মানুষের প্রবৃত্তি খেল তামাশায় মশগুল থাকতে চায়। নফস সাধারনত খেলাধূলার স্বাদ আস্বাদন করতে খুবই আগ্রহী। কিন্তু খেলা ধুলা যে ইসলোমে নিষিদ্ধ এবং এর মাধ্যমে মানুষ যে ক্রমান্বয়ে নফসের দাসত্ব বরন করছে তা নিজেও জানে না। খেলা ধুলা করে, দেখে দিন পার করে দিয়ে যখন তার হুস ফেরে তখন আর শুধরানোর কিছুই অবশিষ্ঠ থাকে না। তাই যেনে নেয়া দরকার খেলাধুলা সর্ম্পকে ইসলোমের হুকুম কি……..
১. সূরা যুখরুফে ৮৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
فَذَرْهُمْ يَخُوضُوا وَيلَْعَبُوا حَتَّى يُلاقُوا يوَْمَهُمُ الَّذِي يُوعَدُونَ
অর্থ: অতএব, তাদেরকে বাকচাতুরী ও ক্রীড়া-কৌতুক করতে দিন সেই দিবসের সাক্ষাত পর্যন্ত, যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়।”
২. সূরা আল-আনআমের ৯১ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
قُلِ اللّهُ ثُمَّ ذَرْهُمْ فِي خَوْضِهِمْ يلَْعَبُونَ
আপনি বলে দিন: আল্লাহ নাযিল করেছেন। অত:পর তাদেরকে তাদের ক্রীড়ামূলক বৃত্তিতে ব্যাপৃত থাকতে দিন।
৩. সূরা আরাফে ৯৮ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
أَوَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا ضُحىً وَهُمْ يَلْعَبُونَ
আর এই জনপদের অধিবাসীরা কি নিশ্চিন্ত হয়ে পড়েছে যে, তাদের উপর আমার আযাব দিনের বেলাতে এসে পড়বে অথচ তারা তখন থাকবে খেলাধুলায় মত্ত।
৪. সূরা আল-আম্বিয়া এর ২ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন,
مَا يَأْتِيهِمْ مِنْ ذِكْرٍ مِنْ رَﺑِّﻬِمْ مُحْدَثٍ إِلَّا اسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يلَْعَبُونَ لاهِيَةً قلُُوبهُُمْ
তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে যখনই কোন নতুন উপদেশ আসে, তারা তা খেলার ছলে শ্রবণ করে।
৫. সূরা দুখানের ৯ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন,
بَلْ هُمْ فِي شَكٍّ يلَْعَبُونَ
এতদসত্ত্বেও এরা সন্দেহে পতিত হয়ে ক্রীড়া-কৌতুক করছে।
৬. সূরা তুরের ১২ নং আয়াতে রয়েছে,
فَوَيْلٌ يوَْمَئِذٍ لِلْمُكَذِّبِينَ الَّذِينَ هُمْ فِي خَوْضٍ يلَْعَبُونَ
সেদিন মিথ্যারোপকারীদের দুর্ভোগ হবে, যারা ক্রীড়াচছলে মিছেমিছি কথা বানায়।
৭. সূরা মায়েদার ৫৮ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন,
وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ اتَّخَذُوهَا هُزُواً وَلَعِب اً
আর যখন তোমরা নামাযের জন্যে আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ, তারা নিবোর্ধ।
৮. সূরা আল-আনআমের ৭০ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
وَذَرِ الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ لَعِباً وَلهَوْاً وَغَرَّتْهُمُ الحَْيَاةُ الدُّنْيَا وَذكَِّرْ بِهِ أَنْ تبُْسَلَ نفَْسٌ بِمَا كَسَبَتْ لَيْسَ لهَاَ مِنْ دُونِ
اللَّهِ وَلِي وَلاَ شَفِيعٌ
তাদেরকে পরিত্যাগ করুন, যারা নিজেদের ধর্মকে ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে। কোরআন দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দিন, যাতে কেউ স্বীয় কর্মে এমন ভাবে গ্রেফতার না হয়ে যায় যে, আলাহ্ ব্যতীত তার কোন সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী নেই।
৯. সূরা আল-আনআমের ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
وَمَا الحَْيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ لَعِبٌ وَلهَوٌْ وَلَلدَّارُ الآخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يتََّقُونَ أَفَلاَ تَعْقِلُونَ
পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালের আবাস পরহেযগারদের জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা কি বুঝ না ?
১০.সূরা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৩৬ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّمَا الحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلهَوٌْ وَإِن تؤُْمِنُوا وَتَتَّقُوا يؤُْتِكُمْ أُجُورَكُمْ وَلَا يَسْأَلْكُمْ أَمْوَالَكُمْ
পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধুলা, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও এবং সংযম অবলম্বন কর, আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিদান দেবেন এবং তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ চাইবেন না।
১১.সূরা আঙ্কাবুতের ৬৪ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে,
وَمَا هَذِهِ الحَْيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لهَوٌْ وَلَعِبٌ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لهَِيَ الحَْيَوَانُ لَوْ كَانُوا يعَْلَمُونَ
এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক বৈ তো কিছুই নয়। পরকালের গৃহই প্রকৃত জীবন; যদি তারা জানত।
১২. সূরা জুমুআর ১১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
قُلْ ما عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِ وَاللَّهُ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
বলুন: আল্লাহ র কাছে যা আছে, তা ক্রীড়াকৌতুক ও ব্যবসায় অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা।
এখানে উদ্দেশ্যহীন কাজ দ্বারা ঐকাজ উদ্দেশ্য যা হাদীস খেল-তামাশা ও অনর্থক কাজ (লাহু, লায়াব, ও লাগবুন) ইত্যাদি শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। এখানে উক্ত তিনটি শব্দের শাব্দিক অর্থ বর্ণনা সঙ্গত মনে করছি।
লাহবুন এর সংজ্ঞায় লুগাতে বর্ণিত আছে,
اللهو: مَا يُشْغِلُ الإِنْسَانَ عَمَّا يعَْنِيْهِ و يُهِمه
অর্থাৎ প্রত্যেক ঐ জিনিসকে লাহবুন বলে, যা মানুষকে তার উদ্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ জিনিস থেকে গাফেল রাখে।
লা-বুন এর সংজ্ঞায় এসেছে,
اللَّعْبُ : لَعِبَ فُلاَنٌ إِذَا كَانَ فَعَله غَيْر قَاصِدٍ به قصدا صَحِيحًا
অর্থাৎ লা’বুন প্রত্যেক ঐ কাজকে বলে, যা সঠিক উদ্দেশ্য ব্যতিত সম্পাদন করা হয়।
লাগবুন অর্থ হচ্ছে,
اللغَّْوُ : ھُوَ كُلُّ سِقْطٍ مِنْ قَوْلٍ أوَْ فِعْلٍ فَیَدْخُلُ فِیْھِ الغِنَاءُ وَ اللھَّْوُ وَ غَیْر ذَلك مِمَّا قَارَبَھُ
অর্থাৎ লাগবুন বলা হয়, প্রত্যেক অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত কথা ও কাজকে। এর মাঝে গান-বাদ্য ও খেলতামাশা অন্তর্ভূক্ত।
হাদীস শরীফে উল্লেক আছে,
مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يعَْنِيهِ
“মানুষের আদর্শ ইসলামের চিহ্ন হলো, অর্থহীন কাজকে পরিত্যাগ করা। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২৩১৭, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং ৩৯৭৬। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৭৩৭)
তিরমিযি, ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমাদ এবং সহীহ ইবনে খোযাইমায় বর্ণিত আছে,
ن من الحق كُلُّ شيْءيلَْهُوْ بِه الرَّجُل بَاطل إِلاَّ رَمْيَةٌ بِقَوْسٍ وَتَاْدِيْبُهُ فَرَسَه وَ مُلَاعَبَتُه إٍمْرأتَه فَإ
মানুষের প্রত্যেক খেলা-ধুলা বাতিল, তবে তীর নিক্ষেপ, ঘোড়া দৌড়ান এবং নিজ স্ত্রীর সাথে বিনোদন ব্যতীত। কেননা এ তিন প্রকার উপকারী।”
সূতরাং স্পষ্ট হাদীস শরীফ থেকেই দেখা যাচ্ছে সকল খেলাধুলাই বাতিল। আর যে তিন প্রকার উপকারী বলা হয়েছে তা মূলত খেলাধুলা নয়। বরং সেটা আলাদাভাবে নিদৃষ্ট করে শরীরচর্চার জন্য বলা হয়েছে।
কানযুল উম্মালে উক্ত হাদীসটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
مَا مِنْ شَيْء تَحْضره الملائكة من اللهو إلا ثلاثة الرجل مع إمرأته و إجراء الخيل و النضال
“তিনটি ব্যতীত অন্য কোন খেলায় রহমতের ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় না।
১. স্ত্রীর সাথে বিনোদন। ২. ঘোড়া দৌড়ান। ৩. তীরান্দাযি।”
সূতরাং অন্য যেকোন খেলায় রহমত থাকে না। অর্থাৎ যেখানে রহমত থাকে না সেখানে গজব নাযিল হয়। ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন সহ যত খেলা আছে সবখানেই গযব নাজিল হয় প্রমান হলো।
কানযুল উম্মালের অপর এক বর্ণনায় এবং জামে সগীরের এক বর্ণনায় তিনের পরিবর্তে চারটির কথা এসেছে,
كل شيء ليس من ذكر الله لهو و لعب إلا أن يكون أربعة: ملاعبة الرجل إمرأته و تَاْديب الرجل فرسه و مشي الرجل بين الغرضين و تعليم الرجل السباحة
অর্থ: “আল্লাহ তায়ালা যিকির সম্পর্কিত নয় এমন প্রত্যেকটি জিনিস খেল-তামাশার অন্তর্ভূক্ত। তবে চারটি জিনিস ব্যতীত, ১. স্ত্রীর সাথে বিনোদন ও খেলা-ধুলা। ২. ঘোড়া দৌড়ান। ৩. লক্ষ বস্তুতে আঘাত করার জন্য যাওয়া। ৪. কাউকে সাঁতার শিখানো।”
সূতরাং বোঝা গেলো এই ৪ টি ব্যাতীত বিনোদনের নামে যত খেলাধুলাই হোক তা আল্লাহর যিকির নয়। বরং সেগুলো খেল তামাশা। আর খেল-তামাশার পরিনতি উপরে আয়াত শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূতরাং জীবনের সময়গুলো অনেক মূল্যবান। মূল্যবান সময় খেলতামাশায় নষ্ট না করে সবার উচিত ইসলামের আর্দশ অনুযায়ী জীবন সাজানো। কাল কিয়ামতের দিন ৫ টা প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে কেউ এক পাও উত্তোলন করতে পারবে না। তার একটা প্রশ্ন হচ্ছে তার জীবনের সময় কোন কাজে সে ব্যয় করেছে??
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন