সূরা নিছা ৩ নং আয়াত শরীফের আল্লাহ পাক বলেন,
وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ
“আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীম মেয়েদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত।” (সূরা নিছা ৩ নং আয়াত শরীফ)
এবার আসুন দেখা যাক ইয়াতিম কাকে বলে, লিসানুল আরব অভিধানে ইয়াতিমের সংঙ্গায় বর্ণিত আছে,
اليتيم: الذي يموت أبوه حتى يبلغ الحلم، فإذا بلغ زال عنه اسم اليتيم، واليتيمة ما لم تتزوج، فإذا تزوجت زال عنها اسم اليتيمة.
অর্থ: এতিম এমন বাচ্চাকে বলা হয় যার পিতা মারা গিয়েছে, বালেগ হওয়া অবধি সে এতিম হিসাবে গণ্য হবে, বালেগ হবার পর এতিম নামটি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর মেয়ে বাচ্চা বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত এতিম বলে গণ্য হবে বিয়ের পর তাকে আর এতিম বলা হবে না। (লিসানুল আরব ১২/৬৪৫)
সহীহ হাদীছে ইয়াতিম প্রসংঙ্গে এসেছে,
قَالَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ حَفِظْتُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يُتْمَ بَعْدَ احْتِلاَمٍ
“হযরত আলী ইবনে আবী ত্বালিব রদ্বয়িাল্লাহু আনহু উনার থেকে র্বণতি। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে আমি হাদীছ শরীফ মুখস্থ করে রেখেছি যে, বালেগ হওয়ার পর ইয়াতীম থাকে না। (আবু দাউদ শরীফ ২৮৭৫, সুনানে কুবরা বায়হাক্বী ৬/৫৭ হাদীছ ১১৬৪২, মুজামুল কবীর তাবরানী ৩৪২২, সুনানে ছগীর লি বায়হাকী ২০৪৯, শরহুস সুন্নহ ৯/২০০, ফতহুল বারী ২/৩৪৬, উমদাতুল ক্বারী ২১/১০৭, কানযুল উম্মল ৬০৪৬)
নাসিরউদ্দিন আলবানী তার সিলসিলাতুস সহীহা ৩১৮০ নম্বর হাদীসে উক্ত হাদীছ শরীফের সনদকে উত্তম ও সকল রাবীকে সেকাহ বলেছে।
উপরোক্ত বর্ণিত আয়াত শরীফে “ইয়াতিম” ও তার ব্যাখায় লুগাত এবং হাদীছ শরীফ থেকে যা বোঝা গেলো,
ইয়াতিম মেয়েদের বিবাহ করা যাবে। আর মেয়েদের মধ্যে ইয়াতিম হচ্ছে সেইসব মেয়ে যারা এখেনো বালেগ হয়নি।
এ বিষয়ে সহীহ একখানা হাদীছ শরীফ আছে যেখানে ইয়াতিম বিবাহের বিষয়টা বলা হয়েছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْيَتِيمَةُ تُسْتَأْمَرُ فِي نَفْسِهَا فَإِنْ صَمَتَتْ فَهُوَ إِذْنُهَا وَإِنْ أَبَتْ فَلاَ جَوَازَ عَلَيْهَا " . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي مُوسَى وَابْنِ عُمَرَ وَعَائِشَةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ
হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ইয়াতীম কুমারী থেকে তার বিবাহের ব্যাপারে সম্মতি গ্রহণ করতে হবে। যদি সে চুপ থাকে তবে তাই তার সম্মতি বলে গণ্য হবে। আর যদি অস্বীকার করে তবে তার উপর তা কার্যকারী হবেনা।
এই বিষয়ে আবূ মূসা, ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ ঈসা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি হাসান। (সহিহ আবু দাউদ ১৮২৫, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১১০৯)
সূতরাং প্রমানিত হলো ইয়াতিম মেয়েকেও বিবাহ করা যাবে, আর ইয়াতিম হচ্ছে তারা যারা এখনো বালেগ হয়নি। বালেগ হয়নি এমন মেয়েদের বয়স কত হয় এই প্রশ্ন নিজেকে করলেই বাল্য বিবাহ যে শরীয়ত সম্মত সেটা বুঝতে পারবেন।
এ প্রসংঙ্গে আরো বর্ণিত আছে,
وَقَالَ أَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ إِذَا بَلَغَتِ الْيَتِيمَةُ تِسْعَ سِنِينَ فَزُوِّجَتْ فَرَضِيَتْ فَالنِّكَاحُ جَائِزٌ وَلاَ خِيَارَ لَهَا إِذَا أَدْرَكَتْ . وَاحْتَجَّا بِحَدِيثِ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بَنَى بِهَا وَهِيَ بِنْتُ تِسْعِ سِنِينَ
হযরত ইমাম আহমাদ ও ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, যখন ইয়তীম কণ্যার বয়স নয় বৎসর হয় আর তাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় এবং সে সম্মতি দান করে তবে এই বিয়ে জায়েজ। সাবালিকা হওয়ার পর আর তার ইখতিয়ার থাকবে না। উনারা হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ঘটনাকে দলীল হিসাবে পেশ করেন যে যখন উনার বয়স নয় বৎসর হয়, তখন নাবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সঙ্গে অবস্থান করেন। হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
وَقَدْ قَالَتْ عَائِشَةُ إِذَا بَلَغَتِ الْجَارِيَةُ تِسْعَ سِنِينَ فَهِيَ امْرَأَةٌ
“মেয়েদের বয়স নয় বছর হলে সে মহিলা।” (তিরমিযী ১১০৯, সুনানু কুবরা বায়হাক্বী ১৪২৫, ফতহুল বারী ২/৭১২)
নয় বছর হলে যদি মহিলা হয় তবে তাকে বিবাহ করাও শরীয়ত সম্মত। যা সহীহ হাদীছ শরীফ থেকেই প্রমান হলো। এরপরও কোন মুসলমান বাল্য বিবাহের বিরোধীতা করলে সেকি মুসলমান থাকবে?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন