মূলত বর্তমানে এই
কনসেপ্টটা ক্লিয়ার হওয়া দরকার। সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ বা খুশি পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ
শরীফ দ্বারা আমরা মূলত কি বুঝি। যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয় আপনি কি নবীজী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে খুশি কিনা? এই প্রশ্নের জবাবে মনে হয়না কেউ বলবে সে খুশি নয়। অর্থাৎ এক
কথায় সবাই খুশি। যদি খুশি হনই তবে সেটা প্রকাশ করতে অসুবিধা কোথায়?
মহান আল্লাহ পাক বলেন, হে আমার হাবীব আপনি বলে দিন মহান আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ ও রহমত তথা আপনাকে পেয়ে যেন তারা খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশই সবচাইতে উত্তম যা তারা জমা করে রাখে। (সূরা ইউনুছ ৫৮)
প্রশ্ন আসতে পারে
কিভাবে খুশি প্রকাশ করবো? খুশি প্রকাশ করার ধরনটাই বা কি? কিভাবেই বা সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন করবো?
এ ফয়সালাও আল্লাহ পাক দিয়ে দিয়েছেন,
অর্থ : (হে আমার
হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীস্বরূপ পাঠিয়েছি; যেন (হে মানুষ!) তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালার উপর এবং উনার
রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ঈমান আনো এবং তোমরা উনার খিদমত করো ও
তা’যীম-তাকরীম করো এবং ছানা-ছিফত প্রসংশা করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে সদা
সর্বদা। (সূরা ফাতাহ : আয়াত শরীফ ৮, ৯)
অর্থাৎ খুশি প্রকাশ
করা বা সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন করার তিনটা অবস্থা দেখা যাচ্ছে,
১) হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত করা।
১) হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত করা।
২) হাবীবুল্লাহ
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীম বা সম্মান করা।
৩) হাবীবুল্লাহ
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা ছিফাত প্রশংসা করা।
কেউ কি এই
বিষয়গুলোর সাথে দ্বিমত পোষন করাতে পারবে? কষ্মিনকালেও নয়।
১ম বিষয়টা হচ্ছে খিদমত করা, প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে খিদমত করবে? হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেতো সরাসরি পাওয়া
যাচ্ছে না। একটা সময় ছিলো হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন সরাসরি উনার
খিদমত করে নিজেরা ধন্য হয়েছেন। উনার আর্থিকভাবে হোক কোন মাধ্যমে হোক খিদমতে
অংশগ্রহন করেছেন। আমাদের জন্য কি ব্যবস্থা? আমাদেরও খিদমত করে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সাথে সর্ম্পক স্থাপন করতে হবে। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে বর্তমানেও আমাদের আর্থিকভাবে খরচ করতে হবে, লিখনীর মাধ্যমে লিখতে হবে, বক্তব্যের মাধ্যমে বলতে হবে। ইসলাম বিদ্বেষী কোন বক্তব্যের জবাব দেয়া সেটা
কলমী হোক বা শাস্তি হোক সেটাও এর আওতাভুক্ত, একজন মানুষকে হিদায়েতের ব্যবস্থার মাধ্যমে তা করা যায়।
২য় বিষয় হচ্ছে তাযীম তাকরীম করা, আল্লাহ পাক বলেছেন হে আমার হাবীব আপনার যিকিরকে আমি উচ্চ
করে দিয়েছি। (সূরা ইনশিরাহ ৪) কতটা উঁচু ? তার কি কোন সীমা মানুষের জানা আছে? হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উনার সাথে
স্পর্শযুক্ত ধুলো বালির মর্যাদাও আরশ কুরসির চাইতেও উত্তম। তাহলে উনার সম্মান কত? সেকারনে সর্বাবস্থায় হাবীবুল্লাহু হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাযীম করা সম্মান করা ঈমানের দাবি।
৩য় বিষয় হচ্ছে সানা সিফত প্রশংসা করা, স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজে দায়েমীভাবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সলাত পাঠ করে। উনার প্রশংসা বর্ণনা করেন। কুরআন
শরীফের আয়াতে আয়াতে প্রশংসাবানী। আর আমাদেরকেও সে কাজ করার জন্য প্রেরন করা হয়েছে।
সর্বাবস্থায় উনার ছানা ছিফত প্রশংসায় মশগুল থাকতে হবে। কাজে কর্মে তা প্রকাশও করতে
হবে।
উপরোক্ত এই তিনটা কাজই হচ্ছে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ বা খুশি প্রকাশ করার মাধ্যম। আশা করি পৃথিবীর কেউ এ বিষয়ে দ্বিমত পোষন করবে না। করার কথাও না। আমাদের প্রতিটা কাজেই থাকবে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্মরন, আলোচনা, ইত্তেবার বহিঃপ্রকাশ। প্রতিটা কাজে কর্মে, ওঠা বসা, চলা ফেরা, ঘর সংসার সব অবস্থায়। উনাকে পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করতে হবে সদা সর্বদা।
আপনার আমল, আখলাক নিয়তে সদা
সর্বদা এই খুশি প্রকাশের বিষয় থাকতে হবে। দৈনন্দিন জীবেনে আপনি যে কাজটাই করে সেটা
শুকরিয়া আদায় করে করতে হবে। আজকে আমরা যদি হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না পেতাম তাহলে ইসলাম পেতাম না, কুরআন শরীফ পেতাম না, জান্নাতের সুসংবাদ পেতাম না কোন কিছুই পেতাম না। তাই উনাকে পাওয়ার কারনে সব
বিষয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে খুশি প্রকাশ করে শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে করতে হবে। আর এটাই
মূলত সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ। আর আমরা এটাই করি।
অনেকে বলতে পারেন আপনারা যদি বছরে সবসময়ই সাইয়্যিদুল আইয়াদ
শরীফ পালন করেন তবে বছরে একটা দিন নির্দিষ্ট করে অনুষ্ঠান করেন কেন?
এর উত্তর কিন্তু মহান আল্লাহ পাক নিজেই দিয়েছেন, আল্লাহ পাক বলেন “আমার বিশেষ দিবস সমূহ তাদের স্মরন করিয়ে
দিন। এটা ধৈর্য্যশীল শোকরগুজার বান্দাদের
জন্য নির্দশন।” (সূরা ইব্রাহিম ৫)
সব বিশেষ দিবসের মধ্যে অন্যতম বিশেষ দিবস
যেদিন নবীজী পৃথিবীতে আগমন করেন। বিলাদত শরীফ-এর দিনে এমন এক মহান স্বত্ত্বার আগমন
ঘটেছে,
যিনি না হলে কায়িনাতের কিছুই সৃষ্টি হতো না।
সৃষ্টি হতো না কোনো পিতার, না কোনো সন্তানের। সেই মহান নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমন বা
বিলাদত শরীফ-এর শুভক্ষণে খুশিতে আলোড়িত হয়েছিলো পবিত্র মক্কা শরীফ-এর কঙ্করময়
মরুভূমি। মহা উল্লাস আর আনন্দ প্রকাশ করেছিল হারাম শরীফও। উনার বিলাদত শরীফ-এ
আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছিলেন আসমানের ফেরেশতাকুল। সেই দিবসে খুশি প্রকাশ করা
বিশেষ ভাবে স্মরন করা, সলাত সালাম, দরুদ শরীফে , আলোচনায় মশগুল হওয়াতো ঈমানদারেরই আলামত।
হাদীছ শরীফে আছে, আশুরার দিন রোজা রাখার বিষয়ে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইহুদীদের জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বললো এই দিন আল্লাহপাক হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও
উনার কওম সহ পানির উপর দিয়ে রাস্তা করে পার করিয়ে নিয়েছেন। আর ফিরাউনকে ডুবিয়ে
মেরেছেন। একারনে শুকরিয়া স্মরূপ হযরত মুসা আলাইহিস সালাম রোজা রাখতেন আমরাও রাখি।
তখন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি এ বিষয়ে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনার আরো বেশি হক্বদার
ও নিকটবর্তী। তখন তিনি নিজেও রোজা রাখলেন ও সবাইকে রাখতে বললেন। (মুসলিম শরীফ) এই
হাদীছ শরীফ থেকে আমরা দেখি বিশেষ একটা দিনকে স্মরন করে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে সেটা পালন করেছেন। স্মরন করেছেন। তাহলে সকল বিশেষ
দিনেরও বিশেষ দিন যেদিন উনার আগমনের দিন সেদিন বিশেষভাবে খুশি প্রকাশ করলে সমস্যা
কোথায়?
আশা করি কোন বিবেকবান ব্যক্তি উপরোক্ত বিষয়ে দ্বিমত পোষন
করতে পারে না। তা যদি না পারে তাহলে তাদের পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ নিয়ে
বিরোধীতা করা কি ঠিক হবে?
যারা বিরোধীতা করে তাদের বিরোধীতা আর আমাদের কিছু কথা:
বর্তমানে সুন্নী নাম ধারী কিছূ গ্রুপ আছে তারা পবিত্র মীলাদ শরীফের নামে ঢোল তবলা, হারমোনিয়াম বাজায়। গান গায়, বেপর্দা মহিলা দিয়ে নাচ গান করে, কেউ আবার নেশা করে। এদের বদ আমল দেখে এক শ্রেনীর লোক ভাবে যারা ঈদে মীলাদ পালন
করে তারা বুঝি সবাই এমন। নাউযুবিল্লাহ। মূলত বিষয় হচ্ছে এই সকল লোক তারা কখনো
সুন্নী হতে পারে না। যদি সুন্নী হতোই তারাতো নবীজীর আদেশের অবমাননা করে নাচ,গান, বেপর্দা, নেশা এসব করেত পারতো না। এরাই কাফিরদের ষড়যন্ত্রের একটা ফল। কাফিররা এদের মাধ্যমে
পবিত্র আমলকে বির্তকিত করতে চায়। তাই এদের বেশরা আমলের প্রতিবাদ করুন কিন্তু মূল
আমলের নয়। প্রকৃত সুন্নীরা কখনো এধরনের বিদয়াত বেশরা কাজ করে না। তাই মাথা ব্যাথা
হলে মাথা না কেটে মাথা ব্যাথার ওষুধ খাওয়াটাই কাজের কথা। সূতরাং ভন্ডদের ভন্ডামীর
জন্য পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফের বিরোধীতা করবেন না। বরং ভন্ডামী বন্ধের
ব্যাপারে ব্যবস্থা নিন।
তাই
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফের বিরোধীতা করার আগে সার্বিক বিষয় বুঝে করা উচিত। কারন এই
বিরোধীতা সরাসরি ইসলামের বিরোধীতার নামান্তর। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতার নামান্তর। যা কখনোই একজন মুসলমান করতে পারে না।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন