শবে বরাতের আমল |
পবিত্র বরাত রাতে খাছভাবে ইবাদত-বন্দেগী,
দোয়া-ইস্তিগফার
ও দিনে রোযা রাখা ইত্যাদির নির্দেশ মুবারক পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ
শরীফ-এ রয়েছে। পবিত্র শবে বরাতে কোন্ কোন্ ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তা পবিত্র কুরআন
শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ-এ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার
জন্য নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيِّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُوْمُوا لَيْلَهَا وَصُوْمُوا يَوْمَهَا فَاِنَّ اللهَ يَنْزِلُ فِيْهَا لِغُرُوْبِ الشَّمْسِ اِلَى سَـمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُوْلُ اَلاَ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَاَغْفِرَ لَهُ اَلاَ مِنْ مُسْتَرْزِقٌ فَاَرْزُقَهُ اَلاَ مِنْ مُبْتَلًى فَاُعَافِيَهُ اَلاَ كَذَا اَلاَ كَذَا حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ.
অর্থ : “আসাদুল্লাহিল গালিব হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাকের হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, যখন পবিত্র শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত বরবতপূর্ণ রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উক্ত বরকতপূর্ণ রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো। কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো। এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (দলীলঃ ইবনে মাজাহ ১/১৪৪: হাদীস ১৩৮৮, ইবনে হিব্বান: হাদীস ১৩৮৮, বায়হাকী শুয়াবুল ঈমনি ৫/৪৫৪: হাদীস ৩৮২২, মিশকাতুল মাসাবীহ ২/২৪৫ : হাদীস ১২৩৩)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ-এর সংক্ষিপ্ত
বিষয়বস্তু হলো, উক্ত রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে এবং দিনে রোযা রাখতে
হবে যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক বান্দা-বান্দীকে ক্ষমা করে স্বীয় সন্তুষ্টি
মুবারক দান করবেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র শবে বরাত শরীফ মধ্যে যেসব ইবাদত
করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-
১) ছলাতুল বরাত : পবিত্র শবে বরাতে ৪,
৬,
৮,
১০,
১২ রাকায়াত
সুন্নত নামায পড়া যেতে পারে।
২) ছলাতুত তাসবীহ : অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ আদায় করবে,
যার দ্বারা
মানুষের সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়।
“ছলাতুত্ তাসবীহ” ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
“ছলাতুত্ তাসবীহ” ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال للعباس بن عبد الـمطلب عليه السلام يا عباس يا عماه الا اعطيك الا امنحك الا اخبرك الا افعل بك عشر خصال اذا انت فعلت ذلك غفر الله لك ذنبك اوله واخره قديـمه وحديثه خطأه وعمده صغيره وكبيره سره وعلانيته ان تصلى اربع ركعات ... ان استطعت ان تصليها فى كل يوم مرة فافعل فان لـم تفعل ففى كل جـمعة مرة فان لـم تفعل ففى كل سنة مرة فان لـم تفعل ففى عمرك مرة.
অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমার পিতা) হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে বলেন, ‘হে হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম! হে আমার চাচা! আমি কি আপনাকে দিবোনা, আমি কি আপনাকে দান করবোনা, আমি কি আপনাকে বলবোনা, আমি কি আপনার সাথে করবোনা দশটি কাজ? (অর্থাৎ শিক্ষা দিবোনা দশটি তাস্বীহ) যখন আপনি তা আমল করবেন মহান আল্লাহ পাক আপনার প্রথম গুণাহ, শেষ গুণাহ, পুরাতন গুণাহ, নতুন গুণাহ, অনিচ্ছাকৃত গুণাহ, ইচ্ছাকৃত গুণাহ, ছোট গুণাহ, বড় গুণাহ, গোপন গুণাহ, প্রকাশ্য গুণাহ ইত্যাদি সমস্ত গুণাহ-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আপনি (ছলাতুত তাসবীহ) চার রাকায়াত নামায পড়বেন। .... যদি সম্ভব হয় তবে প্রতিদিন একবার এ নামায আপনি পড়বেন। যদি সম্ভব না হয় তবে সপ্তাহে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে বছরে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে জীবনে অন্ততঃ একবার এ নামায আপনি পড়বেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, বায়হাকী ফী দাওয়াতিল কবীর শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উল্লেখ্য, ‘ছলাতুত্ তাসবীহ’ আদায়ের নিয়ম হলো-
প্রথমতঃ এই বলে নিয়ত করতে হবে যে, “আমি ছলাতুত তাসবীহ চার রাকায়াত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখী হয়ে আদায় করছি।”
নিয়ত :
نَوَيْتُ
اَنْ اُصَلّىَ للهِ تَعَالـٰى اَرْبَعَ رَكعَاتِ صَلٰوةُ التَّسْبِيْح سُنَّةُ رَسُوْلِ
اللهِ تَعَالـٰى مُتَوَجّهًا اِلـٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ
অতঃপর তাকবীরে তাহ্রীমা বেঁধে ছানা পাঠ
করতে হবে, ছানা পাঠ করে সূরা ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বেই ১৫ বার
নিম্নোক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে-
سُبْحَانَ اللهِ وَالْـحَمْدُ للهِ وَلَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ : “সুব্হানাল্লাহি ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি ওয়ালা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।”
অতঃপর সূরা
ক্বিরায়াত পাঠ করে রুকতে যাওয়ার পূর্বে ১০ বার,
রুকতে গিয়ে রুকর
তাসবীহ পাঠ করার পর ১০ বার,
রুক থেকে
উঠে(ক্বওমায়) সিজদায় যাওয়ার পূর্বে দাঁড়িয়ে ১০ বার,
অতঃপর সিজদায়
গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করার পরে ১০ বার,
সিজদা থেকে উঠে
দ্বিতীয় সিজদায় যাওয়ার পূর্বে(জলসায়) বসে ১০ বার,
অতঃপর দ্বিতীয়
সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করার পরে ১০ বার
অর্থাৎ এরূপভাবে
প্রতি রাকায়াতে ৭৫ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে।
অতঃপর পরবর্তী রাকায়াতের জন্য দাঁড়াতে হবে। দাঁড়িয়ে প্রথমেই ১৫ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে।
তারপর প্রথম রাকায়াতের মতোই উক্ত
তাসবীহগুলো আদায় করতে হবে। অর্থাৎ চার রাকায়াত নামাযে মোট ৩০০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ
করতে হবে।
জরুরী মাসয়ালা : ছলাতুত তাসবীহ আদায়কালীন হাতে তাসবীহ
নিয়ে গণনা করা মাকরূহ। অঙ্গুলী টিপে টিপে তাসবীহগুলো গণনা করতে হবে। কোন স্থানে
তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরবর্তী তাসবীহ পাঠের সময় তা আদায় করে নিতে হবে। তবে শর্ত
হচ্ছে ক্বওমায় (রুরু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায়) ও জলসায় (দু’ সিজদার মধ্যবর্তী
বসা অবস্থায়) উক্ত তাসবীহ আদায় করা যাবেনা। যেমন,
সূরা-ক্বিরায়াত
পাঠের পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে তা ক্বিরায়াতের পর আদায় করতে হবে। ক্বিরায়াতের পর
তাসবীহ ভুলে গেলে রুকতে আদায় করতে হবে।
রুকুতে তাসবীহ
ভুলে গেলে উক্ত তাসবীহ ক্বওমায় আদায় না করে প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে।
ক্বওমায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে।
প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা জলসায় আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। জলসায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় আদায় করতে হবে।
আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বে আদায় করে নিতে হবে।
আর ভুলে যাওয়া তাসবীহ প্রত্যেক স্থানে নির্ধারিত তাসবীহ আদায় করার পর আদায় করতে হবে।
প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা জলসায় আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। জলসায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় আদায় করতে হবে।
আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বে আদায় করে নিতে হবে।
আর ভুলে যাওয়া তাসবীহ প্রত্যেক স্থানে নির্ধারিত তাসবীহ আদায় করার পর আদায় করতে হবে।
৩) ছলাতুত তাহাজ্জুদ : অতঃপর তাহাজ্জুদের নামায পড়া যাবে,
যা দ্বারা মহান
আল্লাহ পাকের নৈকট্য হাছিল হয়। সুবহানাল্লাহ!
৪) পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত
: পবিত্র কুরআন
শরীফ তিলাওয়াত করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত
হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম আমল।
সুবহাল্লাহ!
৫) পবিত্র মীলাদ শরীফ ও
পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ : পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা যাবে,
যার দ্বারা মহান
আল্লাহ পাকের হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন্
নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সন্তুষ্টি মুবারক
অর্জিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
৬) যিকির-আযকার : যিকির-আযকার করা যায়,
যার দ্বারা দিল
ইছলাহ (পরিশুদ্ধ) হয়। সুবহানাল্লাহ!
কবর যিয়ারত : কবরস্থান যিয়ারত করা যেতে
পারে, যার
দ্বারা সুন্নত আদায় হয়। তবে কবর বা মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়ে সারারাত্র ব্যয়
করে দেয়া জায়িয হবেনা। সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোন কবরস্থান যিয়ারত করেই
চলে আসতে হবে।
৭) দান-ছদকা : গরীব-মিসকীনকে দান-ছদকা করা যেতে পারে ও
লোকজনদের খাদ্য খাওয়ানো যেতে পারে, যার দ্বারা হাবীবুল্লাহ (আল্লাহ পাকের
বন্ধু) হওয়া যায়। সুবহানাল্লাহ!
৮) হালুয়া-রুটি বা গোশত
রুটি পাকানো : পবিত্র শবে বরাত
উপলক্ষ্যে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোন বিশেষ খাবার তৈরী করা ইসলামী শরীয়ত দৃষ্টিতে
নাজায়িয নয়। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে বিশেষ করে আমাদের দেশ ও আশেপাশের দেশসমূহে
যে রুটি-হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে।
ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে,
পূর্ববর্তী
যামানায় যখন বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হোটেল-রেঁস্তরা ইত্যাদি সর্বত্র ছিলনা। তখন মানুষ সাধারণত
সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুসাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন
করতেন। অর্থাৎ মুসাফিরগণ তাদের ছফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের
ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণত সরাইখানা, মুসাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন
করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন তারাই
মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। বিশেষ করে মুসাফিরগণ পবিত্র শবে বরাতে যখন
উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী
করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত
ব্যক্তিগণ খাবারের ব্যবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও
দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়। আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশ্ত-রুটি খাওয়া সুন্নত
সেহেতু তারা হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটির ব্যবস্থা করতেন। এছাড়াও আরবীয় এলাকার
লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশ্ত। তারা ভাত,
মাছ ইত্যাদি
খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির
প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, কোন আমলের ক্ষেত্রেই বদ রসম বা বদ প্রথার
অনুসরণ করা জায়িয নেই। এখন মাসয়ালা হচ্ছে- কেউ যদি পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে
রসম-রেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির
ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িয নয় বরং কেউ যদি তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী
ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে
তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটি অথবা
আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই
অশেষ ফযীলত ও নেকীর কারণ হবে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا ايها الناس افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا بالليل والناس نيام تدخلوا الـجنة بسلام.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাকের হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন করো, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা করো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়ো তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারিমী শরীফ)
তবে সতর্ক থাকতে হবে যে,
এই কাজে ব্যস্ত
থাকার কারণে যাতে এমন পরিশ্রম তথা এমন সময় ব্যয় না হয় যাতে করে কারো পবিত্র শবে
বরাতে ইবাদতে ঘাটতি হয়। আরো সতর্ক থাকতে হবে যে, খাদ্য বিতরণ যেনো আত্মীয়-স্বজন বা
প্রতিবেশীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো
অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দেয়া হয়।
৯) দু’আ-ইস্তিগফার : মহান আল্লাহ পাকের নিকট দু’আ করতে হবে,
যার কারণে মহান
আল্লাহ পাক খুশি হবেন ও নিয়ামত লাভ হবে। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করতে
হবে, যার
মাধ্যমে বান্দার সমস্ত গুণাহ-খতা মাফ হয়ে মহান আল্লাহ পাক খালিছ সন্তুষ্টি মুবারক
অর্জিত হয়। অর্থাৎ পবিত্র শ’বে বরাতের বারাকাত, ফুয়ূজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়।
সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, অনেক স্থানে দেখা যায় যে, লোকজন ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলত মুনাজাত যে কোন সময়েই করা যায়। তবে পবিত্র শবে বরাতে দু’আ কবুল করার যে প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহ্ ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এরপর পবিত্র বরাতের রাত অবশিষ্ট থাকেনা। কেননা, পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ স্পষ্টই বলা হয়েছে যে-
স্মরণীয় যে, অনেক স্থানে দেখা যায় যে, লোকজন ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলত মুনাজাত যে কোন সময়েই করা যায়। তবে পবিত্র শবে বরাতে দু’আ কবুল করার যে প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহ্ ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এরপর পবিত্র বরাতের রাত অবশিষ্ট থাকেনা। কেননা, পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ স্পষ্টই বলা হয়েছে যে-
حتى يطلع الفجر
অর্থ : “ফজর বা ছুবহ্ ছাদিক পর্যন্ত মহান
আল্লাহ পাক দু’আ কবুল করেন।” (মিশকাত ২/২৪৫ : হাদীস ১২৩৩)
অতএব, সবার উচিত হবে মূল বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করা।
অতএব, সবার উচিত হবে মূল বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করা।
পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র করে সমাজের এক
শ্রেণীর আলিম সারারাত ওয়াজ মাহফিল করে থাকে। যদিও পবিত্র বরাতের রাতে ওয়াজ-নছীহত
করার আদেশও নেই আবার নিষেধও করা হয়নি। তবে এ রাতে দু’আ কবুল হওয়ার ও ইবাদত বন্দেগী
করার কথাই পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ ব্যক্ত হয়েছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন
নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِـىْ خَـمْسِ لَيَالٍ اَوَّلِ لَيْلَةٍ مّنْ رَجَبٍ وَلَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَلَيْلَتَا الْعِيْدَيْنِ وَلَيْلَةِ الْقَدْرِ الْـمُبَارَكَةِ.
অর্থ : “নিশ্চয়ই দু’আ পাঁচ রাত্রিতে কবুল হয়। পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাসের পহেলা রাত্রি, পবিত্র শা’বান মাসের ১৪ই তারিখ দিবাগত রাত্রি, দুই ঈদের (পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আদ্বহা) দুই রাত্রি এবং পবিত্র ক্বদর রাত্রি।” ( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪/৩১৭ : হাদীছ ৭৯২৮, মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ ব্যাখ্যায় হযরত
ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন যে-
ليلة البراءة هى ليلة العفو والكرم، ليلة التوبة والندم، ليلة الذكر والصلوة، ليلة الصدقات والـخيرات، ليلة الدعاء والزيارة، ليلة الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم، ليلة تلاواة القران الكريـم.
অর্থ : “পবিত্র বরাত রাত্র হলো ক্ষমা ও দয়ার রাত্র, তওবা ও লজ্জিত হওয়ার রাত্র, যিকর ও নামাযের রাত্র, ছদক্বা ও খয়রাতের রাত্র, দু’আ ও যিয়ারতের রাত্র, পবিত্র দুরূদ শরীফ তথা পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করার রাত্র এবং পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার রাত্র।”
ليلة البراءة هى ليلة العفو والكرم، ليلة التوبة والندم، ليلة الذكر والصلوة، ليلة الصدقات والـخيرات، ليلة الدعاء والزيارة، ليلة الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم، ليلة تلاواة القران الكريـم.
অর্থ : “পবিত্র বরাত রাত্র হলো ক্ষমা ও দয়ার রাত্র, তওবা ও লজ্জিত হওয়ার রাত্র, যিকর ও নামাযের রাত্র, ছদক্বা ও খয়রাতের রাত্র, দু’আ ও যিয়ারতের রাত্র, পবিত্র দুরূদ শরীফ তথা পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করার রাত্র এবং পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার রাত্র।”
কাজেই, পবিত্র বরাতের বরকতপূর্ণ রাতে যেহেতু
ওয়াজ নছীহতের আদেশও করা হয়নি এবং নিষেধও করা হয়নি, তাই মুছল্লীদেরকে পবিত্র বরাত রাতের
ফযীলত ও ইবাদত-বন্দেগীর নিয়ম-কানুন, তর্জ-তরীক্বা বাতিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে
সংক্ষিপ্ত ওয়াজ-নছীহত করা অবশ্যই জায়িয। তাই বলে, সারারাত্র ওয়াজ করে মুছল্লীদেরকে নামায,
তিলাওয়াত,
যিক্র-আযকার,
দু’আ-মুনাজাত
ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগী হতে মাহরূম করা কখনোই ইসলামী শরীয়ত সম্মত নয়। বরং তা পবিত্র
হাদীছ শরীফের খিলাফ। শুধু তাই নয় এতে হক্কুল ইবাদও নষ্ট করা হয়। আর হক্কুল ইবাদ
নষ্ট করা কবীরা গুণাহর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ওয়াজ বছরের যেকোন দিনেই করা যায়। কিন্তু
পবিত্র বরাতের রাত্র বছরে মাত্র একবারই পাওয়া যায়। যদি কেউ পরবর্তী বছর হায়াতে
থাকে তবেই সে পবিত্র বরাতের রাত্র পাবে। কাজেই এ মহামূল্যবান রাত্রকে শুধুমাত্র
ওয়াজ করে ও শুনে অতিবাহিত করে দেয়া সুন্নতের খিলাফ। আর সম্মানিত সুন্নতের খিলাফ
কাজ করে মহান আল্লাহ পাক ও হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রিযামন্দী বা
সন্তুষ্টি কস্মিনকালেও হাছিল করা সম্ভব নয়।
মূলকথা হলো,
বরাত রাত্র মূলত
ইবাদত-বন্দেগীর রাত্র, সারা রাত্র ওয়াজ করে ইবাদত বন্দেগীতে বিঘ্ন ঘটানো এবং
মানুষদেরকে ইবাদত থেকে মাহরূম করা সম্পূর্ণই সম্মানিত ইসলামী শরীয়তের খিলাফ। এ
ধরণের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র্র করে সমাজের
এক শ্রেণীর মানুষেরা আতশবাজি করে থাকে। সম্মানিত ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা
শরীয়ত সম্মত নয়। আতশবাজি দ্বীন ইসলামের কোন শেয়ার নয়। প্রকৃতপক্ষে আতশবাজি হিন্দু
ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথার অন্তর্র্ভুক্ত। তাই মুসলমানের জন্য এসব করা
সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে তার
হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ,
আবূ দাঊদ শরীফ)
কাজেই, মুসলমানদের জন্য শুধু পবিত্র শবে বরাতকে
কেন্দ্র করেই নয় বরং কোন অবস্থাতেই আতশবাজিসহ বিধর্মী-বিজাতীয়দের কোন আমল করা
সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
পবিত্র শবে বরাত হচ্ছে মুক্তি বা ভাগ্য অথবা নাজাতের
রাত। অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাত-এ ইবাদত-বন্দেগী করে ও পরবর্তী দিনে রোযা রেখে মহান
আল্লাহ পাক ও হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করাই মূল উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন