারিখে তারা নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র জন্মস্থান যিয়ারত করতেন ’’ (মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ ৮১ পৃষ্ঠা)

তিনি আরো বলেন, প্রসিদ্ধ সিরাতবিদদের মতে, ‘নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিলাদতের সময় হলো হস্তী বর্ষের ৫৫ দিন পর। এই মতই সর্বাধিক প্রসিদ্ধ যে তা ছিলো রবিউল আউয়াল শরীফ মাসের ১২ তারিখ। অধিকাংশ আলেম ও ইতিহাসবি এ বিষয়ে ঐক্যমত্য স্থাপন করেছেন।(মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ ৮১ পৃষ্ঠা)

উক্ত কিতাবে আরো বর্নিত আছে , সমস্ত মুসলমানগন এ বিষয়ের উপর ইজমা করেছেন বা একমত যে, ‘নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ ই রবিউল আউয়াল আগমন করেছেন। (মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ ৮২ পৃষ্ঠা)

পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলে দেওবন্দী ওহাবীরা অপপ্রচার চালায় হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের তারিখ ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফ নয়। তারা তাদের পক্ষের দলীল দেয়ার জন্য মিশরের নাস্তিক মাহমুদ পাশার দলীল দেয়। 
অথচ তাদের মুরুব্বীরা এই প্রসঙ্গে কি বলেছে দেখে নেন-

সারকথা যে বছর আসহাবে ফীল কাবা আক্রমন করে, সেই বছর রবিউল আউয়াল মাসে ১২ তারিখ রোজ সোমবার দিনটি ছিলো পৃথীবির জীবনে এক অনণ্য সাধারন দিবস। যে দিন নিখিল ভুবন সৃষ্টির মূল লক্ষ্য , দিবস রজনী পরিবর্তনের মূখ্য উদ্দেশ্য , হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও বণী আদমের গৌরব, হযরত নূহ আলাইহিস সালামের কিস্তির নিরাপত্তার নিগূঢ় তাৎপর্য , হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের প্রর্থনা ও হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর ভবিষ্যতবানী সমূহের উদৃষ্ট পুরুষ অর্থাৎ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ মোস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীর বুকে আগমন করেন। (দলীল: সীরোতে খতিমুল আম্বিয়া, লেখক- মুফতে শফী পাকিস্তান, পৃষ্ঠা ৪, প্রকাশনা - এমদাদীয়া লাইব্রেরি)


উক্ত কিতাবে একটা টীকা সংযোজন করা হয়েছে, সর্বসম্মত মতানুনারে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার হয়েছিলো। কিন্তু তারিখ নির্ধরনের জন্য ৪ টি রেওয়ায়েত প্রসিদ্ধ রহিয়াছে। যথা- দ্বিতীয়, অষ্টম, দশম, দ্বদশ। হাফিজ মোগলতাঈ (রহ) ২য় তারিখের রেওয়ায়েত গ্রহন করিয়া অন্যান্য রেওয়ায়েতকে দুর্বল বলিয়া মন্তব্য করিয়াছেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েত হচ্ছে দ্বাদশ তারিখের রেওয়ায়েত। এমনকি ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহার উপর ইজমার দাবী বর্ণনা করেছেন। ইহাকে কামেলে ইবনে আছীরে গ্রহন করা হয়েছে। 
মাহমূদ পাশা মিশরী যাহা গননার মাধ্যমে ৯ তারিখকে গ্রহন করেছেন তাহা জমহুরের বিরোধী সনদবিহীন উক্তি। চন্দ্রোদয়ের বিভিন্ন হওয়ার কারনে গননার উপর এমন কোন নির্ভযোগ্যতা জন্ম হয় না যে ইহার উপর ভিত্তি করিয়া জমহুরের বিরুদ্ধাচারণ করা হইবে।

মজার বিষয় এই কিতাবকে বাংলাদেশের দেওবন্দীদের অন্যতম গুরু বাইতুল মুকাররমের সাবেক খতীব ওবায়দুল হক ব্যাপক প্রশংসা করেছে। সে আশরাফ আলী থানবীর রেফারেন্সে বলেছে, ইহাকে বিভিন্ন আনজুমান ও পাঠ্যপুস্তকের তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছিলো।
এখন আপনারাই বলুন দেওবন্দী মুরুব্বীদের মতামতের বিরোধীতা করে বর্তমান দেওবন্দীরা কেন ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফের বিরোধীতা করে??

শুধু তাই নয় বর্তমানে যে সকল ওহাবী সালাফীরা নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের তারিখ ১২ ই রবিউল আউয়াল অস্বীকার করে তাদের গুরু লা-মাযহাবী নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান ভুপালি তার কিতাবে লিখেছে,
ولادت شریف ملۃ ملرمۃ میی وقت طلوع فجر بروز دو شنبه شب دوازدهم ربيع الاول عام الفيل كو بوتی جمھور علماء کا قول يهی بے ابن جوزی نے اس پر اتفاق نقل کيا بے -

নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিলাদত মক্কা শরীফের বাদশা আবরাহার হস্তী বাহীনির বছর ১২ ই রবিউল আউয়ালের সুবহে সাদিকের সময় হয়েছে, এটার উপর উলামায়ে কিরাম একমত হয়েছেন এবং এটার উপর ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ননা করেছেন ও ঐক্যমত্য পোষন বরেছেন।” (শামামাতুর আনবার ইয়ার ফি মাওলিদে খায়রিল বারিয়াহ ৭ পৃষ্ঠা)

এখন বিলাদত শরীফের তারিখ নিয়ে সালাফীদের আপত্তি করারও পথ বন্ধ হলো। কারন তাদের মুরুব্বীরা বিলাদত শরীফের তারিখ ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ বলেছে।সূতরাং এত স্পষ্ট এবং বিশুদ্ধ দলীল থাকার পরও নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের তারিখ ১২ ই রবিউল আউয়াল নিয়ে বিরোধিতা করা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির নামান্তর।

অনেকে আবার ১২ ই রবিউল আউয়ালকে অস্বীকার করতে বিভিন্ন মহাকাশবিদরে রেফারেন্স দেয়ার অপচেষ্টা করে। এসকল লোকদের জন্য নিম্নোক্ত গবেষনামূলক গানিতিক হিসাব উল্লেখ করা হলো-
অ্যাস্ট্রোনমারদের গবেষণায় নির্ভুলভাবে প্রমাণ হয় ১২ই রবিউল আউয়াল-ই হচ্ছে নবীজির আগমণ (জন্ম) এর দিন
নবীজির বিদায় গ্রহণের দিন ছিলো:
হিজরী সন: ১১ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল
ঈসায়ী সন: ৬৩২ সাল, ৮ই জুন
বার: সোমবার
**(১ নং দ্রষ্টব্য দেখুন)

Back Calculation করে দেখা যায়, ৫৭০ ঈসায়ী সনে রবীউল আউায়াল মাস শুরু হয়েছিলো:
হয়,
২৩ শে এপ্রিল ৫৩ হিজরী পূর্ব সনে। (যদি সফর মাস ২৯শে দিনে হয়)
অথবা,
২৪ শে এপ্রিল ৫৩ হিজরী পূর্ব সনে। (যদি সফর মাস ৩০ শে দিনে হয়)
কিন্তু, এটা নিশ্চিত ৫৩ হিজরী পূর্ব সনে সফর মাস ৩০ দিনের হয়েছিলো। **(সূত্র: ২ নং দ্রষ্টব্য দেখুন)
সে অনুযায়ী আপনি নিজেই গণনা করলে পাবেন:
৫৭০ সালের ৫ই মে সোমবারই হচ্ছে ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।
তাহলে আমরা দেখতে পেলাম-
বিলাদত দিবস : ৫ই মে, ৫৭০ ঈসায়ী সন ৫৩ পূর্ব হিজরী সোমবার
বিদায় দিবস : ৮ই জুন, ৬৩২ ঈসায়ী সন, ১১ হিজরী সোমবার

দুই ইংরেজী সনের সময়ের পার্থক্য-
৬২ বছর ১ মাস ৩ দিন
সুতরাং চন্দ্র বৎসর অনুযায়ী-
৬২x৩৬৫+৩১+৩= (২২৬৬৪ ভাগ ৩৫৫ দিন)= ৬৩+ বৎসর
১ নং দ্রষ্টব্য: আখেরী চাহার শোম্বা বলা হয় সফর মাসের শেষ বুধবারকে, কিন্তু কোন তারিখ নিদ্দিষ্ট করা হয় না। এর কারণ সফর মাসের শেষ বুধবার ছিলো হিজরী মাসের ৩০ তারিখ, যা সব সময় আসে না। তাই পরবর্তীতে এ দিনটি যেন প্রতি বছর পালন করা যায় সেই সুবিধার্থে সফর মাসের শেষ বুধবার ধরে দিনটি পালন করা হয়। এখন ৩০ তারিখ যদি বুধবার ধরা হয়, তবে আপনি নিজেই হাতে গুনে দেখুনে ১২ তারিখ সোমবার হয়।
২ নং দ্রষ্টব্য: ৫৭০ ঈসায়ী সন ৫৩ পূর্ব হিজরীতে সফর মাস যে ৩০ দিন ছিলো তার প্রমাণ দুটি:
ক) চাদ গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া যায়, নবীজির বিলাদতের আগে পর পর ৪ চন্দ্র মাস ৩০ দিন করে হয়েছিলো।
খ) যদি সফর মাস ৩০ না হয়, তবে বিলাদত দিবস সোমবার হয় না। অথচ সহিহ হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় নবীজি নিজেই বলেছেন উনার বিলাদত গ্রহণ হচ্ছে সোমবার দিন।
তাই অ্যাস্ট্রোনমার বা জোর্তিবিজ্ঞানীদের গবেষণায় নির্ভুল ভাবে প্রমাণিত নবীজির বিলাদতের দিন অবশ্যই ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।

1 comments:

  1. “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্মদিন হিসাবে ১২ই রবিউল আউয়াল পালন”
    সময় নিয়ে একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন...হেদায়েতের মালিক আল্লাহ্‌। আশা করি আমরা হেদায়েত পাবো। আপনার উত্তর আপনি দেবেন, কিন্তু মুসলমান একজন ভাই হিসাবে আপনাকে সঠিক জ্ঞান না দেবার জন্য আল্লাহ্‌র প্রশ্নের উত্তর আমি করে রাখছি...
    আল্লাহ্‌ স্বাক্ষী থাকলেন।
    জাযাকাল্লাহ খাইরান
    https://www.facebook.com/majormontreal/posts/10211052663621576

    উত্তরমুছুন