শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আদার ব্যাপারী হাসান মাহমুদের মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব


হাসান মাহমূদ নাম। ওয়ার্ল্ড মুসলিম কংগ্রেসের উপদেষ্টা দাবি করলেও তার তিন হাত দেহে ইসলামের চিহৃ নাই। রাস্তায় মরে পরে থাকলে প্যান্ট খুলে চেক না করে বোঝার উনায় নাই তার প্রকৃত পরিচয়।অথচ সে ফতোয়া দিচ্ছে মূর্তি ও ভাস্কর্য হারাম নয়। ইসলাম বিদ্বেষী মিডিয়া বিডিনিউজ তার একটা মিথ্যায় ভরপূর লেখা পাবলিশড করেছে। তারা এই হাদীস শরীফ ও ইতিহাস বিকৃত লেখার খন্ডন করা ঈমানী দায়ীত্ব বলে মনে করি। (তার লেখার লিংক)

এই লেখা থেকে কয়েকটা পয়েন্ট বের হয়ে আসে-
১) উম্মুল মু’মীনিন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার একটা হাদীস শরীফ দিয়ে বলেছে, তিনি পুতুল নিয়ে খেলেছেন। নাউযুবিল্লাহ।
২) হযরত রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবা শরীফের দেয়ালে অংকিত (হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম)-এর প্রতিকৃতি বা প্রতিচ্ছবি মুছে ফেলতে নিষেধ করেন।
৩) কোরানের নিষেধ মূর্তিপূজা, উপাসনা-আরাধনা-ইবাদত সম্পর্কে, যে মূর্তি সৌন্দর্য্য বাড়ায়, সুসজ্জিত করে সে ব্যাপারে কোরান অনুমতি দেয়।

এবার আসুন বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা যাক:
১ নং জবাব: আছ ছহীহুল বুখারী কিতাবুল আদব বাবুল ইনবিসাত ইলান নাস ২য় খ- ৯০৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كنت العب بالبنات عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان لى صواحب يلعبن معى وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا دخل ينقمعن منه فيسربهن الى فيلعبن معى.
অর্থ: হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে পুতুল নিয়ে খেলতাম। আমার সাথীরাও আমার সাথে খেলত। যখনই সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসতেন, তখনই তারা পর্দার আড়ালে লুকাতো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে আমার কাছে পাঠাতেন, তাই আবারো তারা আমার সাথে খেলত।

মূর্তি, ছবি বা ভাস্কর্যকে জায়িয প্রমাণ করতে গিয়ে উক্ত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করা জিহালত বৈ কিছুই নয়। কারণ উক্ত হাদীছ শরীফখানা মানসূখ হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত। যেমন উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় শরহুল কিরমানী আলাল বুখারীতে উল্লেখ আছে-
واستدل بالحديث على جواز اتخاذ المعتبة من اجل لعب البنات بهن ... انه منسوخ بحديث الصور.
অর্থ: শিশুদের জন্য খেলনা পতুল বা মূর্তি ব্যবহার করাকে বৈধ প্রমাণ করতে গিয়ে কেউ কেউ উক্ত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে। ... অথচ উক্ত হাদীছ শরীফখানা ছবি ও মূর্তি সম্পর্কিত অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা মানসূখ হয়ে গেছে। অর্থাৎ এর হুকুম এখন আর বলবৎ নেই।(হাশিয়াতুল বুখারী ২য় খ- ৯০৫ পৃষ্ঠা ৬নং হাশিয়াহ)

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, পুতুল নিয়ে খেলা সম্পর্কিত হাদীছ শরীফখানা সকলের মতেই মানসূখকেননা অসংখ্য হাদীছ শরীফে মূর্তি পুতুল ইত্যাদি তৈরি করতে সরাসরি নিষেধ করা হয়েছে এবং তৈরি করাকে কঠিন গুণাহের কারণ বলা হয়েছে। তাই শরীয়তের দৃষ্টিতে পতুল তৈরি করা এবং খেলাও নাজায়িয ও হারাম। আর খেলনা পুতুলও যদি কারো ঘরে প্রকাশ্যে থাকে তবে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করবে না ও নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।
অজ্ঞ হাসান মাসুদ নিশ্চয়ই নাসেখ মানসুখ সর্ম্পকে জানে না। তার জানার কথাও না। আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর নিতে গেলে এমনতো হবেই।

উছূলে শাস্ত্রে ناسخ (নাসেখ) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাফসীরবিদ ও হাদীছবিদগণ তথা সকল ইমাম-মুজতাহিদগণ বলেন, ناسخ (নাসেখ) منسوخ (মানসুখ)-এর জ্ঞানার্জন ব্যতীত কারো জন্য কুরআন শরীফের তাফসীর, হাদীছ শরীফের তাশরীহ এবং ফতওয়া প্রদান করা বৈধ নয়। যেমন, হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এক বিচারককে  উদ্দেশ্য করে বলেন,
 اتعرف الناسخ والمنسوخ قال لا قال على رضى الله تعالى عنه هلكت واهلكت.
 অর্থঃ- তুমি কি নাসেখ এবং মানসুখের পরিচয় করতে পার? বিচারক বললো না, তখন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তুমি নিজেও ধ্বংস তথা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছো এবং অন্যকেও ক্ষতিগ্রস্থ করেছো।(নাসিখূল কুরআন ১ম খ- ১০৫  পৃষ্ঠা)
 এ সম্পর্কে নাওয়াসিখুল কুরআন নামক কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে যে,

 لذا كان السلف الصالح يرى معرفة الناسخ والمنسوخ شرطا اهلية المفسر للتفسير والمحدث للحديث.
 অর্থঃ- এ কারণে  সলফে ছলিহীন তথা প্রথম যুগের ইমাম-মুজতাহিদগণ, হাদীছ ও তাফসীর শাস্ত্রবিদগণের জন্য নাসেখ ও মানসূখের পরিচয়ের জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে শর্তারোপ করেছেন।”      

উক্ত কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়,
 وقد كان الامام على بن ابى طالب وعبد الله بن عمر وعبد الله بن عباس رضى الله تعالى عنهم لايرضون لاحد ان يتحدث فى الدين الا اذا كان عارفا عالما بالناسخ والمنسوخ من القران.
 অর্থাৎ- ইমামুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবূ তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমাগণ এমন ছিলেন যে, দ্বীনের ব্যাপারে কেউ কোন মতামত পেশ করলে তাতে তাঁরা কোন প্রকার সম্মতি দিতেন না, তবে হ্যাঁ যদি সে ব্যক্তি পবিত্র কুরআনের নাসেখ ও মানসুখের ব্যাপারে পরিচয় করতে পারতো এবং জ্ঞান রাখতো, তাহলে তাতে তাঁরা রায় পেশ করতেন।

নাসিখুল কুরআন নামক কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়েছে,
 اوجب على العلماء وعلى المتعلمين على كافة المسلمين من علم الناسخ القران ومنسوخه.
 অর্থঃ- প্রত্যেক আলিম, মুতায়াল্লিম (ইল্ম অন্বেষণকারী) এবং সমস্ত মুসলমানগণের জন্য পবিত্র কুরআন শরীফের নাসেখ ও মানসুখের (ফরয পরিমাণ) জ্ঞানার্জন আবশ্যক।

ناسخ (নাসিখুন) ইস্মে ফায়িল এর একবচন। نسخ (নাস্খুন) মূলধাতু থেকে নির্গত। যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বদল করা, দূরীভূত করা, স্থলাভিষিক্ত করা, বাতিল করা, পরিবর্তণ করা, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি। তবে ناسخ (নাসিখুন) শব্দের অর্থ হচ্ছে ব্যাখাকারী।
 منسوخ (মানসূখুন) শব্দটি অনুরূপ نسخ (নাস্খুন) মূলধাতু থেকে উদগত। যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো, বদল করা, দূরীভূত করা, স্থলাভিষিক্ত করা, বাতিল করা, পরিবর্তণ করা, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি। তবে منسوخ (মানসুখ)-এর অর্থ হচ্ছে যা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।উল্লেখ্য, নাসখুন-এর অর্থ বিভিন্ন লুগাতে এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, النسخ (আন্ নাসখু) অর্থ الازالة (আল ইযালাহ) অর্থাৎ দূরীভূত করা। (আল ইতকান ৭৩২ পৃষ্ঠা, লিসানুল আরব, আল কামুস ইত্যাদি)

منسوخ (মান্সূখুন)-এর অর্থ হচ্ছে مشروح (মাশরুহুন্) অর্থাৎ যাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।  আর ইছতিলাহী বা শরয়ী অর্থে ঃ ناسخ (নাসেখ) ও منسوخ (মানসূখ)-এর বিভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে। যেমন, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
 الناسخ هو رفع الحكم الشرعى بدليل شرعى متاخر.
 অর্থঃ- পূর্ববর্তী শরয়ী হুকুমকে পরবর্তী  শরয়ী হুকুম দ্বারা ব্যাখ্যা করাকেই ناسخ (নাসেখ) বলে।” (নাওয়াসিখুল কুরআন)
আল আওনুল কবীরকিতাবে উল্লেখ আছে,
 الناسخ هو بيان انتهاء حكم شرعى بطريق شرعى متراخ عنه.
 অর্থাৎ- পূর্বের শরয়ী বিধানকে পরের কোন শরয়ী বিধান দ্বারা ব্যাখ্যা করাকেই নাসেখ বলা হয়।

কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে,
 الناسخ هو رفع الشارع حكما شرعيا بدليل شرعى متراخ عنه.
 অর্থাৎ- শরীয়ত প্রণেতা কর্তৃক কোন শরয়ী প্রমাণ দ্বারা পূর্বের কোন শরয়ী বিধানকে ব্যাখ্যা করাকে নাসেখ বলে।” (কানযুল ঈমান, খাযায়িনুল ইরফান, উছূলুশ শাশী) নাসেখ বা শারেহ ও মানসূখ বা মাশরূহ-এর মেছাল বা উদাহরণ মিযানুল আখবারগ্রন্থকারের ভাষ্য মতে, “পূর্ববর্তী কোন শরীয়তের বিধানকে পরবর্তী কোন শরয়ী বিধানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করাকে নাসেখ বলে।

অসংখ্য উদাহরন আছে, যেমন- বুখারী শরীফ মুসলিম শরীফের হাদীস শরীফে আছে, ইসলামের প্রথমিক সময়ে নামাজে কথা বলার বিধান ছিলো। সালাম দিলে জবাব দেয়ার বিধান ছিলো, কিন্তু পরবর্তীতে নামাজের কথা বলার হুকুম মানসূখ হয়ে গেছে। প্রথম দিকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করা হয়েছিলো, পরে সেটা মানসূখ হয়ে কবর যিয়ারত করার হুকুম জারী হলো। তদ্রুপ মদ হারাম হওয়ার বিষয়ও ধাপে ধাপে এসেছে।

اخبرنا عبد الرزاق قال: اخبرنا معمر عن الزهرى قال: اخبرنى القاسم بن محمد ان عائشة اخبرته ان رسول الله صلى الله عليه وسلم دخل عليها وهى مستترة بقرام فيه صورة تماثيل فتلون وجهه ثم اهوى الى القرام فهتكه بيده ثم قال: ان من اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يشبهون بخلق الله

নিশ্চয়ই হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁকে বলেছেন যে, একদা সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর (অর্থাৎ হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর) ঘরে প্রবেশ করলেন, ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন ঘরের ভিতর প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি পর্দা টানানো হয়েছে। ইহা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক রঙিন হয়ে গেল এবং তিনি পর্দাটির কাছে গিয়ে পর্দাটি নিজ হাত মুবারক দ্বারা ছিঁড়ে ফেললেন। অতঃপর তিনি বললেন: ক্বিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে যারা আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছবি তৈরি করে। (মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক- কিতাবুল জামি বাবুত তামাছীলি ওয়া মা জায়া ফীহি ১০ম খ- ৩৯৮ পৃষ্ঠা)

এই হাদীস শরীফ থেকে আমারা দেখতে পেলাম স্বয়ং সিদ্দীকা আলাইহিস সালাম উনার হাদীস শরীফ দ্বারাই প্রানীর ছবির প্রতিকৃতি হারাম হওয়া সাবস্ত্য হলো। যদি পুতুল সংশ্লিষ্ট হাদীস শরীফ মানসুখ না হতো তাবে কি এই হাদীস শরীফে প্রানীর ছবি যুক্ত পর্দা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের আযাবের কথা শুনাতেন? কি জবাব দেবে হাসান মাহমূদ নামক আদার ব্যাপারী?

২ নং জবাব: হাসান মাহমুদের মতে, হযরত রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবা শরীফের দেয়ালে অংকিত (হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম)-এর প্রতিকৃতি বা প্রতিচ্ছবি মুছে ফেলতে নিষেধ করেন।
মূলতঃ উক্ত বর্ণনাটি সীরাতু ইবনে ইসহাক থেকে আল আযরাকী (৮৩৪ খৃ) তার আখবার মক্কাগ্রন্থে লিখেন। এছাড়াও মিস্টার আলফ্রেড গিয়োম ইবনে ইসহাক ইংরেজিতে অনুবাদ করে তার নাম দেয় The life of Muhammad দা লাইফ অফ মুহম্মদ
এখানে মিঃ গিয়োম ইংরেজি অনুবাদে উক্ত বর্ণনাটি যে উল্লেখ করেছে আসলে তা ইবনে ইসহাকে নেই। এ থেকে উক্ত বর্ণনা গ্রহনীয় না হওয়ারই দাবি রাখে।
আল আযরাকীর আখবার মক্কা’-এর দুস্থানে বর্ণিত আছে, যা সনদসহ বর্ণনা করা হলো:
اخبرنى بعض الحجة عن مسافع بن شيبة بن عثمان ان النبى صلى الله عليه وسلم قال: يا شيبة امح كل صورة فيها الا ما تحت يدى قال قال فرفع يده عن عيسى بن مريم وامه.
অর্থ: আমাকে জনৈক দ্বার রক্ষক সংবাদ দিয়েছেন। তিনি মাসাফি ইবনে শাইবাহ ইবনে উছমান হতে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মক্কা বিজয়ের দিন) বলেছিলেন, হে শাইবাহ! আমার হাতের নিচের ছবিছাড়া অন্যসহ ছবি মুছে ফেল। রাবী বলেন: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত মুবারক সরিয়ে নিলে দেখা গেল হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস্ সালাম  ও তাঁর মাতা হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম-এর ছবি। (আখবার মক্কা লিল আযরাকী ১ম খ- ১৬৮ পৃষ্ঠা -প্রকাশনা দারুস সাক্বাফাহ আল মক্কাতুল মুকাররমাহ-১৯৯৬ ঈসায়ী)

حدثنى جدى عن سعيد بن سالم قال: حدثنى يزيد بن عياض بن جعدبة عن ابن شهاب ان النبى صلى الله عليه وسلم دخل الكعبة يوم الفتح ... ووضع كفيه على صورة عيسى بن مريم وامه عليها السلام وقال: امحوا جميع الصور الا ما تحت يدى فرفع يديه عن عيسى بن مريم وامه.
অর্থ: আমার দাদা বর্ণনা করেছেন, হযরত সাঈদ ইবনে সালিম হতে। তিনি বলেন: আমাকে ইয়াযীদ ইবনে আয়াদ্ব ইবনে জুদুবাহ বর্ননা করেছেন হযরত ইবনে শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে। তিনি বলেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন কাবা শরীফে প্রবেশ করলেন ..। তিনি হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর মাতা-এর ছবির উপর দুহাত রাখলেন এবং বললেন: সকল ছবি মুছে ফেলো তবে আমার দুহাতের নিচের ছবি ছাড়া।
তারপর তিনি হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর মাতার উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলেন। (উক্ত কিতাবের ১ম খ- ১৬৫ পৃষ্ঠা)

এবার আসুন আযরাক্বীর ১ম বর্ণনার পর্যালোচনা:
সনদে بعص الحجبةজনৈক দ্বাররক্ষকসম্পূর্ণ مجهول বা অজ্ঞাত বর্ণনাকারী। উছূলের নিয়ম মুতাবেক মাজহুল বা অজ্ঞাত বর্ণনাকারীর হাদীছ গ্রহনযোগ্য নয়।
মতনে উল্লেখ আছে يا شيبة হে শাইবাহ! অথচ এই ছাহাবী হযরত শাইবাহ বিন উছমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মক্কা বিজয়ের পরে হুনাইনের যুদ্ধের পর ইসলাম কবুল করেন। যিনি মক্কা বিজয়ের দিন মুশরিকদের পক্ষে অবস্থান করছিলেন এবং হুনাইনের যুদ্ধের পর ইসলাম কবুল করেন; তাকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক মূর্তি মুছে ফেলার নির্দেশ প্রদান করা একেবারেই কল্পিত কাহিনী ছাড়া কিছু নয়। (উসুদুল গাবাহ লি ইবনিল আছীর ২য় খ- ৫৩৪ পৃষ্ঠা- দারুশ শাব বৈরুত, তাহযীবুল কামাল লিল মিযযি ১২ খ- ৬০৪-৬০৭ পৃষ্ঠা মুয়াস্সাসাহ আর রিসলাহ বৈরুত, ১৯৯১ ঈসায়ী) অতএব উক্ত বর্ণনা গ্রহনযোগ্য নয়।

আযরাক্বীর ২য় বর্ণনার পর্যালোচনা:
উক্ত বর্ণনার সর্বশেষ বর্ণনাকারী হযরত ইবনে শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি তাবিয়ী ছিলেন। মক্কা বিজয়ের সময তার জন্মও হয়নি। আর এ বর্ননায় তার উপরের কোন ছাহাবী বর্ণনাকারী নেই। তাই তার এই হাদীছ مرسل মুরসাল। হাদীছ বিশারদগণের মতে, মুরসাল হাদীছ দুর্বল। (তাহযীবুত্ তাহযীব লিইবনি হাজার আসকালানী ৯ খ- ৫৪ পৃষ্ঠা)

প্রাণীর ছবি নাজায়িযের ছহীহ ও মশহুর হাদীছ শরীফগুলোর বিপরীতে উক্ত বর্ণনা মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়।
উক্ত হাদীছ শরীফের মধ্যে একজন রাবী চরম বিতর্কিত রয়েছে। তিনি হলেন ইয়াযীদ ইবনে আয়াদ্ব ইবনে জুদুরাহ।
এ সম্পর্কে বর্ণিত আছে,
قال مالك: كذاب. قال يحيى بن معين: ضعيف ليس بشىء قال احمد بن صالح: اظنه كان يضع للناس يعنى الحديث. قال البخارى ومسلم: منكر الحديث. وقال النسائى: عامة ما يروية غير محفوظ.
অর্থ: হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: উক্ত বর্ণনাকারী মিথ্যুক। হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, দ্বঈফ বা দুর্বল, যার গ্রহনযোগ্যতা নেই। হযরত আহমদ বিন ছালিহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: সে মানুষের জন্য হাদীছ বানাতো। হযরত ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা বলেন: ছিকাহ রাবীর বিপরীতে দূর্বল হাদীছ বর্ণনাকারী। হযরত ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: তার অধিকাংশ বর্ণনা ছিকাহ রাবীর বর্ণনার অনুকূলে নয়। (তাহযীবুল তাহযীব লিইবনি হাজার আসকালানী ১১ খ- ৩২৫ পৃষ্ঠা)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, আর আযরাকীর উক্ত বর্ণনা দুটি গ্রহণযোগ্য নয়। এ বর্ণনা দ্বারা হুকুম সাব্যস্ত করা মোটেই শরীয়ত সমর্থিত নয়। সূতরাং হাসান মাহমুদের ধোঁকা ধূতিস্যাত হলো। 

৩ নং আপত্তির জবাব: আদার ব্যাপারী হাসান মাহমুদ বলেছে, কোরানের নিষেধ মূর্তিপূজা, উপাসনা-আরাধনা-ইবাদত সম্পর্কে, যে মূর্তি সৌন্দর্য্য বাড়ায়, সুসজ্জিত করে সে ব্যাপারে কোরান অনুমতি দেয়।

আসুন এ বিষয়ে দ্বীন ইসলামের ফয়সালা দেখে নেয়া যাক,
১) হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহ তাআলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখার, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলার, এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়ে। (সহীহ মুসলিম হাদীস নম্বর ৮৩২)

২. হযরত আবুল হাইয়াজ আসাদী বলেন, হযরত আলী ইবনে আবী তালেব আলাইহিস সালাম আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে ওই কাজের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করব না, যে কাজের জন্য হযরত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? তা এই যে, তুমি সকল প্রাণীর মূর্তি বিলুপ্ত করবে এবং সকল সমাধি-সৌধ (বির্ধমীদের) ভূমিসাৎ করে দিবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে,... এবং সকল চিত্র মুছে ফেলবে। (সহীহ মুসলিম- হাদীস ৯৬৯)

৩. আলী ইবনে আবী তালেব রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে মদীনায় যাবে এবং যেখানেই কোনো প্রাণীর মূর্তি পাবে তা ভেঙ্গে ফেলবে, (মুসনাদে আহমাদ হাদীস ৬৫৭)

এই হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট জানা যাচ্ছে যে, যে কোনো প্রাণী ভার্ষ্কয্য মূর্তিই ইসলামে পরিত্যাজ্য এবং তা বিলুপ্ত করাই হল ইসলামের বিধান। আর এগুলো নির্মাণ করা ইসলামকে অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য।

৪. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
إِنَّ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُوْنَ.
প্রতিকৃতি তৈরিকারী (ভাস্কর, চিত্রকর) শ্রেণী হল ওইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে কিয়ামত-দিবসে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। (সহীহ বুখারী ৫৯৫০)

৫. উম্মুল মু’মীনিন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু  থেকে বর্ণিত, হযরত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ خَلْقًا كَخَلْقِيْ؟ فَلْيَخْلُقُوْا ذَرَّةً وَلْيَخْلُقُوْا حَبَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوْا شَعِيْرَةً.
এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) কিয়ামত-দিবসে আযাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা সৃষ্টি করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার কর! (সহীহ বুখারী  ৭৫৫৭, ৭৫৫৮)

৬. হযরত আউন ইবনে আবু জুহাইফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদ ভক্ষণকারী ও সুদ প্রদানকারী, উল্কি অঙ্কণকারী ও উল্কি গ্রহণকারী এবং প্রতিকৃতি প্রস্ত্ততকারীদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) উপর লানত করেছেন।  (সহীহ বুখারী  ৫৯৬২)
এই হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে,ভাস্কর্য নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন কবীরা গুনাহ। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা কুফরীরও পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

৭. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু  বলেন, (ফতহে মক্কার সময়) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়তুল্লাহয় বিভিন্ন প্রতিকৃতি দেখলেন তখন তা মুছে ফেলার আদেশ দিলেন। প্রতিকৃতিগুলো মুছে ফেলার আগ পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করেননি। (সহীহ বুখারী  ৩৩৫২)

প্রানীর মূর্তি, প্রতিকৃতি, ভাষ্কর্য হারাম হওয়া বিষেয়ে উম্মতের ইজমাও প্রতিষ্ঠাও হয়েছে, উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতেউল্লেখ আছে,
وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.

অর্থঃ তাওদ্বীহনামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরা গুাহর অন্তর্ভুক্ত।


হাসান মাহমূদ শ্রেনীর লোকরা হচ্ছে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যম। এরা বসে বসে এমন কথা প্রচার করে যে সাধারন মানুষ বিভ্রন্ত হয়। এরা যেহেতু কোন একটা মহলের দালালী করে সূতরাং এদের উদ্দেশ্য কি সেটা সহজেই বোঝা যায়। হাইকোর্টের সামনে মূর্তিকে প্রতিষ্ঠা করতেই তাদের আজ এত আয়োজন। সাধারন মানুষ এদের চিনে গেছে, এদের কোন ধোঁকাবাজী মানুষ গ্রহন করবে না।


1 comments:

  1. قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّـمَ بُعِثْتُ لِكَسْرِ الْـمَزَامِيْرِ وَالْاَصْنَامِ

    হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আমি বাদ্য-যন্ত্র ও মূর্তি ধ্বংস করার জন্যে প্রেরিত হয়েছি।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান শরীফ)

    উত্তরমুছুন