হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহ পাক উনার রহমত। আর উনাকে পাওয়ার কারনে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা আল্লাহ পাকের আদেশ।
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি। (সূরা আম্বিয়া ১০৭)
সমগ্র জগতে রহমত হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনাকে রহমত হিসাবে প্রেরন করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
ثُمَّ تَوَلَّيْتُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ ۖ فَلَوْلَا فَضْلُ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَكُنتُم مِّنَ الْخَاسِرِينَ ﴿٦٤﴾তারপরেও তোমরা তা থেকে ফিরে গেছ। কাজেই আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত যদি তোমাদের উপর না থাকত, তবে অবশ্যই তোমরা ধবংস হয়ে যেতে। (সূরা বাক্বারা শরীফ ৬৪ )
এই আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে দেওবন্দীদের অন্যতম মুরুব্বী পাকিস্তানের মুফতে শফী তার “মারেফুল কুরআন” তাফসীরে লিখেছে “আর হাদীস শরীফ উনার ভিত্তিতে যেহেতু আযাব অবর্তীন না হওয়াটা যেহেতু মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকত। কাজেই কোন কোন তাফসীর কারক মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আর্বিভাবকেই আল্লাহ পাক উনার রহমত ও করুনা বলে বিশ্লেষন করেছেন।” (তাফসীরে মারেফুল কুরআন : সূরা বাক্করা শরীফ উনার ৬৪ নং আয়াত শরীফ উনার তাফসীর)
বর্তমান সময়ে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরোধীতাকারীদের অন্যতম মুরুব্বী মুফতে শফীর তাফসীর থেকেই দেখতে পাওয়া গেলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনকে রহমত ও অনুগ্রহ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক সেই বিষয়টা স্পষ্ট করে বলে দিলেন,
قُلْ بِفَضْلِ اللَّـهِ وَبِرَথিحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ ﴿٥٨﴾
হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি বলে দিন, আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত তথা নূরে মুজাসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করো। এই খুশি প্রকাশ করা হচ্ছে সব কিছুর চাইতে উত্তম। (পবিত্র সূরা ইউনূছ আলাইহিস সালাম : আয়াত শরীফ ৫৮)
উক্ত আয়াত শরীফ এর “রহমত” শব্দের তাফসীরে পৃথিবী বিখ্যাত সব তাফসীরের কিতাবে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথাই বলা হয়েছে।
উক্ত আয়াত শরীফে তাফসিরে বিখ্যাত মুফাসসির, সমগ্র মাদ্রাসায় যাঁর তাফসীর পড়ানো হয়, হাফিযে হাদীস, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন–
عن ابن عباس رضي الله تعال عنهما قال في الاية فضل الله العلم و رحمته محمد صلي الله عليه و سلم قال الله تعالي وما ارسلناك الا رحمة للعلمين
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াত শরীফের তাফসিরে এখানে আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ বলতে ” ইলিম” বুঝানো হয়েছে। আর রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে ” হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” উনাকে। যেমন, আল্লাহ পাক বলেন, আমিতো আপনাকে তামাম আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি।” (দলীল- তাফসীরে দূররুল মানছুর – ১০ নং সূরা – ১১ পারা- সূরা ইউনূছ ৫৮ আয়াত, তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী, তাফসীরে কবীর)
উক্ত আয়াতের তাফসীরে ” রহমত”মানে কিন্তু হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থ দাড়াচ্ছে, আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ এবং রহমত হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের কারনে খুশি বা ঈদ পালন করো।
উপরোক্ত সূরা আম্বিয়া ১০৭ নং আয়াত শরীফ ও সূরা বাক্বারা ৬৪ নং আয়াত শরীফ থেকে আমরা জানতে পারলাম “রহমত” হচ্ছেন স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
উছুলে তাফসীরে তাফসীর করার কয়েকটা প্রকারের কথা উল্লেখ করা আছে। প্রথমত, আয়াত শরীফ দিয়ে আয়াত শরীফের তাফসীর। দ্বিতীয়ত, হাদীস শরীফ দ্বারা আয়াত শরীফের তাফসীর। তৃতীয়ত, হযরত সাহাবায়ে কিরাম উনাদের ব্যাখা দ্বারা আয়াত শরীফ এর তাফসীর। চর্তুথত, ইমাম মুস্তাহিদ উনাদের ব্যাখা দ্বারা আয়াত শরীফ এর তাফসীর। আসুন এবার আমরা পবিত্র সূরা ইউনুছ এর ৫৮ নম্বর আয়াত শরীফ এর তাফসীর এই চার প্রক্রিয়ায় দেখবো।
আল্লাহ পাক বলেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি বলে দিন, আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করো। এই খুশি প্রকাশ করা হচ্ছে সব কিছুর চাইতে উত্তম। (পবিত্র সূরা ইউনূছ আলাইহিস সালাম : আয়াত শরীফ ৫৮)
এই আয়াত শরীফে “রহমত” কে এইটা জানতে পারলেই ঈদে মীলাদুন্নবী পালনের বিষয়টা পানির মত পরিষ্কার হয়ে যাবে। আসুন তাফসীর গুলো দেখা যাক-
আয়াত শরীফ দ্বারা তাফসীর:
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি। (সূরা আম্বিয়া ১০৭)
এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ পাক রহমত এর সজ্ঞা দিয়ে দিলেন। নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহর রহমত। সূতরাং রহমত পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করা কার আদেশ ভেবে দেখেন।
হাদীস শরীফ দ্বারা আয়াত শরীফের তাফসীর:
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারত করেন,
وعن أبي أمامة قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم إن الله تعالى بعثني رحمة للعالمين
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক আমাকে তামাম আলমের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন (তাবরানী শরীফ, মুসনাদে আহমদ, মিরকাত শরীফ, দালায়েলুন নবুওয়াত লি আবু নুয়াইম ১)
হাদীস শরীফ দ্বারা সূরা ইউনূছ এর ৫৮ আয়াত এর ব্যাখা পাওয়া গেলো। স্বয়ং নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ পাক উনার রহমত। সূতরাং নবীজীকে পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করতে হবে এটা হাদীস শরীফ এর ব্যাখা দ্বারা প্রমান হলো।
হযরত সাহাবায়ে কিরাম উনাদের ব্যাখা দ্বারা আয়াত শরীফ এর তাফসীর: সূরা ইউনূছ শরীফ এর ৫৮ নং আয়াত শরীফের তাফসীরে বিখ্যাত সাহাবী রঈসূল মুফাসসিরীন ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ আয়াত শরীফের তাফসিরে এখানে আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ বলতে ” ইলিম” বুঝানো হয়েছে। আর রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে ” হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” উনাকে। যেমন, আল্লাহ পাক বলেন, আমিতো আপনাকে তামাম আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি।”(তাফসীরে দুররে মানছুর ১০ নং সূরা – ১১ পারা)
সূতরাং তাফসীরকারক দের মাথার তাজ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি সূরা ইউনূছ ৫৮ এর রহমত দ্বারা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয়েছে।
ইমাম মুস্তাহিদ উনাদের ব্যাখা দ্বারা আয়াত শরীফ এর তাফসীর: হাফিজে হাদীস, মুজাদ্দিদে যামান, বিখ্যাত হযরত মুফাসসির জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাজুল মানতেকীন ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বিখ্যাত মুফাসসির আল্লাম আলুসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তাফসীরে বর্ণিত রহমত হচ্ছেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । (দলীল- তাফসীরে দূররুল মানছুর – ১০ নং সূরা – ১১ পারা- সূরা ইউনূছ ৫৮ আয়াত, তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী, তাফসীরে কবীর)
উপরোক্ত চার প্রকার তাফসীর থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হলো, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি বলে দিন, আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করো। এই খুশি প্রকাশ করা হচ্ছে সব কিছুর চাইতে উত্তম। (পবিত্র সূরা ইউনূছ আলাইহিস সালাম : আয়াত শরীফ ৫৮)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন