বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬

ঈদে মীলাদুন্নবী বা ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন করা কি বিদয়াত বা নতুন বিষয়?


সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন। উনার পবিত্র বিলাদত শরীফের বার হচ্ছে ইয়াওমুল ইছনাইন বা সোমবার। এই দিনে শুকরিয়া আদায় করে তিনি রোজা রাখতেন। অর্থাৎ মীলাদে হাবীবী পালন করেছেন।
‘ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার এর ফযীলত:

عَنْ اَبِىْ قَتَادَةَ الاَنْصَارِىِّ رضى الله عنه قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَقْبَلَ عَلَيْهِ عُمَرُ عليه السلام فَقَالَ يَا نَبِىَّ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَوْمُ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ؟ قَالَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ اَمُوْتُ فِيهِ. 
অর্থ: হযরত আবূ ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা একদা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছুহবত মুবারকে ছিলাম, এমন সময় সেখানে হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম তিনি আসলেন এবং আরজ করলেন, হে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার রোযা রাখা কেমন? জাওয়াবে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: আমি এ দিন দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছি এবং এ দিন মুবারকে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করব। অর্থাৎ এ দিন মুবারকে রোযা রাখা অত্যন্ত বরকতময়। সুবহানাল্লাহ। (ছহীহ ইবনি খুযাইমাহ কিতাবুছ ছিয়াম বাবু ইস্তিহ্বাবি ছওমি ইয়াওমিল্ ইছনাইন ইযিন্ নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুলিদা ইয়াওমুল্ ইছনাইনি ওয়া ফীহি ঊহিয়া ইলাইহি ওয়া ফীহি মাতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লেখক: হযরত আবূ বকর মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব বিন খুযাইমাহ সুলামী নীসাবূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১১ হিজরী)

عَنْ أَبِى قَتَادَةَ الأَنْصَارِىِّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ... وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ قَالَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيهِ. 
অর্থ: হযরত আবূ ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার উনার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি জওয়াবে বলেছিলেন, ইহা এমন একখানা দিন যে দিনে আমি দুনিয়ায় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি এবং এ দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত প্রকাশ করা হয়েছে তথা এ দিনে আমার উপর পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল শুরু হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (ছহীহ মুসলিম লেখক: হযরত ইমাম আবুল হাসাঈন মুসলিম বিন হাজ্জাজ বিন মুসলিম কুশাইরী নীসাবূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পরিচ্ছেদ: ইস্তিহবাবু ছিয়ামি ছালাছাতি আইয়ামিন মিন্ কুল্লি শাহরিন ওয়া ছাওমি ইয়াওমি আরাফাতা ওয়া আশূরা ওয়াল ইছনাঈন ওয়াল খমীছ- হাদীস নম্বর ১১৬১)

عَنْ أَبِى قَتَادَةَ رضى الله تعالى عنه قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَرَأَيْتَ صَوْمَ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ وَيَوْمِ الْخَمِيسِ قَالَ فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَىَّ الْقُرْآنُ. 
অর্থ: হযরত আবূ ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার ও খমীস বা বৃহস্পতিবার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি জওয়াবে বলেন, ইহা এমন একখানা দিন যে দিনে আমি দুনিয়ায় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি এবং এ দিনে আমার উপর পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল শুরু হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (সুনানু আবী দাঊদ লেখক: হযরত ইমাম আবূ দাঊদ সুলাইমান বিন আশয়াছ সিজিস্তানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পরিচ্ছেদ: ফী ছাওমিদ্ দাহরি তাতাওউয়ান- হাদীস নম্বর ২৪২৬)
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে জানা যায় যে, পবিত্র সোমবার শরীফ সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক ও আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশ লাভের দিন। এই দিনে রোযা রাখার ইঙ্গিত অত্র হাদীছ শরীফে রয়েছে। এর থেকেও প্রমাণিত হয় যে, বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন এবং বরকতী বিশেষ দিন সমূহের দিন খুশি প্রকাশ করা বা তা পালন করতে হবে। কারন স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনার আগমনের বারে শুকরিয়া আদায় করে রোজা রাখতেন। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে নিজেই নিজের আগমন দিবস পালন করেছেন।

আর এই রোজা রাখাকে ঈদে মীলাদে হাবীবী পালনের ভিত্তি হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সূয়ূতি রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। নিম্নে সে দলীল উল্লেখ করা হয়েছে:
আর স্থান ও কালের ফযীলতের ভিত্তি হচ্ছে ওইগুলোতে সম্পনকৃত ইবাদতসমূহ, যেগুলো আল্লাহ্ পাক ওইগুলোর সাথে, অর্থাৎ ওই কাল ও স্থানগুলোর সাথে নির্দিষ্ট করেছেন। কেননা, একথা সর্বজন বিদিত যে, স্থান ও কালের মহত্ব (বুযুর্গী) তো (কখনো) ওইসব সত্তা থেকে হয় না বরং সেগুলোর এসব বুযুর্গী ওইগুলোর অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যাদি (অথবা সম্পর্ক ইত্যাদি)’র কারণেই অর্জিত হয়ে থাকে, যেগুলোর সাথে এ স্থান ও কাল নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। এখন আপনারা ওইসব বৈশিষ্ট্য ও বরকতরাজি দেখুন, যেগুলো আলাহ্ তা‘আলা রবিউল আউয়াল মাস ও সোমবারের সাথে নির্দিষ্ট করেছেন। আপনি কি দেখেননি যে, সোমবার রোযা রাখলে বড় ফযীলত রয়েছে? কেননা, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বেলাদত শরীফ এ দিনে হয়েছে। সুতরাং যখন এ মাস আসে, তখন এ মাসের উপযোগী সম্মান প্রদর্শন ও গুরুত্ব প্রদান করা, আর নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর অনুসরণ করা উচিৎ। কারণ, তাঁর পবিত্র অভ্যাস ছিলো যে, তিনি ফযীলতমণ্ডিত সময়গুলোতে বেশী ইবাদত করতেন এবং অধিক পরিমাণে দান-খায়রাত করতেন।
প্রসঙ্গে আমি (ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূত্বী) ও মীলাদের (বৈধতার) জন্য একটি মূলনীতি বের করেছি। তাহচ্ছে- ইমাম বায়হাক্বী হযরত আনাস রাদ্বিয়ালাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নুবূয়ত প্রকাশের পর নিজের আক্বীক্বা করেছেন, অথচ উনার দাদা হযরত আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার বেলাদত শরীফের সপ্তম দিনে তাঁর আক্বীকা করেছিলেন। আর আক্বীক্বা দ্বিতীয়বার করা যায় না। সুতরাং এই আক্বীকা মুবারকের কারণ এটা বলা যাবে যে, তিনি আলাহ্ তা‘আলার এ শুকরিয়া আদায় করার জন্য তা করেছেন যে, তিনি তাঁকে‘রাহমাতালিল আ-লামীন’ (সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত) করেছেন এবং উম্মতের জন্য তাঁর বেলাদত শরীফের উপর আলাহর শোকর আদায় করাকে শরীয়তসম্মত করার জন্য পুনরায় আক্বীক্বা করেছেন। যেমন তিনি সশরীরে নিজের উপর দুরূদ পড়তেন। সুতরাং আমাদেরও উচিত হবে মীলাদে পাকে লোকজনকে জমায়েত করে, তাদেরকে খানা খাইয়ে এবং অন্যান্য বৈধপন্থায় খুশী প্রকাশ করে মহামহিম আলাহ্ তা‘আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করা। 
হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র আশুরা শরীফের দুই রোজাকে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনেন ভিত্তী হিসাবে দলীল দিয়েছেন। তিনি বলেছেন শুকরিয়া স্বরূপ এ রোজা রাখা হয়। আল্লাহ পাকের নিয়ামতের শুকরিয়া বিভিন্ন ভাবে করা যায়। রোজা রেখে, সিজদা করে, তিলওয়াত করে, দান ছদকা করে। আর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সবচাইতে বড় নিয়ামত।” (হুসনুল মাকাছিদ ফি আমালিল মাওলিদ ৬৩, আল হাবী লিল ফতওয়া ১০৫, সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১ম খন্ড ৩৬৬ পৃষ্ঠা, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন ২৩৭ পৃষ্ঠা) 
সূতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে যুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করা খাছ সুন্নত এটা প্রমাণ হলো ।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন