রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

২০ জুমাদাল উখরা শরীফ হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার বিলাদত শরীফ


      সুমহান পরিচয় মুবরাক:
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের প্রায় তিন বৎসর পূর্বে ২০শে জুমাদাল উখরা তারিখ মুসলিম জাহানের শিরোমণি খাতূনে জান্নাত সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ের মর্যাদা স্বয়ং আরশে আযীম থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ! কাজেই
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিনি সম্মানিতা আওলাদ, নয়নের মণি সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মর্যাদা মুবারক কতটুকু বেমেছাল। সেটা ভাষায় প্রকাশ করা কোনো বান্দা-বান্দী, উম্মত, জিন-ইনসানের পক্ষে সম্ভব নয়। পবিত্র জুমাদাল উখরা শরীফ ২০ তারিখ যমীনে তাশরীফ এনে সমস্ত পুরুষ ও নারীজাতিকে তিনি ধন্য করেছেন। তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বকনিষ্ঠা বানাত বা মেয়ে ছিলেন। উনার সম্মানিতা মাতা হলেন ত্বইয়িবা, ত্বাহিরা হযরত খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং উনার এই উত্তম বানাত বা মেয়ের নাম মুবারক রাখেন ‘ফাতিমা’। এটি উনার মূল নাম মুবারক।

        লক্বব মুবারক: 
এছাড়াও আরো কয়েকটি লক্বব বা গুণবাচক নাম মুবারক দ্বারা তিনি পরিচিত হয়ে আছেন। যেমন- সাইয়্যিদা, ত্বাহিরাহ, যাহরা, যাকিয়াহ, রদ্বিয়াহ, মারদ্বিয়াহ, উম্মু আবীহা ও বাতূল।
সাইয়্যিদা- অর্থ শ্রেষ্ঠা। তিনি এ লক্ববে ভূষিত হয়েছিলেন এ কারণে যে, ‘তিনি দুনিয়ায় যেমন মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারিণী তেমনি বেহেশতেও হবেন মহিলাকুলের সাইয়্যিদা।’ সুবহানাল্লাহ!
ত্বাহিরাহ”- ত্বাহিরাহ অর্থ পবিত্রা। এ লক্বব মুবারকটি বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় প্রকার পবিত্রতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এ লক্বব মুবারকটি দেয়ার একটা কারণ হলো এই যে, মহিলাদের সন্তান হওয়ার পর নামায তরক করতে হয়। কিন্তু উনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত। আছরের নামায পড়ার পরই উনার সন্তান মুবারক উনাদের বিলাদত শরীফ হয়েছে। অতঃপর মাগরিব থেকে যথারীতি তিনি নামায আদায় করেন। অর্থাৎ উনার এক ওয়াক্ত নামাযও কাযা হয়নি। সুবহানাল্লাহ!
যাহরাহ”- অর্থ কুসুম কলি বা ফুল। বাস্তবিক পক্ষে তিনি একটি অনুপম সুন্দর সুরভিত কুসুম কলির মতোই রূপে-গুণে সুষমাম-িত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
যাকিয়াহ”- অর্থ বুদ্ধিমতি, প্রখর মেধার অধিকারিণী। লক্বব মুবারকটি দেয়া হয়েছিল এ জন্য যে, তিনি কোনো বিষয় শোনা মাত্রই তা আয়ত্ত করে ফেলতেন। সুবহানাল্লাহ!
রদ্বিয়াহ”- অর্থ সন্তুষ্ট। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে অবিচলভাবে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির উপর পূর্ণ নির্ভরশীল। সুবহানাল্লাহ!
মারদ্বিয়াহ”- অর্থ সন্তুষ্টিপ্রাপ্তা। এ লক্বব মুবারকটি এজন্য যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
বতূল”- অর্থ ভোগ-লিপ্সা বর্জনকারিণী। উনার এ লক্ববটি হয়েছিল এ কারণে যে, তিনি পার্থিব ভোগ-লিপ্সা ইত্যাদি সবকিছুই একেবারে বর্জন করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ

        সুমহান বিলাদত শরীফ উনার ঘটনা মুবারক:
উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ এর সময় উনার যিনি মাতা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই বলেন, উনার সন্তান সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি যখন যমীনে আসবেন তার পূর্বেই অনেককে সংবাদ দেয়া হয়েছিল খিদমতের জন্য। কিন্তু যিনি খালিক্ব, যিনি মালিক, যিনি মহান রব আল্লাহ পাক উনার কুদরতী ফায়ছালা কোনো মহিলাই খিদমত মুবারক করার জন্য আসেননি। তিনি একটু চিন্তিত হলেন কী ফায়ছালা হবে? হঠাৎ করে তিনি দেখতে পেলেন চারজন মহিলা উনার পবিত্র হুজরা শরীফে মধ্যে তাশরীফ নিয়েছেন। পবিত্র হুজরা শরীফ সবসময় তো নূরানী তারপরেও মনে হচ্ছে উনাদের নূর মুবারকের  কারণে আরো বেশি আলোকিত হয়ে গেলো। তিনি উনাদেরকে লক্ষ্য করলেন, এই মহিলারা কারা? তিনি পরক্ষনে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কারা? এখানে কী কারণে এসেছেন? উনারা বললেন, আমরা এসেছি খিদমত মুবারক করার জন্য। সুবহানাল্লাহ!
চারজন মহিলা প্রথম যিনি তিনি হচ্ছেন হযরত উম্মুল বাশার হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম, দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব তিনি হচ্ছেন রব্বাতু কালিমিল্লাহ হযরত আছিয়া আলাইহাস সালাম, তৃতীয়জন হচ্ছেন হযরত উম্মু রুহিল্লাহ মারিয়াম আলাইহাস সালাম আর চতুর্থ যিনি তিনি হচ্ছেন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বোন হযরত উম্মে কুলসুম আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
এই চারজন মহিলা উনাদের পরিচয় দিলেন, আমরা এসেছি আপনার সরাসরি খিদমত মুবারক করার জন্য। যিনি আগমন করবেন তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম। উনার সেই খিদমতের জন্য যিনি খালিক্ব, যিনি মালিক, যিনি মহান রব আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, এরপর মহান আল্লাহ পাক যিনি খালিক্ব মালিক রব তিনি কুদরতীভাবেই সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যমীনে আগমনের বিষয়টি ফায়ছালা করেন। সুবহানাল্লাহ!
এর দ্বারা বুঝা যায় যে, হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার কত ফাযায়িল-ফযীলত এবং বুযুর্গী-সম্মান। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম কে উম্মতের সকল মহিলা অথবা মু’মিনদের সকল মহিলার ‘সাইয়্যিদাহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ)

        আহলে বাইত শরীফ:
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং আল্লাহ পাক আহলে বাইত এই মুবারক শব্দখানা ব্যবহার করেন। পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ ৩৩ নম্বর আয়াত শরীফে আহলে বাইত শরীফ শব্দ খানা উল্লেখ করা হয়েছে। আর হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
ثُمَّ قَالَ ‏{‏ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا‏}‏
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকালে বের হলেন। উনার জিসিম মুবারকে  ছিলো কালো পশম দ্বারা খচিত একটি পশমী চাদর। এসময় হযরত ইমামুল ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম আসলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চাদর মুবারকের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। হযরত ইমামুল ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম আসলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও (চাদর মুবারকে) ঢুকে পড়লেন। উম্মু আবীহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আসলেন, উনাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। অতঃপর ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আসলেন, উনাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। অতঃপর বললেন, হে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান- আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে।
অর্থাৎ তিনি আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!  (মুসলিম শরীফ হাদিস নম্বর ৬০৪৩)
এছাড়া হাদীছ শরীফের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,  “সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! নিশ্চয়ই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম লেবাসহীন। সম্মানিত লেবাস হচ্ছে তাক্বওয়া, আসবাবপত্র হচ্ছে হিদায়াত, সৌন্দর্য মুবারক হচ্ছে লজ্জা, খুঁটি হচ্ছে পরহেজগারী, কাঠামো হচ্ছে আমলে ছলেহ তথা নেক আমল। আর দ্বীন ইসলাম এর মূল বা ভিত্তি হচ্ছেন আমার এবং আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (জামিউল আহাদীছ ২৩/৩২৩, ৩১/২১৪, জামউল জাওয়ামি’, কাশফুল খফা ১/২৩, কানযুল ‘উম্মাল ১২/১০৫, তারীখে দিমাশক্ব ৪৩/২৪১, মুখতাছারু তারীখে দিমাশক্ব ৫/৪৭৫ ইত্যাদি)

এক বর্ণায় এসেছে,
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلنُّجُوْمُ اَمَانٌ لِّاَهْلِ السَّمَاءِ وَاَهْلُ بَيْتِـىْ اَمَانٌ لِّاُمَّتِـىْ.
অর্থ: “হযরত সালামাহ ইবনে আকওয়া’ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তারকারাজি হচ্ছে আসমানবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। আর আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন আমার সমস্ত উম্মতের জন্য নিরাপত্তাদানকারী।” সুবহানাল্লাহ! (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, মুসাদ্দাদ, আবূ ইয়া’লা, হাকিম, তিরমিযী, ত্ববারনী, ইবনে ‘আসাকির, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৬, যাখায়িরুল ‘উক্ববাহ ১/১৭)

        সম্মানিত ১২ জন ইমাম আলাইহিস সালাম ও উনার মাধ্যমে তাশরীফ এনেছেন ও আনবেন:  পৃথিবীর জমিনে যে সম্মানিত ১২ জন ইমাম এসেছেন ও আসবেন উনার সকলে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বংশে আগমন করেছেন।

        সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমেই আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারদের ধারা জারি থাকবে: হাদীস শরীফে এসেছে, প্রত্যেক সন্তানের নসব জারি থাকে পিতার মাধ্যমে। কিন্তু হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বংশ মুবারক জারি থাকবে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে। (তাবরানী ৩/৭৪, আবু ইয়ালা ১২/১০৯, মাযমাউয যাওয়ায়িদ ৯/৯৯, কানযুল উম্মাল ১২/১৬)

        হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার ফযীলত:
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنِ  حَضْرَتْ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بَضْعَةٌ مِنِّي يُؤْذِينِي مَا آذَاهَا
হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিঃসন্দেহে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন, আমার সম্মানিত জিসম মুবারক উনার গোশত মুবারক থেকে একখানা টুকরো মুবারক। তিনি হচ্ছেন আমার লখতে জিগার, নয়নের মণি। উনাকে যে সকল বিষয়গুলো কষ্ট দেয়, সেগুলো আমাকেও কষ্ট দেয়।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ) অন্য বর্ণনায় এসেছে,
مَنْ اَحَبَّهَا فَقَدْ اَحَبَّنِىْ وَمَنْ اَبْغَضَهَا فَقَدْ اَبْغَضَنِىْ
যে ব্যক্তি উনাকে মুহব্বত করলো, সে মূলত আমাকেই মুহব্বত করলো। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি উনাকে অসন্তুষ্ট করলো, সে মূলত আমাকেই অসন্তুষ্ট করলো। নাঊযুবিল্লাহ!”

        হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে বেশি মুহব্বত করতেন:
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে সবচাইতে বেশি মুহব্বত করতেন, সম্মান করতেন এবং উনারা মহান আল্লাহ পাক এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পরেই সম্মানিত মর্যাদা মুবারক জানতেন। সুবহানাল্লাহ! এই সম্পর্কে হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ওমর ফারূক্ব আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি একদা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ গিয়ে আরজ করলেন যে, হে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আপনি ব্যতীত অন্য কাউকে আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অধিক প্রিয় দেখিনি। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আপনার সম্মানিত পিতা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর মানুষের মধ্যে আপনিই হচ্ছেন আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয়।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৩/১৫৫, জামিউল আহাদীছ ২৬/১০০)
অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পর সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে বেশি মুহব্বত করতেন, সম্মান করতেন । সুবহানাল্লাহ!
অন্য বর্ণনায় এসেছে, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
يَا بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاللهِ مَا مِنْ الْـخَلْقِ أَحَدٌ اَحَبَّ اِلَيْنَا مِنْ اَبِيْكِ وَمَا مِنْ أَحَدٍ اَحَبَّ اِلَيْنَا بَعْدَ اَبِيْكِ مِنْكِ.
হে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আওলাদ, লখতে জিগার নয়নের মণি সাইয়িদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমরা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত মাখলূকাত থেকে সবচাইতে বেশি মুহব্বত করে থাকি। আর আপনার সম্মানিত পিতা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর আমরা আপনাকে সবচাইতে বেশি মুহব্বত করে থাকি, সম্মান করে থাকি। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ আপনার মাক্বাম আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পরেই জানি। সুবহানাল্লাহ!’ (ইবনে আবী শায়বা ৩৮২০০)

        সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পরকালে সুমহান শান মুবারক:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার হাশরের ময়দানে এবং সম্মানিত পুলসীরাত অতিক্রমকালে সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উনার বহিঃপ্রাকশ ঘটবে। এ সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبـِىْ اَيُّوْب الْاَنْصَارِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ نَادَى مُنَادٍ مّـِنْ بُطْنَانِ الْعَرْشِ يَا اَهْلَ الْـجَمْعِ نَكِّسُوْا رُؤُوْسَكُمْ وغُضُّوْا اَبْصارَكُمْ حَتّى تَـمُرَّ حَضْرَتْ  فاطِمَةُ عَلَىْهَا السَّلَامُ بِنْتُ سَيِّدِنِا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الصِّرَاطِ فَتَمُرُّ مَعَ سَبْعِيْنَ اَلْفَ جَارِيَةٍ مِّنَ الْحُوْرِ الْعِيْنِ كَمَرِّ الْبَرْقِ الَّامِعِ.
হযরত আবূ আইয়ূব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ক্বিয়ামতের দিবস একজন নিদা বা আহবানকারী সম্মানিত আরশ মুবারক র কেন্দ্রস্থল থেকে এই বলে  নিদা মুবারক করবেন যে, হে আহলে মাহশার! তোমরা তোমাদের মস্তক ও দৃষ্টি অবনত করে নাও। কারণ এখন যিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত পুলসীরাত মুবারক অতিক্রম করবেন। অতঃপর সমস্ত হাশরবাসী তারা তাদের মস্তক ও দৃষ্টি অবনত করবে, আর যিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সত্তর হাজার তথা অসংখ্য-অগণিত ডাগর নয়না সম্মানিতা হুর খাদিমা উনাদের বেষ্টনী মুবারক-এ থেকে অতি উজ্জ্বল দ্বীপ্তিমান বিজলীর ন্যায় চোখের পলকে সম্মানিত পুলসীরাত পার হয়ে যাবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আছ ছওয়াইকুল মুহরিক্বাহ, ফয়জুল কদীর, কানযুল উম্মাল ১২/১০৫, মুহিব্বে ত্ববারী, আল ফাতহুল কাবীর ১/১৪১, জামি‘উল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ৪/১৬, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/৩০৩২  ইত্যাদি)
হাদীছ শরীফের মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,  হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু আবীহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ক্বিয়ামতের দিন এভাবে উঠবেন যে, উনার জিসম মুবারক-এ ইজ্জত-সম্মান মুবারক র এমন সম্মানিত চাদর মুবারক থাকবে, যেই সম্মানিত চাদর মুবারক উনাকে আবে হায়াতের পানি মুবারক দ্বারা ধোয়া হয়েছে। সকল সৃষ্টি তা দেখে বিস্মিত হয়ে যাবে। অতঃপর উম্মু আবীহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে জান্নাতী পোশাক পরিধান করানো হবে; যার  প্রত্যেকটি জোড়া হবে হাজারো জোড়ার সমষ্টি। প্রত্যেকটির উপর সবুজ রেখায় লিখিত থাকবে, সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আওলাদ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে সর্বোত্তম ছূরত মুবারক, পূর্ণাঙ্গ প্রতাপ এবং মহাসম্মান ও ইজ্জতের সঙ্গে জান্নাতে নিয়ে যাও। সুতরাং উনাকে বেমেছালভাবে সুসজ্জিত করে, পূর্ণাঙ্গ প্রতাপ এবং মহাসম্মান ও ইজ্জতের সাথে সত্তর হাজার তথা অসংখ্য-অগণিত হুর খাদিমা সমভিব্যহারে চোখের পলকে পুলসীরাত পার করে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ নিয়ে যাওয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (যখায়েরুল উক্ববা ফী মানাক্বিবে যবিল কুবরা- ৪৮, মানাক্বিবে আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম লিইবনে মাগাযালী ১/৪৬৮)

        সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সুমহান দানশীলতা:
একবার সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি কোনো কারণে লাগাতার তিন দিন রোযা রাখলেন। অতঃপর প্রথম দিন ইফতারী করার জন্য বন্দোবস্ত করলেন। ইফতার করবেন ঠিক সেই মুহূর্তে একজন মিসকীন উনার বাড়ির দরজায় এসে হাঁক দিয়ে বলল, আমাকে দয়া করে কিছু খাদ্য দান করুন, আমি কয়েকদিন থেকে না খাওয়া। তখন হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ইফতারীর জন্য যা ব্যবস্থা করেছিলেন তা সবই সেই মিসকীনকে দান করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
আবার দ্বিতীয় দিন রোযা রাখলেন। অতঃপর সেদিনও ইফতারীর ব্যবস্থা করলেন ইফতার করার জন্য। কিন্তু দেখা গেল ইফতারীর পূর্ব মূহূর্তে একজন ইয়াতীম এসে দরজায় হাঁক দিয়ে বলল, আমি কয়েকদিন ধরে না খাওয়া দয়া করে আমাকে কিছু খাদ্য দান করুন। হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ইফতারীর জন্য যা ব্যবস্থা করেছিলেন তা আগন্তুক ইয়াতীমকে দান করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এরপর তৃতীয় দিন রোযা রাখলেন এবং সেদিনও ইফতারীর ব্যবস্থা করলেন। অতঃপর যখন ইফতার করবেন ঠিক সেই মুহূর্তে একজন বন্দি এসে দরজায় হাঁক দিয়ে বলল, আমি কয়েকদিন ধরে না খাওয়া, দয়া করে আমাকে কিছু খাদ্য দান করুন। এটা শুনে হযরত সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ আলাইহাস সালাম তিনি ইফতারীর জন্য যা ব্যবস্থা করেছিলেন তা সেই বন্দিকে দান করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
উনার এই আমলে সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম এবং আসাদুল্লাহিল গালিব হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত ও সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দিদেরকে দান করেন এবং এ বিষয়ে উনাদের বক্তব্য হলো, আমরা যে তোমাদেরকে খাদ্য দান করলাম এর কোনো বদলা কিংবা এজন্য তোমরা আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তার কোনটাই আমরা কামনা করি না। সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ উনারা উক্ত নেক কাজ শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত ও সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

        মহান আল্লাহ পাক জান্নাতী পোষাক মুবারক হাদিয়া করেন:
একবার কিছু ইহুদী মহিলা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হাযির হয়ে আরজি পেশ করলো যে, তাদের এক বিবাহের অনুষ্ঠানে তিনি যেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে যাওয়ার অনুমতি দান করেন। যে অনুষ্ঠানটি শুধু মহিলাদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহুদী মহিলাদের আরজি কবুল করলেন।
ইহুদীদের কাজই হলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়া। তাই দাওয়াত দানকারিণী ইহুদী মহিলাদের উদ্দেশ্যও ভালো ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ইহুদী মহিলারা দামি দামি পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে এবং হীরা-মণি, মুক্তা ও স্বর্ণালঙ্কারে সুসজ্জিত হয়ে অনুষ্ঠানে যাবে। আর তাদের ধারণা হলো হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি তো তাদের মতো অতো সাজসজ্জা ও দুনিয়াবী রছম-রেওয়াজ পছন্দ করেন না। অতএব, তিনি স্বাভাবিক লেবাছ মুবারক-এ-ই অনুষ্ঠানে আসবেন। যার ফলে উনার কাছে তারা তাদের বড়ত্ব, মহত্ব প্রকাশ করে উনাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করবে। নাঊযুবিল্লাহ!
ইহুদী মহিলাদের এই কূট চক্রান্ত কেউ না জানলেও যিনি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক এবং উনার যিনি হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা তো ঠিকই জানেন। ফলে বিবাহ অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট তারিখে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে বেহেশত থেকে বেহেশতী পোশাক ও অলঙ্কারাদি পাঠিয়ে দিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে। অর্থাৎ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পোশাক ও অলঙ্কার আপনার মেয়ে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে হাদিয়া করেছেন এবং আরো বলেছেন, তিনি যেন এগুলো পরিধান করে ইহুদী মহিলাদের অনুষ্ঠানে যান। সুবহানাল্লাহ! সত্যিই বেহেশতী পোশাক ও অলঙ্কার পরিধান করে যথাসময়ে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি ইহুদী মহিলাদের অনুষ্ঠানে গেলেন। আল্লাহু আকবার! বেহেশতী মানুষ উনার শরীর মুবারকে বেহেশতী পোশাক ও অলঙ্কার কী অপরূপ সৌন্দর্য প্রকাশ করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না! তাও আবার সাধারণ বেহেশতী নন, বেহেশতবাসিনী মহিলাকুল উনাদের সাইয়্যিদাহ এবং পোশাক এবং অলঙ্কারও তদ্রƒপ মর্যাদাম-িত।
শুধু কী তাই, তিনি হলেন সমস্ত সৌন্দর্যের মূল- আজমালুল কায়িনাত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই পবিত্র ও নূরানী দেহ মুবারকেরই অংশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই তিনি যখন উনার এই বেমেছাল শান ও সৌন্দর্য নিয়ে সেই অনুষ্ঠানে তাশরীফ নিলেন ইহুদী মহিলারা দেখতে পেলো হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার চেহারা মুবারক হতে নূর বিচ্ছুরিত হচ্ছে এবং উনার অসাধারণ পোশাক ও অলঙ্কার দেখে তারা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, হে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম! এ পোশাক ও অলঙ্কারগুলো আপনি কোথায় পেলেন? তিনি বললেন, কেন, আমার আব্বাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে হাদিয়া করেছেন। তারা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, আপনার আব্বা এগুলো কোথায় পেলেন? তিনি বললেন, আমার আব্বাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বয়ং মহান খালিক্ব, মালিক, রব আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে বেহেশত থেকে হাদিয়া পাঠিয়েছেন। এটা শুনে দাওয়াত দানকারিণী মূল যে ইহুদী মহিলা সে তার স্বামীসহ মুসলমান হয়ে যায়। উনাদের দেখাদেখি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সমস্ত ইহুদী মহিলা তাদের স্বামীসহ মুসলমান হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ

        মোহরে যাহারা’য়ী  আলাইহাস সালাম:
মুসলমানের বিবাহ-শাদীতে মোহর নির্ধারণ করা ফরয। আর সে মোহর যথাযথভাবে পরিশোধ করে দেয়াও ফরয। কারণ, এটা স্ত্রী বা আহলিয়ার হক। আজকাল বিয়েতে কে কতো বেশি মোহর ধার্য করবে তার প্রতিযোগিতা লেগে যায় হ্যাঁ, মোহরের টাকা একবারেই দিতে হবে তা নয়।
এখন কথা হচ্ছে, সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার আলোকে একজন মুসলমানের বিবাহের দেনমোহর কতো হওয়া উচিত? মূলত, ‘মোহরে যাহারা’য়ী প্রত্যেক মুসলমানের বিবাহে দেনমোহর হওয়া উচিত। আর ‘মোহরে যাহারা’য়ী হচ্ছে পাঁচশত দিরহাম অর্থাৎ একশত সোয়া একত্রিশ ভরি রূপার মূল্য।
সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র শাদী মুবারক-এ এরূপ দেনমোহরই নির্ধারণ করা হয়েছিল। সুবহানাল্লাহ!


মহান আল্লাহ পাক আমাদের অন্তরে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত দান করুন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন