বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকে যারা বিদয়াত বলে তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব


পবিত্র মীলাদ শরীফ এবং ক্বিয়াম শরীফ এবং ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নত এটা কুরআন শরীফ,হাদীস শরীফ, ইমাম মুস্তাহিদ উনাদের দলীল দ্বারা অকাট্য ভাবে প্রমানিত হয়েছে । তারপরও কিছু ধর্মব্যবসায়ী ভন্ড মুনাফিক যেমন দেওবন্দী/খারেজী/তাবলীগি/জামাতি/সালাফি ইত্যাদি বাতিল ফির্কা মীলাদ শরীফ উনাকে বিদয়াত বলে থাকে।
নাউযুবিল্লাহ !

মীলাদ-ক্বিয়াম বিরোধীরা বলে থাকে “মীলাদ-ক্বিয়াম” বিদয়াত তাদের এ ফতওয়া সম্পূর্ণই ভুল, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর যা শরীয়ত বিরোধী এবং কুফরীর অন্তর্ভূক্ত ।
মূলতঃ তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, তারা বিদয়াত সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ ও জাহেল । কেননা বিদয়াত সম্পর্কে যদি তাদের সামান্যতম ইলমও থাকতো, তবে তারা কখনোই মীলাদ-ক্বিয়ামকে বিদয়াত বলে ফতওয়া দিতনা। তাই তাদের সহীহ্ সমঝের জন্য বিদয়াত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত অথচ দলীল ভিত্তিক আলোচনা করা হলো- মূলতঃ বিদয়াত সম্পর্কে বুঝতে হলে, আমাদেরকে প্রথমেই জানতে হবে বিদয়াতের লোগাতী ও শরীয়তী অর্থ । অতপরঃ জানতে হবে বিদয়াত কত প্রকার ও কি কি? কোনটি গ্রহণযোগ্য ও কোনটি পরিত্যাজ্য |
বিদয়াতের লোগাতী অর্থ–>>
বিদয়াতের লোগাতী অর্থ হচ্ছে-
(১) “বিদয়াত হলো-দ্বীনের পূর্ণতার পর নতুন কোন বিষয় উদ্ভব হওয়া অথবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর আমল ও খাহেশাত সম্পর্কিত কোন বিষয় নতুন উদ্ভব হওয়া।”
দলীল-
√ লোগাতুল কামূস আল মহীত্ব ৩য় জিঃ পৃঃ৩,

√বায়ানুল লিসান, পৃঃ১১৫
(২) “বিদয়াত হলো- নমুনা ব্যতীত সৃষ্ট জিনিস ।”
দলীল-
√ মিছবাহুল লোগাত, পৃঃ ২৭

(৩) “বিদয়াত মূলতঃ ওটাকেই বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়েছে ।”
দলীল-
√ ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৪র্থ জিঃ পৃঃ২১৯,

√মিরকাত শরীফ
(৪) “জেনে রাখ, হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পারে উদ্ভব ঘটেছে এমন প্রত্যেক কাজই বিদয়াত |”
দলীল-
√ আশয়াতুল লোমআত

(৫) “বিদয়াত হলো- নতুন কথা, নতুন প্রথা ।”
দলীল-
√ আরবী ফিরোজুল লোগাত পৃঃ৫৩

(৬) “বিদয়াত ওটাকে বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয় ।”
দলীল-
√ লোগাত আল মনজিদ পৃঃ৭৬

(৭) “বিদয়াত হলো- নতুন কথা |” দলীল-
√ লোগাতে সাঈদী পৃঃ৯৬

সুতরাং বিদয়াত শব্দের লোগাতী বা আভিধানিক মূল অর্থ হলো- নতুন উৎপত্তি, নতুন উদ্ভব, নতুন সৃষ্টি।পূর্বে যার কোন অস্তিত্ব ছিলনা ।
বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ—>>
(১) বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ্ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,-
“প্রকৃতপক্ষে বিদয়াত হলো- এমন জিনিসের আবির্ভাব, যার নমুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা ।”
দলীল-
√ ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিঃ পৃঃ৩৫৬

(২) আল্লামা ইসমাইল নাবিহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, (শায়খুল ইসলাম) ইজদুদ্দীন ইবনে সালাম বলেন, —
“বিদয়াত এমন একটি কাজ, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় সম্পন্ন হয়নি |”
দলীল-
√জাওয়াহিরুল বিহার পৃঃ২৮০

(৩) ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,-
“শরীয়ত মুতাবেক বিদয়াত হচ্ছে- এমনসব নব আবিস্কৃত জিনিসের নাম, যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা।”
দলীল-
√শরহে মুসলিম লিন নববী

(৪) হাফেজ ইবনে রজব রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,-
“বিদয়াত ঐ বিষয়কেই বলা হয়, যার ভিত্তি শরীয়তে নেই | সুতরাং শরীয়তে যে বিষয়ের ভিত্তি রয়েছে, শরীয়ত মুতাবেক তা বিদয়াত নয়, যদিও আভিধানিক অর্থে বিদয়াত বলা হয় ।”
দলীল-
√জামিউল উলূম ওয়াল হাকাম পৃঃ১৯৩,

√ ইরশাদুল উনূদ পৃঃ১৬১
(৫) ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, –
ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ হচ্ছে এমন একটি নতুন কর্ম, যা হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় ছিলনা ।'”
দলীল-
√ তাহযীবুল আসমা ওয়াল লোগাত

শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদয়াত শব্দের মূল অর্থ হলো- ঐ নতুন উদ্ভব বিষয়, যার ভিত্তি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে নেই ।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, বিদয়াত হলো- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত উদ্ভাবিত প্রত্যেক নতুন বিষয় । এখন তা ‘খায়রুল কুরুনে’ও হতে পারে অথবা তার পরেও হতে পারে ।
বিদয়াতের ব্যাখ্যা—>>>
উপরোক্ত লোগাতী ও শরীয়তী অর্থের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিদয়াত হলো হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত উদ্ভাবিত প্রত্যেক নতুন বিষয় । অতএব, নতুন উদ্ভাবিত বিষয়ের কোনটি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য ও কোনটি পরিত্যাজ্য, তা অবশ্যই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।
তাই এ বিদয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ব বিখ্যাত হাদীছ শরীফের কিতাব মেশকাত শরীফের শরাহ্ মেরকাত শরীফে উল্লেখ করেন,-
“ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে নব উদ্ভাবিত কাজ কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, আসার (অর্থাৎ সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের আমল বা কাওল) অথবা ইজমার বিরুদ্ধ বলে প্রমাণিত, সেটাই গোমরাহী ও নিকৃষ্ট । আর যে নব উদ্ভাবিত কাজ উল্লেখিত কোনটির বিপরীত বা বিরুদ্ধ নয়, তা মন্দ বা নাজায়েয নয় ।”
দলীল-
√ মেরকাত শরহে মেশকাত, ১ম জিঃ পৃঃ১৮৯

ইমাম শারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,-
“প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিই যে নিকৃষ্ট বা নিষিদ্ধ হবে, তার কোন যুক্তি নেই ।”
দলীল-
√ আরওয়ারে কুদসিয়্যাহ্

অথচ আজকাল কিছু জাহিল লোক সকল বিদয়াতকেই (নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতি) গোমরাহী বলে থাকে এবং দলীল হিসাবে তারা নিম্নোক্ত হাদীস শরীফখানা পেশ করে থাকে ।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে,

كل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار.
অর্থঃ- “প্রত্যেক বিদয়াতই গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহ লোকই জাহান্নামে যাবে।”
অথচ তার ব্যাখ্যা সম্পর্কে তারা নেহায়েতই অজ্ঞ । এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা মেশকাত শরীফের শরাহ্ মেরকাত শরীফে উল্লেখ করা হয়, –
“সাহেবে মেরকাত হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আল আজহার” নামক কিতাবে كل بدعة ضلالة হাদীস শরীফের এ অংশটুকুর ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে, “সকল বিদয়াতে সাইয়্যিয়াই গোমরাহী ।”
আর তাই শায়খ ইব্রাহীম হালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,-
“নতুন উদ্ভাবিত কোন কাজ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাবেয়ীনগণের নিকট হতে প্রমাণিত না থাকলে অথবা উক্ত কাজের প্রতি বিদয়াত শব্দ আরোপিত হলেই যে, তা মন্দ বা গোমরাহী একথা যুক্তিযুক্ত নয়, বরং তা ভালও হতে পারে ।”
দলীল-
√ কবীরী শরহে মুনিয়াতুল মুসল্লী পৃঃ২৫১

হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও উনার এহইয়াউল উলুম কিতাবের ২য় খন্ড ২৬ পৃষ্ঠায় অনুরূপ মন্তব্য করেন।
কেউ কেউ আবার হযরত আয়েশা আলাইহাস সালাম ওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা পেশ করে বলেন, যে সকল বিদয়াতই পরিত্যাজ্য । হাদীস শরীফে ইরশাদ করা হয়, –
من احدث قى امرنا هذا ما ليس منه فهورد.

অর্থ-“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনে নেই, সেটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য ।”
এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মাওলানা শাব্বীর আহমদ ওসমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “ ما ليس منه হাদীস শরীফের উক্ত শব্দ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, যে সকল দ্বীনী কাজের সনদ কুরআন শরীফ অথবা হাদীস শরীফ বা খোলাফা-ই-রাশেদীন রদ্বীয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সুন্নত অথবা বুযুর্গানে দ্বীনের পারস্পরিক কার্যকলাপ অথবা গ্রহণযোগ্য শর্তাদীসহ শরীয়তের স্পষ্ট দলীলসমূহের ভিত্তিতে যে ইজতিহাদ করা হয়েছে, তার মধ্যে পাওয়া যায়, তবে সেগুলোকে নিকৃষ্ট বিদয়াত (বিদয়াতে সাইয়্যিায়াহ্) বলা যাবেনা । কারণ এ ভিত্তিসমূহ দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত ।”
দলীল-
√ ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম, ২য় জিঃ পৃঃ৪০৭

অতএব, যে সকল কাজ উল্লেখিত ভিত্তিসমূহের উপর প্রতিষ্ঠিত, তা দ্বীন অর্থাৎ শরীয়তের অন্তর্ভূক্ত বলেই বিবেচিত হবে ।
অনুরূপ মোযাহেরে হক্ব ১ম খন্ড ৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, হাদীছ শরীফে ,-
ما ليس منه
শব্দ ব্যবহার হয়েছে- উদ্দেশ্য এই যে, যে সকল কাজ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের বিরুদ্ধ নয়, সেগুলোকে বিদয়াতের গন্ডি বহির্ভূত করে রাখা । কারণ এ সকল কাজ নতুন উদ্ভুত হলেও গোমরাহী বা নিকৃষ্ট নয় ।
উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, বিদয়াত মাত্রই পরিত্যাজ্য নয় এবং সকল বিদয়াতই গোমরাহী নয় । যদি তাই হতো, তবে তারাবীহ্ নামাজ জামায়েতে পড়া জায়েয হতো না। কেননা এটাকেও বিদয়াত বলা হয়েছে, অর্থাৎ উত্তম বিদয়াত ।
এখন মূল বিষয় হলো- বিদয়াত কত প্রকার ও কি কি এবং তার মধ্যে কোনটি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য আর কোনটি শরীয়তে পরিত্যাজ্য, তা নির্ণয় করা ।
বিদয়াতের শ্রেণী বিভাগ–>>
ইমাম, মুজতাহিদগণ শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বিদয়াতকে প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন-
১| বিদয়াতে ই’তেক্বাদী, অর্থাৎ আক্বীদা বা বিশ্বাসগত বিদয়াত ।
২| বিদয়াতে আ’মালী, অর্থাৎ কর্মগত বিদয়াত।
(১) বিদয়াতে ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত বিদয়াত হলো–>>
যে সমস্ত আক্বীদা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের মূলনীতির বহির্ভূত, মূলতঃ এ আক্বীদাগত বিদয়াতের সবটাই হারামের পর্যায়ভূক্ত এবং অবশ্যই পরিত্যাজ্য । যেমন- খারেজী, মু’তাজিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, শিয়া, ওহাবী,তাবলীগি ইত্যাদি বাতিল ফিরকার আবির্ভাব। এই নব আবির্ভূত ফিরকার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী ।
(২) বিদয়াতে আ’মালী বা কর্মগত বিদয়াতঃ
বিদয়াতে আ’মালী প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত-
(ক) বিদয়াতে হাসানা,
(খ) বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ ।

(ক) বিদয়াতে হাসানা আবার তিন প্রকার-
(১) বিদয়াতে ওয়াজিব,
(২) বিদয়াতে মোস্তাহাব ও
(৩) বিদয়াতে মোবাহ্ ।

আর এ বিদয়াতে হাসানাহ্ সম্পর্কেই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,-
من سن فى الا سلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده
অর্থ: “যে কেউ দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়ত সম্মত), তার জন্য সে সাওয়াব পাবে এবং তারপরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তার সাওয়াবও সে পাবে ।”
দলীল-
√ মুসলিম শরীফ
√ মিশকাত শরীফ

উল্লেখিত হাদীস শরীফের দৃষ্টিতে বিদয়াতে হাসানাকে বিদয়াত লিদদ্বীন বলা হয় । কেউ কেউ আবার উক্ত হাদীস শরীফের দৃষ্টিতে বিদয়াতে হাসানাকে ‘বিদয়াতে লোগবী’ও বলে থাকেন। অর্থাৎ যদিও শাব্দিক অর্থে বিদয়াত বলা হয়েছে, মূলতঃ এগুলো সুন্নাতেরই অন্তর্ভূক্ত । কারণ হাদীছ শরীফে (سنة) সুন্নাত শব্দ উল্লেখ রয়েছে।
(খ) আর বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ দু’প্রকার-
(১) বিদয়াতে হারাম,
(২) বিদয়াতে মাকরূহ্ |

এই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ সম্পর্কেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,-
من احدث فى امر نا هذا ماليس منه فهورد
অর্থ-“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন জিনিসের প্রবর্তন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনে নেই, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য ।” (মিশকাত শরীফ)
আর এ বিদয়াত সম্পর্কেই ইরশাদ হয়েছে, كل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار.
অর্থঃ- “প্রত্যেক বিদয়াতই গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহ লোকই জাহান্নামে যাবে ।
উল্লেখিত হাদীস শরীফের দৃষ্টিতে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহকে বিদয়াত ফিদদ্বীন বলা হয় । আর এ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহকেই ‘শরয়ী’ বিদয়াত বলা হয় ।
মূলকথা হলো- যা সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর নতুন উদ্ভব হয় এবং তা দ্বীনের সাহায্য করে থাকে অথবা সাহায্যকারী না হলেও দ্বীনের কোন ক্ষতি করে না, সেটাই বিদয়াত লিদদ্বীন বা লোগবী বিদয়াত অর্থাৎ বিদয়াতে হাসানা। আর যে নতুন বিষয় উদ্ভব হওয়ার কারণে দ্বীনের কিছুমাত্রও ক্ষতি হয়, তবে সেটাই হবে বিদয়াতে ফিদদ্বীন বা শরয়ী বিদয়াত অর্থাৎ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ ।
উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিদয়াত বলতেই পরিত্যাজ্য নয় । অর্থাৎ যেই নতুন উদ্ভাবিত কাজ কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের বিপরীত তা অবশ্যই বর্জনীয়। আর সেটাই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বা হারামের অন্তর্ভূক্ত, যদিও তা “কুরুনে সালাসার” মধ্যে উদ্ভাবিত হোক না কেন । আর যেই নতুন উদ্ভাবিত কাজ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অনুকুলে তা অবশ্যই জায়েয এবং উত্তম, আর এটাকেই বিদয়াতে হাসানাহ্ বলা হয় । যদিও তা ‘কুরুনে সালাসার’ পরে উদ্ভাবিত হয় ।

বিদয়াতে হাসানা ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ-এর বিশ্লেষণ—>>>
নিম্নে বিদয়াতে হাসানা ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়ার উদাহরণভিত্তিক ব্যাখ্যা দেয়া হলো-
১| বিদয়াতে ওয়াজিবঃ- যা পালন না করলে ইসলামের ক্ষতি বা সংকট হবে, যেমন- কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ কাগজে কিতাব আকারে লিপিবদ্ধ করা, কুরআন শরীফের জের, জবর, পেশ দেওয়া, মাদ্রাসা নির্মাণ করা, নহু সরফ, উসুল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কিতাব লেখা ও পড়া ।
২| বিদয়াতে মোস্তাহাবঃ- যা শরীয়তে নিষেধ নেই এবং তা সমস্ত মুসলমানগণ ভাল মনে করে সাওয়াবের নিয়তে করে থাকেন, যেমন- তারাবীহ্ নামাজ জামায়াতে পড়া, মুসাফিরখানা, ইবাদতখানা, লঙ্গরখানা, ইত্যাদি জনহিতকর কাজ করা | খতিবের সম্মুখে আজান দেওয়া, রমাদ্বান শরীফে বিতর নামাজ জামায়াতে আদায় করা ইত্যাদি | এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,-
ما راه الناس حسنا فهو عندالله حسنا – لا تجتمع امتى على الضلالة
“লোকে যা ভাল মনে করে তা আল্লাহ্ পাক-এর নিকটও ভাল | আমার উম্মতগণ কখনো গোমরাহীর মধ্যে একমত হবে না।”
(মেশকাত শরীফ)

৩| বিদয়াতে মোবাহ – ঐ সমস্ত নতুন কাজ যা শরীয়তে নিষেধ নেই, যেমন- পোলাও, বিরিয়ানী, বুট, মুড়ী, পিয়াঁজো ইত্যাদি খাদ্য খাওয়া, ট্রেন, মোটরগাড়ী, প্লেন ইত্যাদি যান-বাহনে চড়া ।
৪| বিদয়াতে হারামঃ- যা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ-এর পরিপন্থি বা ওয়াজিব আমলগুলি ধ্বংসের কারণ। যেমন- ইহুদী, নাসারা ও ভন্ড ফকিরদের কু-প্রথা বা আক্বীদাসমূহ ।
৫| বিদয়াতে মাকরূহ- যার দ্বারা কোন সুন্নত কাজ বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন- বিধর্মীদের পোশাক পরিধান করা, টাই পরিধান করা এবং বিধর্মীদের অনুসরণ করা ইত্যাদী | কেননা হাদীস শরীফে রয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم – ما احدث قوم بدعة الارفع مثلها من السنة فتمسك بسنة خير من احداث بدعة
অর্থ: “যখনই কোন ক্বাওম একটি বিদয়াতের উদ্ভব ঘটাইয়াছে, তখনই একটি সুন্নত লোপ পেয়েছে | সুতরাং একটি সুন্নতের আমল করা (যদিও ওটা ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর হয়) একটি বিদয়াত উদ্ভব করা হতে উত্তম (যদিও ওটা বিদয়াতে হাসানা হয়) ।”
(মসনদে আহমদ)

বিদয়াতের অনুরূপ ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা নিন্মোক্ত কিতাবসমূহেও রয়েছে। যেমন- বুখারী শরীফের শরাহ ফাতহুল মুবীন, হাশিয়ায়ে মেশকাত, আশআতুল লোময়াত, ফতওয়ায়ে শামী, এশবাউল কালাম, আসমাওয়াল লোগাত, হুসনুল মাকাছেদ ইত্যাদি আরো আনেক কিতাব সমূহে।
কেউ কেউ আবার বলে থাকে, খাইরুল কুরুনের পর আবিস্কৃত প্রত্যেক নতুন জিনিসই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ । অথচ এটা মোটেও শুদ্ধ নয় । কেননা যদি তাই হতো, তবে আমাদের সামাজে প্রচলিত এমন অনেক নতুন বিষয় রয়েছে, যা অবশ্যই পরিত্যাগ করা জরুরী হয়ে পড়তো । যেমন-
(ক) বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসায় ইলম শিক্ষা দেওয়া হয়, সেই পদ্ধতি সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে “খাইরুল কুরুন” পর্যন্ত কারো সময়ই ছিলনা ।
(খ) বর্তমানে আমরা যে নাহু সরফ শিক্ষা করে থাকি, তাও “খাইরুল কুরুনে” ছিল না ।
(গ) বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে তারাবীহর নামাজ পড়ে থাকি, এ পদ্ধতিও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা ।
(ঘ) বর্তমানে আমরা মসজিদে জামায়াতের জন্য যে সময় নির্ধারণ করে থাকি, তাও সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা ।
(ঙ) বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে জুময়ার সানী আজান দিয়ে থাকি, এ পদ্ধতি সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা ।
(চ) বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে ওয়াজ মাহফিল করে থাকি ঐরূপ পদ্ধতি সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াজ মাহফিল করেননি ।
(ছ) বর্তমানে আমরা যে পোলাও, বিরিয়ারী কোর্মা, বুট, মুড়ী, পিয়াজো খেয়ে থাকি, তা সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাননি ।
(জ) বর্তমানে আমরা যে সকল যান-বাহনে চড়ে থাকি যেমন- মোটরগাড়ী, ট্রেন, প্লেন, রকেট, রিক্সা জাহাজ ইত্যাদি এবং পবিত্র হজ্বব্রত পালন করি ও বিদেশ ভ্রমনে যাই, তা সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা, তিনি ঐগুলোতে কখনো চড়েননি ।
(ঝ) বর্তমানে মানুষ যে সকল খাট-পালঙ্ক, সোকেস-আলমারী ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে, তা সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবহার করেননি ।
(ঞ) বর্তমানে বিয়ে-শাদীতে যে কাবিননামা করা হয়, তা সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা ।
(ত) বর্তমানে যে সকল আধুনিক যন্ত্রপাতি মানুষ ব্যবহার করছে, যেমন- ফ্যান, ঘড়ি, চশমা, মাইক, কম্টিউটার ইত্যাদি, এগুলো সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা ।
(থ) বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসার জন্য চাঁদা আদায় করা হয়, যেমন সদকা, ফেৎরা, যাকাত, কুরবানীর চামড়া, মান্নতের টাকা ইত্যাদি এবং যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসা তৈরী করা হয়, তা যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা । তদ্রুপ ‘খায়রুল কুরুনেও’ ছিলনা।
এমনিভাবে আরো অনেক বিষয়ই রয়েছে, যা সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা “খায়রুল কুরুনে” ছিলনা কিন্তু আমরা তা দায়েমীভবে করছি । আপনারা কি এগুলো ব্যবহার হতে বিরত থাকেন বা হেফাজতে আছেন?
সুতরাং মূলকথা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর নতুন উদ্ভব হয় এবং তা দ্বীনের সাহায্য করে থাকে অথবা সাহায্যকারী না হলেও দ্বীনের কোন ক্ষতি করে না, সেটাই বিদয়াতে হাসানা । আর যে নতুন বিষয় উদ্ভব হওয়ার কারণে দ্বীনের কিছুমাত্রও ক্ষতি হয়, তবে সেটাই হবে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ ।
এখন যেসকল বাতিল ফির্কা মীলাদ শরীফ উনার বিরোধিতা করো এখন এই পোস্ট পড়ে তাওবা করে বিরোধিতা ত্যাগ করো। অন্যথায় জাহান্নামের আগুন তোমাদের হাতছানি দিচ্ছে……

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন