বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬

ইলমে গাইব নিয়ে এক সালাফীর সাথে কথোপকথন


ইলমে গাইব নিয়ে কথা বলায় এক সালাফী আমাকে বললো ইলমে গাইব জানা আল্লাহ পাকের শান। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গাইব জানার দাবী করা নাকি শিরক। এর পর তার সাথে আমার কথপোকথনের চিত্রটা সংক্ষেপে নিম্নে তুলে ধরা হলো।
আমি: ইলমে গাইব কাকে বলে? দুই একটা উদাহরন দিন।
সালাফী: যে বিষয় সমূহ ইন্দ্রিয়গ্রহ্য বা পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা বোঝা যায় না তাই গায়েব।
আমি: উদাহরন ?
সালাফী: জান্নাত, জাহান্নাম, কবরের আজাব, ফিরিশতা, মায়ের পেটে সন্তান কি হবে, কোথায় মারা যাবে, পরকালীন পরিনতি ইত্যাদি।
আমি: তো, এই বিষয়গুলো কি আমাদের নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখেন নাই?
সালাফী: ইয়ে মানে... (চুপ)
আমি: নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতের স্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। নিজে জান্নাত দেখেছেন। মুসলিম শরীফে এও বর্নণা আছে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার জান্নাতের বালাখানার বর্ণনাও দিয়েছেন। হাদীস শরীফে এক জায়গায় আছে নামাজের সময় নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে জান্নত জাহান্নাম সবই পেশ করা হলো। তিনি বলেন, আমার কাছে জান্নাত উপস্থিত করা হয়েছিল। তাতে বিশালবৃক্ষরাজি দেখতে পেলাম যেগুলোর ছড়া ঝুঁকানো ছিল। (খারেজীরা যেই হাদীস শরীফ দ্বারা ছায়া মুবারক আছে প্রমাণ করার অপচেষ্টা করে) এছাড়া জান্নাত দর্শনের আরো অনেক বিবরন বুখারী মুসলিম শরীফে আছে। কি বলেন ভাই কথা সত্য কিনা ?
সালাফী: হ্যাঁ, সত্য বটে। কিন্তু নাবীজী গায়েব জানেন এটা মানা শিরক... (নাউযুবিল্লাহ)
আমি: হা হা হা! আচ্ছা আপনি বলেছেন জাহান্নামও গায়েবের অর্ন্তভূক্ত। নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি জাহান্নামের বর্ণনা দিয়েছেন? মুসতাদরিকে হাকেম-৫ম খন্ড ৬৪৮ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে আমার নিকট জাহান্নাম উপস্থিত করা হল। (খারেজীরা যেই হাদীস শরীফ দ্বারা ছায়া মুবারক আছে প্রমাণ করার অপচেষ্টা করে)। জাহান্নাম কেমন , কি আযাব সব কিছুই নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাক্ষুস দেখেছেন এবং বর্ণনাও দিয়েছেন। কি বলেন ভাই কথা সত্য?
সালাফী: (আমতা আমতা করে) হ্যাঁ, সত্য। কিন্তু নবীজীর গায়েব মানা শিরক... (নাউযুবিল্লাহ)
আমি: হা হা হা! আপনি কবরের আজাবের কথা বলেছেন। কার কবরে কি আজাব হচ্ছে এটা নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন নাই? সিয়া সিত্তার কিতাবে আছে, এক লোক প্রস্রাব করে , প্রস্রাবের ছিটা ফোটা থেকে হিফাজত থাকতো না। এ কারনে জাহান্নামের আযাবে পতিত হয়। কি আযাব হচ্ছে সেটা নবীজী দেখেই তো বর্ননা করেছেন , নাকি ??
সালাফী: জ্বি! (মুখ শুকাইয়া গেছে)
আমি: ফিরিশতা যদি গায়েব হয় , নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরিশতা দেখেছেন কিনা?
সালাফী: এটা সত্য বটে। অসংখ্যবার দেখেছেন। কিন্তু...... (মুখ ভার)
আমি: মায়ের পেটে সন্তানের খবর নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন নাই? বায়হাক্বীর সহীহ সনদে আছে , হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মা’কে বলেছিলেন, আপনার গর্ভে পুত্র সন্তান রয়েছে। তিনি জন্মগ্রহণ করলে আমার কাছে নিয়ে আসবেন। শিশু জন্ম নিলে তাঁর মহান খিদমতে আনা হলো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন ঐ শিশুর ডান কানে আযান ও বাম কানে ইক্বামত দিলেন এবং মুখের লালা মুবারক শিশুর মুথে (তাহনীক) দিলেন। তারপর তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ্ এবং বললেন, এ শিশু আবু খোলাফা হবে। মায়ের পেটে সন্তান কি হবে এটা নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানেন কিনা ?
সালাফী: (কপালে ঘাম দেখা দিয়েছে) ... তাই তো দেখছি। ... ইয়ে মানে শিরক....
আমি: এখনো শিরিক ? কোথায় মারা যাবে , জান্নাতী না জাহান্নামী এটা জানাতো গায়েব। মুসলিম শরীফে বদর যুদ্ধের অধ্যায়ে বর্ণিত আছে বদর জিহাদের আগের দিন নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদর প্রান্তে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন কোন কাফির কোথায় মারা যাবে। কোথায় তার লাশ পরে থাকবে। যুদ্ধের পরে দেখা গেলো তিনি যা বলেছেন তাই হয়েছে। যাদের নাম বলেছেন আর যে স্থান বলেছেন তা হুবুহু মিলে গেছে। বুখারী শরীফে একাধিক সনদে আছে এক যুদ্ধে এক লোক খুব বীরত্তের সাথে যুদ্ধ করছিলো। নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সম্র্পকে বললেন সে জাহান্নামী হবে। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেলো, সে যুদ্ধে আহত হয়েছে কষ্ট সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। তাহলে কোথায় মারা যাবে, কি পরিনাম হবে এসব নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতেন প্রমান পেলেন তো?
সালাফী: হুম, এসব আমিও পড়েছি। কিন্তু..... কিন্তু মুরুব্বীরা যে আমাদের শিখাইলো নবীজীর গাইব মানা শিরক।
আমি: হা হা হা! আপনাদের দেখছি কুরআন হাদীসের চাইতে মুরুব্বী প্রীতিই বেশি।
সালীফ: (সম্ভবত শেষ অস্ত্র ছাড়লো) ইয়ে কুরআন শরীফে আছে , কালামে পাকে ইরশাদ করেন,لايعلم من فى السموات والارض الغيب الا الله. অর্র্থঃ- “আসমান-যমীনে আল্লাহ পাক ব্যতীত কারো ইল্মে গইব নেই।” (সূরা নমল/৫৫) । তো আপনি কি বলবেন ??
আমি: দেখেন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, ان العزة لله جميعا. অথঃ- “সমস্ত ইজ্জত-সম্মান একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্য।”
আবার এও ইরশাদ হয়েছে, ولله العزة ولرسوله وللمؤمنين. অর্থঃ- “ইজ্জত-সম্মান আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য এবং মু’মিনদের জন্য।” (সূরা মুনাফিকুন/৮)
তাহলে কি এখন প্রথম আয়াত দেখে আল্লাহ পাক ছাড়া আর কাউকে ইজ্জত সম্মান দিবেন না? এ আয়াত শরীফ গুলোর অর্থ এই যে, ইজ্জত সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। কিন্তু আল্লাহ্ পাক প্রদান করার কারণে মুসলমানগণ লাভ করেছেন, মান-সম্মানও অর্জন করেছেন। এভাবে ইলমে গায়েবের ব্যাপারেও তাই। যেটা কুরআন শরীফে আছে , মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফের ‘সূরা জিন’-এর ২৬, ২৭ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন, علم الغيب فلايظهر على غيبه احدا الا من ارتضى من رسول. অর্থঃ- “তিনি (আল্লাহ পাক) আলিমুল গইব, তাঁর ইলমে গইব তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশ করেন না। অর্থাৎ রসূলগণকে তিনি ইলমে গইব দান করেছেন।” “আসমান-যমীনে আল্লাহ পাক ব্যতীত কারো ইল্মে গইব নেই।” (সূরা নমল/৫৫) অর্থাৎ বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ব্যতীত যে ইলমে গইব তা শুধুমাত্র আল্লাহ পাক-এরই রয়েছে। আর নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন মুত্তালা আলাল গইব। অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনাকে সকল গায়েবের জ্ঞান হাদীয়া করেছেন। বুঝতে পারলেন ?
সালাফী: (কিছুক্ষন চুপ করে থেকে).... হুম , মানে ইয়ে। হ্যাঁ! কিন্তু শিরক তো!
আমি: তাহলে ভাই কি আর করা। আপনাদের জন্য ঐ কথাটাই প্রযোজ্য, বিচার মানি কিন্তু তাল গাছ আমার। হা হা হা!

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন