হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের সুংসবাদ কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে অসংখ্য স্থানে বলা হয়েছে। আর উনাকে পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করতে হবে।
সবাই একটা জিনিস লক্ষ্য করুন, অন্যান্য নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বেলায় আল্লাহ পাক خلق শব্দটা সরাসরি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ শান মুবারক উনার জন্য কালামুল্লাহ শরীফে خلق শব্দটি ব্যবহার করতে হয় নাই।
আরবী خلق শব্দের অর্থ হচ্ছে- শূন্যকে অস্তিত্ব দান করা, যে কিছু নয় তাকে কিছু করে দেয়া, সৃষ্টি করা ইত্যাদি।
কিন্তু কুরআন শরীফে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জমিনে আগমনের জন্য সরাসরি এই শব্দ ব্যবহার করা হয় নাই।
দেখুন আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে কি শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন —
(১) لقد من الله علي المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا
অর্থ: আল্লাহ পাক মু’মিনদের প্রতি ইহসান করে তাদের মধ্যে হতে একজন রসূল প্রেরন করেছেন।”
(দলীল- সূরা আল ইমরান ১৬৪, সূরা বাক্বারা ১২৯, সূরা বাক্বারা ১৫১, সূরা জুমুয়া ২)
(২) আল্লাহ পাক বলেন–
قد جاءكم من الله نور
অর্থ: নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে একখানা “নূর” বা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন।” (সূরা মায়েদা ১৫)
(৩) আল্লাহ পাক আরো বলেন-
ياايها النبي انا ارسلناك شاهدا و مبشر ونذيرا
অর্থ : হে আমার নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা, এবং ভয় প্রদর্শনকারী রুপে প্রেরন করেছি।” (সূরা আহযাব ৪৬)
এরকম আরো অনেক আয়াত শরীফ আছে।
যাইহোক,সবাই মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করুন উক্ত আয়াত শরীফ সমূহে তিনটা ভিন্ন ভিন্ন শব্দ রয়েছে। প্রথম আয়াত শরীফে এসেছে بعث , দ্বিতীয় আয়াত শরীফে এসেছে جاء ,এবং তৃতীয় আয়াত শরীফে আছে ارسلن ।
উক্ত শব্দ মুবারক উনাদের পবিত্রতম অর্থ গুলা হচ্ছে-
প্রথম,(بعث) – প্রেরণ করেছেন।
দ্বিতীয়, (جاء) – আগমন করেছেন।
তৃতীয়, (ارسلنا) – প্রেরণ করেছি।
দেখুন, আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে ব্যবহার করেছেন- প্রেরণ, আগমন ইত্যাদি শব্দ ।
পাঠক, প্রেরণতো তাকেই বলা হয়, যা পূর্ব হতে নিজের কাছে মওজুদ থাকে। নিজের কাছে আগে থেকে তৈরী কোন জিনিষই কেবল মাত্র প্রেরন করা যায়।
অর্থাৎ যেটা অনেক আগেই সৃষ্টি করে রাখা হয়।
যেহেতু হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ব থেকেই “নূর” হিসাবে সৃষ্টি হয়েই আছেন তাই উনার দুনিয়ায় তাশরীফ আনার ব্যাপারে প্রেরন বা আগমন শব্দটাই যাথাযথ। এবং নতুন করে خلق বা সৃষ্টি এই শব্দ প্রয়োগ কোন প্রয়োজনীয়তা বহন করে না।
সেটা হাদীস শরীফ ইরশাদ হয়
اول ما خلق الله نور
অর্থ: সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করা হয়েছে ।” (দলীল- যুজউল মাফকুদ ১৮ নং হাদীস, মাদারেজুন নবুওয়াত ২/২, রুহুল মায়ানী ১৭/১০৫, ফতোয়ায়ে হাদীসিয়া ১৮৯ পৃ, দেওবন্দী আজিজুল হক অনুবাদ কৃত বুখারী শরীফ ৫/৩)
কিন্তু দুনিয়াতে যখন তাশরীফ আনার বিষয় আসলো তখন আল্লাহ পাক বলে দিলেন –
قد جاءكم من الله نور
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন একখানা নূর বা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (সূরা মায়েদা ১৫)
যখন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাহিরী ভাবে দুনিয়ায় তাশরীফ আনার আগেকার সংবাদ জানতে চাওয়া হলো, যেটা হাদীস শরীফে বর্নিত আছে–
قالوا يَا رَسُولَ اللَّهِ ، مَتَى كُنْتَ نَبِيًّا ؟ قَالَ : " وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالْجَسَدِ
অর্থ: ইয়া রসূল্লাল্লহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি কখন থেকে নবী ? হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন আদম আলাইহিস সালাম মাটি ও পানিতে ছিলেন।” (দলীল- তিরমীযি শরীফ ,হাদীস ৩৬০৯, মুসনাদে আহমদ হাদীস ২৩৬২০, মুসতাদরেকে হাকীম, হাদীস ৪২০৯, আবী শায়বা ৩৬৫৫৩, তারীখে কবীর লি ইমাম বুখারী ৭/৩৭৪)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ خَبَرَ آدَمُ بَنِيهِ فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ قَالَ : فَرَأَى نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ ، فَقَالَ : يَا رَبِّ مَنْ هَذَا ؟ قَالَ : هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ هُوَ الأَوَّلُ ، وَهُوَ الآخِرُ ، وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন, তখন উনার সন্তানদের দেখানো হলো। তখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদের পারষ্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব দেখতে থাকেন। অবশেষে তিনি এক চমকপ্রদ নূর মুবারক দেখতে পেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, হে আমার রব! এই নূর মুবারক কার? মহান আল্লাহ ইরশাদ মুবারক করলেন, তিনি আপনার আওলাদ হবেন। অর্থাৎ শেষে আগমন করবেন। উনার নাম আসমানে আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি সৃষ্টিতে প্রথম, তিনি প্রেরনে শেষ, তিনি সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী। (দালায়েলুন নবুওয়াত ৫/৪৮৩, খাসায়েসুল কোবরা ১/৭০, সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১/৭১, শরহে মাওয়াহেব ১/৪৩)
অর্থাৎ দুনিয়ায় তাশরীফ আনার আগে থাকেই সব কিছু সৃষ্টি এমনকি আদম আলাইহিস সালাম সৃষ্ট হওয়ার পূর্বেই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবী হয়েই মওজুদ ছিলেন।
আর যখন দুনিয়াই তাশরীফ আনেবেন তখন তিনি বলেন-
بعثت الي اناس عامة
অর্থ: আমি সমস্ত মানুষের জন্য প্রেরীত হয়েছি।” (দলীল- বুখারী হাদীস নং ৩৩৫, মুসলিম শরীফ ৫২৩)
আরো ইরশাদ করেন,
ارسلت الي الخق كافة
অর্থ: আমাকে সকল মাখলুকাতের জন্য প্রেরন করা হয়েছে ।” (দলীল- মুসলিম শরীফ : হাদীস ৫২৩, তিরমীযি ১৫৫৩, মুসনাদে আহমদ ২৭৪৯৬)
ব্যাপারটা পরিস্কার হাদীস শরীফে বর্নিত আছে–
হাদীস শরীফে ইরশাদ করেন-
عن حضرت ابي هريرة رضيالله عنه قال صلي الله عليه و سلم كتت اول النبي في الخلق و اخرهم في البعث
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, সৃষ্ট জীবের মধ্যে সর্বপ্রথম নবী হিসেবে সৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি (যমীনে প্রকাশ পেয়েছি) সব নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শেষে।” (দলীল- তাফসীরে বাগবী ৫/২০২, তাফসীরে দূররে মানছুর ৫/১৮৪, শেফা শরীফ ১/৪৬৬, কানযুল উম্মাল ৩১৯১৬, দয়লামী ৪৮৫০, মানাহিলুচ্ছফা ৫/৩৬, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ২১/১৫৪, যাওয়াহিরুল বিহার ৪/২৩৪, সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১/৭১)
অর্থাৎ বিষয়টা হচ্ছে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবকিছুর পূর্বে নূর, নবী, রসূল, রহমত, নিয়মাত ইত্যাদি করে সৃষ্টি করে আল্লাহ পাক নিজের কুদরত মুবারকে মওজুদ রেখেছেন। তাই পরবর্তীতে দুনিয়ায় তাশরীফ আনার সময় উনার শানে সৃষ্টি শব্দ আর ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছে,- প্রেরণ, আগমন ইত্যাদি । আর উনার আগমনটা হচ্ছে সবচাইতে বড় নিয়ামত। উনাকে পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করাই সবচাইতে বড় আমল। সুবহানাল্লাহ্ !!
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন