আমরা জানি মুসলমানদের জন্য
অন্যতম দুই দিন হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এ দুই দিন ঈদের দিনও বটে। এ দুই ঈদ
ছাড়াও আরো ঈদ আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা ঈদের দিন হলো পবিত্র জুমুয়ার দিন।
হাদীছ শরীফে আছে,
عَنْ
حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ هٰذَا يَوْمُ عِيْدٍ جَعَلَهُ اللهُ لِلْمُسْلِمِيْنَ
فَمَنْ جَاءَ اِلَى الْـجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ وَاِنْ كَانَ طِيْبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ
وَعَلَيْكُمْ بِالسّوَاكِ.
অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দিনকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ
করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআর নামায আদায় করতে আসবে, তিনি যেন
গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও কর্তব্য।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৯৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৭৩৫৫)
এ ছাড়া হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
অর্থ : “হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক্ব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি এক জুমুআর দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, এ পবিত্র জুমআর দিন হচ্ছে এমন একটি
দিন, যে দিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঈদের দিন সাব্যস্ত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
(মুয়াত্তা মালিক শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৪৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৯৮, মা’য়ারিফুস সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৮০২, মুসনাদে শাফিয়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৬৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪৩৩)
জানা দরকার এ দিনের
বৈশিষ্ঠ কি। কেন এ দিন ঈদের দিন হলো-
হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتْ اَوْسِ بْنِ اَوْسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ مِنْ اَفْضَلِ اَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ فِيْهِ
خُلِقَ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ قُبِضَ.
অর্থ : “হযরত আউস ইবনে আউস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের দিনগুলোর
মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে পবিত্র জুমুআর দিন। এ দিনে আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস
সালাম তিনি সৃষ্টি হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি পবিত্র বিছালী শরীফ গ্রহন করেছেন।” (নাসায়ী শরীফ শরীফ : কিতাবুল জুমুয়া : হাদীছ শরীফ নং ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ : কিতাবুল জুমুয়া, হাদীছ শরীফ নং ৮৫৫, তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৯১, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮৯৫৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৭০৫, আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুছ ছলাত, হাদীছ শরীফ নং ১০৪৭, ইবনে খুজায়মা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩২)
এ হাদীছ শরীফ থেকে আমরা জানতে
পারলাম আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি ও
আগমনের কারনে জুমুয়ার দিন ঈদের দিন।
এখানেই শেষ নয়, ‘জুমুয়ার
দিন’ দিন শুধু ঈদের দিনই নয় বরং অন্যান্য দিনের চাইতেও শ্রেষ্ঠ দিন বা হাদীছ
শরীফের ভাষায় ‘সাইয়্যিদুল আইয়াম’ ।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتْ اَبِـي لُبَابَةَ بْنِ عَبْدِ الْمُنْذِرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ
قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ
سَيّدُ الاَيَّامِ وَاَعْظَمُهَا عِنْدَ اللهِ وَهُوَ اَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ مِنْ يَّوْمِ
الاَضْحٰى وَيَوْمِ الْفِطْرِ فِيْهِ خَـمْسُ خِلَالٍ خَلَقَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ
اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاَهْبَطَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ
اِلَى الْأَرْضِ وَفِيْهِ تَوَفَّى اللهُ حَضْرْتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ
سَاعَةٌ لَا يَسْأَلُ اللهَ فِيْهَا الْعَبْدُ شَيْئًا اِلَّا اَعْطَاهُ مَا لَـمْ
يَسْأَلْ حَرَامًا وَفِيْهِ تَقُوْمُ السَّاعَةُ مَا مِنْ مَلَكٍ مُّقَرَّبٍ وَلَا
سَـمَاءٍ وَلَا اَرْضٍ وَلَا رِيَاحٍ وَلَا جِبَالٍ وَلَا بَـحْرٍ اِلَّا وَهُنَّ يُشْفِقْنَ
مِنْ يَّوْمِ الْـجُمُعَةِ.
অর্থ : “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে
আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র জুমআ
শরীফের দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ (সাইয়্যিদুল আইয়াম) এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ
পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এদিনটি পবিত্র ঈদুল আদ্বহার দিন ও পবিত্র ঈদুল
ফিতরে দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাকের নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত।
এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ)
বিষয় রয়েছে- (১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম
উনাকে সৃষ্টি করেছেন,
(২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে
তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহন করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টিতে
বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন, যে পর্যন্ত
না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা আলাইহিস
সালাম নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুআর দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ
: হাদীছ শরীফ নং ১১৩৭, আল্ মু’জামুল কবীর লিত্
ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫১১, বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৯৭৩)
অর্থাৎ দেখা গেলো জুমুয়ার
দিন শুধু ঈদের দিনই নয় বরং ‘সাইয়্যিদুল আইয়াম’ বা অন্যান সাধারন দিন সমূহের মধ্যে
শ্রেষ্ঠ দিন। কারন সমূহের অন্যতম হচ্ছে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, আগমন
ও বিছাল।
তাহলে যিনি হযরত আদম
আলাইহিস সালাম উনারও রসূল, সাইয়্যিদুল মুসরালিন, ইমামুল মুরসালিম হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিনটা কি হবে?
সেটা কি গুরুত্ব পাবে না?
সেট কি শ্রেষ্ঠ দিন হবে না?
হযরত আদম আলাইহিস সালাম
উনার আগমনের জন্য জুমুয়ার দিন যদি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতে বড় ঈদের দিন হয়,
হাদীছ শরীফের ভাষায় ‘সাইয়্যিদুল আইয়াম’ হয় তাহলে সৃষ্টি জগতের সবার রসূল
হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উনার আগমন বা বিলাদত
শরীফের দিন ও তারিখ কি “সাইয়্যিদুল আইয়াদ” বা শ্রেষ্ঠ ঈদ হবে না?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন