বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭

মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই এই ফতোয়া প্রধানমন্ত্রী কোথায় পেলো?


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে আজকাল মুফতীর আসনে বসেছেন সেটা জানা ছিলো না। তিনি আজ ফতোয়া দিয়েছেন, “মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই” (http://bit.ly/2o5mW0N)
ভালো কথা, ধর্মের সাথে যদি সর্ম্পক নাই থাকে তবে সেটা কি করে মানা যাবে? একজন মুসলামানের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পুরোটাই ইসলামী বিধি বিধান তথা ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একজন মুসলমান কিভাবে খাবার খাবে, ঘুমাবে, বাথরুমে যাবে সবই ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাহলে যে কাজের সাথে ধর্মের কোন সর্ম্পক নাই সে কাজ কোন ধার্মিক লোক করতে পারে? আবশ্যই নয়। সূতরাং উনার ফতোয়া দ্বারাই প্রমাণ হলো অমঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করা যাবে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “বাংলা নববর্ষের শুরু সেই মুঘল আমল থেকে। তখন তো আর টাকা পয়সা ছিলো না, ফলে পণ্য বিনিময় হতো।”
দুঃখের বিষয় আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম জ্ঞানের মত ইতিহাস জ্ঞান শানিত নয়। কারন ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা, “প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এটা অনেকটা ঐতিহ্য হয়ে গেছে। ঢাক-ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্র ও বিচিত্র চারুকর্মে সুসজ্জিত এই শোভাযাত্রার ইতিহাস খুব একটা পুরনো নয়। ১৯৮৬ সালে যশোরে চারুপীঠ নামের একটি সংগঠন প্রথমবারের মতো বর্ষবরণ করতে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ১৯৯৫ সালের পর থেকে এই আনন্দ শোভাযাত্রাই মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে পরিচিতি পায়।” (http://archive.is/AIf9v)
তিনি আরো ফতোয়া দিয়েছেন, (অমঙ্গল শোভাযাত্রা) আমাদের দেশের সংস্কৃতির প্রতিফলন।”
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই ২৫ বছর আগের এক তথাকথিত হিন্দু উৎসব কি করে আমাদের দেশের সাংস্কৃতি হলো? সবচাইতে বড় কথা হলো এই দিনে বিভিন্ন প্রানীর মূর্তি নিয়ে মিছিল বের করা হয়? মূর্তি কি করে এই দেশের ধর্ম প্রাণ মুসলামানদের সাংস্কৃতি হলো বুঝে আসলো না। বাঘ, হরিন, মাছ, ময়ুর ইত্যাদির মূর্তিতো কোন না কোন হিন্দু দেবতাদের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর ইসলাম ধর্মে সর্বপ্রকার মূর্তি হারাম। হাদীস শরীফে আছে, নবীজী বলেছেন- আমি প্রেরিত হয়েছি মূর্তি ও বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করতে। তাহলে কিকরে উনার উম্মত মূর্তি কাঁধে নিয়ে মিছিল করতে পারে? আর কোন সাহসে প্রধানমন্ত্রী বলে, এটা আমাদের সাংস্কৃতির প্রতিফলন?

তিনি বলেছেন, “শব্দের সঙ্গে ধর্মের কি সম্পর্ক? শব্দ একটি ভাষা আর ভাষা হলো সাহিত্য।
আহ! মূর্খতার একি নির্দশন। 
কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা রঈনা বলো না উনজুরনা বলো এবং শ্রবণ কর (বা শুনতে থাক) আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা বাক্বারা ১০৪)

আয়াতের শানে নযুলে বলা হয়েছে, ইহুদীরা রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেবার জন্য ‘রঈনা’ শব্দ ব্যবহার করত, যার একাধিক অর্থ। একটি অর্থ হল ‘আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন’ যা ভাল অর্থে ব্যবহার হয় আর খারাপ অর্থ হল ‘হে মূর্খ, হে মেষ শাবক’ এবং হিব্রু ভাষায় একটি বদদোয়া। ইহুদীরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রঈনা বলে সম্বোধন করত। যাতে প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল খারাপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ‘রঈনা’ শব্দের ভাল অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করলে ইহুদীরা খারাপ অর্থ চিন্তা করে হাসাহাসি করত। এতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কষ্ট পেতেন তবুও কিছু বলতেন না।এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহু পাক কুরআন শরীফ-এর আয়াত নাযিল করে ‘রঈনা’ শব্দের বদলে ‘উনজুরনা’ শব্দ ব্যবহার করতে বললেন। কারণ ‘রঈনা’ শব্দ ভাল-খারাপ উভয় অর্থে ব্যবহার হলেও ‘উনজুরনা’ শব্দ শুধুমাত্র ভাল অর্থে ব্যবহার। তাই যে সকল শব্দের ভাল-খারাপ উভয় অর্থে ব্যবহার হয়, সে সকল শব্দের পরিবর্তে উপরোক্ত আয়াত মুতাবিক ওটার সমার্থক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করতে হবে, যা শুধুমাত্র ভাল অর্থেই ব্যবহার হয়। প্রধানমন্ত্রী তাহলে কিসের জোরে বললেন, শব্দের সাথে ধর্মের সর্ম্পক নেই? আমরাতো দেখছি শব্দের সাথে ঈমানে সর্ম্পক রয়েছে।
সর্বশেষে একটা কথা বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নিজেকে হিন্দু আশেক প্রমাণ করলেন। তিনি বললেন, “উলুধ্বনি নাকি হিন্দু শব্দ। কিন্তু কাবা শরীফে গিয়েও তো উলুধ্বনি দেয়া হয়”
জাতী জানতে চায় কাবা শরীফে কখন, কিভাবে উলূ ধ্বনী দেয়া হয়? নাকি উনার কানে সব সময় উলূ ধ্বনি ধ্বনিত হয়? যার প্রতিধ্বনী তিনি সর্বস্থানেই শ্রবন করে থাকেন। আমারা কয়েকদিন আগে দেখেছি সৌদি থেকে আগত ইমামদের মজলিসে তিনি “মসজিদে নববী” বলতে পারছিলেন না। বারবার মুখ থেকে নববীর পরিবর্তে “নবমী” বের হচ্ছিলো। যার মুখ থেকে ইসলামী শব্দ বের না হয়ে হিন্দুদের নবমী বের হয় তার কানেতো ভালো শব্দও উলূ ধ্বনির মত মনে হতে পারে..............!

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন