মীলাদ শরীফ পাঠ করা অথবা ঈদে মীলাদুননবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা এটা খাস সুন্নত এর অন্তর্ভুক্ত।
হাদীস শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে–
عن العرباض بن سارية رضي الله عنه قال قال رسول صلي الله عليه و سلم عليكم بسنتي و سنة الخلفاء الراشدين المهدين تمسكوا بها و عضوا عليها بالنواجذ
অর্থ : হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের জন্য আমার সুন্নত এবং আমার খুলাফায়ে রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন উনাদের সুন্নত অবশ্যই পালনীয় ! তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো !” (দলীল– সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস শরীফ নং ৪২, তিরমিযী শরীফ, হাদীস শরীফ নং ২৬৭৬, আবু দাউদ শরীফ, হাদীস শরীফ নং ৪৬০৭, মুসনাদে আহমাদ শরীফ ৪/১২৬)
হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা নিজেরা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন , এবং আমল করার ফযীলত বর্ণনা করেছেন !
মীলাদ শরীফ সম্পর্কে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের বর্ণনা করা হাদীস শরীফ উল্লেখ করা হলো–
মক্কা শরীফের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ,ইমামুল মুহাদ্দেসিন আল্লামা শিহাব উদ্দিন আহমদ ইবনে হাজার আল হায়তামী আশশাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আলাইহি (যার জন্ম ৮৯৯ হিজরী, ইনতিকাল ৯৭৪ হিজরী) তার লিখিত “আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের মধ্যে নিম্নোক্ত হাদীস গুলো তিনি বর্ণনা করেন-
১। সর্বশ্রেষ্ট সাহবী ও ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক আলাইহিস সালাম বলেন-
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قِرا ةَ مَوْ لِدِ النَّبىُ صلي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَان رفيقي فىِ الجَنّةِ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে”। (দলীল- আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৭)
(২) দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক আলাইহিস সালাম বলেন-
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ َاحيا الاسْالاَمُ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্মান করলো, সে অবশ্যই ইসলামকে জীবিত করলো”। (দলীল-আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৭)
(৩) তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান বিন আফফান আলাইহিস সালাম বলেন –
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قرأة مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ فَكَا نَّمَا ثَهِيد غَزُوَةِ بَدَر َوحُنَيْنُ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করার জন্য এক দিরহাম খরচ করল- সে যেন বদর ও হুনাইন জিহাদে শরীক হলো”। (দলীল- আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৮)
(৪) চুতর্থ খলিফা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়জহাহু আলাইহিস সালাম বলেন-
مَنْ عَظَّمَ مَوْ لِدِ النَّبِى صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَكَانَ سَبَبَا لِقرا ته لا يَخرج مِنَ الدُّنْيَا اِلا َّبِالاِ يْمَانِ وَيَدْخُلُ الجَنَّهَ بِغَيْرِ حِسَاب
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে সম্মান করবে হবে সে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (দলীল- আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৮)
আল্লামা ইউসুফ নাবহানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘জাওয়াহেরুল বিহার’ এর গ্রন্থে ৩য় খন্ডের ৩৫০ পৃষ্ঠায় উপরে উল্লিখিত বর্ণনা উপস্থাপন করে বলেছেন যে, আমার উপরোক্ত হাদীস সমূহের সনদ জানা রয়েছে। কিন্তু কিতাব বড় হয়ে যাবার আশংকায় আমি সেগুলো অত্র কিতাবে উল্লেখ করিনি।
আল্লামা ইবন হাজর হায়তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নির্ভরতা প্রশ্নাতীত। তাঁর উক্ত কিতাবের উপর বহু শরাহ লিখা হয়েছে। তন্মধ্যে আল্লামা দাউদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও আল্লামা সাইয়িদ আহমদ আবেদীন দামেস্কি রহমাতুল্লাহি আলাইহি অন্যতম। উনার রিওয়াতকৃত উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণীত হল যে, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও মিলাদুন্নাবী চালু ছিল এবং তারাও এর জন্য অন্যকে তাগীদ করেছেন।
উক্ত সহীহ হাদীস শরীফ সমুহ থেকে মীলাদ শরীফ পাঠ করা যে কত গুরুত্বপূর্ণ এবং খাস সুন্নত তা দিবালোক এর ন্যায় প্রমান হলো !
এখন যে সকল বাতিল গোষ্ঠি ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বিদয়াত বলবে তারা সুন্নত আমালকে বিদয়াত বলার কারনে মুরতাদ হয়ে যাবে !
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন