শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬

ঈদে মীলাদে হাবীবী সম্পর্কে ইমাম মুস্তাহিদদের বক্তব্য পর্ব-২


হযরত শায়েখ ছাদরুদ্দীন মাওহুব উমর জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে লিখেন,
هذه بدعة لا بأس بها ولاتكره البدع الا اذا راغم السنة واما اذا لم تواغمها فلا تكره ويثاب الانسان بحسب قصده فى اظهار السرور والفرح بمولد النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: “পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার বর্তমান তরতীব হচ্ছে- বিদয়াতে হাসানা, যা করতে কোনো বাধা নেই। বিদয়াত যদি সুন্নতের বিপরীত না হয়, তাহলে ইহা মন্দ বিদয়াত হয় না। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের উপর আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করা মাকসুদ বা উদ্দেশ্য হওয়ায় পবিত্র মীলাদ শরীফে অংশ গ্রহণকারীকে অসংখ্য ছওয়াব দেয়া হবে।” (আস্ সীরাতুশ্ শামিয়্যাহ)


হযরত শায়েখ নাছীরুদ্দীন তাইলাছী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
هذا من السنة ولكن اذا انفق هذه اليوم واظهار السرور فرحا بدخول النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ জগতে আগমন করায় খুশি প্রকাশ করতে গিয়ে এদিনে যদি দান-ছদক্বা করা হয়, তাহলে উহা যে সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত হবে; তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।” (সীরাতে শামী)

হযরতুল আল্লামা ইবনে হাজার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন-
والحاصل ان البدعة الحسنة متفق عليه ندبها وافق شيئا مما ولم يلزم من فعله محذور شرعى ومنها ما هو فرض كفاية كتصنيف العلوم ونحوها مما مر قال الامام ابو شامة رحمة الله عليه تعالى ومن احسن ما ابتدع فى زماننا من هذه القبيل ما يفعل فى اليوم الموافق ليوم مولده صلى الله عليه وسلم من الصدقات والمعروف واظهار الزينة والسرور فان ذلك مع ما فيه من الاحسان الى الفقراء مشعر بمحبة النبى صلى الله عليه وسلم وتعظيمه وجلاله فى فاعل ذلك.
অর্থ: “মূলকথা হলো- বর্ণিত কাজসমূহের ন্যায় যত কাজই এমন হবে, যা করতে সম্মানিত শরীয়ত উনার কোনো নিষেধ বা বাধা নেই, তা ভালো এবং উত্তম হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। বরং তন্মধ্যে কোনোটি ফরযে কিফায়াও রয়েছে। যেমন  বিভিন্ন ইল্ম বা বিদ্যার উপর পুস্তক প্রণয়ন করা ইত্যাদি, যেমন উপরে বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইমাম আবূ শামা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের যামানায় নব উদ্ভাবিত অথচ ভালো কাজসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো সেই কাজ, যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন দিবসে করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ ছদক্বা, খয়রাত সাজ-সজ্জা ইত্যাদি। কেননা এগুলো হচ্ছে দ্বীন-দুঃখীদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহের পাশাপাশি মনের মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভালোবাসা ও তা’যীমের ইঙ্গিত বহনকারী।” (ফাতহুল মুবীন লি শরহিল আরবাইন)

হযরতুল আল্লামা জহিরুদ্দীন বিন জাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
هى بدعة حسنة اذا قصد فاعلها جمع الصالحين الصلوة على النبى صلى الله عليه وسلم واطعام الطعام للفقراء والمساكين.
অর্থাৎ- “(পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার বর্তমান তরতীব) ইহা একটি বিদয়াতে হাসানা তথা উত্তম বিদয়াত। যখন এ অনুষ্ঠানকারীর উদ্দেশ্য হবে নেককারদেরকে জমায়েত করা এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করা এবং ফকীর মিসকীনদের খাবার দান করা।” (সীরাতে শামী)

হযরত শায়খ জামালুদ্দীন আব্দুর রহমান বিন আব্দুল মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
فمن المناسب اظهار السرور وانفاق الميسور واجابة من دعاه رب الوليمة والحضور.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করা, টাকা-পয়সা খরচ করা এবং জিয়াফতকারী ব্যক্তির দাওয়াত কবুল করা একটি উত্তম ও সম্মানিত শরীয়ত সম্মত কাজ।” (সীরাতে শামী)

হযরতুল আল্লামা আবূ আব্দুল্লাহ মুহম্মদ বিন তুগরাল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وقد عمل المحبوب لنبى صلى الله عليه وسلم فرحا بمولده الولائم فمن ذالك ما عمله بالقاهرة المغربية من الولائم الكبار الشيخ ابو الحسن المعروف بابن فضل شيخ شيخنا ابى عبد الله محمد بن نعمان وعمل ذالك قبله الشيخ جمال الدين العجمى الهمدانى.
অর্থাৎ- “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের উপর খুশি প্রকাশ করতে গিয়ে আশিক্বগণ দাওয়াতী খানা বা জিয়াফতের ব্যবস্থা করেন। কায়রোতে এমনি ধরনের একটি মহা আয়োজন করতেন হযরত শায়খ আবুল হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি হযরত ইবনে ফজল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের নামে খ্যাত এবং আমাদের হযরত শায়েখ আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মদ বিন নুমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উস্তায। এর আগে হযরত শায়খ জামালুদ্দীন আজমী হামদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও এরূপ বড় জিয়াফতের ব্যবস্থা করতেন।” (আদ্ দুররুল মুনাজ্জাম)

ছহীহ বুখারী শরীফ উনার ভাষ্যকার হযরত ইমাম কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তদ্বীয় কিতাবের মধ্যে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনাকে বিভিন্ন দলীল আদিল্লাহ এবং উলামাগণের উক্তি দ্বারা মুস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণ করে লিখেন,
لازال اهل الاسلام يحتفلون بشهر مولد النبى صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصدقون فى ليالية بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقراء مولده ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم.
অর্থ: “সর্বদাই মুসলমান উনাদের মধ্যে ইহা চলে আসছে যে, তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ বা আগমনের মাসে অনুষ্ঠান করেন, দাওয়াতী খানা তৈরী করে মানুষকে খাওয়ান, রাত্রি সমূহে বিভিন্ন ধরনের ছদক্বা খয়রাত করেন, খুশি প্রকাশ করেন, দান-দক্ষিণা বেশি বেশি করেন এবং গুরুত্ব ও মনযোগের সহিত পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করেন। ফলে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ব্যাপক দয়া ও বরকত লাভ করে থাকেন।”  

হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার স্বীয় কিতাব ‘হুসনুল মাক্বছাদ ফী আমালিল মাওলিদ’ কিতাবে লিখেছেন,

عندى ان اصل عمل المولد الذى هو اجتماع الناس وقراة ماتيسر من القران ورواية الاخبار الواردة فى عبدا امر النبى صلى الله عليه وسلم وما وقع فى مولدة من الايت ثم يمد لهم سماط يأكلونه وينصرفون من غير زيادة على ذالك هو من البدع الحسنة التى يثاب عليها صاحبها لما فيه من تعظيم قدر النبى صلى الله عليه وسلم واظهار الفرح والاستبشار بمولده الشريف.
অর্থ: “আমার নিকট পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মূল কার্যাবলী হলো যে, লোকদের জমায়েত হওয়া, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কিছু তিলাওয়াত করা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে বর্ণিত রিওয়ায়েতগুলো আলোচনা করা এবং উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ সময়ে সংঘটিত ঘটনার আলোচনা করা। অতঃপর খাদ্য পরিবেশন করে এর অতিরিক্ত কিছু না করে ফিরে আসা। এ অনুষ্ঠানটি হলো বিদয়াতে হাসানা, এর আমলকারীকে ছাওয়াব দেয়া হবে, যেহেতু এর মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয় এবং উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা হয়।” (আল হাবী লিল ফাতাওয়া, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৮৯)

রঈসুল মুহাদ্দিছীন হযরত আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন,
ثم لازال اهل الاسلام فى سائر الاقطار والمدن الكبار يحتفلون فى شهر مولده ويعتنون بقراءة المولد الكريم.

অর্থাৎ “পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার বর্তমান তরতীব উদ্ভাবিত হওয়ার পর থেকে বিশ্বের দিকে দিকে এবং বড় বড় শহরে নগরে মুসলমানগণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন মাসে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পবিত্র মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠান করে আসছেন।” (আল মাওরিদুর রাবী ফী মাওলিদিন্ নবী)

আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ বিন আলাবী আল মালিকী আল হাসানী মক্কী লিখেন,
ان الاحتفال بالمولد  النبوى الشريف تعبير عن الفرح والسرور بالمصطفى صلى الله عليه وسلم وقد انتفع به جاء فى البخارى انه يخفف عن ابى لهب كل يوم الاثنين بسبب عتقه لثوبة جاريته لما بشرته بولادة المصطفى صلى الله عليه وسلم.
অর্থ:- “নিঃসন্দেহে পবিত্র মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাহফিল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনে আনন্দ ও খুশী প্রকাশার্থেই হয়ে থাকে। আর পবিত্র বিলাদত শরীফ-এ আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করে খোদ কাফির আবু লাহাবও তো উপকৃত হয়েছে। ‘ছহীহ বুখারী শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে, প্রতি (ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম) সোমবার শরীফ আবূ লাহাবের আযাব হালকা করে দেয়া হয়, কেননা, সে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভ আগমনের সু সংবাদ প্রদানকারীনী আপন বাঁদী হযরত ছোয়াইবা আলাইহাস সালাম উনাকে আনন্দিত বা খুশী হয়ে আজাদ করে দিয়েছিল।” সুবহানাল্লাহ! (হাওলুল্ ইহ্তিফাল বি যিকরিল মাওলিদিন নববী শরীফ)

হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ‘আল হাবীলিল ফাতওয়া’ নামক গ্রন্থে যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম শাইখুল ইসলাম হযরত ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমতকে উল্লেখ করেছেন,
وقد سئل شيخ الاسلام حافظ العصر ابو الفضل احمد بن حجر عن عمل المولد فاجاب بما نصه اصل عمل المولد بدعة لم تنقل عن احد من السلف الصالح من القرون الثلاثة ولكنها مع ذالك قد اشتملت على محاسن وضدها فمن تحرى فى عملها المحاسن وتجنب ضدها كن بدعة حسنة والا فلا.
অর্থ: “শায়খুল ইসলাম যুগশ্রেষ্ঠ হাফিযুল হাদীছ আবুল ফাদ্বাল আহমদ ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি উনার ভাষায় জবাব দিয়েছেন, বর্তমান তরতীবে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান করা মূলতঃ বিদয়াত (অর্থাৎ বিদয়াতে হাসানা)। এরূপ তরতীব কুরুনে ছালাছাহ অথবা সলফে ছালেহীন উনাদের যুগে ছিল না, কিন্তু এ অনুষ্ঠানে অনেক ভালো কাজের সমন্নয় হয়েছে এবং এর বিপরীতও কিছু কাজ আছে। যদি ভালো কাজকে অনুসরণ করা হয় এবং বিপরীতগুলোকে ত্যাগ করা হয়, তবে এ অনুষ্ঠানটি বিদয়াতে হাসানাহ হবে, নতুবা নয়।” (আল হাবী লিল ফাতাওয়া, ১ম খ- পৃষ্ঠা ১৯৬)


ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “মা ছাবাতা বিস্ সুন্নাহ” কিতাবে লিখেন,
لازال اهل الاسلام يحتفلون بشهر مولد النبى صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصدقون فى ليالية بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقراءة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم جرب من خواصه انه امان فى ذلك العام وبشرى عاجلة بنيل البغية والمرام فرحم الله امرء اتخذ لياليى مولده المبارك اعيادا.
অর্থ: “সর্বদা ইহা চলে আসছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ বা আগমন মাসে মুসলমানগণ পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান করে মানুষের জন্য তাবারুকের আয়োজন করেন। ঐদিন সমূহে বিভিন্ন ধরনের ছদক্বা-খয়রাত করেন, আনন্দ বা খুশী প্রকাশ করেন, মুক্ত হস্তে দান খয়রাত করেন। অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করে উনারা ব্যাপকভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত এবং বরকত লাভ করে থাকেন। পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের পরীক্ষিত ফযীলত এই যে, সারা বৎসর মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আমান বা নিরাপত্তা ও শান্তি লাভ হয় এবং মনোস্কামনা পূর্ণ হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি রহম করুন সেই ব্যক্তির উপর যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন তারিখকে ঈদ বা খুশির দিন বানিয়ে নেন।” সুবহানাল্লাহ!

কাইয়্যূমে আউয়াল, আফযালুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
دیگر درباب مولود خوانی اندراج یا فتہ  بود در نفس قران خواندن بصوت حسن وقصائد نعت ومنقبت خواندن  چہ مضائقہ است؟ ممنوع تحریف وتغیر حروف قران است والتزام رعایت مقامات نغمہ وتبرید صوت باں طریق الحان باتصفیق منا سب انکہ در شعر نیز غیر مبارح است. اگر ہر نہجے خوانند کہ تحریفے در کلمات قران واقع نشود و در قصائد خواندن شروط مذکورہ متحقق نگردد رواں ہم بغرض صحیح تجویز نما یند چہ مانع است؟
অর্থাৎ- “সুমিষ্ট আওয়াজে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে সুন্দর ক্বাছীদাবলী আবৃত্তি করতে কি বাধা আছে? নিষিদ্ধ হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হরফ বা অক্ষর সমূহের মধ্যে পরিবর্তন বা গানের তাল বা ছন্দ অবলম্বন স্বরের উত্থান-পতন যা সাধারণ কবিতার মধ্যেও জায়িয নেই। যদি পবিত্র মীলাদ শরীফ এমনভাবে পড়া হয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন আপতিত না হয় এবং পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ আবৃত্তির মধ্যে উপরোক্ত গানের ছন্দ বা তালের অনুসরণ করা না হয়, তাহলে এরূপ পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠে কি বাধা আছে।” (মাকতুবাতে ইমাম রব্বানী ৩য় খ- মাকতুব নং ৭২)

হযরত খাজা আবূ সাঈদ মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুযোগ্য সন্তান হযরত মাওলানা মাযহার ছাহিব মুজাদ্দিদী দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “মাক্বামাতু সাঈদিয়াহ” কিতাবে লিখেন,
می فرمودند کہ خواند مولود شریف وقیام نزدیک ذکر ولادت باسعادت مستحب است دریں باب رسالئے خاص دارند ودر آں تحقیق فرمودہ اند کہ منع حضرت مجدد الف ثانی رحمۃ اللہ علیہ از مولد خوانی محمول بر سماع وغناست لاغیر.
অর্থ: “তিনি বলেছেন, পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের উল্লেখের সময় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে উনার একখানা পুস্তিকা রয়েছে। এ পুস্তিকায় তিনি বিষদভাবে ব্যক্ত করেছেন যে, পবিত্র মীলাদ শরীফ থেকে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিষেধ করা কেবল গান-বাজনার উপরই প্রযোজ্য। অর্থাৎ, যে পবিত্র মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠানে গান-বাজনা হয় কেবল সেটা থেকেই তিনি নিষেধ করেছেন।”

হযরত শাহ আব্দুর রহীম মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে উনার সুযোগ্য সন্তান ইমামুল হিন্দ হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন,
اخبرنى سيدى الوالد قال كنت اصنع فى ايام المولد طعاما صلة بالنبى فلم يفتح لى سنة من السنين شئ اصنع به طعام فلم اجد الا حمصا مفليا فقسمت بين الناس فرايته صلى الله عليه وسلم وبين يديه هذه الحمص مبتهج بشاشا.
অর্থ: “আমার বুযূর্গ পিতা আমার কাছে ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন যে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার শান মুবারক প্রকাশের তারিখে পবিত্র মীল*/াদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল করে ছওয়াব রেসানীর জন্য হামেশা তাবারুকের আয়োজন করতাম। এক বছর সে তারিখে খানার আয়োজন করতে না পেরে কিছু চানাবুট আমি লোকজনের মধ্যে বিতরণ করলাম। অতঃপর আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেলাম অত্যন্ত উজ্জল আর হাসিমাখা চেহারা মুবারক নিয়ে তিনি উপবিষ্ট। আর সেই চানাবুটগুলো উনার সম্মুখে রাখা।” সুবহানাল্লাহ! (আদ্ দুররুছ্ ছামীন ফী মুবাশ্শিরাতিন্ নাবিয়্যিল আমীন)

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন