বৃহস্পতিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

সিলাই বিহীন লুঙ্গী পরিধান করা খাছ সুন্নত

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদা ازار (ইযার ) বা সেলাই বিহীন লুঙ্গী মুবারক পরিধান করেছেন। এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগনও ইযার বা সেলাই বিহীন লুঙ্গি মুবারক পরিধান করেছেন। এ কারনে সিলাই বিহীন লুঙ্গি পরা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এর অন্তর্ভুক্ত।

সিলাই বিহীন লুঙ্গি ازار ইযার শব্দের বিশ্লেষণ:
আরবি ازار "ইযারুন" শব্দিটি একবচন। এর বহুবচন হলো ازر "উযরুন"। এটা ইসমে জামিদ। যার দ্বারা অর্থ হলো,-

(১) ইযার ,(২) লুঙ্গি, (৩) তহবন্দ, (৪) দেহের নিম্নাংশের পরিধেয় কাপড়, (৫) দোপাট্টা , (৬) চাদর , (৭) মৃত ব্যক্তির কাফনের ইযার।

দলীল-
√ লিসানুল আরব।
√ লুগাতে হীরা।
√ আল মু'জামুল ওয়াযীজ।
√ আল মিছবাহুল মুনীর।
√ ফীরুযুল লুগাত।
√ আল মুনজিদ ফিল লুগাত।
√ আল কামূস মাদারীসি।
√ বয়ানুল লিসান।
√ ফরহঙ্গে জাদিদ। ইত্যাদি ছাড়াও আরো শতশত লুগাত বা অভিধানের কিতাবে "ইযার" শব্দের উপরোক্ত অর্থ করা হয়েছে।

এবার আসুন আমরা সহীহ হাদীস শরীফ থেকে "ইযার" বা সিলাই বিহীন লুঙ্গির দলীল গ্রহণ করি-

হাদীস শরীফে কি বর্নিত আছে-

قال اخرجت الينا عاءشة رضي الله عنها كساء ملبدا و ازارا غليظا فقالت قبض روح رسول الله صلي الله عليه و سلم في هذين

অর্থ: হযরত আবু বুরদার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন একদা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম আমাদের সামনে একটি চাদর এবং একটি মোটা সেলাই বিহীন লুঙ্গী বের করে আনেন। অতঃপর তিনি বলেন, এ দুটি কাপড় মুবারক পরিহিত অবস্থায় হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রূহ মুবারক (আল্লাহ পাক উনার কাছে) নেয়া হয়।"

দলীল-
√ সহীহ বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ২৬৫ পৃষ্ঠা, কিতাবুল লিবাস অধ্যায়।

√ সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড ১৯২ পৃষ্ঠা।

√ সুনানে ইবনে মাজাহ ২৬২ পৃষ্ঠা।

√ তিরমিযী শরীফ।

√ শামায়িলুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লি ইমাম তিরমিযী , অষ্টাদশ অধ্যায়, "বাবু মাজায়া ফি ছিফাতি "ইযারি" রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-১২০ নং হাদীস শরীফ।

উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় দেখুন, অত্র হাদীস শরীফের كساء وازارا "চাদর এবং ফাড়া লুঙ্গি" এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত কিতাব " শামায়িলুত তিরমীযি" এর শরাহতে লিখা আছে-

وهو ما يستر اعلي البدن ضد الاار

অর্থ: كساء বা চাদর যা শরীরের উপরের অংশ ঢেকে রাখে। ازارا "ইযার" বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি এর বিপরীত।" অর্থাৎ সিলাই বিহীন লুঙ্গি শরীরের নিচের অংশ ঢেকে রাখে।

দলীল-
√ শরহে ইমাম আব্দুর রউফ মানাবী মিছরী ১ম খন্ড ২১০ পৃষ্ঠা।

কিতাবে আরো বর্নিত আছে-

والساء ما يستر اعلي البدن ضد الازار

অর্থ: كساء "কিসা" বা চাদর যা শরীরের উপরের অংশ ঢেকে রাখে। ازار "ইযার" বা সিলাই বিহীন লুঙ্গি এর বিপরীত।" অর্থাৎ সিলাইবিহীন লুঙ্গি শরীরের নিম্নাংশ ঢেকে রাখে।

দলীল-
√ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলাশ শামায়িলে মুহম্মদিয়া ১০২ পৃষ্ঠা।

এ ইবারত দুটি থেকে প্রমান হয় হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাদর মুবারক ও লুঙ্গি মুবারক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগনকে দেখিয়েছিলেন, তা সিলাইবিহীন তথা ফাঁড়া ছিলো।
একটি দিয়ে শরীরের উপরের অংশ ঢাকা হতো তা যেমন সিলাইবিহীন চাদর ছিলো তেমনি অন্যটি দিয়ে নিম্নাংশ ঢাকা হতো, যার নাম ছিলো "ইযার" বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি।

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম তিরমীযি রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহীহ সনদে আরো একটি হাদীস শরীফ বর্ননা করেন-

قال بينما انا امشي باته اتقي وابقي فالتفت فاذا هو رسول الله صلي الله عليه و سلم فقلت يا رسول الله انما هي بردة ملحاء قال امالك في اسوة فنظرت فاذا ازاره الي نصف ساقيه

অর্থ: হযরত উবাইদ বিন খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি একদিন মদীনা শরীফে হেঁটে চলছিলাম। এমন সময় আমার পিছন দিকে একজন লোক বলে উঠলেন , " তোমার সিলাইবিহীন লুঙ্গি উঁচু কর", কেননা তা ধুলিমাটি অধিক রক্ষাকারী এবং অধিকরতর স্থায়িত্বকারী। তখন আমি চেহারা ফিরিয়ে দেখলাম, তিনি হলেন হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটাতো কালো ডোরাদার সাদা রংয়ের কাপড়। তিনি বললেন, আমার মধ্যে কি আপনার জন্য অনুসরনীয় অনুকরনীয় নাই ?
তখন আমি লক্ষ্য করলাম যে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিলাইবিহীন লুঙ্গি মুবারক উনার নিছফু সাক্ব পর্যন্ত।"

দলীল-
√ শামায়িলুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লি ইমাম তিরমিযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি,- অষ্টাদশ অধ্যায়, ১২১ নং হাদীস শরীফ।

উক্ত পবিত্র হাদীস শরীফের ব্যাখায় বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

(فنظرت) اي الي اباسه (فاذا ازاره) باعتبار طرفيه (اي نصف ساقيه)

অর্থ: (আমি লক্ষ্য করলাম) অর্থাৎ তাঁর পোশাক মুবারকের দিকে ( তাঁর তথা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিলাইবিহীন লুঙ্গি মুবারক) সুক্ষ্ম বিবেচনায় সিলাইবিহীন লুঙ্গির দুই প্রান্ত। ( তাঁর নিছফু সাক্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিলো )

দেখুন ازاره এর ব্যাখায় অত্র ইবারতে উল্লিখিত طرفيه " ত্বরফাইহি" শব্দটি দ্বারা বুঝা যায় যে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লুঙ্গি মুবারক "সিলাইবিহীন" তথা ফাঁড়া ছিলো। তাই সিলাইবিহীন লুঙ্গি খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

সিলাইবিহীন লুঙ্গি পরিধান করা যে খাছ সুন্নাত এ বিষয়ে বুখারী শরীফে একটি সহীহ হাদীস শরীফ বর্নিত আছে,-

عن النبي صلي الله عليه و سلم قال من جر ثوبه خيلاء لم ينظر الله اليه يوم القيامة فقال ابو بكرن ااصديق يا رسول الله صلي الله عليه و سلم ان احد شقي ازاري يسترخي الا ان اتعاهد ذلك منه فقال النبي صلي الله عليه و سلم لست ممن يصنعه خيلاء

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেছেন, যে ব্যক্তি পরিধানের কাপড় অহংকার বশতঃ ( গিড়ার নিচে) ঝুলিয়ে চলে, আল্লাহ পাক ক্বিয়ামতের দিন তার দিকে (রহমতের সাথে) তাকাবেন না। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! " আমার সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু'প্রান্তের একদিক ঝুলে পড়ে, যদি না আমি তাতে গিরা দেই। তখন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত নন, যারা অহংকার বশত তা করে।"

দলীল-
√ সহীহ বুখারী শরীফ, কিতাবুল লিবাস অধ্যায়। ২য় খন্ড ৮৬০ পৃষ্ঠা।

উক্ত বিশুদ্ধ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিস মুল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অত্র হাদীস শরীফে

ان احد شقي ازاري يسترخي الا ان اتعاهد ذلك منه
দ্বারা সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু'প্রান্তের একদিক" বুঝানো হয়েছে, যা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার পরিধানে ছিলো।"

দলীল-
√ জামউল ওসায়িল ফি শরহে শামায়েল ১ম খন্ড ২১৬ পৃষ্ঠা।

বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফিজে হাদীস হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হাফিজে হাদীস হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

قوله (فقال ابوبكر) هو الصديق (ان احد شقي ازاري) كذا بالتثنية للنسفي والكشميهني ولغيرهما شق با لافراد والشق بكسر المعجمة الجانب ويطلق ايضا علي النصف

অর্থ: মুছান্নিফের উক্তি ( হযরত আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন) যিনি ছিদ্দীক্ব তথা চরম সত্যবাদী ( নিশ্চয়ই আমার সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু'প্রান্তের একদিক) আল্লামা নাসাফী এবং কাশমীহানী রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা شقي শব্দটি দ্বিবচনের সহিত পড়েছেন। অন্যান্যগন شق শব্দটি شين বর্নে যের দিয়ে একবচন হিসেবে পড়েছেন। যার অর্থ হলো দু'প্রান্তের একপ্রান্ত। দু'দিকের অর্ধাংশ।"

দলীল-
√ ফতহুল বারী শরহে বুখারী ১০ম খন্ড ২৫৫ পৃষ্ঠা।

√ উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ২১তম খন্ড ২৯৫ পৃষ্ঠা।

উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা কারক হাফিজে হাদীস আল্লামা কুস্তালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

( ان احد شقي) ..... اي احد جنبي

অর্থ: ( নিশ্চয়ই সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু'প্রান্তের একদিক) .... অর্থাৎ ফাঁড়া লুঙ্গির একদিক।"

দলীল-
√ ইরশাদুস সারী শরহে বুখারী ৮ম খন্ড ৪১৭ পৃষ্ঠা।

সবাই খুব মন দিয়ে লক্ষ্য করুন, হাদীস শরীফে বলা হয়েছে হযরত সিদ্দীকে আকবর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার লুঙ্গির দু'প্রান্ত। সিলাইবিহীন বলেই দু'প্রান্ত হওয়া সম্ভব। কারন লুঙ্গিতে যদি সিলাই করা থাকে তবে কোন প্রান্ত সৃষ্টি হতে পারে না। যেহেতু হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সিলাই বিহীন লুঙ্গি পরিধান করেছেন সেহেতু উনার লুঙ্গির দুটি প্রান্ত সৃষ্টি হয়েছে এবং এক প্রন্ত ঝুলেও পড়েছে। সূতরাং প্রমান হলো সিলাইবিহীন লুঙ্গি পরিধান করাটাই সুন্নতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সুন্নতে ছাবাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু।

সুন্নতী লুঙ্গির পরিমাপ :

হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সেলাইবিহীন লুঙ্গ মুবারক ছিলো লম্বায় সাড়ে চার হাত এবং প্রস্থ আড়াই হাত। সেটা কিতাবে বর্নিত আছে-

قال الشهاب ابن حجر الهيثمي وكان ازاره صلي الله عليه و سلم اربعة اذرع وشبرا في عرض ذر اعين وشبر

অর্থ: হযরত ইমাম শিহাব ইবনে হাজর হাইছামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিলাইবিহীন, ফাঁড়া লুঙ্গি মুবারক ছিল সাড়ে চার হাত লম্বা এবং আড়াই হাত প্রস্থ।"

দলীল-
√ শরহে ইমাম আব্দুর রউফ মানাবী মিছরী ১ম খন্ড ২১৬ পৃষ্ঠা।

√ তাবাকাতে ইবনে সা'দ।
√ মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলাশ শরহে শামায়িলে মুহম্মদীয়া।

শুধু তাই নয়, ازار "ইযার" মৃত ব্যক্তির কাফনের সিলাইবিহীন লুঙ্গী অর্থেও হয়। কিতাবে ফাঁড়া শব্দের আরবী উল্লেখ ছাড়াই শুধু "ইযার" শব্দ দ্বারা ফাঁড়া বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি বুঝানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব "আল মুখতাছারুল কুদুরীতে" বর্নিত আছে-

والسنة ان يكفن الرجل في ثلاثة اثواب ازار .قميص ولفافة........ وتكفن المراة في خمسة اثواب ازار وقمص وخرقة تربط بها ثدياها ولفافة

অর্থ: সিলাইবিহীন ইযার বা লুঙ্গি, ক্বামীছ, ও লিফাফা। এ তিন কাপড় দ্বারা পুরুষের কাফন দেয়া সুন্নত। .... আর স্ত্রী লোককে পাঁচটি কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। যথা- সিলাইবিহীন ইযার, ক্বামীছ, খিমার বা ওড়না, খিরক্বা বা সিনাবন্ধী ও লিফাফা।"

দলীল-
√ মুখতাছারুল কুদুরী ৪১ পৃষ্ঠা।
√ কিফায়া।
√ দুরুল মুখতার।
√ মারাকিউল ফালাহ।

সূতরাং আভিধানিক ভাবে ازار অর্থ চাদর। যা সবসময় সিলাইবিহীন থাকে, চাদর কখনো সিলাইযুক্ত হয়না। ازار অর্থ দোপাট্টা যা মহিলারা পরিধান করে থাকে। সেটাও সিলাইবিহীন হয়। অনুরূপভাবে লুঙ্গি, তহবন্দকেও আরবীতে ازار "ইযার" বলা হয়। তাও সেলাইবিহীন। মূলতঃ ইযার অর্থের সবকিছুই সেলাইবিহীন।
পৃথিবীর নির্ভরযোগ্য কোন লুগাতের কিতাবে "ইযার" অর্থ সিলাইযুক্ত বলা হয় নাই। বরং সিলাইবিহীন বা ফাঁড়া লুঙ্গি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুগন সিলাইযুক্ত লুঙ্গি পড়েছেন এমন মর্মে একটা দুর্বল বর্নার হাদীস শরীফও কেউ দেখাতে পারবে না।

সূতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে যেসকল বিষয় প্রমানিত হলো-

(১) সিলাইবিহীন লুঙ্গি পরিধান করা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন পরিধান করেছেন।

(২) লুঙ্গি সুতি কাপড়ের হওয়া খাছ সুন্নত।

(৩) লুঙ্গি নিছফু সাক্ব থেকে শুরু করে টাখনুর উপর পর্যন্ত স্থানের মধ্যেই ঝুলানো খাছ সুন্নত।

(৪) লুঙ্গি সাড়ে চার হাত লম্বা এবং আড়াই হাত চওড়া হওয়া সুন্নত।

(৫) পুরুষদের টাকনুর নিচে ক্বামীছ লুঙ্গি ইত্যাদি পরিধান হারাম আর মহিলাদের জন্য পায়ের পাতা ঢেকে রাখা ফরজ।

দলীল সমূহ -

(১) সহীহ বুখারী ২/৮৬০
(২) সহীহ মুসলিম শরীফ ২/১৯৫
(৩) সুনানে নাসাঈ ২/২৯৮
(৪) সুনানে আবু দাউদ ২/২১০
(৫) সুনানে ইবনে মাজাহ ২৬৪ পৃষ্ঠা ।
(৬) সুনানে তিরমীযি শরীফ ।
(৭) ফতহুল বারী শরহে বুখারী ১০/২৫৫
(৮) উমদাতুল ক্বারী ২১/২৯৫
(৯) ইরশাদুস সারী ৮/৪১৭
(১০) শরহুল কিরমানী।
(১১) তাইসীরুল বারী।
(১২) শহহুন নববী।
(১৩) শরহুল উবাই ওয়াস সিনুনী।
(১৪) আল মুফহিম।
(১৫) ফতহুল মুলহিম।
(১৬) বজলুল মাজহুদ।
(১৭) আইনুল মা'বুদ।
(১৮) তুহফাতুল আওয়াজীহ ৩/৪৮
(১৯) আরিদ্বাতুল আওয়াজীহ।
(২০) উরফুশ শাজী।
(২১) শামায়িলুত তিরমীযি।
(২২) জামউল ওয়াসিল।
(২৩) শরহে আব্দুর রউফ মানাবী মিছরী।
(২৪) আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলাশ শামায়িলে মুহম্মদীয়া।
(২৫) খাছায়িলে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
(২৬) মিশকাতুল মাছাবীহ।
(২৭) মিরকাত শরীফ।
(২৮) আশয়াতুল লুময়াত।
(২৯) লুময়াত।
(৩০) শরহুত ত্বীবি।
(৩১) আত তালীকুছ ছাবীহ।
(৩২) মুযাহিরে হক।
(৩৩) মিরয়াতুল মানাযীহ।
(৩৪) মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল।
(৩৫) মুয়াত্তা ইমাম মালেক।
(৩৬) মুয়াত্তায়ে ইমাম মুহম্মদ ।
(৩৭) সুনানুদ দারেমী।
(৩৮) ওয়াফা।
(৩৯) কিতাবিল আখলাকিল মুস্তফা।
(৪০) ত্ববাকাত ইবনে সা'দ।
(৪১) আল মুখতাছারুল কুদুরী।
(৪২) হিদায়া।
(৪৩) ফতহুল ক্বদীর।
(৪৪) কিফায়া।
(৪৫) শরহুল ইনায়া।
(৪৬) আইনী।
(৪৭) শরহে বিকায়া।
(৪৮) দররুল মুখতার।
(৪৯) রদ্দুল মহতার শামী।
(৫০) নুরুল ঈযাহ।
(৫১) মারাকিউল ফালাহ।
(৫২) ফতোয়ায়ে আলমগীরী।
(৫৩) লিসানুল আরব।
(৫৪) লুগাতে হীরা।
(৫৫) আল মু'জামুল ওয়াজীয।
(৫৬) আল মিছবাহুল লুগাত।
(৫৭) মুখতাছারুল ছিহাহাহ।
(৫৮) জামে উর্দূ লুগাত।
(৫৯) ফরহঙ্গে আমেরা।
(৬০) ফরহঙ্গে জাদীদ।
(৬১) ফীরুযুল লুগাত।
(৬২) মিছবাহুল লুগাত।
(৬৩) আল মুনজিদ ফিল লুগাত।
(৬৪) বয়ানুল লিসান।
(৬৫) লুগাতে কেশওয়ারী।
(৬৬) আল কামুসুল ইছতিলাহীল জাদীদ।
(৬৭) আল কামুসুল মাদারিসী।
(৬৮) আল মানার।
(৬৯) আল কামুসুল মুহীত।
(৭০) আল কাওছার। ইত্যাদি !!!

বিঃদ্রঃ কিছু লোক নাকি দশ বছর গবেষনা করেও সিলাইবিহীন লুঙ্গির অস্তিত্ব খুঁজে পায় নাই। তারা খুঁজে পাবে না এটাই স্বাভাবিক। মূর্খ যদি নিজেকে গবেষক পরিচয় দেয় তবে তার গবেষনায় এসব সহজ এবং স্পষ্ট জিনিস খুঁজে না পাওয়াই স্বাভাবিক

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন