দ্বীন ইসলামে প্রতিটি আমলের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। শর্ত পূর্ণ না করলে কোন আমলই কবুলকৃত হয় না। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল সব ক্ষেত্রেই অবস্থা অনুযায়ী কিছু শর্ত থাকে। শর্তের উপর নির্ভর করেই আমল সমূহ করতে হয়। শর্ত ভঙ্গ হলে আমলও বরবাদ হয়ে যায়। নিম্নে কিছু দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে-
- ধরুন নামাজ ফরজ হওয়ার জন্য ওয়াক্ত শর্ত। অর্থাৎ আপনি যোহরের ওয়াক্তে যোহরের নামাজ আদায় করছেন, যোহরের নামাজ শেষে আপনার যদি ইচ্ছে হয় একবারে আছরের নামজটাও পড়ে ফেলার। এবং ইচ্ছা অনুযায়ী যদি যোহর ওয়াক্তেই আছর পড়ে ফেলেন তবে কি আছরের নামাজ আদায় হবে? হবে না। কারন প্রতিটা নামাজের জন্য তার নিজস্ব ওয়াক্ত হওয়াটা হচ্ছে শর্ত।
- আমরা জুমুয়ার নামাজ শুক্রবার পড়ে থাকি। কারন জুমুয়া নামাজটা ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা জুমুয়ার দিন হিসেবে শুক্রবার নির্দিষ্ট। সেই হিসেবে জুমুয়ার নামাজ পড়ার জন্য শুক্রবার হওয়াটা শর্ত। কেউ যদি জুমুয়ার নামাজ বৃহস্পতি অথবা অন্য কোন বারে পড়ে তবে কি নামাজ হবে ? হবে না। কারন শর্ত ভঙ্গের জন্য মূল আমল বাতিল গন্য হবে।
- ধরুন প্রচন্ড শীত পরেছে। রাতে আপনার গোসল ফরজ হয়ে গিয়েছে। এদিকে আপনাকে ফজরের নামাজ পড়তে হবে, আপনি চিন্তা করলেন এত শীতে গোসল করে কি হবে কোনরকম ওযুটা করেই নামাজ সেরে ফেলি। এঅবস্থায় আপনার নামাজ কি হবে ?
কখনোই হবে না। কারন নামাজ কবুল হওয়ার জন্য শরীর পাক থাকা হচ্ছে শর্ত। এ শর্ত পুরন না করলে নামাজ হবে না, কেউ নামাজ পড়লে তার ঈমান যাবে।
- রোজার শর্ত হচ্ছে দিনের রোজা থেকে কোন কিছু না খাওয়া। এখন কেউ যদি চালাকি করে হাই এনার্জির কোন স্যালাইন শরীরে সুঁচের মাধ্যমে প্রবেশ করায় তবে কি রোজা হবে ?
হবে না, কারন কোন কিছু যদি রোজা থেকে পাকস্থলি এবং মস্তিষ্কে পৌঁছায় সেটা যেকোন রাস্তায় হোক না কেন তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারন শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ না করানোই হচ্ছে শর্ত। শর্ত ভাঙ্গলে রোজাও ভেঙ্গে যাবে।
- আপনার যাকাত ফরজ হয়েছে, আপনি যাকাত দিবেন। কিন্তু ধরেন সে যাকাতের টাকা সুদের লেনদেন করে কামানো হয়েছে বা হারাম উপায়ে কামানো হয়েছে। ওই হারাম সুদের টাকা নেছাব হলেও কি ওটার যাকাত হবে ? যাকাতের জন্য টাকা হালাল হওয়া শর্ত। হারাম টাকায় নেছাব বানালেও যাকাত আদায় হবে না, কারন হালাল হওয়ার শর্ত ভঙ্গ হয়েছে।
- কোন মহিলা প্রচুর অর্থ আছে। সেই হিসাবে তার উপর হজ্জ ফরজ হয়েছে। কিন্তু উক্ত মহিলার কোন মাহরাম নেই। যেহেতু মহিলাদের হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত হচ্ছে মাহরাম থাকা। পর্যাপ্ত অর্থ সম্পদ থাকার পরও মাহরাম না থাকার কারনে মহিলার উপর হজ্জ ফরজ থাকবে না। কারন তার হজ্জ করার জন্য মাহরামের শর্ত অনুপস্থিত ।
- কোন ব্যক্তির টাকা পয়সা, সুস্থতা সবই আছে। কিন্তু পথ এবং পাথেয়ের নিরাপত্তা নেই, এবং জালিম সরকার দ্বারা শরীয়তের আমল বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা। সে ক্ষেত্রে কি তার হজ্জ হবে? না হবে না। কারন হজ্জ ফরজ হওয়ার জন্য পথ এবং পাথেয়ের নিরাপত্তা থাকা এবং জালেম বাদশার জুলুম মুক্ত হওয়া শর্ত। এখন সর্বোচ্চ পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া, যদি হজ্জ করতে গিয়ে ঈমান আমল, তাকওয়া হুমকীর সম্মুখীন হয় এবং জালিম সরকারের জুলুমের (শারীরিক/আমলি/আক্বীদা) স্বীকার হতে হয় তার প্রতিও হজ্জ ফরজ থাকে না। যেহেতু উক্ত শর্ত ভঙ্গ হয়ে যায়।
- প্রতিটি আমল কবুল হওয়ার জন্য বিশুদ্ধ আক্বীদা থাকা শর্ত। কারো আক্বীদায় ত্রুটি আছে কিন্তু সে প্রচুর আমল করে। এ আমলের কি কোন মূল্য থাকবে ? উদাহরণ- ইবলিশ,কাদিয়ানী, শিয়া, রাফেজী ইত্যাদি। যেহেতু শর্ত হচ্ছে আক্বীদা বিশুদ্ধ থাকা তাই বদ আক্বীদা পোষন করে আমল কবুল হবে না। কারন মূল শর্ত আক্বীদা ঠিক রাখা সেটা পুরন হচ্ছে না।
এরকম সকল আমলই শর্তের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রতিটা আমলই হচ্ছে এক একটা চুক্তির মত। প্রতিটা চুক্তিই নির্দিষ্ট কিছু শর্তের উপর প্রতিষ্ঠিত। যদি শর্ত ভঙ্গ করা হয় তবে চুক্তিও ভেঙ্গে যায়। যখন শর্ত পালন করা হয় তখন চুক্তিও সফলভাবে সম্পাদিত হয়।
আল্লাহ পাক আমাদের হাক্বীকত বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন !!!
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন