রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২

তোমরা কোন মাসকে ঈদ হিসাবে গ্রহন করো না, কোন দিনকেও ঈদ হিসাবে গ্রহন করো না এ হাদীছের ব্যাখ্যা

 

তোমরা কোন মাসকে ঈদ হিসাবে গ্রহন করো না, কোন দিনকেও ঈদ হিসাবে গ্রহন করো না

রেজাউল করীম আবরার ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ঈদ অস্বীকার করতে গিয়ে দলীল দিয়েছে,

عَبْدُ الرَّزَّاقِ قَالَ: أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ ابْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تَتَّخِذُوا شَهْرًا عِيدًا، وَلَا تَتَّخِذُوا يَوْمًا عِيدًا

হযরত তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা কোন মাসকে ঈদ হিসাবে গ্রহন করো না, কোন দিনকেও ঈদ হিসাবে গ্রহন করবে না। (মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৭৮৫৩)

এই হাদীছ এর মধ্যে আমভাবে দেখা যাচ্ছে- কোন মাসকে বা কোন দিনকে ঈদ হিসাবে পালন করা যাবেনা। উল্লেখ্য যে প্রতিটি হাদীছ শরীফের একটা প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য থাকে। কোন হাদীছ শরীফের হুকুম সার্বজনীন হয় আবার কোনটা নির্দিষ্ট বিষয় সংশ্লিষ্ট হয়, যার হুকুম সেই নির্দিষ্ট সময় ও প্রেক্ষাপটের জন্যই প্রজোয্য থাকে।

উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছ শরীফখানা মুসলমানের ঈদ সংক্রান্ত নয়। বরং এ বর্ণনাটি হলো জাহেলি যুগের রজবিয়া ও আতিরা উপলক্ষে মানুষেরা যে ঈদ পালন করতো সেই সংক্রান্ত।

    এই হাদীছ শরীফখানা যে কিতাবে বণিত হয়েছে, সেখানে স্পষ্টভাবে অধ্যায়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- বাবু ছিয়ামে আশহুরিল হুরুম অথাৎ হারাম মাসসমুহে রোযা রাখার অধ্যায়। এর দ্বারা বুঝা গেল স্বয়ং মুসান্নিফ নিজেই এই হাদীছ শরীফ খানা ঈদের বর্ণনা হিসেবে উল্লেখ করেননি। বরং হারাম মাসের রোযা রাখার ব্যাপারে বর্ণনা করেছেন। যা উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় তাহকীককরী ৪র্থ খন্ডের ২৯১ পৃষ্ঠার ৪ নং টীকায় উক্ত মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক কিতাবের ৯২৫৫ নং হাদীছ শরীফ দ্বারা ব্যাখ্যা করে বলেছেন-

أَنَّهُ ‌كَانَ ‌يَكْرَهُ ‌أَنْ ‌يَتَحَرَّى ‌شَهْرًا، ‌أَوْ ‌يَوْمًا ‌يَصُومُهُ

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাসব্যাপী এবং দিনব্যাপী নিদিষ্ট করে রোযা রাখতে অপছন্দ করতেন।

     মূল কথা হচ্ছে উক্ত হাদীছ শরীফ মুসলমানদের ঈদ সংক্রান্ত নয় বরং রজব মাস এবং আতীরার রোযা ও ঈদ সংক্রান্ত।

আবরারের আলোচ্য বর্ণনাটি দ্বারা যদি ঈদ নেয়াও হয় তাহলে তা হবে জাহেলি যুগের রজবিয়ার ঈদ। যা দ্বারা মুসলমানদের কোনা ঈদকে নিদিষ্ট করা হয়নি। তার প্রমাণ হচ্ছেমুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক কিতাবের ৪র্থ খন্ডের ২৯২ পৃষ্টার পরবতী হাদীছ শরীফ-

عن ابن عباس رضي الله عنهما أنه كان ينهى عن صيام رجب كله لئلا يتخذ عيدًا

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মানুষদের পুরো রজব মাস রোযা রাখতে নিষেধ করতেন। যাতে করে মানুষ এটাকে ঈদ বানিয়ে না নেয়। (মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৭৮৫৪)

    অথাৎ, আবরারের বর্ণিত, উক্ত হাদীছ শরীফখানা মুসলমানদের ঈদ সংক্রান্ত নয় বরং জাহেলী যুগের রজবিয়ার রোযা সংক্রান্ত সেটা প্রমাণিত হলো। ইবনে রজব হাম্বলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনার লাতায়েফুল মায়ারিফ কিতাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি যে অধ্যায়ে এ আলোচনা করেছেন তা রজব মাস সংশ্লিষ্ট, এবং রজবীয়া ও আতিরার আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি এ বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।

    আর সবচাইতে মজার বিষয় হচ্ছে, রেজাউল করীম আবরার নিজেও তার কুরআন সুন্নাহর আলোকে বারো মাসের করণীয় বজনীয় বইয়ের ১৭২ পৃষ্ঠায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও আতীরার বিধান রহিত হওয়ার প্রসঙ্গে লিখেছে-

মুবারক বিন ফুজালা হাসান থেকে বণনা করেন, ইসলামের কোনো আতীরার বিধান নেই। এর বিধান ছিলো জাহেলি যুগে। তারা রজব মাসে রোযা রাখতো এবং পশু যবেহ করতো। এছাড়া এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় যে, রজব মাসে পশু যবেহের কারণে তা ঈদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়। অথচ ইসলামে ঈদ মাত্র দুটি। আর ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বণিত হয়েছে যে, তিনি রজবকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করতে অপছন্দ করতেন প্রসিদ্ধ তাবেয়ী আতা বণনা করেন, ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন,

كان ابن عباس رضي الله عنهما ينهى عن صيام رجب كله لئلا يتخذ عيدًا

অথাৎ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মানুষদের পুরো রজব মাস রোযা রাখতে নিষেধ করতেন। যাতে করে মানুষ এটাকে ঈদ বানিয়ে না নেয়। এ ছাড়াও হানাফী মাযহাবের ফিকহ ফতোয়ার সকল কিতাবে আতিরা মানসুখ তথা রহিত হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

    অর্থাৎ প্রমাণ হলো তার ওয়াজের আলোচানায় সে মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকের দ্বিতীয় হাদীছ শরীফটি বাদ দিয়ে প্রথম হাদীছ শরীফটি উল্লেখ করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জাহেলি যুগের রজবিয়ার ঈদ পালন না করার দলিলকে ঈদে মীলাদুন্নবী পালন না করার দলিল হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে। অথচ তার কিতাবে সে এই ঈদ এবং রোযা দ্বারা জাহেলী যুগের রজবিয়াকে উদ্দেশ্য করেছে। অর্থাৎ অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার প্রতারনা ধরা পরে গেছে।

উল্লেখ্য যে, আলোচ্য বর্ণনা তোমরা কোন মাসকে ঈদ হিসাবে গ্রহন করো না, কোন দিনকেও ঈদ হিসাবে গ্রহন করবে না বর্ণনাটি মুরসাল। মুরসাল বর্ণনা যদিও ছহীহ কিন্তু এটি একটি একক বর্ণনা। এর পক্ষে কোন হাদীছ শরীফ অথবা কোনো ছাহাবী অথবা কোনো তাবেয়ী অথবা ইমামদের সমর্থনও নেই। পৃথিবীর কোন ইমাম এই হাদীছ শরীফ দিয়ে ঈদ করা যাবে না এমন কথাও বলেন নাই।

বরং পূর্ববর্তী অনেকেই পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঈদ হিসাবে কিতাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন-

হাফিজুল হাদীছ হযরত শিহাবুদ্দীন কাসতালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৯২২ হিজরী) উনার মাওয়াহিবে লাদুনীয়ার ১/৭৮ পৃষ্ঠায় লিখেন,

فرحم الله امرآ اتخذ ليالى شهر مولده المبارك أعيادا

আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির উপর রহম করুন, যিনি মিলাদুন্নবীর মাসের রাতসমূহ ঈদ হিসাবে গ্রহন করে

হযরত মুহম্মদ ইবনে উমর ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৯৩০ হিজরী) হাদায়েকুল আনোয়ার ৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,


فحقيقٌ بيومٍ كانَ فيه وجودُ المصطفى صلى الله عليه وسلم أَنْ يُتَّخذَ عيدًا، وخَليقٌ بوقتٍ أَسفرتْ فيه غُرَّتُهُ أن يُعقَد طالِعًا سعيدًا،

এ দিনের প্রকৃত অবস্থান হলো , যেহেতু এদিন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ হয়েছে তাই এ দিন ঈদ উদযাপন করাই হচ্ছে প্রকৃত দাবী। এদিনের এক শুভক্ষনেই তো সেই আলোকিত মহা উজ্জল চেহারা মুবারক পৃথিবী দর্শন করেছে তবে তা কেন ঈদ হবে না?

ইমাম যারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনার শরহে যারকানী ১/২৬২ পৃষ্ঠাতেও পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঈদ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

হযরত আবু যুফার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দুররুল মুনাজ্জাম কিতাবে লিখেন,

وَقَدْ عَمِلَ الْـمُحِبُّوْنَ لِلنَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرْحًا بِـمَوْلِدِهِ الوَلَائِمَ

হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আশিকগণ উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশিতে (ঈদ পালন করে) খাওয়া দাওয়া ও দাওয়াতের আয়োজন করে আসছেন। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সিরাতে খাইরিল ইবাদ ১ম খন্ড ৩৬৩ পৃষ্ঠা)

হাফিজুল হাদীছ ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

لازال اهل الحرمين الشريفين والمصر واليمن والشام وسائر بلاد العرب من المشرق والمغرب يحتفلون بمجلس مولد النبى صلى الله عليه وسلم ويفرحون بقدوم هلال ربيع الاول

হারামাইন শরীফাইন, মিশর, ইয়ামেন, সিরিয়া এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আরবের সকল শহর ও নগরের অধিবাসীদের মধ্যে অব্যাহতভাবে এ নিয়ম চলে আসছে যে, তারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফের অনুষ্ঠান করেন। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের নতুন চাঁদের আগমনে আনন্দিত হন (ঈদ পালন করেন)। (দররুল মুনাজ্জাম ৮৫ পৃষ্ঠা)

মুহম্মদ ইবনু ইউসুফ আছ ছালেহী শামী (ওফাত ৯৪২ হিজরী) রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন,

سمعت الشيخ أبا موسى الزّرهونيّ يقول: رأيت النبي صلى الله عليه وسلم في ‌النوم ‌فذكرت ‌له ‌ما ‌يقوله ‌الفقهاء في عمل الولائم في المولد فقال صلى الله عليه وسلم: من فرح بنا فرحنا به

শায়েখ হযরত আবু মুসা জারহুনি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একদিন আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে দেখলাম। ফকিহগণ তথা মুফতিগন যে মীলাদুন্নবী পালন করেন বিষয়টি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উপস্থাপন করলাম। হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে আমার ব্যাপারে খুশি (ঈদ পালন করে) প্রকাশ করবে আমি তার ব্যাপারে খুশি প্রকাশ করব। [সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতে খাইরুল ইবাদ ১/৩৬৩; লেখক- মুহম্মদ ইবনু ইউসুফ আছ ছালেহী শামী (ওফাত ৯৪২ হিজরী)]

হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাওয়ী লিল ফাতওয়া কিতাবে ১/২৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

كَانَ يَجُوزُ بِالْمَكْتَبِ فِي الْيَوْمِ الَّذِي فِيهِ وُلِدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَقُولُ: يَا فَقِيهُ، ‌هَذَا ‌يَوْمُ ‌سُرُورٍ ‌اصْرِفِ ‌الصِّبْيَانَ،

এখানেও পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুশির দিন বলা হয়েছে।

কেনেইবা এই দিন ঈদ হবে না? পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাতের মর্যাদা সকল রাতের চাইতে বেশি। ফতোয়ায়ে শামীতে উল্লেখ আছে,

أَنَّ أَفْضَلَ اللَّيَالِي لَيْلَةُ مَوْلِدِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ لَيْلَةُ الْقَدْرِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ وَالْمِعْرَاجِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ عَرَفَةَ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْعِيدِ

অর্থ: রাতসমূহের মধ্যে উত্তম রাত হচ্ছে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাত, অতঃপর পবিত্র ক্বদরে রাত, অতঃপর মিরাজ শরীফের রাত, অতঃপর পবিত্র আরাফার রাত, অতপর পবিত্র জুমুয়ার রাত, অতঃপর পবিত্র ১৫ শাবান (শবে বরাত) রাত, অতপর পবিত্র ঈদের রাত। (দলীল: রদ্দুল মুহতার আলা দুররিল মুখতার ৩/৫২৮-৫২৯ : কিতাবুল হজ্জ্ব , তাফসীরে রূহুল মায়ানী ১৯/১৯৪, সূরা ক্বদরে তাফসীর)

সকল বিশেষ রাতের চাইতে শ্রেষ্ঠ রাত হচ্ছে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাত। তাহলে এই মহান দিবসকে ঈদ বললে সমস্যা কোথায়? আর এছাড়া যেসকল ইমামগন মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঈদ বলেছেন উনারা কি তোমরা কোন মাসকে ঈদ হিসাবে গ্রহন করো না, কোন দিনকেও ঈদ হিসাবে গ্রহন করবে না এ হাদীছ শরীফ জানতেন না? জানলে কি কারনে ইমামগন মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঈদ বলেছেন? কারন উনারা জানতেন এটা হচ্ছে রজবীয়া বা আতিররা বিধান যার সাথে মুসলমানদের কোন সম্পর্ক নেই। বরং মুসলমানদের জন্যতো সবচাইতে খুশির বা ঈদের দিন হচ্ছে ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!

মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০২২

মীলাদ শরীফ বিষয়ে মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহির বিরুদ্ধে ‘মাসিক আল কাওছারের’ মিথ্যাচারের জবাব

 


মীলাদ শরীফ বিষয়ে মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহির বিরুদ্ধে মাসিক আল কাওছারের মিথ্যাচারের জবাব।

মাসিক আল কাউসার পত্রিকার ফেব্রুয়ারী ২০১৯ সংখ্যায় মিলাদ-কিয়াম প্রমাণে ভারতবর্ষের কয়েকজন আলেমের বক্তব্যের ভুল প্রয়োগ ও তার স্বরূপ নামক শিরোনামে একটি লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে-

মুজাদ্দিদে আলফে সানী (মৃত্যু: ১০৩৪ হি.)

এ প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আলফে সানীর মাকতুবাত থেকেও একটি বক্তব্য পেশ করা হয়। তাঁর নিকট তাঁর এক মুরিদ পত্র প্রেরণ করে। তাতে মিলাদ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করা হয়, জবাবে মুজাদ্দিদ রাহ. লিখেন-

نفس قرآں خواندن بصوت حسن و درقصائد نعت ومنقبت خواندن چہ مضائقہ است ممنوع تحریف وتغییر حروف قرآن است والتزام رعایت مقامات نغمہ وتردید صوت بآں طریق الحان بالتصفیق مناسب آں کہ درشعر نیزغیر مباح است اگر برنہجے خوانند کہ تحریفے در کلمات قرآنی واقع نشود و در قصائد خواندن شرائط مذکورہ متحقق نگردد و آں راہم بغرض صحیح تجویز نمایند چہ مانع است؟

সুমিষ্ট স্বরে কুরআন পড়া এবং নবীজীর প্রশংসায় কবিতা পাঠে দোষের কী আছে? নিষিদ্ধ তো হল কুরআনের বিকৃতি, অক্ষর পরিবর্তন ইত্যাদি। আর সুরের পথ ধরে গানের ন্যায় ছন্দময় সুর তোলা ও সে অনুযায়ী তালি বাজানো, যা কবিতার মধ্যেও নাজায়েয। আর যদি কুরআনের অক্ষর ও শব্দ বিকৃত না হয় এবং নবীজীর প্রসংসায় কবিতা পাঠে উল্লেখিত বিষয় না থাকে। সাথে সাথে নিয়তও সহীহ হয় তাহলে তাতে নিষিদ্ধতার কী আছে?। -মাকতুবাত, দফতর ৩, মাকতুব নং ৭২

মুজাদ্দিদ রাহ.-এর উদ্দেশ্য হল, মিলাদে যদি সুন্দরভাবে কুরআন পাঠ হয় আর তাতে অন্যান্য শরয়ী সমস্যাবলী না থাকে তাহলে তা পাঠে অসুবিধা নেই।

যারা মুজাদ্দিদ রাহ.-এর বক্তব্যটি উদ্ধৃত করে থাকে তারা শুধু এতটুকুই উদ্ধৃত করে থাকে। অর্থাৎ তাঁর পূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরে না। মুজাদ্দিদ রাহ. এটুকু বলার পর আরো যা বলেন, সেটিই হল বিবেচ্য বিষয়। তিনি এরপর বলেন,

مخدوما بخاطر فقیر میرسد ایں باب مطلق نکنند، بو الہوسان ممنوع نہ میکردند اگر اندک تجویز کردن بتجربہ بسیار خواہد شد قلیلہ یفضي الی کثیرہ قول مشھور ست۔

অধমের মন বলে, এ পথ যেন না খোলা হয়, তা না হলে পেট-পূজারীদের পথ বন্ধ হবে না, অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, যদি সামান্যও ছাড় দেওয়া হয় তাহলে অনেক বেশিতে পৌঁছে যাবে, এর সামান্যও অনেক বেশির দিকে নিয়ে যাবে। -প্রাগুক্ত

অর্থাৎ সুর তরঙ্গ, কুরআন বিকৃতি, ইত্যাদি থেকে মুক্ত হলেও এ ধরনের মিলাদের পথ খোলা যাবে না। কেননা এটুকু যদি খোলা হয় তাহলে  সেটি অনেক ফাসাদের দিকে নিয়ে যাবে। (মাসিক আল কাউসার ফেব্রুয়ারী ২০১৯)

অর্থাৎ তাদের দাবী হচ্ছে সুন্নীরা মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলিইহি উনার মকতুবাত শরীফের ৩ খন্ডের ৭২ নং মকতুবের খন্ডিত অংশ প্রচার করে মীলাদ শরীফকে হালাল করার চেষ্টা করে। অথচ মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মীলাদ শরীফের সম্পূর্ণ পথটাই বন্ধ করতে বলেছেন। আসলে কি তাই?

বিষয়টা বুঝতে আরেকটু পিছনে যেতে হবে। অর্থাৎ ১ম খন্ডের ২৭৩ নং মাকতুবে। সেখানে মির্জা হোছামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চিঠির জবাবে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখতেছেন- আপনি সংগীত শ্রবন বিশেষভাবে নিষেধ করিয়াছেন, যাহা মিলাদ ও হযরত নবীয়ে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাত শরীফ, কাছিদা পাঠ সম্ভূত ছিলো, কিন্তু ভ্রাতঃ মীর মুহম্মদ নোমান ও অন্যান্য বন্ধুগণ স্বপ্নে দেখিয়াছেন যে, হযরত নবীয়ে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই মিলাদের মাহফিলের (যেখানে গান বাজনা হয়) প্রতি অত্যান্ত সন্তুষ্ট, অতএব তাহাদের প্রতি উক্ত মিলাদের মাহফিল পরিত্যাগ করা দুষ্কর। হে মান্যবর ভ্রাত! যদি স্বপ্নের মূল্য থাকিত এবং উহার প্রতি নির্ভর করা চলিত তবে মুরীদগনের জন্য পীরের কোন আবশ্যক করিত না ও কোন তরীকা গ্রহনের প্রয়োজনও হইতো না।

এই মকতুব থেকে কি প্রমাণ হলো ? মিলাদ মাহফিলে যদি সংগীত বা গানবাজনা করা হয় তা সর্বাবস্থায় হারাম। কারন গান বাজনা হারাম। গানবাজনার মাধ্যম দিয়ে করা মীলাদ মাহফিলের বৈধতার জন্য স্বপ্নের দলীলও গ্রহনযোগ্য নয়। এটাই হলো মূল বিষয়। অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে গানবাজনার বিষয়ে মিলাদ শরীফ বিষয়ে নয় সেটা সুস্পষ্ট হলো।

স্বপ্ন বিষয়ে কিতাবে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়। ঘটনাটি এরূপ এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখলো যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে বলছেন-

اشرب الخمر, অর্থ:- তুমি শরাব পান কর। এ স্বপ্ন দেখে উক্ত লোক তখন বেশ বিভ্রান্তিতে পড়ে গেল। কারণ কেউ তাকে বলল তুমি ভুল দেখেছ আবার কেউ বলল-

اشرب الخمر. অর্থ: শরাব পান করা হবে না বরং لاتشرب الخمر. অর্থ:- শরাব পান করো না। কিন্তু এরপরে সে যখন এই বিষয়ে একজন হক্কানী ওলী আল্লাহ উনার সাথে আলাপ করলো, তখন উক্ত  ওলী আল্লাহ তাকে বুঝিয়ে বললেন যে এর অর্থ হলো- তুমি আল্লাহ পাক উনার ইশকের বা মুহব্বতের সুরা বা রস পান করো। অর্থাৎ তুমি খাছ আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও।

অতএব বোঝা গেল যে, স্বপ্ন দেখে সব সময় হুবহু স্বপ্ন অনুযায়ী আমল করা যাব না। বিশেষ করে মনে রাখা  কতৃব্য যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে বিভিন্ন জন বিভিন্ন সূরত  মুবারকে দেখে থাকে। যার আমল যেরূপ শুদ্ধ বা যিনি ইলমে তাছাউফে যেরূপ কামিয়াবী হাছিল করেছেন, তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সেরূপ অবস্থায় দেখেন। কেউ যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুন্নতের খিলাফ অবস্থায় দেখে, তখন বুঝতে হবে যে দেখেছে তার আমলের মধ্যে সুন্নতের ঘাটতি রয়েছে এবং তাছাউফের পথে তার তরক্কীর আরো অনেক বাকি রয়েছে।

এখন আসুন আলোচনার মূল বিষয় মকতুবাত শরীফের ৩য় খন্ডের ৭২ নং মকতুব নিয়ে আপত্তির বিষয়ে অনুসন্ধান করা যাক।

মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সুমিষ্ট স্বরে কুরআন শরীফ পড়া এবং নবীজীর প্রশংসায় কবিতা পাঠে দোষের কী আছে? নিষিদ্ধ তো হল কুরআনের বিকৃতি, অক্ষর পরিবর্তন ইত্যাদি। আর সুরের পথ ধরে গানের ন্যায় ছন্দময় সুর তোলা ও সে অনুযায়ী তালি বাজানো, যা কবিতার মধ্যেও নাজায়েয। আর যদি কুরআনের অক্ষর ও শব্দ বিকৃত না হয় এবং নবীজীর প্রসংসায় কবিতা পাঠে উল্লেখিত বিষয় না থাকে। সাথে সাথে নিয়তও সহীহ হয় তাহলে তাতে নিষিদ্ধতার কী আছে? (মাকতুবাত, দফতর ৩, মাকতুব নং ৭২)

ভালো করে লক্ষ্য করুন- নিষিদ্ধের বিষয় গুলো হচ্ছে- কুরআন শরীফে বিকৃতি, অক্ষর পরিবর্তন, গানের সুর, হাতি তালি দেয়া ইত্যাদি। যদি এসব না থাকে তাহলে মীলাদ শরীফে কোন সমস্যা নেই। যা ১ম খন্ডের ২৭৩ নং মকতুবের আলোচনা থেকে আমরা বুঝেছি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই কথার শেষে যে মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, অধমের মন বলে, এ পথ যেন না খোলা হয়, তা না হলে নির্বোধরা বিরত  হবে না, অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, যদি সামান্যও ছাড় দেওয়া হয় তাহলে অনেক বেশিতে পৌঁছে যাবে, এর সামান্যও অনেক বেশির দিকে নিয়ে যাবে

যে পথকে বন্ধ করা হবে সেটা কোন পথ? সেটা হচ্ছে ১ম খন্ডের ২৭৩ নং মকতুব থেকে আমারা যা পেয়েছি অর্থাৎ গানবাজনার বিষয়কে হালাল করার জন্য স্বপ্নের দলীল দেয়া ইত্যাদি সেই পথ। অর্থাৎ কোনভাবেই্ গান বাজনা বা, হারাম নাজায়িয ও  বেশরা বিদয়াত কাজ অনুপ্রবেশ করা যাবে না। কোনভাবেই এ দুর্বলতা দেখানো যাবে না যে অমুক স্বপ্ন দেখেছে তাই এই হারাম কাজ এখন হালাল হয়েছে এমন কোন সুযোগই তৈরী করা যাবে না। হারামের বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া যাবে না, তাহলে তারা এর মাত্রা তারা আরো বাড়িয়ে নিয়ে যাবে। অর্থাৎ বিষয়টা হচ্ছে এমন যা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি  বুঝিয়েছেন তা হলো-

সুমিষ্ট স্বরে কুরআন পড়া এবং নবীজীর প্রশংসায় কবিতা পাঠে দোষের কী আছে? নিষিদ্ধ তো হল কুরআনের বিকৃতি, অক্ষর পরিবর্তন ইত্যাদি। আর সুরের পথ ধরে গানের ন্যায় ছন্দময় সুর তোলা ও সে অনুযায়ী তালি বাজানো, যা কবিতার মধ্যেও নাজায়েয। আর যদি কুরআনের অক্ষর ও শব্দ বিকৃত না হয় এবং নবীজীর প্রসংসায় কবিতা পাঠে উল্লেখিত বিষয় না থাকে। সাথে সাথে নিয়তও সহীহ হয় তাহলে তাতে নিষিদ্ধতার কী আছে?

অধমের মন বলে, এ পথ (হারাম ও বেশরা কাজের পথ) যেন না খোলা হয়, তা না হলে নির্বোধরা বিরত  হবে না, অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, যদি সামান্যও ছাড় দেওয়া হয় তাহলে অনেক বেশিতে পৌঁছে যাবে, এর সামান্যও অনেক বেশির দিকে নিয়ে যাবে (মকতুবাত শরীফ ৩ খন্ড ৭২ নং মকতুব)

লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, আর যদি কুরআনের অক্ষর ও শব্দ বিকৃত না হয় এবং নবীজীর প্রসংসায় কবিতা পাঠে উল্লেখিত বিষয় না থাকে। সাথে সাথে নিয়তও সহীহ হয় তাহলে তাতে নিষিদ্ধতার কী আছে?

এটা বলার পর সম্পূর্ণ মীলাদ শরীফের রাস্তাই বন্ধ করে দেয়াটা বাক্যগত গঠন প্রণালী অনুযায়ী অযৌক্তিক। নিষিদ্ধতার কিছু নাই আবার সেটা তিনি বন্ধ করছেন এটা বেমানান। তখনি চিন্তাভাবনার বিষয় চলে আসে মূলত তিনি কি বন্ধ করতে চাইছেন? মীলাদ শরীফ নাকি এতে প্রবেশ করা হিন্দুস্থানের বিদয়াত গানবাজনা, বেশরা কাজ?

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যা ব্যাখ্যা করলাম তাকি আমার নিজস্ব নাকি এ বিষয়ে পূর্ববর্তীগন কিছু বলেছেন।

হযরত খাজা আবূ সাঈদ মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুযোগ্য সন্তান হযরত মাওলানা মাযহার ছাহিব মুজাদ্দিদী দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাক্বামাতু সাঈদিয়াহ কিতাবে লিখেন,

می فرمودند کہ خواند مولود شریف وقیام نزدیک ذکر ولادت باسعادت مستحب است دریں باب رسالئے خاص دارند ودر آں تحقیق فرمودہ اند کہ منع حضرت مجدد الف ثانی رحمۃ اللہ علیہ از مولد خوانی محمول بر سماع وغناست لاغیر.

অর্থ: তিনি বলেছেন, পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের উল্লেখের সময় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে উনার একখানা পুস্তিকা রয়েছে। এ পুস্তিকায় তিনি বিষদভাবে ব্যক্ত করেছেন যে, পবিত্র মীলাদ শরীফ থেকে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিষেধ করা কেবল গান-বাজনার উপরই প্রযোজ্য। অর্থাৎ, যে পবিত্র মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠানে গান-বাজনা হয় কেবল সেটা থেকেই তিনি নিষেধ করেছেন।

হযরত মাওলানা শাহ আহমদ সাঈদ মুজাদ্দিদী নাকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১২৭৭ হিজরী) উনার আছবাতু মাওলিদি ওয়াল কিয়াম কিতাবে মুকাদ্দিমায় আব্দুর রহমান নিজমানী উল্লেখ করেন,

اسی فرقہ کے کچھ لوگ حضرت مجددِ الفِ ثانی رضی اللہ عنہ کے مکتوبات کا غلط مطلب نکال کر یہ کہتے ہیں کہ آپ بھی محفلِ میلاد سے منع فرماتے تھے۔ حضرت مصنف، جو حضرتِ مجدد کے نسبی اور روحانی اولاد اور وارث ہیں، آپ نے اس بہتان کو رد کیا ہے، بلکہ مکتوبات شریف سے ثابت کیا ہے کہ حضرتِ مجدد میلاد شریف سے نہیں ، بلکہ بدعات اور بری رسموں سے منع فرماتے تھے۔ اس کے بعد آپ نے ایسے جھوٹے الزامات لگانے والوں کے بارے میں لکھا ہے:

একই সম্প্রদায়ের কিছু লোক হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর চিঠির অপব্যাখ্যা করে এবং বলে যে, তিনি মিলাদ শরীফ মাহফিলকে নিষেধ করতেন। সম্মানিত লেখক তিনি হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানি রহমতুল্লাহি আলালাইহি উনার বংশধর এবং রুহানী আওলাদ  ও উত্তরাধিকারীও বটে। তিনি এ অপবাদ প্রত্যাখ্যান করেছেনবরং তিনি মকতুবাত শরীফ থেকে প্রমাণ করেছেন যে, হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি মীলাদ শরীফকে নিষেধ করেননি বরং কুপ্রথা ও বিদআতকে নিষেধ করতেন। অতপর এই ধরনের মিথ্যা অভিযুক্তদের সম্পর্কে লিখেছেন:

” سادہ لوح عوام کو گمراہ کرنے اور اپنا کھوٹا سکہ رائج کرنے کیلئے اِس فرقۂ باطلہ نے ایک نیا طریقہ نکالا ہے۔ ہمارے بزرگوں اور اماموں کو بدنام کرتے ہیں، کہتے ہیں فلاں بزرگ نے یوں لکھا، فلاں نے یوں لکھا۔ اللہ تعالیٰ اِن کے جھوٹ سے پاک ہے۔ “

এই ভ্রান্ত সম্প্রদায় সহজ সরল মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এবং তাদের ভ্রান্ত মতবাদ চালু করার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি নিয়ে এসেছে। তারা আমাদের বুযুর্গ ও ইমামদের অপমান করে, তারা বলে অমুক অমুক বুযুর্গ এই  লিখেছেন, অমুক অমুক এটা লিখেছেন। আল্লাহ তাদের মিথ্যাচার থেকে হিফাজত করুন। " (আছবাতু মাওলিদি ওয়াল কিয়াম ৭-৮ পৃষ্ঠা)

اے سائل! تونے حضرتِ امامِ ربانی (مجددِ الفِ ثانی رَضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُ) کے متعلق کہا ہے (کہ آپ محفلِ میلاد سے منع فرماتے تھے)۔ تیرا یہ قول قطعاً غلط ہے۔ ہمارے امام اور قبلہ نے گانے کی مجلس میں حاضر ہونے سے منع کیا ہے، اگرچہ اُس مجلس میں قرآن کی تلاوت اور نعتیہ قصائد پڑھے جائیں۔ حضرت امامِ ربّانی نے قرآن و حدیث کے پڑھنے سے منع نہیں فرمایا، جیسا کہ حضرت امامِ ربانی کی مراد سے بے خبر لوگوں نے گمان کرلیا ہے۔ اِس قسم کی بات حضرت امامِ ربانی پر بہت بڑا بہتان ہے۔

হে প্রশ্নকারী! তুমি হযরত ইমাম রব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে বলছো  (তিনি মিলাদ উদযাপন করতে নিষেধ করতেন)। তোমার এ বক্তব্য একেবারেই ভুল। আমাদের ইমাম এবং কিবলা (মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি) গানের মজলিসে উপস্থিত হতে নিষেধ করেছেন, যদিও সেই মজলিসে পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওয়াত ও নাত শরীফ, কাছীদা শরীফ পাঠ করা হয়। হযরত ইমাম রব্বানী কুরআন-হাদীস পাঠ করতে নিষেধ করেননি, যেভাবে হযরত ইমাম রব্বানীর অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা ধরে নিয়েছে। এ ধরনের কথা হযরত ইমাম রব্বানীর উপর বড় অপবাদ। (আছবাতু মাওলিদি ওয়াল কিয়াম ৪১ পৃষ্ঠা )

হযরত মাওলানা শাহ আহমদ সাঈদ মুজাদ্দিদী নাকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১২৭৭ হিজরী) তিনি উনার কিতাবে আরো লিখেন-

হযরত মুজাদ্দিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পত্রের তৃতীয় খণ্ডে বলেন:

”اچھی آواز سے صرف قرآنِ مجید اور نعت و منقبت کے قصائد پڑھنے میں کیا حرج ہے؟ منع تو یہ ہے کہ قرآنِ مجید کے حروف کو تبدیل و تحریف کیا جائے اور مقاماتِ نغمہ کا التزام کرنا اور الحان کے طریق سے آواز کو پھیرنا اور اس کے مناسب تالیاں بجانا جو کہ شعر میں بھی ناجائز ہیں۔ اگر ایسے طریقہ سے مولود پڑھیں کہ قرآنی کلمات میں تحریف واقع نہ ہو اور قصائد پڑھنے میں شرائطِ مذکورہ متحقق نہ ہوں اور اس کو بھی صحیح غرض سے تجویز کریں تو پھر کون سی رکاوٹ ہے؟“

"সুমিষ্ট স্বরে কুরআন পড়া এবং নবীজীর প্রশংসায় কবিতা পাঠে দোষের কী আছে নিষিদ্ধ তো হল কুরআনের বিকৃতি, অক্ষর পরিবর্তন ইত্যাদি। আর সুরের পথ ধরে গানের ন্যায় ছন্দময় সুর তোলা ও সে অনুযায়ী তালি বাজানো, যা কবিতার মধ্যেও নাজায়েয। আপনি যদি এমনভাবে মীলাদ শরীফ পাঠ করেন যাতে কুরআনের শব্দ বিকৃত না হয় এবং কাছীদা শরীফ পাঠে উপরোক্ত বিষয়গুলো  না থাকে এবং সাথে সাথে নিয়তও সহীহ হয় তাহলে তাতে নিষিদ্ধতার কী আছে?

پس معلوم ہوا کہ حضرتِ مجدد قُدِّسَ سِرُّہٗ کی جو عبارت میلاد کے منکر بطورِ دلیل پیش کرتے ہیں، اُس عبارت سے حضرتِ مجدد کی مراد یہ ہے کہ ”قصائد اور نعت خوانی میں نغمہ کا التزام کرنا، الحان کے طریق سے آواز کو پھیرنا اور اس کے مناسب تالیاں بجانا منع ہے۔“ جیسا کہ حضرت کی مذکورہ عبارت سے بالکل ظاہر ہے۔ مخالفین نے غلط سمجھا ہے، حضرتِ امام نے مطلقاً محفلِ میلاد کو منع نہیں فرمایا۔ پس حق ثابت ہوگیا۔

সুতরাং জানা যায় যে, হযরত মুজাদ্দিদ কাদ্দাসিররুহু-এর যে ইবারত মীলাদ শরীফ পাঠ অস্বীকারকারীরা যুক্তি হিসেবে পেশ করেন, হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহির সেই ইবারত দ্বারা, কবিতা ও নাত পাঠে গানের মিশ্রন করা, লেহানের মাধ্যমে কণ্ঠকে ঘুরিয়ে দেওয়া এবং তালি বাজানো নিষেধ। বিরোধীরা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইবারতের ভুল ব্যাখ্যা করেছে। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি মীলাদ শরীফের মাহফিলকে নিষেধ করেননি। এটা সত্য প্রমাণিত হলো।

سادہ لوح عوام کو گمراہ کرنے اور اپنا کھوٹا سکہ رائج کرنے کیلئے اِس فرقۂ باطلہ نے ایک نیا طریقہ نکالا ہے۔ ہمارے بزرگوں کو بدنام کرتے ہیں، کہتے ہیں فلاں بزرگ نے یوں لکھا، فلاں نے یوں لکھا۔ اللہ تعالیٰ اِن کے جھوٹ سے پاک ہے۔

সহজ সরল মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এবং তাদের ভ্রান্ত কথার প্রচলন করতে এই ভ্রান্ত সম্প্রদায় নতুন পদ্ধতি নিয়ে এসেছে। তারা আমাদের বড়দের অপমান করে, তারা বলে অমুক অমুক বড় অমুক লিখেছেন, অমুক অমুক লিখেছেন। আল্লাহ তাদের এহেন মিথ্যাচার থেকে মুক্ত রাখুন। (আছবাতু মাওলিদি ওয়াল কিয়াম ৪৫ পৃষ্ঠা )

    সর্বপোরি জানা দরকার নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া তরকীয়া কি মীলাদ শরীফ নিষেধ মনে করা হয়? এ সিলসিলা বা এই খন্দানের কেউ কি মীলাদ শরীফ পাঠ করেন না? বই পুস্তক লিখেন নাই? বিরোধিতা করার আগে কমসে কম এতটুতু লেখাপড়া ও অনুসন্ধান করা দরকার ছিলো।

আসুন আমরা দেখি নকশবন্দীয়া মুজাদ্দিদীয়া তরীকার বূজূর্গগণ যারা মীলাদ শরীফের উপর কিতাব লিখেছেন উনাদের নাম ও কিতাবের নামগুলো জেনে নিই। অবশ্য উনারা ছাড়াও এই তরীকার অনুসরনকারী আরো অনেক বুযূর্গগন পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করেছেন ও কিতাব লিখেছেন।

১) মাহমুদ ইবনে হুসাইন আল আফদালী আল হাজীক্বী নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৯৭০ হিজরী)। তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ অবস্থান করতেন। তিনি মীলাদ শরীফের উপর কিতাব লিখেন মাওলিদ আন নাবী

২) মুহম্মদ আলী ইবনে আল্লান আল মক্কী নবশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১০৫৭ হিজরী) । তিনি মীলাদ শরীফ বিষয়ে কিতাব লিখেন- মাওরিদ আছ ছাফা ফি মাওলিদ আল মুস্তফা

৩) হযরত ইমাম আব্দুল গনি নাবেলুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১১৪৩ হিজরী)। তিনি মীলাদ শরীফ বিষয়ে কিতাব লিখেন- আল মাওলিদ আন  নববী

৪) আব্দুল্লাহ ইবনে মুহম্মদ কাশগরী জাহিদী নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১১৭৪ হিজরী)। তিনি মীলাদ শরীফের উপর কিতাব লিখেন মাওলিদ আন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৫) হযরত মুস্তফা সালামী ইস্তামবুলী নাকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১২৮৮ হিজরী)। তিনি মীলাদ শরীফের বিষয়ে কিতাব লিখেন- মাওলিদ আন নবী

৬) হযরত শাহ আহমদ সাঈদ মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১২৭৭ হিজরী) তিনি মীলাদ শরীফের উপর ৩ টি কিতাব লিখেন- আছবাত আল মাওলিদ ওয়াল কিয়াম, আয যিকির আশ শরীফ ফি আছবাত আল মাওলিদিল মুনীফ, সাদুল বায়ান ফি মাওলীদীল সাইয়্যিদিল ইনস ওয়াল জ্বিন।

৭) মাওলানা মুফতী ইরশাদ ‍হুসাইন রামপুরী মুজাদ্দীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১৩১১ হিজরী)। তিনি মীলাদ শরীফ বিষয়ে অনেকগুলো ফতোয়া লিখেন।

৮) মুফতী রেজা আলী বেনারশী মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১৩১২ হিজরী) । তিনি লিখেন- মাযাহীর আল হক্ব ফি আছবাত আল মাওলিদ ওয়াল কিয়াম।

৯) শাহ মুহম্মদ মাসুম মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১৩৪১ হিজরী) । উনার লিখিত কিতাব- আহসানুল কালাম ফি আছবাত আল মাওলিদ ওয়াল কিয়াম।

১০) ইমাম ইউসুফ বিন ইসমাঈল নাবেহানী নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১৩৫০ হিজরী)। তিনি মীলাদ শরীফ বিষয়ে কিতাব লিখেন- জাওয়াহির আন নাজম আল বাদী ফি মাওলিদীশ শাফিয়ী ।

১১) সাঈদ দীদার আলী আলওয়ারী নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি ( ওফাত ১৩৫৪ হিজরী)। তিনি কিতাব লিখেন- রাসূল আল কালাম মিন কালামী সাইয়্যিদিল আনাম ফি বায়ানুল মাওলিদ ওয়াল কিয়াম।

১২) ইমাম মুহম্মদ জাহিদ আল কাওছারী নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৩৭১ হিজরী)। তিনি পবিত্র মীলাদ শরীফ বিষয়ে অনেক আলোচানা উনার কিতাবে করেছেন।

    মূলত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে উনার মকতুবাত শরীফকে কেন্দ্র করে এই অপপ্রচার ওহাবীদের দ্বারা প্রচারিত। উনার বক্তব্যকে ভুল বুঝে এই ফিতনায় অনেকে পতিত হয়েছে। আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী হাজার বছরের মুজাদ্দিদ মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহির বিষয়ে অপপ্রচারের ভিত্তী সমূলে উৎপাটন করে দিয়েছেন। আল্লাহ পাক ফিতনা বিস্তারকারীদের হিদায়েত দান করুন এবং একজন বিখ্যাত ওলীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা থেকে সবাইকে পানাহ দান করুন। আমীন।

বিঃদ্রঃ এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত দলীল ও গবেষনা আসছে ইনশাআল্লাহ!