বিগত পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইয়া নবী, ইয়া রসূল বলার ব্যাপারে ক্বাওয়ায়িদ থেকে দ্বিতীয়
বিশ্লেষণ:
يا
نبى، يارسول،
يا حبيب
ওয়াকফ
হিসেবে ইয়া নবী, ইয়া রসূল, ইয়া হাবীব পড়া হয়। আসলে يا
نبى، يارسول،
يا حبيب যথাক্রমে يا
نبيى، يا
رسولى يا
حبيبى ছিলো। ক্বাওয়ায়িদ মতে ياء
متكلم বা ضمير এর প্রতি مضاف হয়েও نكرة (নাকিরাহ) বা অনির্দিষ্ট معرفة (মা’রিফা) বা নির্দিষ্টতে পরিণত হয়। যেমন, عبده উনার গোলাম, رسولى আমার রসূল ইত্যাদি।
আল্লামা
হযরত সিরাজুদ্দীন উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “হিদায়াতুন্ নাহু” নামক আরবী ক্বাওয়ায়িদের কিতাবে লিখেছেন,
والمعروف
باللام والمضاف
الى احدهما
اضافة معنوية
والمعرف بالنداء
অর্থ: “(معرفة ছয় প্রকারের মধ্যে)
চতুর্থ প্রকার হলো: আলিফ-লাম যোগে মা’রিফাহ। পঞ্চম প্রকার: ضمير বা সর্বনাম, اعلام বা নামবাচক বিশেষ্য, মুবহামাত বা ইসমে ইশারা, ইসমে মাওছূলা উনার দিকে اضافة
معنوية দ্বারা সম্বন্ধকৃতের
মাধ্যমে নির্দিষ্টতা বা মা’রিফাহ। ষষ্ঠ প্রকার: حرف
ندا (হরফে নিদা) দ্বারা মা’রিফাহ।”
হযরত
আল্লামা ইবনু হাজিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘কাফিয়া’ কিতাবের মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
ما
عرف باللام
او النداء
والـمضاف الى
احدها معنى
অর্থ: “(معرفة ছয় প্রকারের মধ্যে)
চতুর্থ প্রকার: যা আলিফ-লাম যোগ করে
নির্দিষ্ট করা হয়। পঞ্চম প্রকার: হরফে নিদা দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয় এবং ষষ্ঠ
প্রকার: যমীর, আলম, ইসমে ইশারা, মাউছূলা ও আলিফ-লাম যোগে মা’রিফার দিকেاضافة
معنوية এর মাধ্যমে নির্দিষ্টতা
বা মা’রিফাহ।”
অনুরূপ ‘মাবাদিউল আরাবিয়া’, ‘নাহুমীর’ ও অন্যান্য
ক্বাওয়ায়িদের কিতাবগুলোতে উল্লেখ আছে। তাইيا
نبى، يارسول،
يا حبيب এভাবে ইবারত হিসেবে পাঠ
করলে আলিফ-লাম ও আইয়্যূহা যোগ করে নিদা করা শুদ্ধ হবে না। কেননা, একে ياء
متكلم দ্বারা معرفة (নির্দিষ্ট) করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে الف لام ও ايها যোগ করা নিয়মের খিলাফ। যা
শুদ্ধ নয়।
এখানে
কেউ প্রশ্ন করতে পারে,
ياء
متكلم বাদ দিয়ে শুধু জযম দিয়ে
পড়া হয় কেন?
এর
জাওয়াব হলো, ياء
متكلم বাদ দিয়ে তার নিদর্শন
হিসেবে যের উনাক রাখার বিধান পবিত্র কুরআন শরীফ ও বিভিন্ন কিতাবাদিতেও রয়েছে।
সেই
লক্ষ্যে ياء متكلم কে বাদ দেয়া হয়েছে। যা
মূলত ক্বাওয়ায়িদ সম্মতই।
যেমন, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধে ربى শব্দের শেষে ياء
متكلم বাদ দিয়ে নিদর্শনস্বরূপ
যের রাখা হয়েছে।
واذ
قال ابرهيم
رب ارنى
كيف تحى
ا لموتى
অর্থ: “স্মরণ করুন, যখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম
তিনি বললেন, হে আমার রব! (অনুগ্রহপূর্বক)
আমাকে দেখান, কেমন করে আপনি মৃতকে জীবিত করবেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-২৬০)
قال
رب هب
لى من
لدنك ذرية
طيبة
অর্থ: “হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি প্রার্থনা করে বললেন, হে আমার রব! আপনার নিকট থেকে আমাকে পূতঃপবিত্র সন্তান
হাদিয়া করুন।” (পবিত্র সূরা আলে
ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮)
পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قال
رب فانظرنى
الى يوم
يبعثون
অর্থ: “শয়তান (মহান আল্লাহ পাক উনার সামনে) বললো, হে আমার মহান রব! আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ
দিন।”
(পবিত্র সূরা হিজর শরীফ : পবিত্র
আয়াত শরীফ ৩৬)
وقل
رب زدنى
علما
অর্থ: “বলুন, হে আমার মহান
রব! আমার ইল্ম বৃদ্ধি করুন।” (পবিত্র সূরা ত্ব-হা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)
وقل
رب اعوذ
بك من
همزت الشيطين
অর্থ: “বলুন, হে আমার মহান
রব! আমি আপনার কাছে (আমার উম্মত উনাদের ব্যাপারে) শয়তানের প্ররোচনা থেকে আশ্রয়
প্রার্থনা করছি।” (পবিত্র
সূরা মু’মিনুন শরীফ : পবিত্র আয়াত
শরীফ ৯৭)
পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قال
رب ان
قومى كذبون
অর্থ: “হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম তিনি বললেন, হে আমার মহান রব! আমার সম্প্রদায় তো (অন্যায়ভাবে) আমাকে
মিথ্যাবাদী বলছে।” (পবিত্র
সূরা শুয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৭)
رب
هب لى
من الصالحين
অর্থ: “(হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার
নিকট প্রার্থনা করলেন:) হে আমার মহান রব! আমাকে একজন সৎপুত্র দান করুন।” (পবিত্র সূরা ছফ্ফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)
এ রকম
সর্বমোট ৬৭ খানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ربى এর শেষে ياء
متكلم বাদ দেয়া হয়েছে।
অনুরূপভাবে নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফগুলোতেও ياء বাদ দিয়ে নিদর্শন হিসেবে
যের রাখা হয়েছে।
যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وما
خلقت الجن
والانس الا
ليعبدون
অর্থ: “আমার ইবাদত-বন্দেগী (মা’রিফত-মুহব্বত অর্জন) করার জন্য আমি জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি।” (পবিত্র সূরা যারিয়াত শরীফ : নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
ان
ارضى واسعة
فاياى فاعبدون
অর্থ: “(মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন) আমার যমীন
প্রশস্ত। অতএব, তোমরা আমারই ইবাদত-বন্দেগী করো।” (পবিত্র সূরা আনকাবূত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ)
পবিত্র
সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার ২৫ ও ৯২ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফে অনুরূপ নিয়মে উল্লেখ আছে।
তেমনিভাবে
এর বিপরীতও আমরা দেখতে পাই هى যমীরের সাথে هيه যুক্ত করে উচ্চাঙ্গের
ছন্দ মিলানো হয়েছে।
যেমন, পবিত্র সূরা ক্বারিয়াহ শরীফ উনার ১০, ১১ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
وما
ادراك ماهية
نار حامية
অর্থ: “আপনি জানেন তা (হাবিয়া দোযখ) কি? তা হচ্ছে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি।”
এখানে هيهআসলে ছিল هى যা যমীর বা সর্বনাম। هى সর্বনামের পরে ه অক্ষর যুক্ত করণের মধ্যে
লক্ষ-কোটি কারণ নিহিত রয়েছে। তন্মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী
বাক্যের সাথে মিল ও সাদৃশ্যতা বুঝানো। তাই هيه (হিয়াহ) শব্দ মুবারক
ইরশাদ হয়েছে।
অতএব
প্রমাণিত হলো, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে
পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণের সময়
يا
نبى، يا
رسول، يا
حبيب উনাদের ياء
متكلم কে বাদ দিয়ে নিদর্শন
হিসেবে যের দেয়া হয়েছে। ওয়াক্ফের সময় উক্ত যের উহ্য রেখে ইয়া নবী, ইয়া রসূল ও ইয়া হাবীব পড়া হয়; যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও ক্বাওয়ায়িদের ভিত্তিতেই ছহীহ।
হযরত
আল্লামা আবূ যায়েদ মুহম্মদ ইবনে আবুল খত্তাব আল ক্বারশী সঙ্কলিত “জামহারাতু আশয়ারিল আরব” নামক কিতাবে বিখ্যাত কবি আমর ইবনে সালিম আল খুযায়ী তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশংসায় বলেন,
يا
رب انى
ناشد محمد
صلى الله
عليه وسلم
+ حلف ابينا
وابيه الاتلدا
অর্থ: “হে আমার মহান রব! আমি সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে ছন্দাকারে কবিতা পাঠ করছি। যিনি আমার
সম্মানিত পিতা ও উনার প্রবীণ পিতার সঙ্গী।”
এখানে ربى ছিল, সহজতার জন্য ياء
متكلم কে হযফ করে নিদর্শন
হিসেবে যের দেয়া হয়েছে। যের বিশিষ্ট يا
رب এতে ওয়াক্ফ করলে ইয়া রব্
পড়তে হয়।
তেমনিভাবে
يا نبى،
يا رسول،
يا حبيب উনাদের শেষে যেياء ছিল তা বাদ দিয়ে নিদর্শন
হিসেবে যের দিয়ে পড়া হয়। এখানে ওয়াক্ফ করার কারণে ইয়া নবী, ইয়া রসূল, ইয়া হাবীব পড়া
হয়। যেমন,
يا رب (ইয়া রব) পড়া হয়।
হযরত
আল্লামা ইবনে হাজিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘কাফিয়া’ কিতাবে লিখেছেন,
حروف
النداء يا
اعمها وايا
وهيا للبعيد
واى والهمزة
للقريب
অর্থ:حروف
نداء (হুরূফে নিদা) يا আম বা ব্যাপক সম্বোধনের
জন্য ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ নিকটবর্তী, মধ্যবর্তীত ও দূরবর্তীর সকল সম্বোধনের জন্য,ايا ও هيا দূরবর্তীর জন্য এবং اى ও همزه নিকটবর্তী সম্বোধনের জন্য
ব্যবহৃত হয়।”
হযরত
আল্লামা হাফনী বেগ নাসিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা “দুরূসুল্ বালাগাহ্” কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
واما
النداء فهو
طلب الاقبال
بحرف نائب
مناب ادعوا
وادواته ثمانية
يا والهمزة
واى وا
واى وايا
وهيا و
وا فالهمزة
واى للقريب
وغيرهما للبعيد
وقد ينـزل
البعيد منـزلة
القريب فينادى
بالهمزة واى
اشارة الى
انه لشدة
استحضاره فى
ذهن المتكلم
صار كالحاضر
معه كقول
الشاعر.
অর্থ: النداء
‘আন্ নিদা’ বলা হয়,ادعو (আমি ডাকছি)
ক্রিয়ার স্থলাভিষিক্ত কোনো শব্দ দ্বারা সম্বোধিত ব্যক্তির মনোযোগ আকর্ষণ করাকে।
নিদা-এর আটটি বর্ণ রয়েছে। যেমন, (১) يا (২) همزة (৩) اى (৪) الف (৫) ايا (৬) اى (৭) هيا (৮) وا
উক্ত
বর্ণসমূহের মধ্যেهمزة ও اى নিকটবর্তীندا নিদা বা আহ্বানের জন্য
এবং বাকিগুলো দূরবর্তীندا এর জন্য প্রয়োগ হয়ে থাকে।
কখনো দূরবর্তীمنادى ‘মুনাদা’কে নিকটবর্তী منادى‘ মুনাদা-এর স্থানে রেখে همزة ও اى দ্বারা ডাকা হয়। এটি ওই
সময় যখন আহ্বানকারীর কাছেمنادى দূরবর্তী হওয়া সত্ত্বেও
নিকটবর্তীরূপে কল্পিত (মনে) হয়।”
যেমন, কবির কবিতায় উল্লেখ রয়েছে-
اسكان
نعمان الاراك
تيقنوا + بانكم
فى ربع
قلبى سكان
অর্থ: “হে নু’মান আরাকের
অধিবাসীগণ! বিশ্বাস করো (তোমরা আরাকের অধিবাসী নও, যদিও বাস্তবে তোমরা সেখানেই অবস্থান করছো, প্রকৃতপক্ষে) তোমরা আমার হৃদয়ে অবস্থান করছো।”
ইবারতগুলো
থেকে স্পষ্ট হলো,همزة এবং اى এ দু’টি ছাড়া অন্যান্য সবগুলি যেমন, يا-ايا-هيا- ইত্যাদি
দূরবর্তীর জন্য ব্যবহার হয়। তবে يا নিকটবর্তী, মধ্যবর্তী ও দূরবর্তী নিদার জন্যও ব্যবহার হয়ে থাকে।
তবে কোনো
কোনো সময় নিকটবর্তী নিদাهمزة ওاى দ্বারা দূরবর্তী মুনাদাকেও
ব্যবহার করা হয়; অধিক মনের টান, নিকটবর্তীরূপে কল্পিত হওয়া এবং অধিক মুহব্বতের শর্তে।
যেমন, উপরে বর্ণিত শেষ ইবারতের কবিতাটিতে বর্ণিত রয়েছে। কবিতাটিতেهمزة হরফে নিদা দ্বারা নু’মান আরাকের অধিবাসীদের ندا নিদা বা আহ্বান করা
হয়েছে। কিন্তু সেই উপত্যকাটি কবি থেকে অনেক দূরে ছিল। এهمزة ব্যবহার দ্বারা কবি এ
কথার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যে, নু’মান আরাকের অধিবাসীরা আমার অন্তরে উপস্থিত, তাই তারা উপস্থিতের মতো হয়েছে। কবি এজন্য কবিতায় همزة তথা নিকটবর্তী নিদা
ব্যবহার করে নু’মানে আরাক তথা দূরবর্তী
অধিবাসীদেরকে উদ্দেশ্য করেছেন।
সুতরাং
প্রমাণিত হলো, সালাম পাঠ করার সময় ইখতিয়ার
অনুযায়ী আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সেথায় উপস্থিত হন বা না হন উভয় অবস্থায়ই ইয়া নবী, ইয়া রসূল, ইয়া হাবীব বলে সালাম পাঠ করা
ক্বাওয়ায়িদ সম্মত। (৩য় পর্ব)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন