স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকেيا (ইয়া) হরফে নেদা দ্বারা
উনাকে সম্বোধন করার তা’লীম দিয়েছেন।
যার ফলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত ইমাম-মুজতাহিদ
রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সকলে يا (ইয়া) হরফে নেদা দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে সম্বোধন করেছেন বলে প্রমাণিত রয়েছে।
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার বিশুদ্ধ বর্ণনায় স্পষ্ট বর্ণিত আছে যে- আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম তিনি নিজে উম্মতদেরকে
শিক্ষা দিয়েছেন যে, তারা ক্বিয়ামত
পর্যন্ত এভাবে ‘ইয়া’ সম্বোধন সূচক অব্যয় দিয়ে আহবান করতে পারেন। পবিত্র হাদীছ
শরীফখানা ছিহাহ সিত্তার অন্যতম একটি কিতাব ‘ইবনে মাযাহ শরীফ’-এ বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে,
عن
حضرت عثمان
بن حنيف
رضى الله
تعالى عنه
ان رجلا
ضرير البصر
اتى النبى
صلى الله
عليه وسلم
فقال ادع
الله لى
ان يعافينى
فقال ان
شئت اخرت
لك وهو
خير وان
شئت دعوت فقال
ادعه فامره
ان يتوضا
فيحسن وضوءه
ويصلى ركعتين
ويدعو بهذ
الدعاء اللهم
اى اسألك
اتوجه اليك
بمحمد صلى
الله عليه
وسلم نبى
الرحمة يا
محمد صلى
الله عليه
وسلم اى
قد توجهت
بك الى
ربى فى
حاجتى هذه
لتقضى اللهم
شفعه فى
قال ابو
اسحق هذا
حديث صحيح.
অর্থ: “হযরত উছমান ইবনে হুনাইফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
থেকে বর্ণিত যে, একদা একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তি
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মুবারক খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আমার জন্যে দোয়া করে দিন, যাতে আমার অন্ধত্ব দূর হয়ে যায়। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বললেন, তুমি যদি সম্মত হও তাহলে তোমার জন্যে বিলম্বিত করে দেই, তা হবে তোমার জন্যে উত্তম। আর যদি তুমি চাও তবে দোয়া করে
দেই। তিনি আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার
জন্যে দোয়া করে দিন! তাতে আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে নির্দেশ মুবারক করলেন, ভালো করে অজু করো এবং দু’রাকায়াত নামায আদায় করো এবং এই পবিত্র কালাম শরীফ পড়ে দোয়া করো- আল্লাহুম্মা
ইন্নি আস্ আলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জুহু ইলাইকা বি-মুহাম্মাদিন নাবিইয়্যির রহমাতি, ইয়া মুহম্মদু ইন্নি আতাওয়াজ্জাহু বিকা ইলা রাব্বী ফী হাজাতি
হাজিহি লিতুক্বদ্বা। আল্লাহুম্মা শাফফি’হু ফিইয়্যা। অর্থাৎ আয় আল্লাহ পাক! হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ওসীলা নিয়ে আমি
আপনার নিকট সুওয়াল করছি এবং আপনার শাহী দরবারের সম্মুখীন হয়েছি। ইয়া রসূল
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার ওসীলা নিয়ে এ হাজতটি পূর্ণ হওয়ার জন্যে
আমার মহান রব তায়ালা উনার শরণাপন্ন হয়েছি। আয় আল্লাহ পাক! আপনি উনাকে আমার জন্যে
সুপারিশকারী হিসাবে কবুল করুন।” (ইবনে মাজাহ ১৪৮৪) হযরত
ইমাম আবূ ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ।’
বর্ণিত
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রতি বিবেচনার দৃষ্টিপাত করলে স্পষ্ট দেখা যায়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার একজন উম্মতকে
দোয়া শিখিয়ে দিলেন এবং সে শিখানো দোয়ার মধ্যে “ইয়া”
সম্বোধন সূচক অব্যয়টি যোগ করে “ইয়া মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বলে আহবান করার জন্যে শিক্ষা দিলেন। যদি ইয়া মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলা নাজায়িয হতো, তবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে এভাবে শিখিয়ে দিতেন না। এ
দোয়াটির বিশুদ্ধতার উপর কোনো সন্দেহ পোষণ করার অবকাশ নেই। কারণ
পবিত্র হাদীছ শরীফখানার সনদের মধ্যে কোনো রাবী দুর্বল নয়, বরং সকলেই নির্ভরশীল, বিশ্বস্ত এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ নির্বাচনের সমস্ত দিক থেকে বিশুদ্ধ বলে
প্রতিষ্ঠিত।
তাই এ
পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ইবারতের সামান্য তারতম্যের সাথে হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম
রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিজ নিজ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
যেমন
হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘জামে শরীফ’ কিতাবে কিতাবুদ্
দাওয়াতে,
এমনিভাবে হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
উনার ‘মাসনাদুশ্ শামী’ কিতাবের ১৬৬০৪ এবং ১৬৬০৫ নম্বরে এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন।
হাফিযুল
হাদীছ হযরত ইমাম মুনযিরি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রন্থ “আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব” কিতাবের ১ম খন্ডের ৪৭৩ পৃষ্ঠায়
এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন। হাফিযুল
হাদীছ হযরত আবূ বকর আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার
কিতাবের ৬২৮ নম্বরে ২২৮ পৃষ্ঠায় ছহীহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন।
এ পবিত্র
হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ‘ইয়া’
সম্বোধনী অব্যয় দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে উনার অনুপস্থিতিতে ‘ইয়া’ সম্বোধন করা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিখানো পদ্ধতি এবং
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে শুধু জায়িযই নয়, বরং সুন্নত মুবারক।
অতঃপর
কোনো বিরোধী যদি তর্ক উত্থাপন করে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই নির্দিষ্ট অন্ধ ব্যক্তির জন্যে
উনার জীবদ্দশায় নির্দেশ মুবারক করেছিলেন উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পর এ আমলটি
আর বলবৎ নয়।
এর জবাবে
শুধু একথাটি বলাই যথার্থ হবে যে, হযরত ইমাম
তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে মাযাহ
রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আইম্মায়ে হাদীছ উনারা কিতাবে ছলাতুল হাজাত অধ্যায়ে এ
পবিত্র হাদীছ শরীফটি বর্ণনা করে প্রমাণ করেছেন যে, এ দোয়াটি ক্বিয়ামত পর্যন্ত উম্মতগণ তাদের বিপদে বা হাজতপ্রাপ্তির জন্যে এভাবে
দোয়া করবেন। এছাড়া এসব সত্যান্ধ ও বিরোধী লোকদের জন্যে আরো একটি পবিত্র হাদীছ শরীফ
পেশ করা যেতে পারে।
পবিত্র
হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার কিতাবে বিশুদ্ধ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন।
ان
رجلا كان
يختلف الى
حضرت عثمان
بن عفان
عليه السلام
فى حاجة
له وكان
حضرت عثمان
عليه السلام
لايلتفت اليه
ولا ينظر
فى حاجته
فلقى حضرت
عثمان بن
حنيف رضى
الله تعالى
عنه ائت
الميضاة فتوضا
ثم انت
المسجد فصل
فيه ركعتين
ثم قال
اللهم انى
اسألك واتوجه
اليك بنينا
محمد صلى
الله عليه
وسلم نبى
الرحمة يا
محمد صلى
الله عليه
وسلم! انى
اتوجه بك
الى رب
فيقضى حاجتى.
وتذكر حاجتك
ورح الى
حتى اروح
معك فانطلق
الرجل فصنع
مما قال
له ثم
اتى باب
حضرت عثمان
عليه السلام
فجاء البواب
حتى اخذ
بيده فادخله
على حضرت
عثمان فاجلسه
معه على
الطنفسة وقال
ما حاجتك؟
فذكر حاجته
فقضاها له،
ثم قال
ما ذكرت
حاجتك حتى
كانت هذه
الساعة.
অর্থ: “হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম উনার সাথে জনৈক
ব্যক্তির কিছু প্রয়োজন ছিল। কিন্তু হযরত উছমান আলাইহিস সালাম তিনি এদিকে লক্ষ্য
করছেন না এবং তার প্রয়োজনটি সমাধান করার প্রতি নজর দিচ্ছেন না। সে ব্যক্তি হযরত
উছমান ইবনে হুনাইফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি জানালো।
এতে তিনি ওই লোকটিকে বলে দিলেন। তুমি অজুখানাতে গিয়ে ভালো করে অজু করো এবং মসজিদে
গিয়ে দুই রাকায়াত নামায শেষে এ দোয়াটি পড়। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্য়ালুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহু ইলাইকা বি নাবিয়্যিনা
মুহাম্মাদিন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ইয়া মুহাম্মাদু! ইন্নি আতাওয়াজ্জাহু
বিকা ইলা রব্বি ফায়াক্বদ্বি হাজাতি।’ এবং তোমার প্রয়োজনের কথা এখানে উল্লেখ করো। তারপর আমার নিকট চলে আস, আমিও তোমার সাথে যাব। এ ব্যক্তি গিয়ে এভাবে নামায ও দোয়া
আদায় করে হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার দরবারে উপস্থিত হলেন। গেটের দায়িত্বে নিয়োজিত লোক এসে গেট খুলে উনাকে ভিতরে
নিয়ে হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সামনে হাজির করে দিলেন এবং তিনি
সেই ব্যক্তিকে উনার সাথে বসায়ে জিজ্ঞাসা করলেন কি প্রয়োজন? সে ব্যক্তি তার প্রয়োজনটি বলে দিলো এবং তিনি তা পূর্ণ করে
দিলেন আর বললেন- তোমার এ কাজটি এ মুহূর্তটির আগ পর্যন্ত আমার স্মরণ ছিল না। আরো
বলে দিলেন, তোমার যদি কখনো প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে আমার নিকট চলে আসো।” (আত্ তরগীব ওয়াত্ তারহীব ১ম খ-, পৃষ্ঠা ৩৭৪)
উপরোক্ত
পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা এ দোয়াটির উপর আমল করেছেন। সুতরাং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুপস্থিতিতে ‘ইয়া’ হরফে নিদা
অর্থাৎ সম্বোধন সূচক অব্যয় দিয়ে আহ্বান করা জায়িয, এতে কোনো প্রকার সন্দেহ করার অবকাশ নেই। এছাড়া
হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এ দোয়াটিকে ছলাতুল হাজতে
ব্যবহার করার জন্যে নির্ধারিত করেছেন।
যেহেতু
ছলাতুল হাজত ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি স্থায়ী ব্যবস্থা, সুতরাং ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল মুসলমান এভাবে ‘ইয়া’
সংযুক্ত করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আহ্বান করতে
পারেন।
হযরত
ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব নন্দিত কিতাব “আল আযকার” উনার ‘বাবু মায়াক্কুলুহু ইযা খাদিরাত রিজলাহু’ অর্থাৎ কারো পা যদি ঝিন ঝিন করে অবশ হয়ে যায় তখন সে কি বলতে
পারে,
এ ব্যাপারে একটি অধ্যায় করে একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ হযরত
ইমাম ইবনু সিন্নী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব উনার বরাত দিয়ে বর্ণনা করেন,
روينا
فى كتاب
ابن السنى
عن حضرت
الهيثم بن
حنش قال
كنا عند
عبد الله
بن عمر
رضى الله
تعالى عنهما
فخدرة رجله
فقال له
رجل اذكر
احب الناس
اليك فقال
يا محمد
صلى الله
عليه وسلم
فكانما نشط
من عقال.
অর্থ: “হযরত হায়ছাম ইবনে হানাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
বলেন,
আমরা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার খিদমতে ছিলাম। এমনি সময় উনার পা ঝিন ঝিন করে অবশ হয়ে গেলো। তখন উপস্থিত জনৈক
ব্যক্তি উনাকে বললেন, আপনার প্রিয়তম
ব্যক্তির নাম স্মরণ করুন! তখন তিনি বললেন, ‘ইয়া মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’। তখনই যেন পা’খানা পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলো।” সুবহানাল্লাহ!
(আল আযকার/২৬০)
হাফিযুল
হাদীছ হযরত ইমাম আবূ বকর আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইসহাক দিনওয়ারী রহমতুল্লাহি
আলাইহি ইবনুস সিন্নী নামে পরিচিত, যাঁর কিতাব থেকে
হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি
উনার কিতাবে উপরে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ ছাড়া আরো দুটি পবিত্র হাদীছ শরীফ
একইভাবে রেওয়ায়েত করেছেন।
হযরত
হায়ছাম ইবনে হানাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে “আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ” নামক কিতাব উনার ৬৪ পৃষ্ঠার ১৬ নম্বর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত আবূ
সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কর্তৃক একই ঘটনা বর্ণিত রয়েছে। এছাড়া তিনি
উক্ত কিতাব উনার ৬৫ পৃষ্ঠায় ১৭২ নম্বর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত উমর
ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার অপর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
পবিত্র
হাদীছ শরীফখানা হলো-
عن
حضرت عبد
الرحمن بن
سعد رضى
الله تعالى
عنه قال
كنت عند
حضرت عمر
عليه السلام
فصدرة رجله
فقلت يا
ابا عبد
الرحمن مالربجلك
قال اجتمع
عصبها من
ههنا قلت
ادع احب
الناس اليك
فقال يا
محمد صلى
الله عليه
وسلم فانبسطت.
অর্থ: “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম উনার নিকট ছিলাম।
এমনি সময়ে উনার পা মুবারক ঝিনঝিন শুরু করে দিলো। আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার পা মুবারকে কি হয়েছে? তিনি বললেন, আমার এখানের হাড় একত্রিত হয়ে
গেছে। আমি উনাকে বললাম, আপনার সর্বাধিক
প্রিয় মানুষকে আহ্বান করুন। তাতে তিনি ‘ইয়া মুহাম্মাদ! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে আহবান করলেন। তৎক্ষণাত
উনার পা মুবারক ভালো হয়ে গেল।”
তাছাড়াও
যুদ্ধের মাঠে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরিচিতির
জন্যে সাংকেতিক শব্দ ‘ইয়া মুহাম্মাদাহ’ নির্ধারিত ছিল। যেমন, ইয়ামামার যুদ্ধে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পক্ষে
সাংকেতিক শব্দ ছিল ‘ইয়া মুহাম্মাদাহ’। বিশ্ববিখ্যাত
মুহাদ্দিছ এবং ঐতিহাসিক হাফিয ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ’ (দারুল কুতুবিল আলামিয়্যাহ, বায়রুত লেবানন
থেকে ১৯৮৮ ইং মুদ্রিত) গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খ-ের ৩২৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন: শত শত হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর ‘ইয়া’
সম্বোধন সূচক শব্দ দিয়ে মরণপণ যুদ্ধের সময়েও আহ্বান করেছেন।
যদি এভাবে ডাক দেয়া নাজায়িয হতো, তবে উনারা তা
করতেন না।
হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কোনো এক ব্যক্তিত্বের কথা বা
কাজ বা সমর্থনকেও তো পবিত্র হাদীছ শরীফ বলে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সমর্থিত কাজকে
নাজায়িয বলা যায় না। বললে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদেরকে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে দোষী সাব্যস্ত যারা করবে, তারা আর যাই হোক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নাজাত প্রাপ্ত উম্মত উনাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (৫ম পর্ব)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন