বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরজ,এ বিষয়ে কুরআন শরীফ থেকে দলীল


সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, শাফেউল মুজনেবীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত কায়িনাত বা সৃষ্টি জগতের মূল উৎস। তিনি আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার সকল নিয়ামতের উৎস। উনার সন্তুষ্টি ব্যতিত আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়। উনাকে যে ব্যক্তি মুহব্বত করে আল্লাহ পাকে তাকে মুহব্বত করেন। আর উনাকে মুহব্বত না করে কারো পক্ষে মু’মিন হওয়া কষ্মিন কালেও সম্ভব নয়।
হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-

لا يؤمن احدكم حتي اكون احب اليه من والده ووالده والناس اجمعين وفي رواية من ماله و نفسه
অর্থ : তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান সন্তুতি, এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা বেশি মুহব্বত না করবে। অন্য বর্নায় এসেছে, তার ধন সম্পদ এবং জীবনের চাইতে বেশি মুহব্বত না করবে।”
দলীল-
√ বুখারী শরীফ ১/৭-কিতাবুল ঈমান- হাদীস নম্বর ১৪ এবং ১৫!

এ সহীহ হাদীস শরীফ থেকেই বুঝা গেলো, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবকিছুর চাইতে বেশি মুহব্বত করাই হচ্ছে ঈমান।
আর নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে উনার আগমন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করাটাই হচ্ছে ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য।
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেন স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজেই, খুশি প্রকাশ করে সকল ফিরিশতা আলাইহিস সালাম , এক কথায় সমস্ত সৃষ্টি জগৎ।
আর উনার আগমনে নাখুশি বা নারাজী প্রকাশ করেছি ইবলিশ।
আর বর্তমানেও সেই ইবলিশের দোশরর দের খুশি পালন করা দেখলে কষ্ট লাগে।
এবার আসুন আমরা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টা কি সেটা বুঝার চেষ্টা করি।
মূলত ঈদ অর্থ হচ্ছে খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা ।আর “মীলীদ ও ” নবী” দুইটি শব্দ একত্রে মিলিয়ে হয় মীলাদুন্নবী।” মীলাদের” তিনটি শব্দ রয়েছে – ميلاد মীলাদ, مولد মাওলিদ, مولود মাওলূদ।
মীলাদ শব্দের অর্থ হচ্ছে, জন্মের সময় , মাওলিদ শব্দের অর্থ হচ্ছে জন্মের স্থান, আর মাওলূদ শব্দের অর্থ হচ্ছে সদ্যপ্রসূত সন্তান।
আর النبي শব্দের দ্বারা বুঝায় হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে।
অর্থাৎ, আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থে ميلاد النبي বা ” মীলাদুন্নবী” বলতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকেই বুঝায়।
আর পারিভাষিক বা ব্যাবহারিক অর্থে,মীলাদুন্নবী বলতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে উনার ছানা- সিফাত আলোচনা করা, উনার প্রতি সালাত সালাম পাঠ করা, এবং উনার পবিত্রতম জীবনী মুবারকের সামগ্রিক বিষয়ের আলোচনা বুঝানো হয় !
সুবহানাল্লাহ !

এবার দেখুন আল্লাহ উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন প্রসঙ্গে মু’মিন মুসলমানদের কি আদেশ করেছেন!
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
قال بفضل الله و برحمته فبذالك فليفرحوا هو خيرمما يجمعون
অর্থ : হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি উম্মাহকে বলে দিন , মহান আল্লাহ পাক অনুগ্রহ ও রহমত( হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রেরন করেছেন , সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এ খুশি প্রকাশ করাটা সবচাইতে উত্তম, যা তারা সঞ্চয় করে রাখে !”
দলীল-
√ সূরা ইউনূছ ৫৮

উক্ত আয়াত শরীফে তাফসিরে বিখ্যাত মুফাসসির, সমগ্র মাদ্রাসায় যাঁর তাফসীর পড়ানো হয়, হাফিযে হাদীস, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন–
عن ابن عباس رضي الله تعال عنهما قال في الاية فضل الله العلم و رحمته محمد صلي الله عليه و سلم قال الله تعالي وما ارسلناك الا رحمة للعلمين
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াত শরীফের তাফসিরে এখানে আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ বলতে ” ইলিম” বুঝানো হয়েছে। আর রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে ” হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” উনাকে। যেমন, আল্লাহ পাক বলেন, আমিতো আপনাকে তামাম আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি।”
দলীল-
√ তাফসীরে দূররুল মানছুর – ১০ নং সূরা – ১১ পারা- সূরা ইউনূছ ৫৮ আয়াত।
√ তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী।
√ তাফসীরে কবীর।

দেখুন, উক্ত আয়াতের তাফসীরে ” রহমত” মানে কিন্তু হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে।
আর এ তাফসীর যিনি করেছেন তিনি হচ্ছেন, রঈসূল মুফাসসিরিন ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু।
যাঁর সম্পর্কে বুখারী শরীফে বর্নিত আছে – নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেছেন আয় আল্লাহ পাক উনাকে কুরআন শরীফের ইলিম এবং হেকমত দান করুন !”
কুরআন শরীফের তাফসীরে সবচাইতে জ্ঞনী ব্যক্তিত্ব ইবনে আব্বাস তিনিই বলতেছেন উক্ত আয়াতের ” রহমত” হচ্ছেন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তাহলে আয়াত শরীফের অর্থ কি দাঁড়াচ্ছে ?
অর্থ দাড়াচ্ছে, আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ এবং রহমত হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের কারনে খুশি বা ঈদ পালন করো !”
সুবহানাল্লাহ্ !!

তাহলে দেখা যাচ্ছে ঈদ পালন করাটা আল্লাহ পাক উনারই আদেশ।
আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ এবং ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়।
যেমন সকল ফিক্বাহের কিতাবে আছে-
الامر للوجوب
অর্থাৎ, আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় !

দলীল-
√ বাদায়েউস সানায়ে

দেখুন, আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-
اقيموا الصلوة

অর্থ : তোমরা নামাজ আদায় করো।”
কুরআন শরীফের এই নির্দেশ সূচক বাক্য দ্বারা নামাদ ফরজ হয়েছে।

তদ্রুপ সূরা ইউনূছের ৫৮ আয়াতের فليفرحوا বা খুশি প্রকাশ করো বা ঈদ পালন করো এটা আদেশ সূচক বাক্য।
এ আদেশের দ্বারাই খুশি প্রকাশ করা বা ঈদ পালন করা ফরজ ও ওয়াজিব প্রমানিত হয় !
সুবহানাল্লাহ্ !

মূলত কুরআন শরীফে অনেক জায়গায় আল্লাহ পাক ঈদ পালন করতে বলেছেন, উনার প্রদত্ত নিয়ামতকে স্মরন করতে বলেছেন।
আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
اذكروا نعمة الله عليكم

অর্থ : তোমাদের যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরন করো !”
( সূরা আল ইমরান ১০৩)
প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ পাক উনার সবচাইতে বড় নিয়ামত কি ?
এ ব্যাপারে সমস্ত জগৎবাসী একমত যে, আল্লাহ পাক উনার সবচাইতে বড় নিয়মত হচ্ছেন ” হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ” !
শুধু তাই নয় সমস্ত জাহানের সকল নিয়মাত হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই হাদীয়া করা হয়েছে।
আর হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন ” আন নি’মাতিল কুবরা আলাল আলাম” !
অর্থাৎ, সমস্ত কায়িনাতের সবচাইতে বড় নিয়ামত ! সুবহানাল্লাহ্ !!

আর আল্লাহ পাক সূরা আল ইমরান ১০৩ নং আয়াত শরীফে সেটাই বলছেন, তোমাদের যে নিয়ামত ( হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামত উনার যিকির করো, স্বরন করো, আলোচনা করো , খুশি করো !
সুবহানাল্লাহ্ !!

সূতরাং উক্ত আয়াত শরীফ থেকেও বুঝা যাচ্ছে, সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে উনার স্বরনে খুশি প্রকাশ করা আল্লাহ পাক উনার আদেশ।
বিশেষ নিয়ামত প্রাপ্তির দিন মুবারক যে ঈদের দিন সেটা স্পষ্ট কুরআন শরীফে আছে।
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
اللهم ربنا انزل علينا ماءدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخرنا
অর্থ : আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক ! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে ( বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ যেদিন খাঞ্চা নাজিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরূপ হবে !”
( সূরা মায়িদা ১১৪)
উক্ত আয়াত শরীফে কি বুঝা গেল ? হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার উম্মতের জন্য আসমান থেকে একটি খাঞ্চা ভর্তি খাবার চাইলেন, এবং এই নিয়মত পূর্ন খাবার নাযিল হওয়ার দিনটা উনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ হবে বললেন।
এই খাদ্য সহ খাঞ্চা নাযিল হওয়ার দিন যদি ঈদের দিন হয় ,, তাহলে সমগ্র জগৎ এর নিয়মাত, সকল নিয়মতের মূল , নি’মাতুল কুবরা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিন মুবারক কি ঈদ হবে না ?
খুশি করা যাবে না ??
অবশ্যই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিন ঈদ হবে, শুধুমাত্র ঈদ ই হবেনা বরং কুল কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ হবে !
সুবহানাল্লাহ্ !!

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অসংখ্য স্থানে নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে এবং উনার আগমন উপলক্ষে শুকরিয়া আদায় এবং ঈদ পালন করার কথা স্পষ্ট বর্ননা করা হয়েছে !
আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার প্রিয়তম হাবীব, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন সম্পর্কে অনেক আয়াত নাজিল করেছেন !
কতিপয় আয়াত শরীফ উল্লেখ করা হলো-
إنا أرسلناك شاهدا ومبشر ونذير لتؤمنوا بالله و رسوله و تعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة وأصيلا
অর্থ : (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষ্যদাতা,সুসংবাদদানকারী এবং সতর্ককারী স্বরূপ প্রেরণ করেছি , যেন তোমরা (বান্দারা) মহান আল্লাহ পাক উনার উপর এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান আনো এবং তোমরা উনার সম্মান করো ! এবং ছানা-সিফত প্রসংশা করো সকাল-সন্ধ্যা !””
( সূরা ফাতাহ ৮,৯)
لقد جاءكم رسول من انفسكم عزيز عليه ماعنتم حريص عليكم بالمؤمنين رءوف رحيم
অর্থ : তোমাদের কাছে তোমাদের জন্য একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট উনার কাছে বেদনাদায়ক, তিনি তোমাদের ভালাই চান,মু’মিনদের প্রতি স্নেহশীল এবং দয়ালু !”
( সূরা তাওবা ১২৮)
وماارسلناك الا رحمة للعالمين
অর্থ : হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে সমস্ত কায়িনাতের জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছি !”‘
( সূরা আম্বিয়া ১০৭)
لقد من الله علي المؤمنين إذ بعث فيهم رسولا من أنفسهم يتلوعليهم اياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب وااحكمة
অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক মু’মিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদেরকে আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফ সমূহ তিলাওয়াত করে শোনান এবং তাদের অন্তর সমূহকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন !””
( সূরা আল ইমরান ১৬৪)
ياايها النبي انا ارسلناك شاهدا و مبشر و نذيرا وداعيا الي الله باذنه وسراجا منيرا
অর্থ : হে আমার হবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদ দাতা, ভয় প্রদর্শনকারী এবং আমার নির্দেশে আমার দিকে আহ্বানকারী ও নূরানী প্রদীপ রুপে প্রেরন করেছি !””
( সূরা আহযাব ৪৬)
قد جاعكم من الله نور
অর্থ : নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এক মহান নূর ( হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন !””
( সূরা মায়েদা ১৫)
وإذ أخذ الله ميثاق النبيين لما اتيتكم من كتاب و حكمة ثم جاءكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال أأقررتم وأخذتم علي ذلكك إصري قالوا أقررنا قال فاشهدوا وأنا معكم من الشاهدين
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী- রসূল আলাইহিমুস সালামগন উনাদের থেকে এ মর্মে ওয়াদা নিলেন যে, আমি আপনাদের কিতাব ও হিকমত হাদিয়া করবো। অতঃপর আপনাদের প্রদত্ত কিতাবের সত্য প্রতিপাদনকারী হিসাবে একজন রসূল (হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করবেন ! আপনারা অবশ্যই উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে পেলে খিদমত করবেন ! মহান আল্লাহ পাক বললেন, আপনারা কি আমার এ ওয়াদা স্বীকার ও গ্রহণ করলেন ? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তখন আল্লাহ পাক বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম !”
( সূরা আল ইমরান ৮১)
উক্ত আয়াত শরীফ ছাড়াও আরো অনেক আয়াত শরীফে রহমাতুল্লিল আলামীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে ! আর উনার আগমন উপলক্ষে ঈদ পালন করার কথা স্পষ্ট ভাবে কুরআন শরীফে ঘোষণা করে দিয়েছেন —
قل بفضل الله و برحمته فبذلك فليفرحوا هو خيرمما يجمعون
অর্থ : হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি বলুন, আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত (হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাযিল হওয়ার কারনে খুশি/ ঈদ প্রকাশ করো ! এ খুশি প্রকাশ করা হচ্ছে যা তারা সঞ্চিত রাখে তার চাইতে উত্তম !”
( সূরা ইউনূছ ৫৮)
এ আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হাফিজে হাদীস, ইমামুল মুফাসসিরিন জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বরাত দিয়ে বলেন-
قال في الاية فضل الله العلم ورحمته محمد صلي الله علي و سلم قال الله تعالي وما ارسلناك الا رحمة للعلمين
অর্থ : উক্ত আয়াত শরীফে অনুগ্রহ বলতে ইলমকে বুঝানো হয়েছে এবং রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ! যেমন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, আমিতো আপনাকে তামাম আলমের জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছি !””
দলীল-
√ তাফসীরে দূররে মানছুর
√ তাফসীরে রুহুল মায়ানী !
√ তাফসীরে কবীর।

উপরোক্ত কুরআন শরীফ উনার সরাসরি আয়াত শরীফের দলীল দ্বারা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রমান হলো! কারন আল্লাহ পাক নিজেই উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেই আগমন উপলক্ষে ঈদ পালন করতে বলেছেন !!
সুবহানাল্লাহ্ !!

শুধু তাই নয় স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফের সু সংবাদ পূর্ববর্তী নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে দান করেছেন !
কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়-

قال عيسي ابن مريم يبني اسراءيا اني رسول الله اليكم مصدقا لما بين يدي من التورة و مبشرا برسول ياتي من بعدي اسمه احمد
অর্থ :হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে বনী ইসরাঈল ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি ! আমার পূর্ববর্তী তাওরাত শরীফের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূল উনার সুসংবাদ দানকারী যিনি আমার পরে আগমন করবেন, উনার নাম মুবারক হচ্ছে আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম !””
( সূরা ছফ ৬)
এ আয়াত শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের মীলদ শরীফ সম্পর্কে বলেন–
” আমি তোমাদের আমার পূর্বের কিছু কথা জানাবো! তা হলো- আমি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া আমি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ ও আমার মাতার সুস্বপ্ন ! আমার বিলাদতের সময় আমার মাতা দেখতে পান যে, একখানা নূর মোবারক বের হয়ে শাম দেশের রাজ প্রসাদ সমূহ আলোকিত করে ফেলেছে !””
দলীল-
√ মুসনাদে আহমদ ৪র্থ খন্ড ২৭ পৃষ্ঠা !

√ মুস্তদরেকে হাকিম ২য় খন্ড ৬০১ পৃষ্ঠা !
√ মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠা !
উপরোক্ত আয়াত শরীফ থেকে আমরা দেখতে পেলাম স্বয়ং আল্লাহ পাক ঈসা আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুসংবাদ দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের মীলাদ শরীফ উনার বর্ননা দিলেন !!
সুবহানাল্লাহ্ !!

আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন –
اذكروا نعمة الله عليكم
অর্থ : তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্বরন করো !”‘
( সূরা আল ইমরান ১০৩)
আল্লাহ পাক বলেন-
وأما بنعمة ربك فحدت
অর্থ : আপনার রব উনার নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন !”
( সূরা আদ্ব দ্বুহা ১১)
উক্ত নিয়ামত সমূহের ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে আছে —
قال والله هم كفار قريش و محمد نعمة الله تعالي
অর্থ : আল্লাহ পাক উনার কসম ! তারা ( যারা নবীজী উনার বিরোধীতা করেছিলো) কুরায়িশ কাফির আর হযরত সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত !”
দলীল-
√ বুখারী শরীফ ১/২২১

আর নিয়ামত পূর্ন দিন সমূহ স্বরন করা বা আলোচনা করার কথা কুরআন শরীফে ইরশদ হয়েছে–
وذكرهم بايام الله ان في ذلك لايات لكل صبار شكور
অর্থ : আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিন সমূহ স্বরন করান ! নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল শোকরগুযার বান্দাদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে !”
( সূরা ইব্রাহীম ৫)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ থেকে বিশেষ দিন সমূহ স্বরন করা এবং এ দিবসে খুশি প্রকাশ করার কথা সরাসরি কুরআন শরীফ থেকে প্রমান হলো !
সুতরাং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন দিবসে ঈদ পালন করা, উনার আলোচনা করা, কুরআন শরীফ থেকে অকাট্যভাবে প্রমানিত হলো !
সুবহানাল্লাহ্

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন